আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুয়াশা

কুয়াশার মত জীবন আমার... এই আছি তো এই নাই !! স্পন্দন এর আজ খুব মন খারাপ । ওর এই মন খারাপ এর পরিমানের এর সাথে আসলে খুব কথা টা যায় না। ভিশন! হ্যাঁ, ভিশনই বরং বেশি মানানসই । চব্বিশ তলা এই দালান টার ছাদের এক কোনায় সে জরসর হয়ে বসে আছে । মনে মনে সে একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করছে ।

সে জানে তার একদমি উচিত হবে না এই সিদ্ধান্তটা নেয়া । কিন্তু তবু সে যেভাবেই হোক করবেই । সিদ্ধান্তটা নেয়া কতই না সহজ হত যদি আজ কুয়াশা থাকত এখানে,যদিও কুয়াশা পাশে থাকলে এটার দরকারই হতনা। কিন্তু সিদ্ধান্ত টা যে ওকে নিতেই হবে । তবুও স্পন্দন চায় থাকুক কুয়াশা ওর পাশে, হাতটা একটু ধরুক, কপাল থেকে এলোমেলো চুল গুলো সরিয়ে দিক ভালাবাসার হাতটা দিয়ে ।

তাহলেই কত সহজ হয়ে যেত কাজটা। আপন মনেই হেসে ওঠে স্পন্দন! কুয়াশা থাকবে না, আর কখনই থাকবেনা ওর পাশে । এত ভেবে আর কাজ কি ? সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠে পড়লো ও। জিনিস গুলো শেষবারের মতো পরীক্ষা করে নিয়ে উঠে দাঁড়াল স্পন্দন। সব কিছু ঠিকঠাক ভাবেই কাজ করছে ।

বের হয়ে এলো ওয়ার্কশপ থেকে । রেফ্রিজারেটর থেকে এনার্জি ড্রিংক এর একটা ক্যান এবং ক্ষুধা দূর করার একটি ট্যাবলেট নিয়ে শোবার ঘরে এসে ঢুকল ও । ওর প্রিয় রকিং চেয়ারে গা ডুবিয়ে বসে দোল খেতে খেতে চিন্তা করে নিল আরেকবার । আজ সকালে যখন কুয়াশা ওকে ছেড়ে চলে গেল তখন ওর পুরো পৃথিবীটা ভেঙ্গে টুকরো হয়ে গেল । রোজকার মতই আজও কুয়াশা এসেছিল, কিন্তু স্পন্দন জানত আজ কুয়াশা চলে যাওয়ার জন্যে এসেছে ।

শেষবারের মত যখন কুয়াশা ওকে একটু জড়িয়ে ধরল ওর ইচ্ছা করছিল ও কুয়াশা কে ধরে রাখবে, দেবে না ওকে চলে যেতে । কিন্তু ও কিছুই করলনা । একটু বসে থেকে চোখ মুছে নিয়ে উঠে চলে গেল কুয়াশা। তারপর থেকেই ও ভাবছে সে এটা নিয়ে । সে দেখবে কি করে কুয়াশা ভবিষ্যতে ।

যখন স্পন্দন ওকে বলত, “তুমিও অন্য মেয়েদের মত একসময় চলে যাবা ছেড়ে, অন্য আর একজন মানুষ এর সাথে থাকবা, তার জন্যেই হবে তোমার সব ভালবাসা। ” তখন তো কোথায় থেকে এক ফোঁটা জল চলে আসত কুয়াশার চোখে । চোখ দিয়ে আর ওর গাড় ভালবাসা দিয়ে বলে দিত সে কখনই যাবেনা । আরও বলত সে আর অন্য সব মেয়ে এক না । তাহলে আজ কি হল ? আজ সে অন্য সব গুলো মেয়ের মত হল কিভাবে ? এটাই জানতে হবে স্পন্দনকে ।

আজ ও একা ওর টাইম মেশিন এ করে যাবে । এই ২১১২ সালে হয়ত কেউ কল্পনাই করতে পারেনা টাইম ট্রাভেল এর কথা, কিন্তু স্পন্দন এর কাছে এটা কিছুইনা । অসম্ভব প্রতিভা নিয়ে জন্ম নেন স্পন্দন এর বাবা, পদার্থ বিজ্ঞান এ প্রথমবারের মত তিনবার নোবেল পুরস্কার জিতে নেন তিনি । হয়ত তার তৈরি করা টাইম মেশিন তিনি পৃথিবীকে দেখালে জিবনের বাকি বছর গুলোতে তিনি প্রত্তেক বছরেই একবার করে নোবেল পুরুষকার পেতেন ! কিন্তু তিনি কালের মঙ্গলের জননে তা করেননি । টাইম ট্রাভেল করে কেউ যদি অতীত অথবা ভবিষ্যতে গিয়ে খুব ক্ষুদ্র একটা পরিবর্তন করে ফেলে তাহলেই যেকোনো এক কালে হয়ে যেতে পারে প্রলয়ঙ্কারি কিছু ।

