একটার পিঠে একটা লেখার আইডিয়া মাথায় এসে ভনভন করছে। পিকনিকের গল্প লিখতে গিয়ে মনে পড়ল একটা পিকনিক নদীতে করেছিলাম। সেই সূত্র ধরে নৌবিহারের গল্প লিখতে লিখতে মনে পড়ল আরে ছোটখাট সমুদ্র-বিহারও তো করেছি। সেটাই বা বাদ যায় কেন?
অবশ্য সমুদ্র-বিহারের গল্প নতুন করে বলার মত কিছু নেই। যারা সেন্টমার্টিনস গিয়েছেন তাদের জন্য এগুলো সবই পরিচিত গল্প।
তারপরও একটু আজাইরা বকবক করি।
প্রথমবার সমুদ্র দেখেছিলাম খুব বেশি ছোটবেলায়। দেড়-দুই বছর বয়সে। সেটা ছিল লোহিত সাগর। ছোটবেলার শোনা কথার গল্পে লিখেছিলাম সাগর দেখার জন্য কেমন পাগল ছিলাম আমি।
যা হোক, ঐ স্মৃতি তো মনে নেই। মনে রাখার মত প্রথম সমুদ্র দেখতে যাওয়া হয়েছে এইচএসসি-র পর। সেই গল্পও আগেই করা হয়ে গিয়েছে।
এরপর আরও কয়েকবার সাগরপাড়ে গিয়েছি। বিয়ের ঠিক পরপর যাওয়ার কথা থাকলেও কিছু বড় ধরণের ঝামেলা এসে পড়ায় যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
বিয়ের পাঁচ মাস পর টারজানের সাথে গেলাম রওনা দিলাম সাগর দেখতে। সোহাগের ভলভো বাসে করে গেলাম। এমনিতে আমার বাসে শরীর খারাপ করে না, কিন্তু কেন যেন সেদিন বমি বন্ধের ওষুধ খেয়ে নেয়া সত্ত্বেও দিলাম হড়হড় করে রাতের খাবার সব বের করে। সারা রাত মোটামুটি এই কষ্টেই কাটল।
পিক সিজনে গিয়েছিলাম, এই সময় আগে থেকে বুকিং না দিয়ে রাখলে ভালো হোটেলে রুম পাওয়া মুশকিল।
বাস থেকে নেমে আমরা সোহাগের সুপারভাইজারকেই ধরলাম ভালো হোটেলের খোঁজ দেয়ার জন্য যেখানে বুকিং ছাড়াও রুম পেতে পারি। সে আমাদের প্রাসাদ প্যারাডাইজের খোঁজ দিল, হোটেল সী-গালের পাশে। ২০০৪ সালের কথা, তখনও সী-ক্রাউন হোটেলটি হয়নি। সী-গাল আর প্রাসাদই তখন সমুদ্র থেকে সবচেয়ে কাছে।
প্রাসাদ প্যারাডাইজে গিয়ে মন ভালো হয়ে গেল।
ছোট ছোট কটেজ। হোটেল হোটেল কোন ভাব নেই। যেন পাশাপাশি কয়েকটা বাড়ি। ভাগ্য ভালো একটা এসি রুমও পেয়ে গেলাম। যদিও এসির দরকার ছিল না।
আসলে ননএসি রুমগুলোর একটাও খালি ছিল না। একটা ব্যাপারে খুব অবাক হয়েছি। আমার এই ব্যাপারটা আগে জানা ছিল না। পিক সিজনে কক্সবাজারের হোটেল রুমের ভাড়া অনেক বেশি থাকে, এই ভাড়া মুলামুলি করে কমানো যায়। টারজান ঠিকই মুলামুলি করে দেড় হাজার টাকার রুম বারোশ' টাকায় নিয়ে ফেলল।
সাগরের ডাক আর কতক্ষণ উপেক্ষা করব। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়েই নেমে পড়লাম সাগরে। এক ফটোগ্রাফার পেয়ে বসল। তা মন্দ কী? আমরা তো ক্যামেরা নিয়ে যাইনি। নানান ঢঙে ছবি তোলা হল।
যদিও ফটোগ্রাফার আরও কিছু পোজ শিখিয়ে দিচ্ছিল, টাইটানিক পোজ, হেন পোজ, তেন পোজ। আমি কোনটাই পাত্তা দিলাম না। আমাদের মত আমরা পোজ দিচ্ছিলাম।
