বাংলাদেশে মাজার,পাগলা বাবার দরবার এসব বিনা পূঁজির চরম লাভজনক ব্যবসা । একজন মৃত মানুষের কাছে সন্তান কিংবা রোগ-ব্যারাম ভাল হওয়া সহ যত সমাধান আছে সব সমাধানের জন্য মানত করে আসে । এমন দৃশ্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় আছে । বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক শিক্ষিত নেতারাই মাজার জেয়ারত পাগলা বাবার দরবারে গিয়ে দোয়া নিয়ে আসেন । দুই নেত্রী ভোটের প্রচারণা শুরু করে শাহজালালের মাজার জিয়ারত করে আর নির্বাচন জিতলে সেই জেতার শোকরানা আদায় করা হয় মুজিব অথবা জিয়ার-মাজার জেয়ারতের মধ্য দিয়ে ।
মাজার-পাগলা বাবার দরবার সহ কিছু ধর্মীয় ভন্ডামী নিয়ে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মনে হয় একবার সংসদে বক্ততা রেখেছিল । আমরা আসলে ধর্মীয়ভাবে অনেক অজ্ঞ । এসব দাড়ি টুপিওয়ালা লোক দেখলে মনে করি পীর-ফকির। মানুষকে আরো শিক্ষিত হতে হবে । মাজার শব্দের অর্থ হলো দর্শনীয় স্থান ।
যেটা দেখলে মন ভাল হয়। যেমন সমুদ্র সৈকত একটা মাজার বা দর্শনীয় স্থান ।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে লোকদের উদ্দেশ্যে বলতে বলেন, "(আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে) তুমি কখনো আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডেকো না, যে তোমার কোনো কল্যাণ (যেমন) করতে পারে না, (তেমনি) তোমার কোনো অকল্যানও সে করতে পারে না, (এ সত্তেও) যদি তুমি অন্যথা করো, তাহলে তুমি যালেমদের মধ্যে গণ্য হবে । যদি আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কোনো দুঃখ-কষ্ট দেন, তাহলে তিনি ছাড়া অন্য কেউই নেই তা দূরীভূত করার, (আবার) তিনি যদি (মেহেরবানী করে) তোমার কোনো কল্যাণ চান, তাহলে তাঁর সেই অণুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই । তিনি তাঁর বান্দাদের যার ওপর চান তার ওপরই কল্যাণ পৌঁছান ।
আল্লাহ তায়ালা তায়ালা বড়োই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু । " (সূরা ইউনুসঃ আয়াত ১০৬-১০৭) পীরের পানি পড়া খেয়ে আর নাকে-মুখে তেল মাখার পর রক্তবমি করতে করতে গতকাল শুক্রবার সকালে সিলেট শহরের আম্বরখানায় নিজ বাসায় মারা যান সৈয়দা মারওয়া রিফাত (১৮) । ( সুত্র প্রথম আলো )
বাংলাদেশে এত পীর ফকির তাহলে কেন ইলিয়াস আলী এবং সাগর রুমির হত্যাকারীদের কেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ! আমাদের এই জঞ্জালে ভরা দায়িত্বহীন রাষ্ট্রে যেখানে ৪ কোটি লোক প্রতিদিন একবেলা খেতে পারে,৯ কোটি লোক প্রতিদিন পুষ্টি চাহিদার ৫০ ভাগ ও পায় না, সেখানে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা- অলীক কল্পনা মাত্র । আর এই চরম বৈষম্যে ভরা সমাজে এরকম শত শত আমজাদ ফকির ই শেষ ভরসা গরীব খেটে খাওয়া মানুষের কাছে । আমাদের মন্ত্রী- এম পি- সাংসদ- নেতারা সামান্য সর্দি-জ্বরেই মাদ্রাজ-ব্যাংকক- সিঙ্গাপুর ঘুরে আসেন, কিন্তু দেশের অধিকাংশ লোক বিনা চিকিৎসায়-ভুল চিকিৎসায়- অর্ধেক চিকিৎসায় মারা যায় অবলীলায় ।
লোক জন স্বাস্থের জন্য, চাকরির জন্য, ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার জন্য, মেয়ের বিয়ের জন্য ভন্ড পীর , ফকির ও সাধুদের কাছে ভিড় জমায় । সাবান-শ্যাম্পু-গুড়ো দুধের মতো এখন পীরদেরও টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতে হয় । "আপনি কি দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণ লাভ করতে চান ? চলে আসুন দেওয়ানবাগ শরীফে । " মানুষের মাঝেই যাদু-টোনা, ঝার-ফুক, পানি পড়া, তাবিজ-কবজের উপর বিশ্বাস লক্ষ্যনীয় । একজন হিন্দুকেও যেমন অবলীলায় পীর ফকিরের মাজার জিয়ারত ও মানত করতে দেখা যায়, তেমনি একজন মুসলমানকেও দেখা যায় বটের ঝুঁড়িতে সুঁতো বাঁধতে ।
রোগ বালাই, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দোয়া কিংবা মন্ত্র সিদ্ধ করে বাড়ি বন্ধক রাখার রেওয়াজ চলেছে যুগের পর যুগ ।