তিনি চান নাই এমন কিছু ঘটুক । স্পন্দন ছোটবেলা থেকেই টাইম ট্রাভেল করতে খুব পছন্দ করে । কিন্তু সেটা অবশ্যই একা নয় । কারন টাইম ট্রাভেল করে অন্য কালে কোন একটা ক্ষুদ্র পরিবর্তন হলেও যাতে সাথের মানুষটি ঠিক সেই পরিবর্তন এর বিপরীত কিছু করে প্রলয় আটকাতে পারে। স্পন্দন কুয়াশা কে নিয়ে অনেকবার গিয়েছে অতিতে ।

কিন্তু স্পন্দন কখনই ভবিষ্যতে যায়নাই । কারন ভবিষ্যতে কোন পরিবর্তন ঘটলে সেটা প্রভাব ফেলবে অস্বাভাবিক । বর্তমান নিজের মত করে চলে যখন তার লক্ষে পৌঁছে দেখবে সেখানে তার জন্যে অপেক্ষা করছে অন্য এক ভবিষ্যৎ, তখন সেই বর্তমান আরেকটা প্যারালাল কাল ঠিক করে নেবে । এর ফলে তখন একি বর্তমান এর অতিত একটা হলেও ভবিষ্যৎ হবে দুইটা । এর ফলে কি ধরনের বিপর্যয় হতে পারে সেটা জানেনা স্পন্দন ।

উঠে দাঁড়াল স্পন্দন, এত ভাবার সময় নেই । সে আজ ভবিষ্যতে যাবে । সে দেখতে যাবে কুয়াশা কি করছে সেখানে । সে ইচ্ছা করলে অতিতে গিয়ে বদলাবার চেষ্টা করে আসতে পারত, কিন্তু ও ভবিষ্যতেই যাবে । ও কুয়াশাকে দেখবে, কষ্ট পাওয়ার মত কিছু দেখতে হলে তাই দেখবে ।

গোসল সেরে ওর নিজের প্রিয় কাল শার্ট টা পড়ল স্পন্দন । ভবিষ্যৎ এ যাওয়ার জননে সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে প্ল্যাটফরম এ উঠে দাঁড়িয়ে কাঁধে নিল ওর মেশিনটাকে । মেশিন থেকে বের হয়ে আসা মৃদু গুঞ্জন আর হালকা নীলাভ আলোতে স্পন্দনকে কেমন যেন কঠিন দেখাতে লাগে । গুঞ্জন আর আলো দুটাই বারতে বারতে তীব্র ঝলকানি দেয় হঠাৎ । চোখ মেলতেই স্পন্দন দেখে একজোড়া পরিচিত চোখ ওর মুখের উপর উদ্বিগ্ন ভাবে তাকিয়ে আছে ।

পাচ-ছয় বছরের একটি মেয়ে, রেশমের মত কাল মাথা ভর্তি চুল, মায়াভরা কালো দুটি চোখ আর গোল আদুরে একটা মুখ । ওকে উঠে বসতে দেখে অবাক হয়ে দেখল ওকে । এই সময় একজন মানুষ ডাক দেয় বাচ্চাটিকে । মেয়েটির নাম শুনে লাফ দিয়ে উঠে স্পন্দন এর হৃৎপিণ্ড । মানুষটি বাচ্চাটিকে রোদেলা বলে ডাকল ! আর! আর, বাচ্চাটির চোখ একদম কুয়াশার চোখের মত ! সেই অবাক দৃষ্টি, মায়াময় চাহনি ! তাহলে কি ... স্পন্দন লক্ষ করে আরাল থেকে, হ্যাঁ ও যা ভাবছিল তাই ঠিক ।

মেয়েটি কুয়াশার,কিন্তু মানুষটা যে স্পন্দন নয় ! অন্য কেউ, যে বাচ্চা মেয়েটিকে কোলে নিয়ে আর কুয়াশার হাত ধরে হাঁটছে । কি এক অদম্য ক্রোধ আর অসহ্য কষ্টে ভেসে গেল স্পন্দন এর সব অনুভূতি । সে ঠিক করে ফেলল তার করনিও । সেই রাতে যখন বাসায় ফিরছিল সেই মানুষটি, স্পন্দন তাকে খুন করল । কিন্তু সেই লোকটি কিছু টের পাওয়ার আগেই খুন হয়ে গেল, স্পন্দন কোন কষ্ট দিতে চায়নাই তাকে।