যা হোক, মন ভরে সমুদ্রস্নান করে নিলাম। পরদিন যাব সেন্ট মার্টিনস।
হোটেলের ম্যানেজারের সাথে কথা বললাম কিভাবে যাওয়া যায়। ম্যানেজার জানালেন তাদেরই নিজস্ব প্যাকেজ আছে। আর সেন্ট মার্টিনস যাওয়ার প্রথম যে জাহাজটা নামানো হয়েছিল, সেই সী-ট্র্যাক এদেরই মালিকানাধীন। ওদের ছিল দুই ধরণের প্যাকেজ, একটায় সকালে গিয়ে বিকালে ফিরে আসার, আরেকটা রাতে থেকে পরদিন ফেরার। টারজান প্রথমটা পছন্দ করল।
আমি কিছুতেই রাজী হলাম না। সেন্ট মার্টিনসের রাতের রূপ না দেখলে কী দেখলাম। অতএব দ্বিতীয় প্যাকেজটাই নিতে হল।
সেন্ট মার্টিনসেও প্যারাডাইজ হোটেলের একটা শাখা আছে, ওখানে রুম বুকিং দেয়া হল। আবার ফিরে এসে এই হোটেলেই এক রাত থাকব, তাই সেই অনুযায়ীও রুম বুক করা হল।
এবার একটা নন-এসি রুম নেয়া হল, একটু কম ভাড়ায়। এক হাজার টাকা এক রাতের জন্য।
যা হোক, পরদিন খুব ভোরে হোটেলের নিজস্ব বাসে করে রওনা দিলাম টেকনাফের উদ্দেশ্যে। পুরোটা রাস্তা আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। সৌন্দর্য্যের বর্ণনা দিতে পারব না।
শুধু বলতে পারি, মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা করছিল নেমে জায়গাটা ভালো করে মন ভরে দেখি। কিন্তু সেটা সম্ভব না বলে আফসোস করছিলাম।
জাহাজের ঘাটে গিয়ে দেখি সী-ট্র্যাক রওনা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। উঠে পড়লাম সবাই। পাশেই আরেকটা জাহাজ কেয়ারী সিন্দবাদ দেখে একটু আফসোস হল, ঐ জাহাজটা আরও বড়।
পরে দেখলাম শুধু বড়ই না, ঐটা আরও জোরে চলে। আমাদের রওনা দেয়ার আরও আধা ঘন্টা পর রওনা দিয়েও আমাদের ছাড়িয়ে গিয়ে আমরা পৌঁছানোর প্রায় আধা ঘন্টা আগেই পৌঁছে গেল।
যা হোক, ধীরে ধীরে গেলে সৌন্দর্য্য বেশি করে দেখার সুযোগ হয়, এই বলে মনকে সান্ত্বনা দিলাম। অবশ্য কথাটা ভুলও না। নাফ নদীর সৌন্দর্য্য যে কী জিনিস, এটা না দেখলে বোঝানো সম্ভব না।
ততক্ষণে রোদ মাথার উপর উঠে গিয়েছে। কিন্তু তার কোন তোয়াক্কা না করে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছিলাম। একবার নাফ নদীর নীল পানি, একবার তীরের সবুজ গাছের সারি, আরেকবার ঐ তীরে মায়ানমারের পাহাড়। কোনটা রেখে কোনটা দেখি। আর সেই সাথে আছে গাঙচিলের খেলা।
জাহাজের পেছন দিকে পানিতে ফেনিল ঢেউ উঠছে, সেই ঢেউয়ের সাথে উঠে আসছে মাছ। গাঙচিলদের ভিড় তাই সেখানেই। উড়তে উড়তে ছপাৎ করে সেই মাছ তুলে নিচ্ছে মুখে। কেউ কেউ ছবি তুলে রাখছে। কিন্তু ছবিতে কি আর পুরো দৃশ্য আসে? মনের ভিতরেই ধরে রাখলাম সবটুকু।
এক সময় নাফ নদী শেষ করে জাহাজ সমুদ্রে পড়ল। কেমন যেন একটা অনুভূতি। সাগরের উপর ভেসে চলছি এই প্রথম। যেদিকে তাকাই শুধু সাগর আর সাগর। অবশ্য একদিকে মায়ানমারের পাহাড় দেখা যায়।
