মানুষ তার আশার সমান বড়...
রাজীবটা একটুও বদলায়নি। সেই তেমন আধ-খানা পাগলাটে, লম্বাটে চুল, আর গোছানোর মাঝে কিছুটা অগোছানো হাসি, তেমন আধ-খানিক কথা দিয়ে তার কথা না রাখার বাতিক, রিঙ্াওয়ালাদের সাথে ভাড়া নিয়ে তুমুল দ্বন্দ্ব, গিটার... নীলা স্মৃতি... এইতো রাজিব। তবে, নিজের পথচলাটায় বেরিকেড দিয়ে তার সামনে লাল সবুজ পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে সে। উদভ্রান্তের মত। দুঃখ হয়, আবার ভয়ও লাগে।
কেমন অদ্ভুত হাসিখুশি থাকে সে!
রাশেদটাকে চিরকাল ভালোবেসে যাব। পুরোপুরি পাগল ছেলেমানুষযে সে! ওর ভালোবাসাটা নর্িেভজাল খাঁটি। বেহেশতী হুর (লাবনী) ছেড়ে সে আধ-খানা, ঊন-মানবীকে ভালোবেসেছে! খাঁটি নোয়াখালীকে সে মনের ভেতর পুরেছে! ভয়ঙ্কর, তাইনা? কলি হোক কিংবা কালি, এটার জন্যই রাশেদের সাথে আমার প্রায়ই লেগে যায়। ও আমাকে কিছু বলতে পারেনা, পাশে রাজিব কিংবা জামি যেই হোকনা কেন তুমুল লড়াই লেগে যাবে। তুই থাকলেতো কোনো কথাই ছিলনা, ষ্টপ ইট, ষ্টপ ইট... ধ্যাত্তরি 'তুই আমার সাথে আর কখনো কথা বলবি না...' কত মান অভিমান...! আহ তোর সঙ্গ খুব বেশি মিস করি।
সুজন তুই কেমন আছিস? তোর সব খবরই আমার জানা, এমনকি তোর মা-বাবা'র চেয়েও কিছুটা বেশি জানি। রাশেদ মাঝে মাঝে খুব হিংসে করে, জামিলও ঠিক তাই। রাজিবটা করেনা, ওতো নিজেকে নিয়ে থাকে। আমার কিন্তু বেশ লাগে। এই এসবের ভেতর নিজেকে মাতিয়ে রাখি।
নিজের হাজারটা সমস্যার কথা কাউকে বলতে হয়না, কেউ হয়তো শুনতে চায়না বলে বলিনা, কিংবা তোদের সমস্যাগুলো আমারগুলোর চেয়ে অনেক অনেক বিশাল বলে সাইডে থাকি; কচ্চপের মত দুঃখের মাথাটা ভেতরে পুরে তোদের সাথে হাসি-ঠাট্টার অভিনয় করি। অভিনয় বললে ভুল হবে, তোদের উচ্ছাসিত আর উচ্ছল নির্ভেজাল ভালোবাসায় আমি ভেসে যাই। আমার অসময়গুলো এভাবেই কাটে, কখনো তোদের সাথে, কখনোবা মানুষের মাঝে, কখনো কখনো ছাদে'র রেলিংয়ে শুয়ে-বসে। তুই এখন ভালো নেই, যদিও তোর সাথে আমার অনেক দিন যোগাযোগ নাই; তারপরও অনুভব করি। কোথায় তুই এখন? কোন নগরীতে, আমাদের কথা কি তোর মনে পড়ে? বৃষ্টির গন্ধটা ওখানে কেমন? সেখানে ফেটে যাওয়া বুদবুদ গুনতে পারিস? এখানে অবেলায় অনেক শীত পড়েছে।
মানুষগুলোর কতযে কষ্ট হবে এবার...।
জামিলটা আরও একটু লম্বা হয়েছে মনে হচ্ছে। ওর লম্বা হওয়াটা ফিতে দিয়ে মাপা লাগেনা। গিরিঙ্গীটা একটু ধারালো হয়েছে অনুভব করতে পারলেই বুঝতে হবে জামিল 7 ফুটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত...!!! ভাবছি ল্যাম্পটা দিয়েই দেব কিনে। সিটি কর্পোরেশনের একটা ল্যাম্পপোষ্ট ঝামেলার অবসান হবে।
