I am Bangladesh supporter প্রশ্ন :
পাকিস্তানে কতক সূফী রয়েছে, এরা মূলত সকল অনিষ্টের মূল, আমি তাদের এক আলেম নামধারী ব্যক্তিকে বলতে শোনে হতবাক হয়ে গেছি, সে বলে : তোমরা বাস্তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাত লাভ করতে পার ? তার উদ্দেশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সশরীরে জীবিত এসে তার ওলীদের সাথে সাক্ষাত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন তারা শুধু এটা অবিশ্বাসই করে না, বরং তারা বলে : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্তমানেও তার ওলীদের সাথে জীবিত সশরীরে এসে সাক্ষাত করেন। আমরা তাদেরকে কিভাবে প্রতিবাদ করব ? ইসলামী শরী'আতে এর হুকুম কী ?
উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ
বিদ‘আত প্রতিরোধ করা অথবা কারো ভুল সংশোধন করার উত্তম পন্থা হচ্ছে তার কাছে দলিল সম্পর্কে জানতে চাওয়া। যার কথা বা দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে দলিল চাওয়া হয়, সে অবশ্যই নিজের বিষয়টি গভীর মনোযোগ ও বিবেক দিয়ে যাচাই করে, সঠিক দলিল ও নির্ভুল নিয়ম অনুসরণ করে, ধারণা বা শ্রুত কোন ঘটনার ভিত্তিতে নয়। এ প্রসঙ্গে সকলে একমত যে, এ বিষয়গুলো দ্বীনি ও ধর্মীয়, অতএব এসব বিষয়ে সকলের কর্তব্য দলিল উপস্থাপন করা এবং দলিলের ভিত্তিতে এসব গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করা।
এরা জাগ্রত অবস্থায় সরাসরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখার দাবি করে :
তারা হয়তো বলে : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূহসহ সশরীরে জীবিত, যেখানে ইচ্ছা যাওয়া-আসা এবং যেরূপ ইচ্ছা নড়াচড়া করেন, যেমন ছিলেন তিনি জীবিত অবস্থায়, অনুরূপ এখনো।
অথবা তারা বলে : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন, অর্থাৎ তিনি তার বারযাখি জগত তথা কবরের বিশেষ হায়াতে চলে গেছেন, যে হায়াত একমাত্র তার সাথেই খাস, যদি কেউ তাকে দেখে, মূলত তার সামনে তার আকৃতি ভেসে উঠে সেখান থেকেই।
উভয় অবস্থায় তারা দলিল পেশ করতে বাধ্য, কুরআন অথবা সুন্নত অথবা উম্মতের ইজমা থেকে। তারা যেসব দলিল বর্ণনা করে, তা আমরা খতিয়ে দেখেছি, যার সারাংশ কতক ওলী ও নেককার লোকের ঘটনা এবং তাদের উল্লেখ করা প্রত্যক্ষদর্শী কতক লোকের নাম। সন্দেহ নেই, এসব ঘটনা দলিল হিসেবে পেশ করার উপযুক্ত নয়।
দলিল হয়তো কুরআনের আয়াত অথবা হাদিস অথবা উম্মতের ইজমা অথবা ন্যূনতম পক্ষে কোন সাহাবির বাণী হবে, কিসসা বা ঘটনা নয়। বিশেষ করে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিত্ব ও ইলমে গায়েবের সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয় হয়।
তাদের বর্ণিত এসব কিসসা-কাহিনীর ব্যাপারে আমি বলতে চাই, এতে নানা সম্ভাবনা বিদ্যমান : হয়তো এসব ঘটনা কখনোই সংঘটিত হয়নি, তারা শুধু নিজেদের কল্পনা প্রকাশ করেছে, অথবা এসব ঘটেছে তাদের স্বপ্নে দিবালোকে নয়, এমনও হতে পারে শয়তান নিজের আকৃতি পরিবর্তন করে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতির ধান্ধা দিয়েছে, অথবা এগুলো ছিল তাদের চিন্তার ভেলকিবাজি, যা তারা বাস্তব ধরে নিয়েছে।
আর আমরা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাস্তবে দেখার বিপক্ষে দলিল পেশ করতে সক্ষম হই, -ধ্যানে বা খেয়ালে দেখার বিপক্ষে নয়, তাহলে এসব সম্ভাবনাই জোরদার হয়, বলার অপেক্ষা রাখে না।