একজন পীর বলেন- ‘রোগী আসার আগেই আমি আন্দাজ পাই, কার চিকিৎসা কীভাবে করতে হবে । ছোট বাচ্চাকে পারাইছি । ফুটবলের মতো শট দিছি । আবার দেখেন পাও বাইন্ধা ঝুলাইয়া রাখছি ।
পাও ধইরা ঘুরাইছি । এ সবই আল্লাহর ইশারা । উনি বলে দেন, কোন রোগীর জন্য কী করতে হবে । এটাই হলো আমাদের আধ্যাত্মিক জগত্ । ’
‘বাচ্চাদের মধ্যে শয়তানের আছর থাকে ।
এ জন্য ঝুলিয়ে রাখতে হয় । ’ সন্তান না হলে ডিমপড়া আর ক্যানসারের জন্য ডাবপড়া দেওয়া হচ্ছে । সরষের তেলের সঙ্গে ডাব । আমাদের দেশে কতক পীর-ফকির, আলেম-জাহেল, কি শিক্ষিত, কি অশিক্ষিত অনেকেই তাবিজ-কবচ, তাগা, কড়ি, সামুক, ঝিনুক ও গাছ-গাছালির শিকর-বাকর ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করেন এবং ইহা বৈধ ও জায়েজ মনে করেন । জ্ঞান বেশী থাকার কারণে যদি কাউকে সিজদা করা যেত তাহলে বিশ্ব নবী, সর্বশেষ ও চুড়ান্ত নবী, আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মোহাম্মদ সা: ছিলেন সেই সিজদাহ পাওয়ার সর্বপ্রথম দাবীদার এবং সবচেয়ে যোগ্য ।
সকল পীরের থেকেও যোগ্য । সিজদাহ একমাত্র আল্লাহর প্রাপ্য । পীর নামক শয়তানগুলো আল্লাহর এই অধিকারেও হাত দিয়েছে । তাদের মতে যারা পীরকে সিজদাহ করে না তারা শয়তানের মতো জাহান্নামী । মূলত যারা পীরকে সিজদাহ করে তারা আল্লাহর ইবাদাত কে খন্ড খন্ড করে আল্লাহর পাশাপাশি মানুষের ইবাদাত এ লিপ্ত যা শিরকে আকবর ।
অজ্ঞতার কারনে আমরা অনেকেই বাল্যকাল থেকেই পীর ফকির ও মাজারের অলৌকিক ও কল্পিত ক্ষমতায় বিশ্বস্ত হয়ে পড়ি। যার কারনে কোন বিপদ আপদে মাজারে বা পীর ফকিরের দরবারে নানাজাতের মানত করে থাকি । বাংলাদেশের অধিকাংশ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের পাশেই একটি না একটি মাজারের অবস্থান লক্ষ করা যায়। বঙ্গভবন থেকে শুরু করে হাইকোর্ট, মেডিকেল কলেজ, কেন্দ্রীয় কারাগার, এফডিসি, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, এমনকি বাংলা একাডেমী ও বাংলাদেশ পরামাণু শক্তি কমিশনের কোল ঘেঁষেই পীর-দরবেশদের মাজার দৃশ্যমান। কিন্তু কেন ? বাংলাদেশের ২০৬টি মাজারকে রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়েছিল ।
ঢাকা শহরে সব থেকে বড় মাজার চত্বর মিরপুর ১-এর শাহ আলীর মাজার । মাজারে না গিয়ে, পীর-ফকির না ধরে বাসায় ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ো, সেইটাই কাজে দিবে । আসলে মাজার এত বড় ব্যবসা যে হুট করে উপড়ানো যাবে না । কমিশনার, পুলিশ, মন্ত্রী মিনিস্টার সবাই এদের হাতে থাকে । ইসলামের দৃষ্টিতে কোন ‘ব্যক্তির খবর’ তথা মাজারে ‘মানত’ করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ হলেও কতিপয় সুবিধাবাদী ভন্ড পীররা এসব অপকর্ম নির্বিঘে চালিয়ে যাচ্ছে ।
নামে-বেনামে অসংখ্য মাজারের ওরশ শরীফের নামে ব্যাপকহারে জেলায় চাঁদাবাজি করা হয় । কতিপয় মাজার পুজক ভন্ড খাদেম দিয়ে কিছু ‘গাঁজাখোর’ লোককে মাঠে নামিয়ে দেয়া হয় চাঁদা আদায়ের জন্য ।
আমি খুব ছোটবেলায় ভন্ড পীরদের ভন্ডামি বুঝতে শিখে ছিলাম । এই সহজ কথাটা কেউ বুঝেনা যে কারো যদি সত্যি এরকম "তাবিজ" করার ক্ষমতা থাকত সে পীর হতনা, সে তাবিজ করে দেশের প্রধাণমন্ত্রী হত, অথবা সে বিল গেটস থেকে সব টাকাই নিজের কাছে নিয়ে আসত । আটরশির পীর ষ্পষ্ট রাজাকার হয়ে স্বাধীনতা পুরষ্কার পায়, সেখানে রাষ্ঠ্রের ধর্মীয় জ্ঞানে মূর্খ বিরাট জনগোষ্ঠী পীরদের কাছে বা মাজারে মাজারে বেহেস্ত হাসিলের জন্য বা ভবিষ্যৎ জানার জন্য যাবেই তাতে আর আশ্চর্য্য কি ? আমার প্রায়ই মনে হয় আসলে মানুষের মধ্যে ৮০% ই সম্পূর্ণ গর্ধব, এদের এনালিটিক পাওয়ার কোনদিনই ডেভেলপ করেনা ।
কথাটা একটু এরোগ্যান্ট শুনায়, কিন্তু কথাটার মধ্যে সত্যতা আছে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।