গিরিঙ্গি জামিলের আপডেট ভার্সন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এক হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিবি্ব হাসি-খুশি সে। দেখা হলো সেদিন, আজ আমাকে দেখতে এলো হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে। কেমন করে যে সে অকপট এবং চরম সত্য কথাগুলো আমার-তোর-মানুষের মুখের সামনে বলে দেয়! ওকে কেউ কখনো কোনো গোপন কথা বলেনা, কখননা আবার বিনে মেঘে বজ্রপাত নেমে আসে... পার্টি নিয়ে আছে ভালোই বলা যায়। সেদিন বিডিআরের ঠ্যাঙ্গানি খেয়ে হাত ভেঙ্গে এসেছে...।
ওর ট্রিটমেন্টটা নির্ঝরকে দিয়ে করালে কেমন হয়? নির্ঝর? হা হা হা হা। নাহ ওকে অবহেলা করা মোটেও উচিৎ নয়। সেদিন বললো- ওর নাকি আত্ম বিশ্বাস বেড়েছে। আমিতো ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে শুনলাম। বিশ্বাস কর আমি রাস্তায়ও পড়ে যাই নাই।
আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম!! তুই থাকলে পারতিস না, আই নো ইউ...!!! দুঃখের কথা হচ্ছে ওই নাকি তার প্রথম অপারেশন আমার উপর চালাবে...! কি বিপদের কথা, ছোট বেলার মুরগী জবাইয়ের ঘটনাটা আমিও এখনো ভুলতে পারিনি। আমিতো বলেছি, 'হুম তুমি ভালো ডাক্তার হতে পারবে, বিশেষ করে অপারেশনের সময় রোগীকে সেন্সলেস করার জন্য ক্লোরোফর্ম লাগবে না, তোমাকে দেখলেই রোগী অটো সেন্সলেস হয়ে যাবে... !!!' হা হা হা। দেখ, ওকে কিন্তু তোরা মোটেও বুঝিসনা, আমি বুঝি। ভালো ছেলে; ভিষন ভালো ছেলে। আমার অসময়গুলোয় ও আসে, পাশে বসে, এমনকি মেডিকেল পর্যন্ত ফাঁকি দেয়!!!
আমি দিনকে দিন অবসাদগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছি।
সৃষ্টিশীল ভাবনারা প্রয়োজনের কাছে হেরে যাচ্ছে; দিনকে দিন। অথচ আমি-তুই-আমাদের স্বপ্নগুলো একসময় কত সবুজ ছিল... কত সতেজ ছিল আমাদের ভাবনাগুলো... ছোট ছোট সুখ স্বপ্ন... পরিবারকে কিছুটা স্বস্তি দেয়া ছাড়া আর কি ভাবতে পারছি এখন? তাও না। পুরোপুরি মানুষের স্বীকৃতি দেয়া যাবেনা মোটেই আমাকে। ওদের চরম অবেলায় যখন কিছুই করতে পারিনা, তখন খাঁচাবন্দী পাখির মত ছটফট করতে থাকি। কষ্ট, কষ্ট, ভিষন কষ্ট আর লজ্জা।
ইচ্ছে করে তখন দেশান্তরী কিংবা দুনিয়া থেকে নিজেকে মুছে ফেলতে। পারিনা, পারিনা অন্যের স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে। নিজের কথা কখনো কাউকে বলিনি, তোকেও না। কান্না'র রোল বুকে নিয়ে আজ বলতে ইচ্ছে করছে খুব- 'আমি হেরে গেছি এবং হারিয়ে যাচ্ছি দিনকে দিন'। উহু আমি তোকে অর্ধেক কথা বলে রাস্তার ধারের ফোনবুথে নিয়ে ফেলতে পারিনা।
আমি তোর আধো ভাসা ভাসা অভিমান, কিংবা অনুনয়, শালা গালি শুনতেও এখন চাইনা। পোষ্টটা করেই কেটে পড়বো, তুই যদিওবা একটু সময় পাস তবু এখন এত এত ক্লান্ত থাকিস যে নেটে ঢু মারার লোভটা তুই করবি না সে আমি জানি। তোর প্রতি ভালোবাসা, কিংবা তোদের প্রতি ভালোবাসা কখনো দেখিয়ে যেতে পারবো নারে...। উহু তুই আমার ঠোঁট কাটা আর নাক ফাটার কাহিনীগুলো শুনাবি, অথবা সি ব্লকের কথা, কিংবা বোটানিক্যাল এর ঘটনা...! সে আমি জানি... সেতো ছিল আমার পাগলামী, ভালোবাসা কই? নির্ঝরদের পাঁচতলার বাসার জানলার গ্রিল ধরে ধরে ক্রিকেট বল কুড়িয়ে আনার মতই ঘটনা ওসব। তোকে বলা হয়নি আজকে গেলাম আমাদের কৈশোরে।