আবু বকর সিদ্দীক -রাদিআল্লাহু আনহু- বলেন : “জেন রেখ, যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদাত করত, নিশ্চয় মুহাম্মদ মারা গেছেন, আর যে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত করত, আল্লাহ চিরঞ্জীব তিনি কখনো মারা যাবেন না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ
'নিশ্চয় তুমি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল'। [সূরা যুমার : ৩০]
সূরা আলে-ইমরানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئاً وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ
'আর মুহাম্মদ কেবল একজন রাসূল। তার পূর্বে নিশ্চয় অনেক রাসূল বিগত হয়েছে। যদি সে মারা যায় অথবা তাকে হত্যা করা হয়, তবে তোমরা কি তোমাদের পেছনে ফিরে যাবে ? আর যে ব্যক্তি পেছনে ফিরে যায়, সে কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেবেন'।
[সূরা আলে-ইমরান : ১৪৪] [বুখারী : ৩৬৬৭]
সাহাবায়ে কেরাম, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অতি নিকটবর্তী ছিলেন, তাকে অধিক মহব্বত করতেন এবং তার আনুগত্যে নিজেদের উৎসর্গ করে দিতেন, তারা যদি মৃত্যুর অর্থ অনুধাবন করতে পারেন, অর্থাৎ তার সাথে দুনিয়াতে আর কখনো সাক্ষাৎ সম্ভব নয় জানেন, তাহলে এরা কিভাবে ধারণা করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে, তাদের সাথে উঠাবসা করে ?!
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ -রাহিমাহুল্লাহ- বলেন :
“এসব ক্ষেত্রে তাদের কিছু শয়তানি ধান্ধা ও আসর হাসিল হয়, যা তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে কারামত মনে করে। তাদের কেউ দেখে যে, কবরস্থ ব্যক্তি তার কাছে এসেছে, -অথচ বহু বছর পূর্বে সে মারা গছে- এবং বলছে : আমি অমুক। অনেক সময় তাকে বলে : আমরা এমন লোক, আমাদেরকে যখন কবরে রাখা হয় আমরা উঠে আসি। এমনি ঘটনা ঘটেছে তুনসি ও নুমান সালামির সাথে। আর শয়তান তো অহরহ মানুষের আকৃতি ধারণ করে, তাদেরকে ঘুমন্ত ও ও সজাগ উভয় অবস্থায় ধোঁকা দেয় ও প্রতারিত করে।
অনেক সময় অপরিচিত লোকের নিকট এসে বলে : আমি অমুক বুযুর্গ অথবা আমি অমুক আলেম। অনেক সময় তাদেরকে বলে : আমি আবু বকর, আমি ওমর। আবার অনেক সময় জাগ্রত অবস্থায় এসে বলে : আমি মাসীহ, আমি মূসা, আমি মুহাম্মদ।
এ জাতীয় আরও অনেক ঘটনা আমি জানি, আর এ থেকে অনেকে বিশ্বাস করে নেয় যে, নবীগণ নিজ আকৃতিতে জাগ্রত অবস্থায় তাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছেন।
এদের কতক শায়খ আছেন, যাদের মুজাহাদা, ইলম, তাকওয়া ও দ্বীনদারী প্রসিদ্ধ, তারা সরল মনে এসব ঘটনা বিশ্বাস করে নেয়।
এদের মধ্যে কতক রয়েছে, যে ধারণা করে, যখন সে নবীর কবর যিয়ারত করতে আসে, তখন তিনি সশরীরে কবর থেকে বের হয়ে তার সাথে কথা বলেন। এদের কেউ কাবার সীমানায় জনৈক শায়খের চেহারা দেখে বলে : তিনি ইবরাহিম খলিল।
এদের কেউ ধারণা করে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হুজরা থেকে বের হয়ে তার সাথে কথা বলেছেন। এটা সে নিজের কারামাত মনে করে। এদের কারো বিশ্বাস : কবরস্থ ব্যক্তিকে আহ্বান করলে সে ডাকে সাড়া দেয়।
এদের কেউ বর্ণনা করত : ইব্ন মুনদাহ কোন হাদিস সম্পর্কে সমস্যায় পড়লে, হুজরায় প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করত, আর তিনি তার উত্তর দিতেন। সর্বশেষ এমন ঘটনা মরক্কোর এক ব্যক্তির ঘটে, অতঃপর সে এ ঘটনাকে নিজের কারামাত গণ্য করে।
এসব ধারণা পোষণকারী সম্পর্কে ইব্ন আব্দুল বারর বলেছেন : তুমি নিপাত যাও! এসব ঘটনা তুমি মুহাজির ও আনসার সম্পর্কে জান ? তাদের মধ্যে এমন কেউ ছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর যে তাকে জিজ্ঞাসা করেছে, আর তিনি তার উত্তর দিয়েছেন ?