এবার তাকিয়ে রইলাম সামনের দিকে। কখন দেখব সেন্ট মার্টিনস। অবশেষে একটা দ্বীপের রেখা ফুটতে শুরু করল। ঐ তো আমাদের নারকেল জিনজিরা।
কী বলব, প্রকৃতির এত সৌন্দর্য্য আর কখনও দেখিনি।
হোটেলের ঝামেলা চুকিয়েই বেরিয়ে পড়লাম। আর বের হয়েই পিচ্চিদের খপ্পরে পড়লাম। এক দল পিচ্চি এসেই, গাইড লাগবে গাইড? স্মল গাইড? আমরা অনেক কিছু দেখাব, হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি, হোটেল অবকাশ, আরও কি কি সব বলতে বলতে আমাদের সাথে সাথে হাঁটা শুরু করল। কিন্তু বলতে বলতে ঐ সব জায়গায় আমরা নিজেরাই চলে এলাম। যদিও ওগুলো দেখার মত কিছু না।
এখানে দেখার একটাই জিনিস, তা হল সমুদ্র। এত নীল, এত স্বচ্ছ পানি, এত প্রবাল পাথর। হাঁটু পানিতে নামলেও নিজের পা পরিষ্কার দেখা যায়। মাঝে মাঝে ছোট ছোট মাছের ঝাঁকও দেখা যায় এদিক-ওদিক সাঁতরে যেতে। বাচ্চাদের মত শামুক-ঝিনুক কুড়িয়ে পকেটে ভরলাম।
অনেকক্ষণ এমনিই বসে রইলাম সমুদ্রের পানিতে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে। লাঞ্চের জন্য ফেরার সময় ডাবের পানি খেলাম। এত মিষ্টি ডাবের পানি আর কোনদিন খাইনি।
লাঞ্চের পর বিকালটুকু বিশ্রাম নিতে হল। জার্নিটা খুব বেশি হয়ে যাচ্ছিল।
সাগরের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমানো যে কী আরামের প্রথমবারের মত টের পেলাম। ওখানে হোটেলগুলো সব জেনারেটরে চলে। রাত নয়টা-দশটার পর সব জেনারেটর বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর হারিকেন দিয়ে কাজ চালাতে হয়। ডিনারের পর লাইট অফ হয়ে গেল।
আমরা নেমে গেলাম সাগর পাড়ে। পূর্ণিমার রাত ছিল সেদিন। ভরা জোছনায় সমুদ্রের ফেনিল ঢেউ গুণতে গুণতে হাঁটছিলাম। টারজান হঠাৎ বলে বসল গান গাইতে। লজ্জা লাগছিল।
তারপরও গুণগুণ করে শোনালাম কয়েকটা গান। থাক ঐ গল্পের এখানে কাজ নেই।
পরদিন সকালে আবারও বেড়িয়ে গেলাম। বাজারটা একটু ঘুরে দেখে আবার সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে বসে রইলাম। আমার খুব ইচ্ছা ছিল ছেঁড়াদ্বীপ ঘুরে আসার।
কিন্তু টারজানকে কিছুতেই রাজী করাতে পারলাম না। হুম্প করে বসে বসে নীল সমুদ্রের ঢেউই গুণে গেলাম। এখানকার সমুদ্রটা আসলেই খুব অসহ্য রকমের নীল। কিছুতেই মন খারাপ ভাবটা ধরে রাখা যায় না। শুধু একটা জিনিস কেন যেন ভালো লাগাতে পারিনি।
সেটা হল সমুদ্রের ঐ পাড়ে মায়ানমারের পাহাড়ের সারি দেখতে পাওয়া। এমন না যে দৃশ্যটা সুন্দর না। কিন্তু, আরে ভাই সমুদ্র দেখব দিগন্তসহ, যেখানে সমুদ্রের শেষ আর আকাশের শুরু, তা না, ইয়া বড় বড় পাহাড় বসে আছে মাঝখানে।