আমি, রাশেদ, জামি, সুমন... অনেক বদলে গেছে কৈশোরের গ্রামটা। ছবি তুলেছি কিছু। ঢাকার কালো টাকা গ্রামটাকে পোড়া ইটের জঞ্জালে ভরে ফেলছে দ্রুত। রাশেদটা খুব দৌড়েছে, জামি আর কি করবে... ভাঙ্গা হাত নিয়েই নিজের প্রাণ নিয়ে ভেগেছে, শেষে ঘাসের ওপর শুয়ে আত্মসমর্পন করেছে। রাশেদ বলছে- আমার চোখ হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চোখ।
জামিকেতো চিনিসই, বললো- সেজন্যইতো চোখে চশমা... হা হা হা হা। বুঝে নে পরের ঘটনা কি হতে পারে...।
মেঘের দেশে (বান্দরবান) যাবার ইচ্ছে ছিল খুব। আম্মাটা হঠাৎ অসুস্থ্য হওয়ায় আমার ইচ্ছেগুলো উড়ে গেছে। তুই থাকলে খুব সুবিধে হতো।
9 নম্বরে বসে যুক্তি করা যেত! ভুলেই গেছি, 9 নম্বর নতুন পোষাক পড়ে মানুষ ঠকাচ্ছে। লোকাল থেকে সুপার সিটিং লোকাল বানিয়েছে। লেখাটুকু লিখেই যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছে! মজার ব্যাপার হচ্ছে- রাস্তায় এসে তুই একটাও লোকাল বাস খুঁজে পাবিনা; সবই 'সুপার সিটিং লোকাল' হয়ে গেছে! অথচ মানুষ নিচ্ছে চেপে চেপেই। মানুষগুলো কিছুই বলেনা। কিছুইনা।
কেমন অদ্ভুত মানুষগুলো, কতশত ঘটনা বেমালুম মেনে নেয়। অথচ যেসবের দরকারই নেই সেসবে রক্তারক্তি কান্ড ঘটায়। যেমন ধর অবরোধের কথা! ওহো আরও একটি মজার কথা বলা হয়নি; কাল রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি- আমার চেয়ে তিন/চার বছরের বড় একটা ছেলে হাতে একটা একশ টাকার নোট গুজে দিয়ে বললো তাদের সাথে থাকতে, মানে মিছিলে যেতে, অবরোধে শরিক হতে! আমি খুব বিনয়ের সাথেই প্রত্যাখান করলাম। সে কিছুই মনে করলো না। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া আরেকজন পথচারীর দিকে এগিয়ে গেল! টাকা রোজগার এত সোজা জানতাম না।
ভিষন ইচ্ছে করছিল টাকাগুলো নেয়ার জন্য; কেনযে নিলাম না...। বলার মত আর কিছু নাই কিংবা বলতে আর ইচ্ছে করছেনা। কথার কারখানা বুকেতে নিয়ে তুই এখন আগের মত ছটফট করিস? তোর মনে আছে জুঁই'র কথা; ঐযে যার জন্য খুব কাঁদলি... রাশেদটা যদি কখনো জানতো তোর সেই ত্যাগের কথা, তাহলে তোকে সে সবচে' বেশি ভালোবাসতো। আমি, জামি, কখনোই তাকে বলিনি; কাউকে বলিনি। ত্যাগটা করে কিইবা লাভ করতে পারলি, মেয়েটা রাশেদের ভালোবাসাটা বুঝতেই পারলোনা।
কিংবা তোকেই হয়তো সত্যিকার ভালোবেসেছিল। আমাকে পরে ফোন করে কত কান্নাকাটি! আর আমি শালা তাকে ঋতু বদলের কথা শুনালাম! আমি ইচ্ছে করলে ফিরিয়ে দিতে পারতাম তার প্রেম! কেন ফিরিয়ে দিলাম না তোকে? কেন?
উদভ্রান্তের মত ভিষন ভালো আছি।
ভালো থাকিস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।