সাহাবায়ে কেরাম কত বিষয়ে মত বিরোধ করেছে, তারা কেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেনি ?! এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ে ফাতেমা মিরাসের ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন, তিনি কেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেননি ?” “মাজমুউল ফতোয়া” : (১০/৪০৬-৪০৭)
ইব্ন তাইমিয়্যাহ -রাহিমাহুল্লাহ- আরও বলেন :
“এর দ্বারা বলা উদ্দেশ্য যে, সাহাবায়ে কেরামদের গোমরাহ করার জন্য শয়তান এসব স্পষ্ট কুফরি পেশ করার সাহস করেনি, যেরূপ সাহস এসব গোমরাহ ও বিদআতিদের ক্ষেত্রে করেছে, এরা কুরআনের অপব্যাখ্যা করেছে, অথবা এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, অথবা এরা অস্বাভাবিক আশ্চর্য কিছু শ্রবণ করেছে ও দেখেছে, আর তাকেই মনে করেছে যে, এগুলো নবী ও নেককার লোকের আলামত, অথচ এগুলো ছিল শয়তানের কারসাজি। খ্রিষ্টান ও বিদ‘আতি সম্প্রদায় এভাবেই পথভ্রষ্ট হয়েছে। তারা মুতাশাবেহ আয়াতের (যার অর্থ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না) অনুসরণ করে, আর দাবি করে এগুলো মুহকাম (স্পষ্ট অর্থের ধারক), অনুরূপ তারা যুক্তি ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য দলিল আঁকড়ে থাকে, অতঃপর কিছু শোনে ও দেখে বলে : এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে, অথচ তা শয়তানের পক্ষ থেকে, আর তারা দাবি করে এগুলো স্পষ্ট সত্য এতে কোন অস্পষ্টতা নেই।
অনুরূপ সাহাবাদের ক্ষেত্রে শয়তান এমন সাহস করেনি, তাদের সামনে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতি ধারণ করবে, অথবা তার নিকট ফরিয়াদ করবে, অথবা তাদের নিকট এমন আওয়াজ পেশ করারও সাহস দেখায়নি, যে আওয়াজ তার আওয়াজের ন্যায়, কারণ যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছে, তারা নিশ্চয় জানে এসব শিরক ও হারাম।
এ জন্য শয়তান তাদের কাউকে এও বলতে সাহস করেনি : তোমাদের কারো প্রয়োজন হলে আমার কবরের নিকট আস, আমার উসিলা দিয়ে ফরিয়াদ কর, না তার জীবদ্দশায় না তার মৃত্যুর পর। পরবর্তী যুগের লোকের ক্ষেত্রে যেরূপ ঘটেছে।
শয়তান তাদের কারো নিকট এসে এও বলার সাহস করেনি : আমি অদৃশ্য ব্যক্তি, অথবা আমি চতুর্থ আওতাদের অন্তর্ভুক্ত, অথবা সপ্তম আওতাদের অন্তর্ভুক্ত, অথবা চল্লিশ আওতাদের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ তাদের কাউকে বলার সাহস করেনি : তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত, কারণ এগুলো ছিল তাদের নিকট অসার ও নিরর্থক।
শয়তান তাদের কারো কাছে এসে বলার সাহস করেনি : আমি আল্লাহর রাসূল, অথবা কবর থেকে তাদের কাউকে সম্বোধন করারও সাহস করেনি, যেমন পরবর্তী যুগে অনেকের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তার কবরের নিকট, অন্যদের কবরের নিকট, বরং যেখানে কবর নেই সেখানেও।
