লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু।
বিগত বছরগুলোতে আরববিশ্বে যা ঘটছে, তা অভাবনীয়। তিউনিসিয়ার গণবিপ্লবের রেশ ধরে অনেক ক্ষমতার খুটিই নড়ে উঠেছিল, কোনো কোনো দেশে এখনো কম্পন চলছে। এরই মাঝে কিছু পরিবর্তন, কোথাও কোথাও নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর মনে হচ্ছিল দেশগুলো স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাবে।
এদেশগুলোর মাঝে মিশরের অবস্থান সবার শীর্ষে। কারণ, দেশটি নানা মহাদেশীয় আদান-প্রদানের সংযোগস্থল। দীর্ঘদিন অগণতান্ত্রিক পথে চলার পর নির্বাচনের মাধ্যমে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই মুরসির ক্ষমতায় যাওয়া। কিন্তু বছর না ঘুরতেই তার চেয়ারটি নড়ে ওঠে। তিনি এখন ক্ষমতাচ্যূত।
কিন্তু কেন?
ক) দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পর মিশরবাসীর প্রত্যাশা উত্তুঙ্গে। তাই এক বছরেই প্রাপ্তির ঝুলিতে কিছু দেখতে না পেয়ে উল্টে বসে।
খ) স্বৈরশাসনের আমলে রাজপথে নামলে নানা নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হত। এখন তা নেই। তাই অতি-প্রত্যাশা জনিত ক্ষোভ নিয়েও যে কোনো অন্দোলন দানা বাধতে পারে।
গ) দীর্ঘ স্বৈরশাসনের সময়ে মুবারকপন্থী একটি সুবিধাবাদী গ্রুপের জন্ম হয়েছে, পরিবর্তনে তাদের স্বার্থ ক্ষুণœ হবে, এটাই স্বভাববিক। তাদের কায়েমি স্বার্থকে দ্রুত ফিরে পেতে এই সংগঠন ও সমাবেশ।
ঘ) মুবারকের সময়টা ছিল ছায়া-সেনা শাসন। মুরসি এসে এর রেশ টানেন। এতে সেনাবাহিনীও তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
ঙ) ইসলামবিরোধী বৈশ্বিক মানসিকতা এবং সতর্ক ইজরাইলও এখানে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে।
চ) ক্ষমতায় বসার পর তড়িগড়ি করে যে সংবিধান হয়, তাতে ইসলামি ধারাগুলো সরাসরি না রাখলেও হত। এগুলো রাখার কারণে ইসলামবিরোধী বা ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের মাঝে অবিশ্বাসের জন্ম হয়।
ছ) ক্ষমতায় বসার পর ব্রাদারহুডের আচরণও অনেকটা কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে ওঠে। তারা কর্তৃত্বপরায়ণ না হয়ে পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নিলেই ভাল হত।
জ) মুরসির ক্ষমতাগ্রহণের পরও কপ্টিক খ্রিস্টানদের সঙ্গে ব্রাদারহুডের নেতারা পারস্পরিক আদান-প্রদানের একটি দরোজা খোলা রাখতে পারতেন। কারণ, সংখ্যালঘুদের মনে সব-সময়ই একটি অবিশ্বাস ও আতঙ্ক কাজ করে। সে আতঙ্ক ও অবিশ্বাসকে তারা নিরাপত্তা ও বিশ্বাসে পরিণত করতে পারেন নি।
ঝ) মুবারকের হঠাৎ পতনের পর ক্ষমতার জন্য ব্রাদারহুডের কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। মুবারকবিরোধী আন্দোলনের সময়ে প্রেসিডেন্ট হিসাবে আল-বারাদেয়ির নাম প্রস্তাব করার কারণও এখানে নিহিত।
আর তাছাড়া তখন ব্রাদারহুডের বাইরে ‘ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস’ নামে নতুন একটি দল বা কোয়ালিশন করা হয়েছিল। মুরসির বিজয়ের পরও কোয়ালিশনটি সমুন্বত ও সক্রিয় রাখার দরকার ছিল। কিন্তু তা হয় নি।
ঞ) ধর্মীয় গ্রুপ সালাফিরাও মুরসির শাসনের প্রতি সন্তুষ্ট ছিল না এবং আরো কড়া ও গোঁড়া ধর্মীয় অনুশাসনের জন্য চাপ দিচ্ছিল।
যে-কোনো ভাবেই হোক, যে-কোনো কারণেই হোক, মুরসির অপসারণ বা বরখাস্তকরণ এখন সম্পন্ন।
কিন্তু এটাই কি তাহলে ব্রাদারহুডের শেষ সময়? দেশের ভেতরের এবং বাইরের শক্তিগুলো যদি ব্রাদারহুডকেই তাদের জন্য একমাত্র ও বড় হুমকি মনে করে থাকে, তাহলে ব্রাদারহুডের কপালে খারাপি আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ব্রাদারহুডসহ ইসলামপন্থী লোক ও দলগুলোর কী করার আছে এখন? সংবিধান যেহেতু স্থগিত করা হয়েছে, তাই যে-কারো ভাগ্যে যে-কিছুই ঘটতে পারে! কিন্তু ব্রাদারহুড নিজে যদি সহিংসতার আশ্রয় না নেয়, তাহলে তাদের আবারও সুদিন আসতে পারে। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো যদি এখানে আলজেরিয়ার মতো কোনো রক্তাক্ত খেলা খেলতে চায়, তাহলে তা ভিন্ন কথা। তখন মিশরকে, ব্রাদারহুডসহ ধর্মপন্থী লোক ও দলগুলোকে একটু বেশিই মাশুল দিতে হবে। দেখা যাক কী হয়? তবে ব্রাদারহুডকে কোনোভাবেই নিশ্চহ্ন করা যাবে না।
কারণ, এর আদর্শিক সূতিকাগার হল আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, যার শেকড় ছড়িয়ে আছে মিশরসহ আরববিশ্বের সর্বত্র। শাখা-প্রশাখা ও ডালপালা বিস্তারের পরেও তাদের মুক্তির পথটুকু স্বাভাবিক পন্থায় ও উপায়ে তাদেরকেই বের করতে হবে। অস্বাভাবিক ও চরম কোনো উপায়ে নয়। আমাদের কামনা হল, জনতার জয় হোক, গণতন্ত্রের জয় হোক। আমিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।