আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“ফকির বাবা” Fokir BaBa (FB) ভারত বিরোধিতা অথবা জাতীয়তাবাদের উন্মেষঃ শিক্ষা নেব এক ভারতীয়র কাছ থেকেই ........

স্বপ্ন বুনতে খুবই ভালোবাসি, লেখাটি এতোই ভালো লেগেছে যে শেয়ার না করে পারিনি, আর আসা করি আপনারা সবাই একটি বারের জন্য হলে ও পড়বেন , কারন আমি জানি আপনি আপনার এই প্রিয় বাংলাদেশকে অনেক অনেক ভালোবাসেন ...তাহলে চলুন পরে দেখি...... ১৮৯৩ সালের মে মাসের কোন এক দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার পিটারমার্টিজবার্গ নামক এক স্টেশনে কোট টাই পড়া এক তরুণ আইনজীবী উপস্থিত হন। তাঁর গন্তব্য প্রিটোরিয়া। সেখানে এই আইনজীবী একটা মামলা লড়াবেন। ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর কামরায় ভ্রমণ করার জন্য তিনি একটি টিকেট কাটেন। যথসময়ে ট্রেন এল।

কিন্তু উক্ত আইনজীবী সেদিন আর ট্রেনে চড়তে পাড়েননি। যখন তিনি প্রথম শ্রেণীর কামরায় চড়তে গেলেন, আগে থেকে উক্ত কামরা অবস্থান করতে থাকা সাহেব ব্যক্তিটি তাকে লাথি মেরে প্লাটফর্মে ফেলে দিয়েছিল, কারণ এই তরুণ সাহেবী পোষাকে ছিলেন বটে কিন্তু তিনি সাহেব ছিলেন না। এই তরুণ আইনজীবীর নাম ছিল মোহনদাস করমচাঁদ, ইতিহাসে যিনি মহাত্মা গান্ধী নামে অধিক পরিচিত। সেদিনের সেই ঘটনার পর থেকে মোহনদাস তাঁর সাহেবিয়ানা বাদ দিলেন, যিনি হয়ে উঠলেন পুরোদস্তর ভারতীয়। ডারবানের আদালত তাঁকে আদালত অবমাননার জন্য জরিমানা করে।

কারণ তিনি আদালতে তাঁর পাগড়ি খুলতে অস্বীকার করেছিল। ধারনা করি, রাতারাতি গান্ধী সাহেবীয়ানা ছেড়ে পুরোদস্তর ভারতীয় হয়ে উঠতে পারেননি, কিন্তু পিটারমার্টিজবার্গ-এর লাথির ঘটনা তাঁর জাতীয়তাবাদে চেতানকে শক্তিশালী করতে এক জোরালো ভুমিকা পালন করছিল। সীমান্তে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী যখন এদেশে নাগরিকদের উপর গুলি করে লাশ উপহার অথবা লাথি উপহার দিচ্ছে, তখন আমাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী এক চেতনার বিকাশ ঘটছে বৈকি। এই রকম প্রতিটি লাশ আর লাঠির আঘাত আমার জাতীয়তবাদী চেতনাকে জোরালো করে। এই সব ঘটনার ফল স্বরূপ জাতীয়তাবাদী চেতনা সম্পন্ন নাগরিকের নানবিধ কর্মসূচি এবং আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে।

যখন জাতীয়তাবাদী চেতনায় একদল মানুষ স্বদেশ রক্ষার ডাক দিচ্ছে, তখন পাশপাশি আরেক দল মানুষ রয়েছে, যারা এই সব আন্দোলনকারীদের দিকে বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে, কেউ আবার তাদের ব্যাঙ্গ করছে, কেউ কেউ আবার অট্টহাসি দিচ্ছে, যখন সচেতন নাগরিক সমাজ, অথবা বামপন্থী ভারত বন্ধের ডাক দিচ্ছে, অনেকে আবার তাদের হিযুবত তাহরির বলে উপহাস করেছে। কারণ এক; আমাদের ঘরে ভারতীয় চ্যানেল, আমাদের রাস্তায় ভারতীয় গাড়ী, আমাদের খাবার টেবিলে ভারতীয় গরু, আমাদের তরকারীতে ভারতীয় পেয়াজ, রসুন। আমাদের পোশাকের দোকানে ভারতীয় লেহেঙ্গা, ইত্যাদি। দুই; আমাদের সরকার ভারত বান্ধব। আবার ভারত এক বৃহৎ শক্তি, আমাদের ভারতকে মোকাবেলার শক্তি নেই।