অনুরূপ ঘটনা মুশরিক ও কিতাবিদের ক্ষেত্রেও অনেক ঘটে, তারা দেখে মৃত্যুর পর তাদের কোন সম্মানিত ব্যক্তি এসে তাকে সম্মান করছে। যেমন হিন্দুরা তাদের শ্রদ্ধার পাত্র পুরোহিত বা অন্য কোন কাফের ব্যক্তিকে দেখে। যেমন নাসারাগণ তাদের শ্রদ্ধার পাত্র নবী, হাওয়ারী ও অন্যদের দেখে। অনুরূপ আহলে কেবলার পথভ্রষ্টরাও জাগ্রত অবস্থায় তাদের সম্মানিত ব্যক্তিদের দেখে : হয়তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অথবা অন্য কাউকে, তারা তাকে সম্বোধন করে, সেও তাদেরকে সম্বোধন করে।
কখনো তার থেকে উপকৃত হয়, তাকে কোন হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আর সে তাদেরকে উত্তর দেয়। তাদের কাউকে এমন ধারণা দেয়া হয় যে, হুজরা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এসেছেন, তার সাথে মু‘আনাকা করছেন তিনি এবং তার দুই সাথী। আবার তাদের কাউকে এমন ধারণা দেয়া হয় যে, তার সালাম কয়েক দিনের দূরত্বে ও অনেক দূর স্থানে পৌঁছে গেছে। এরূপ আরও অনেক ঘটনা জানি এবং যাদের সাথে ঘটেছে তাদের অনেককেই জানি। আমার নিকট এদের অনেকে এর সত্য সত্য বর্ণনা দিয়েছে, তাদের উল্লেখ করলে স্থান দীর্ঘায়িত হবে।
এরূপ ঘটনা অনেকেরই ঘটতে পারে, যেরূপ ঘটে নাসারা ও মুশরিকদের ক্ষেত্রে। তবে এদের অনেকে এ ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। আবার এদের অনেকের ক্ষেত্রে ঘটনা সত্য হলেও, তারা এটা আল্লাহর নিদর্শন মনে করে, আরও ধারণা করে এটা তার অন্তরের শুদ্ধতা ও দ্বীনদারীর কারণেই ঘটেছে, কিন্তু সে জানে না এটা শয়তানের পক্ষ থেকে, সে জানে না মানুষের জ্ঞানের স্বল্পতার সুযোগে শয়তান তাদেরকে গোমরাহ করে। যার একেবারেই সামান্য জ্ঞান, শয়তান তাকে শরী‘আতের স্পষ্ট খেলাফ করার নির্দেশ করে। আর যার মোটামুটি জ্ঞান রয়েছে, শয়তান তাকে তার জানা বিষয়ের মাধ্যমেই গোমরাহ করে, এটাই শয়তানের কাজ, সে যদিও মনে করে কিছু সে অর্জন করেছে, কিন্তু সে যে দ্বীন হারিয়েছে তার ক্ষতি এরচেয়ে ঢের বেশী।
এ জন্যই সাহাবাদের কেউ বলেনি : তার কাছে খিজির এসেছে, না মূসা, না ঈসা, আর না তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তর শুনেছেন।
ইব্ন ওমর -রাদিআল্লাহু আনহু- সফর থেকে এসেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করতেন, কিন্তু কখনো তিনি বলেননি আমি উত্তর শুনেছি। অনুরূপ তাবেঈ বা তাদেরও অনুসারী কারো ক্ষেত্রে এরূপ ঘটেনি, বরং এসব ঘটেছে তাদেরও অনেক পরে।
অনুরূপ সাহাবাদের কেউ তাদের ইখতিলাফি বিষয় বা ইলমী কোন সমাধানের জন্য তার কবরে যাননি, না চার খলিফা, না তাদের ব্যতীত অন্য কেউ, অথচ তাদের সাথেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্পর্ক গভীর ছিল।
এমনকি ফাতেমা- রাদিআল্লাহু আনহা-কে পর্যন্ত শয়তান বলার সাহস করেনি, তুমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর, আপনার মিরাসের হুকুম কী ?