এবার সে যাবে কুয়াশার কাছে, সে নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দিবে না ওকে । কিন্তু তার আগে সময় দিতে চায় সে কুয়াশাকে । তাই স্পন্দন ঠিক করল ও বর্তমানে ফিরবে সব কিছু গুছায় নেয়ার জননে, সব গুছিএ নিয়ে সে আবার ফিরে আসবে ভবিষ্যতে । তারপর নষ্ট করে ফেলবে ওর টাইম মেশিনটা । তখন কুয়াশা হবে ওর শুধু ওর, স্পন্দন আর ফিরে যাবেনা ওর অতীতে ।

কিন্তু স্পন্দন যে অপুরনিও ক্ষতি করে ফেলছে সেটা সে খেয়াল করলই না । সে ভবিষ্যৎ দুই ভাগে ভাগ করে দিয়ে ফিরে এল বর্তমানে । এখন তাকে বেশ খুশি দেখায় । সে তার বর্তমানের সব কিছু ভবিষ্যতের জননে গুছিয়ে নিয়ে চলল ভবিষ্যতের দিকে । কিন্তু সে নিজেই তো তার রাস্তা দুইটা করে রেখে এসেছে ।

তার বিভ্রান্ত টাইম মেশিন তাকে কোন ভবিষ্যতে না নিয়ে তাকে নিল দুইটি প্যারালাল ভবিষ্যতের মাঝের স্পেস এ । যেখানে শুধুই শুন্যতা, যেখানে কাল বা সময় বলে কিছু নেই । স্পন্দন সেই স্পেস থেকে স্পষ্ট করে দেখছে দুইটা ভবিষ্যতকে । কিন্তু যেতে পারছে না কোনটিতেই । অবাক হয়ে স্পন্দন লক্ষ করল সময় এর অস্তিত্ত না থাকায় তার টাইম মেশিন কোন কাজ করছে না ।

একবুক হতাশা, কষ্ট আর অসীম শূন্যতা নিয়ে দেখল প্রথম ভবিষ্যতে কুয়াশা তার একমাত্র মেয়ে রোদেলাকে নিয়ে তার ভালবাসার মানুষটির জন্ন্যে অপেক্ষা করছে, যে মানুষটি হঠাৎ করে একদিন হারিয়ে গেছে আর ফিরে আসেনি। কুয়াশার দৃঢ় বিশ্বাস মানুষটি আসবে, সেই বিশ্বাস নিয়েই সে অপেক্ষায় থাকে । আর দ্বিতীয় ভবিষ্যতে স্পন্দন এর খোঁজে কুয়াশা কেমন পাগল প্রায় হয়ে উঠেছে, যেখানে কুয়াশা নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্পন্দন এর কাছেই ফিরে যেতে চেয়েছে । কিন্তু স্পন্দনকে কোথাও খুজে পায়নি । আর স্পন্দন নিজে শুধু শূন্যতার অতলে অসীম শূন্যতা বুকে নিয়ে কষ্টে ভেসে বেড়ায় ।

পরিশিষ্টঃ কুয়াশা আসলেই পারেনি স্পন্দনকে ছাড়া থাকতে । আগেই ঠিক করে রাখায় তাই তারা তাদের প্রথম হওয়া মেয়ের নাম রাখে রোদেলা । একদিন কাজ থেকে ফেরার সময় স্পন্দন মারাত্তক এক্সিডেন্ট করে । তার মুখের দুটা হার ভেঙ্গে যায় এবং মুখের চামড়া ঝলসে যায় । পরে সে সার্জারি করলেও,তার আগের মত মুখায়ব পায়নি ।

এরপর ধিরে ধিরে সুস্থ হয় স্পন্দন । কুয়াশার দিন গুলো ভালই কাটছিল অদের দুজনকে নিয়ে । কিন্তু একদিন হঠাৎ স্পন্দন হারিয়ে গেল । আজও কুয়াশা অপেক্ষা করে স্পন্দন এর । আমার কিছু কথাঃ এটা আমার লিখা প্রথম গল্প ।

প্রথমে ভেবেছিলাম একটি রোম্যান্টিক গল্প লিখব, লিখা শুরু করার পর কিভাবে কিভাবে জানি সেটা রোম্যান্টিক সায়েন্স ফিকশান হয়ে গেল, আর সীমিত জ্ঞানের অধিকারী হওয়ায় সায়েন্স এর ব্যাপার গুলতে বেশি বর্ণনায় যাইনি ! ডক্টর মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার আমার প্রিয় লেখকদের একজন, সেই কারনে তার লেখার কিছু প্রভাব হয়তো পরেছে আমার লেখায় । আরও অনেক ভুল হয়তো নিজের অজান্তেই করে ফেলেছি, সেগুলো পাঠক ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্রত্যাশা করি । একটি প্রশ্নঃ বাস্তবের কুয়াশারা কি এরকম হয় ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।