বিকালে রওনা দিলাম সেই সী-ট্র্যাকে করে টেকনাফের দিকে। সেখান থেকে বাসে করে কক্সবাজার, এইবার ঘুমিয়ে গিয়েছি।
রাতের বেলা বাইরে কিছুই দেখা যায় না এই শোকে। কক্সবাজারে হোটেলে এসে দেখি আমাদের বুক করে রাখা নন-এসি রুমটা বেদখল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ম্যানেজার আমাদের কথা খেয়াল রেখে সেই আগের এসি রুমটাই আমাদের নামে রেখে দিয়েছেন। তবে ভাড়া কিন্তু নন-এসি রুমেরই দিয়েছি।
যা হোক, কক্সবাজার আসব আর শপিং করব না তা তো হয় না।
রাতটা শপিং করেই কাটালাম। অবশ্য খুব বেশি কিছু কেনা হয়নি। সবার জন্য বেশি করে আচার কিনে নিয়েছিলাম। ঐ দিয়েই আমাদের ব্যাগ ভরে গিয়েছিল। ফেরার সময় আমি কিছুতেই এসি বাসের টিকেট কাটতে দিব না।
আসার সময়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তখনও ভুলতে পারিনি। নন-এসি বাসে উঠে সারা রাস্তা আমাকে খ্যাত বলে বকতে বকতে নিয়ে এল টারজান।
পরের বছর আবারও গিয়েছিলাম সেন্ট মার্টিনস। এবার একটা বিশাল দল নিয়ে। ধরতে গেলে একটা বড় সড় পিকনিকই বলা যায়।
এইবার গেলাম বড় জাহাজ কেয়ারী সিন্দবাদে। এবার দেখলাম সিন্দবাদের জন্য আলাদা ঘাটও করা হয়েছে, আগের বার দেখেছি এক ঘাট থেকে দুইটা জাহাজ ছাড়ত। যা হোক, এবার সেন্ট মার্টিনসে গিয়ে হোটেল অবকাশে উঠলাম। স্মল গাইডদের দৌরাত্ম এবার দেখলাম একেবারেই নেই। বুঝলাম তারা আর সুবিধা করতে পারেনি।
তবে এইবার দেখলাম পিচ্চিরা কাঠবাদাম বিক্রি করছে দেদারসে। আমরাও খেলাম দেদারসে।
এইবার আমার ছেঁড়াদ্বীপ যাওয়ার শখ মিটল। একটা ট্রলার শুধু আমরাই ভাড়া করে উঠলাম। মাঝখানের খোলে একটা গ্রুপ বসে গেল তাস নিয়ে আমি বাকীদের সাথে খোলের চারপাশে পা ঝুলিয়ে বসে সমুদ্র দেখতে দেখতে গেলাম।
দ্বীপটাও সাথে দেখে নিচ্ছিলাম। সেন্ট মার্টিনসের এই দিকটা আগে দেখা হয়নি। এদিকে নেভীর একটা ক্যাম্প আছে। সেখানে উইন্ডমিল দেখে খুব ভালো লাগল। মনে হচ্ছিল যেন ইউরোপের কোথাও চলে এসেছি।
দূর থেকে ছেঁড়া দ্বীপ নজরে এল। কাছাকাছি এসে ট্রলার দাঁড়িয়ে গেল, আর যাবে না। এখান থেকে কোশা নৌকা দিয়ে পার হতে হবে। এ এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। ট্রলার এত্ত উঁচু, এর থেকে লাফ দিয়ে নৌকায় নামতে হবে।
ওদিকে সমুদ্রের স্বচ্ছ পানির নীচে দেখা যাচ্ছে বিশাল বিশাল প্রবাল, যতটা গভীর মনে হচ্ছে, বাস্তবে আরও বেশি। একবার পড়লে আর উঠতে পারব না। সাঁতার তো জানিই না।
একবার মনে হয়েছিল, আমি বুঝি কখনই সাহস করতে পারব না। কিন্তু অন্যদের নামতে দেখে আর কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে অবশেষে নৌকায় নেমেই গেলাম।