অনুরূপ অনাবৃষ্টির সময় শয়তান তাদেরকে এভাবে ধোঁকা দেয়ার সাহস করেনি : তার নিকট দোয়া প্রার্থনা কর, যেন তিনি বৃষ্টির জন্য দোয়া করেন।
তাদেরকে এও বলেনি : তোমাদের বিজয়ের জন্য তার নিকট সাহায্যের দোয়া প্রার্থনা কর, আর না বলেছে তার নিকট ইস্তেগফার প্রার্থনা কর। তার জীবিতাবস্থায় যেরূপ তারা তার নিকট গিয়ে রোগ মুক্তির দোয়া চাইত, বিজয়ের জন্য দোয়া চাইত। তার মৃত্যুর পর শয়তান তাদেরকে এরূপ গোমরাহ করার সাহস করেনি, আর না এভাবে সাহস করেছি পরবর্তী তিন যুগে। এসব গোমরাহী তখনই সৃষ্টি হয়েছে, যখন তাওহীদ ও সুন্নতের ইলম হ্রাস পেয়েছে, তখনি তাদের গোমরাহ করার সুযোগ শয়তানের হাতে এসেছে, যেরূপ গোমরাহ করেছে নাসারাদের, যখন তাদের নিকট ঈসা ও তার পূর্ববর্তী নবীদের ইলম হ্রাস পেয়েছিল। ” “মাজমুউল ফতোয়া” : (২৭/৩৯০-৩৯৩)
আল্লামা আলুসি -রাহিমাহুল্লাহ- বলেন :
“কামেল লোকদের সম্পর্কে যা বলা হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তারা তাকে দেখেছেন, তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, তার থেকে শিখেছেন, ইসলামের প্রথম যুগে কারো ব্যাপারে এরূপ ঘটেছে আমাদের জানা নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর দ্বীনি ও দুনিয়াবি বিভিন্ন বিষয়ে সাহাবাদের মাঝে ইখতিলাফ হয়েছে, তাদের মধ্যে আবু বকর ও আলী -রাদিআল্লাহু আনহুমা- ছিলেন, যেসব সূফীদের সম্পর্কে এসব ঘটনা বর্ণনা করা হয়, তাদের সিলসিলা এদের দু'জন পর্যন্ত গিয়েই শেষ হয়, অথচ কোন প্রমাণ নেই যে, তাদের কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাগ্রত অবস্থায় দেখেছেন অথবা তার থেকে শিখেছেন।
অনুরূপ আমাদের কাছে এমন প্রমাণও নেই যে, কোন সমস্যার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে সাহাবাদের সমাধান দিয়েছেন।
ওমর -রাদিআল্লাহু আনহু- থেকে প্রমাণিত, তিনি কোন বিষয়ে বলেছেন : আফসোস ! এ বিষয়ে যদি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করতাম!
আমাদের নিকট এমন প্রমাণও নেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর ওমর -রাদিআল্লাহু আনহু- তার নিকট দু‘আর আবেদন করেছেন, যেমন কতক সূফীদের ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়।
তুমি জান যে, তারা দাদার সাথে ভাইদের মিরাস বণ্টন সম্পর্কে ইখতিলাফ করেছে, কিন্তু তুমি কি জান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর থেকে বের হয়ে তার সমাধান দিয়েছেন ?!