সেহেতু এই ধরনের নিপিড়ন চলবে, তা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। তিন; এখন আমরা আসলে এক মুক্ত স্বাধীন বিশ্বে বাস করি, যেখানে কেউ আমাদের উপর কোন ধরনের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না। আসলে আমরা যা করি তা নিজেদের বিবেচনায় করি। চার; এখন বাংলাদেশ কারো উপনিবেশ নয়, আর বাঙ্গালীদের জাতীয়তাবাদী চেতনা বলে এখন কিছুমাত্র অবশিষ্ট নেই, কাজে ঘুমিয়ে থাকা মানুষের তোমরা যতই জাগানোর চেষ্টা কর। তাতে কোন কাজ হবে না।

পাঁচ; যারা এই সব জাতীয়তাবাদী স্লোগান দিচ্ছে, তাদের পেছেন মাত্র গুটিকয়েক মানুষকে দেখা যাচ্ছে। ছয়; আমরা এই ধরনের কথা ছড়াচ্ছি কারণ, এই ধরনের চেতনা যাতে বিকশিত না হয়, তাঁর পেছেন আমাদেরও কিছু স্বার্থ আছে। সাতঃ তারা এই ধরনের কথা বলছে, কারণ আমরা যারা জাতীয়তাবাদী চেতনার কথা বলছি, আসলে এ সব চেতনা ফেতনা কিছু না, এর মধ্যে আমাদেরও কিছু স্বার্থ আছে। তাদের এই পরিহাস বা অট্টহাসি জবাব সব শেষে দেব, তার আগে এই ভারত বন্ধ নামক আন্দোলন নিয়ে কিছু কথা। আমরা আসলে ভারত নয়, একটি বৃহৎ প্রতিবেশী নয়, আমরা আসলে বিশ্বায়ন নামক এক সাম্রাজ্যবাদী চেতনার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছি।

কিন্তু কি ভাবে আমার, এই জাতীয়বাদী বাঙ্গালীরা, ক্রমশ সেই গ্রাস করতে থাকা পরাধীনতার বিরুদ্ধে লড়বে। কি ভাবে এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে, তার পথ কিন্তু দেখিয়ে গেছেন একজন ভারতীয়, যার কথা আমি এই প্রবন্ধের প্রথমেই উল্লেখ করেছি। তিনি হচ্ছেন সেই মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। কেউ যদি বলে, যে ভারতীয়দের লাথি খেয়ে আপনার তথাকথিত জাতীয়তার বিকাশ ঘটছে, তাহলে তাকে বিনয়ের সঙ্গে জানান, সাদা চামড়ার এ ব্যক্তির লাথি খেয়ে, মহাত্মা গান্ধীর ভেতর শুধু ভারতীয় হবার অনুভূতি জন্ম গ্রহণ করেনি, তিনি এরপর থেকে পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং দেশটিকে দুর্দান্ত প্রতাপশালী ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। কেউ যদি বলে এই সব ভারতীয় পণ্য বর্জন করার কাজ মোটেও সফল হবে না, তাহলে তাদের জানান।

ভারতীয় তাঁতিদের বাঁচানোর জন্য সেই মহাত্মা গান্ধী নিজ হাতে চরকা কাটা শুরু করেছিলেন। কারণ সে সময় ব্রিটেনের কারখানায় উৎপাদিত কাপড় কলের সঙ্গে ভারতীয় তাঁতিরা পেড়ে উঠছিল না। শাসক বিট্রিশ সরকারে অন্যায় লবণ আইনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ভারতীয় লবণ চাষীদের বাঁচানোর জন্য যিনি ২৪ দিনে ২৪০ মাইল হেঁটে পাড়ি দিয়েছিলেন। যার ফলে ব্রিটিশ সরকার লবণ আইন রদ করতে বাধ্য হয়েছিল। আমাদের ভারত কিংবা, যে কোন রাষ্ট্রের আগ্রাসি মনোভাবের বিরোধিতা তাদের উপেক্ষা নয়, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, যদি আমাদের সাথে তারা সু-সম্পর্ক তৈরির জন্য হাত বাড়ায় তাহলে আমরা সেই হাত উপেক্ষা করব না।

সেই গান্ধীর কাছ থেকে আমরা এই বিষয়টি শিখেছি, যিনি সব সময় ব্রিট্রিশ শাসনের বিরোধীতা করার পরও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের বাড়ানো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন, দি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মাঝে ব্রিটিশদের চেয়ে জার্মানরা অধম। সেই সাথে তিনি নিজের দাবী আদায় করতে ভুলেন নি। আমাদের এই লড়াই কোন ভারতীয়দের বিরুদ্ধে নয়, এই লড়াই এমন আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে যে শক্তি এমন এক রাষ্ট্রের ভেতরে জন্ম নিচ্ছে, যে রাষ্ট্র নিজেই এক সময় পরাধীন ছিল। তাই যখন সেই রাষ্ট্র সীমান্তে আমাদের লাশ উপহার দেয়, তখনও আমরা তাদের প্রতি সেই আচরণ করব না, কারণ সেই গান্ধী, যিনি জালিয়াওয়ালাবাগে উপস্থিত নিরীহ শিখদের উপর বিট্রিশ শাসকের নির্বিচারে গুলি করার পরেও, তিনি কোনদিন কোন ব্রিটিশকে খুন করার নির্দেশ দেননি। যখন আপনি হত্যার বদলে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করবেন, তখন হয়ত আত্মগর্বে কোন ভারতীয় আপনাকে বলবে, তুম লোগ শালা ডরপোক হো বা তোমরা আসলে ভিতুর ডিম।