নৌকাটা ভয়ংকরভাবে দুলছিল। মনে হচ্ছিল এক্ষুণি উল্টে যাবে। ভয় কাটাতে মনোযোগ দিলাম সাগরের সৌন্দর্য্যে। পানির নীচের প্রবালগুলো যে কি অদ্ভূত সুন্দর। হঠাৎ দেখা গেল একটা স্বচ্ছ সাদা জেলিফিশ সাঁতরে যাচ্ছে।
এসব দেখতে দেখতে ভয় পাব কি পাব না বোঝার আগেই পৌঁছে গেলাম ছেঁড়া দ্বীপে।
দ্বীপে নেমে সবাই প্রবাল পাথর দেখতে আর ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এক ভাইয়া জানালেন এখানে শুধু এইটুকুই না, একটা জায়গায় অনেক বিশাল বিশাল প্রবাল পাথর আছে, একেকটা বড় বড় গাড়ি বা বাসের সমান। আমরাও খোঁজ লাগালাম কোথায় সেই বিশাল প্রবাল। অবশেষে পেয়েও গেলাম।
এত বড় প্রবাল পাথরও হয় কল্পনাও করতে পারিনি। ছোট ছোট প্রবাল কুড়িয়ে নেয়ারও ধুম চলল। এভাবেই সব প্রবাল শেষ করে দিবে সবাই। টারজান কুড়িয়ে পেল অদ্ভূত একটা মাছের কংকাল। ঐটাই সে জমিয়ে রাখল।
একটা ময়লা কালো প্রবালও নিয়েছিল বাড়িতে গিয়ে প্রসেসিং করবে বলে। এক দোকানীর কাছ থেকে শিখেছিল ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে এটা পরিষ্কার হয়ে একদম সাদা হয়ে যাবে। বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। ময়লা প্রবালটা সারাদিন ব্লিচিং পাউডারের পানিতে ভিজিয়ে রেখেও তার রঙ বদলায়নি একটুও।
এইবার সেন্ট মার্টিনস ভ্রমণে নতুন আরেকটা ব্যাপার আবিষ্কার করলাম।
আগেরবার তো ভরা পূর্ণিমায় সমুদ্র দেখেছি। এইবার দেখলাম অমাবস্যায় সেন্ট মার্টিনসের রূপ। অসাধারণ। রাত দশটা বাজতেই সমস্ত দ্বীপ অন্ধকার। শুধু সাগরের গর্জন, আর উপরে কালো আকাশ।
সেই আকাশে কোটি কোটি তারা। স্কুলে ভুগোল বইয়ে যখন পড়েছিলাম খালি চোখে প্রায় ১০০ মিলিয়ন তারা দেখা যায়, বিশ্বাস হত না। এইবার নিজের চোখে দেখলাম। এত তারাও থাকতে পারে আকাশে, আর তা খালি চোখে দেখাও যায়? দেখেও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। সবাইকে এরপর থেকে পরামর্শ দিই, সেন্ট মার্টিনস যেতে হলে বেছে বেছে অমাবস্যার সময় যেতে হবে, আর রাতে অবশ্যই সেখানে থাকতে হবে শুধুমাত্র এই কোটি কোটি তারা ভরা আকাশ দেখার জন্য।
এই পিকনিকের মত সমুদ্র-ভ্রমণের ফেরার পথের যাত্রাটাও আমার জন্য খুব সুন্দর হয়েছিল। এ সময় বাসে লটারীর আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে প্রথম আর দ্বিতীয় দুইটা পুরস্কারই আমি পেয়েছিলাম। কিভাবে সেটা আগেই বলে ফেলেছি। নতুন করে আর বললাম না।
এরপর অনেক দিন সাগরের ডাকে সাড়া দেয়া হয়নি।
গত বছর একটা অফিসিয়াল ট্যুরে আবারও যাওয়া হয়েছিল সাগরের কাছাকাছি। সেই সমুদ্রের তীরের এক রাতের গল্প আর ইনানী সৈকতের সেই দুর্ঘটনার গল্পও আগেই করে ফেলেছি। আর এমনিতেও পোস্ট অনেক লম্বা করে ফেলেছি। অতএব আর না। এইবার থামি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।