তোমার নিকট নিশ্চয় পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর ফাতেমা -রাদিআল্লাহু আনহা- কিরূপ শোকে কাতর হয়েছিল, “ফিদাক”-এর মিরাস সম্পর্কে তার অবস্থা কেমন হয়েছিল, কিন্তু তুমি কি জান, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর থেকে বের হয়ে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন ও তার সমস্যা দূর করেছিলেন, যেমন সূফীদের ক্ষেত্রে ঘটে ?!
তুমি অবশ্যই জান যে, আয়েশা- রাদিআল্লাহু আনহা- বসরায় গিয়েছিলেন, যে কারণে সেখানে জামাল যুদ্ধ সংঘটিত হয়, কিন্তু তুমি জান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর থেকে বের হয়ে তাকে নিষেধ করেছেন, অথবা তাকে বিরত রেখেছেন ?! এ ধরণের আরও অনেক ঘটনা রয়েছে, যা গণনা করা সম্ভব নয়।
মুদ্দাকথা : আমাদের নিকট পৌঁছেনি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোন সাহাবি বা তার পরিবারের কোন প্রয়োজনে কবর থেকে বের হয়েছেন, অথচ তাদের এটা বেশী প্রয়োজন ছিল।
মসজিদে কুবার দরজার সামনে তার বের হওয়ার যে ঘটনা কতক শি'আ বর্ণনা করে, তাই শুধুই অপবাদ ও মিথ্যাচার।
সারকথা : পূর্ববর্তী নেককার লোকদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বের না হওয়া আর পরবর্তী লোকদের জন্য বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে হবে, যার দ্বারা বিবেকবান সন্তুষ্ট হতে পারে”। রুহুল মা‘আনি : (২২/৩৮-৩৯)
শায়খ ইবন বাজ -রাহিমাহুল্লাহ- বলেন :
“দ্বীনের অকাট্য প্রমাণ ও শরী‘আতের দলিল দ্বারা জানা গেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান নয়, তার শরীর শুধু তার কবরে মদিনা মুনাওয়ারায় বিদ্যমান। আর তার রূহ রফীকে ‘আলায় জান্নাতে বিদ্যমান। এর প্রমাণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস, তিনি মৃত্যুর সময় বলেছেন : “আল্লাহুম্মা ফির-রাফিকিল ‘আলা” তিনবার বলেন, অতঃপর তিনি মারা যান”।
সাহাবায়ে কেরাম ও তার পরবর্তী সকল উম্মত এ বিষয়ে একমত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার মসজিদের পাশে আয়েশার ঘরে দাফন করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত তার শরীর সেখানেই বিদ্যমান। আর তার রূহ, অনুরূপ অন্যান্য নবী-রাসূল ও নেককার লোকদের রূহ জান্নাতে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের স্তর ও মর্যাদায় তারতম্য রয়েছে, তাদের ইলম ও ঈমান এবং দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যের তারতম্য অনুরূপ।
কতক সূফী যেমন ধারণা করে, তিনি গায়েব জানেন এবং তাদের মীলাদ ইত্যাদিতে তিনি উপস্থিত হোন, এসব ভ্রান্ত আকীদা, এর পশ্চাতে কোন দলিল নেই, বরং কুরআন-হাদিস ও আদর্শ পূর্বসূরীদের সম্পর্কে মূর্খতাই তাদেরকে এ দিকে ধাবিত করেছে।
আল্লাহ তাদেরকে যে গোমরাহীতে লিপ্ত করেছেন, তা থেকে আমরা নিজেদের জন্য ও সকল মুসলিমের জন্য নিরাপত্তার প্রার্থনা করছি। অনুরূপ আল্লাহ তা‘আলার নিকট দোয়া করছি, তিনি আমাদেরকে সিরাতে মুস্তাকিম ও সঠিক পথে পরিচালিত করুন। নিশ্চয় তিনি শ্রবণ করেন, নিশ্চয় তিনি কবুল করেন”। (সংক্ষিপ্ত) “মাজমুউ ফতোয়া ইবন বাজ” : (৩/৩৮১-৩৮৩)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।