তখন তাকে গান্ধীকে নিয়ে লেখা এই গানটি শুনিয়ে দেবেন। দে দি হামে আজাদি তুনে, বিনা, খড়গ বিনা, ঢাল সাগরমতি ক্যা সন্ত তুনে কর দিয়া কামাল ( বিনা অস্র, বিনা ঢালে তুমি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে হে সাগরমতীর* সাধু পুরুষ :--* সাগরমতী হচ্ছে গুজরাটের আহমেদেবাদের একটি গ্রাম যেখান থেকে গান্ধী তার লবণ অমান্য আইন যাত্রা শুরু করে, যে যাত্রা সত্যগ্রহ নামক আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ কুইট ইন্ডিয়ায় রূপান্তরিত হয়)। ভারতের গান্ধী, বিশ্বকে একটি আন্দোলন উপহার দিয়েছে, যার নাম অহিংস আন্দোলন। সেই আন্দোলনের পথ ধরে আমরা আধুনিক সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়ব। তাই আসুন, যখন সীমান্তে ভারত লাশ উপহার দেয়, তখন আমরা ভারত সরকারকে একটা উপহার দিতে পারি, সেটা হচ্ছে ভারতীয় পণ্য বয়কট আন্দোলন।

আমরা, ভারত সরকার, তথা ভারতের সকল পণ্য নির্মাতাদের জানাতে চাই, আমাদের জীবনের মূল্য এত সস্তা না। তোমরা যখন খুব সহজেই সীমান্তে লাশ ফেলে দিতে পার, আমরাও তেমনি তোমাদের পণ্যকে ফেলে দিতে পারি। হয়ত তোমরা হাসছ, কারণ তোমাদের পণ্য আমাদের মজ্জায় মজ্জায় ঢুকে গেছে। হাসো? একদিন ব্রিটিশরাও গান্ধীকে এ রকম নগ্ন ফকির বল উপহাস করত। হে আমার বন্ধু, দেশবাসী, আসুন আমরা স্বদেশী পণ্য কিনতে শুরু করি।

রাতারাতি সব কিছু পাল্টে যায় না, কিন্তু চেতনা বিকশিত হতে থাকলে এক সময় তা যে খুব ভালভাবে সম্ভব। ভারত নিজেই তার একটি উদাহরণ। তাই আসুন শুধু ভারতীয় নয়, সব ধরনের বাস্তবতায় আমরা দেশীয় পণ্য কিনি। যদি আমরা জাতীয়বাদী চেতনায় এবং অর্থনীতিতে শক্তিশালী হয়ে উঠি, তাহলে শুধু ভারত কেন, বিশ্বের যে কোন দেশ আমাদের সমীহ করবে। যারা এই ভারতীয় পণ্য বয়কট আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, আমি তাদের এই আন্দোলনের সাথে নিজের একাত্মতা ঘোষণা করলাম।

এই লড়াইয়ে নামা, যে তুমি, আমার ভ্রাতা, বোন, আত্মীয়, বাম, ডান, স্বদেশবাসী, জেনে রাখ যখন তোমরা এই লড়াইয়ে নেমেছে, তখন অনেকে তোমাদের ব্যাঙ্গ করবে, কেউ কেউ অত্যাচার করবে, কারণ এখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, পুঁজিবাদী শক্তি রুপে দেশে দেশে বিরাজ করছে। যখন তোমরা শারিরীক এবং মানসিকভাবে অত্যাচারিত হবে, ঠিক সেই সময়, তোমাদের আমি আবার সেই মহাত্মা গান্ধী নামক ভারতীয় এক নাগরিকের একটি বাণী স্মরণ করতে বলবঃ “প্রথমে তারা তোমাকে উপেক্ষা করবে, তারপর ঠাট্টা করবে, তারপর তোমার সাথে লড়াই শুরু করবে, কিন্তু সবশেষে তুমিই জিতবে”। হ্যাঁ বন্ধুরা। তোমরা জিতবে, কারণ তোমরা একটি সত্যিকারে অন্দোলনের জন্য লড়ছ। collect from || @Bijoy Majumdar Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।