যুক্তবাদী লোক, সবজায়গায় যুক্তি খুজি মিশরের
তাহরির স্কয়ারে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে গণজমায়েত। সরকারের বিরুদ্ধে উত্তাল জনস্রোত অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীনতার পরিচায়ক। কিন্তু এরই আড়ালে ঘটে চলেছে নিকৃষ্ট অপরাধ কার্যক্রম। তাহরিরের ভীড়ে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে সেদেশের কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে দাবি করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
চলতি বছরের জুনের ৩০ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এই সমাবেশে গত চারদিনেই ৯১ জন নারী ধর্ষিতা হয়েছেন দাবি জানিয়েছে মিশরের যৌন হয়রানি বিরোধী গ্রুপগুলো। শাস্তিমুক্ত থাকবার এই সুযোগ অনেকেই নিচ্ছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য উপপরিচালক জো স্টোর্ক বলেন, “তাহরির স্কয়ারে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে এই যৌন হয়রানির বিষয়টি সরকারসহ সব রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতাকে আলোকপাত করছে। কারণ মেয়েরা নিত্যদিনই বিভিন্ন জনাকীর্ণ জায়গায় এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “এ ধরণের ভয়াবহ অপরাধ মিশরে নারীর অংশগ্রহণকে পেছনে টেনে ধরছে যা দেশটির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
”
মিশরের যৌন হয়রানি বিরোধী গ্রুপগুলো হয়রানির শিকার নারীদের উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। সেইসাথে গত তিনদিনে এমন ঘটনার শিকার নারীদের সংখ্যা নিরূপনেও এরা যথেষ্ট তৎপর।
আন্দোলনের আড়ালে ধর্ষণের কান্নাগ্রুপগুলোর তথ্য অনুযায়ী, জুনের ৩০ তারিখ ৪৬ জন, জুলাইয়ের ১ তারিখ ১৭ জন এবং জুলাইয়ের ২ তারিখ ২৩ জন যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩১ জনকে যৌন হয়রানির সময় ভীড়ের মধ্য থেকে রক্ষা করেছে সেখানে উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবক দল। উদ্ধারকৃতদের চারজনকে হাসপাতালে প্রেরণ করতে হয়েছিল।
যার মধ্যে একজন ধর্ষণ ছাড়াও ধারালো বস্তুর আঘাতে আহত হয়েছিলেন। করতে হয়েছিলো অস্ত্রোপচার।
শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত থাকেনি দুর্বৃত্তরা, অনেক ক্ষেত্রে ধাতব চেইন, লাঠি, চেয়ার এমনকি ছুরি দিয়েও নারীদের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। অনেক ঘটনায় দেখা গেছে না পালানো পর্যন্ত ক্রমাগত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেকে।
হিউম্যান রাইটসের এক ভিডিওতে কায়রোর বিভিন্ন জায়গায় যৌন নিগ্রহের শিকার মহিলাদের কথা উঠে এসেছে।
বিশেষত তাহরির স্কয়ারে যারা নির্যাতিত হয়েছেন। তাহরির স্কয়ারে তিন ধর্ষিতার বক্তব্য উঠে এসেছে হিউম্যান রাইটসের ভিডিওতে। সেখানে তিনজনই বর্ণনা দিয়েছেন নিজেদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার। পাশাপাশি উঠে এসেছে প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাটে নিগ্রহের শিকার তরুণীরাও। আবার অনেক তরুণ দাবি করেছেন এমন ঘটনার জন্য নারী এবং তাদের আবেদনময় পরিচ্ছদই দায়ী।
এদিকে মিশরীয় সরকার এ ধরণের ঘটনা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না। যেখানে অতিসত্বর এমন নিগ্রহের শিকার নারীদের রক্ষায় আইন প্রয়োগ ও দোষীদের বিচার নিশ্চিত করাটা প্রয়োজন। এমনটাই ভাবছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
২০১১ সালের নভেম্বর থেকে সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ বরাবরের মতই তাহরির বিক্ষোভ থেকে দূরে থেকেছে। আর পুলিশের এই দূরে থাকার জন্য নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে নারী আন্দোলনকারীরা।
ফলে দুর্বৃত্তদের দলগত আক্রমণ এবং নিশ্চিন্ত ধর্ষণের শিকার হন নারীরা। কারণ ধর্ষকরা ধরেই নেন যে তারা গ্রেপ্তার বা চিহ্নিত হবেন না।
তবে ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়েদের পরিচয় গোপন রাখার ব্যাপারেও সচেতনতার অভাব ছিল। জুলাইয়ের প্রথমদিন ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টির ওয়েবসাইট ও পরের দিন তাদের ছাপা পত্রিকায় এক ধর্ষিতার নাম, পরিচয়সহ সবকিছু প্রকাশ করা হয়। খবরের সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়কে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভাষ্যমতে, ধর্ষণের ঘটনাগুলোর পর পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্দ্বিধায় গণমাধ্যমের কাছে সব তথ্য সরবরাহ করেছেন। ধর্ষিতার মতামতের তোয়াক্কা না করেই এমনটা হয়েছে। ফলে লঙ্ঘিত হয়েছে ধর্ষিতার গোপনীয়তার অধিকার।
নিগ্রহের শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী ধর্ষকরা একইরকম কৌশলের অবলম্বন করেছে। কোন নারীকে লক্ষ্য করে প্রথমে বেশ কয়েকজন পুরুষ বিক্ষোভকারী তাকে ঘিরে ধরেন।
পরে তাকে ধীরে ধীরে নিজের লোকজনের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলেন। আর এভাবেই সূচিত হয় আক্রমণের প্রাথমিক অংশ। একসময় পুরোপুরি নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন সেই নারী। আবার অনেক সময় বেশ কয়েকজন মিলে কোন নারীকে অন্য জায়গায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
অনেক ক্ষেত্রে নারীদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে এলে তারাও দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন।
যৌন হয়রানির শিকার নারীরা সামাজিক বিধি নিষেধের কারণে গণমাধ্যমের সামনে আসতে চাননি। খুব কমই এ ব্যাপারে চেহারা দেখাতে রাজি হন। ৩০ বছর বয়স্ক ইয়াসমিন আল-বারমাওয়ে জানান, তাহরির স্কয়ারের বিক্ষোভে অংশগ্রহণে গেলে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী নিগৃহীত হন তিনি। কেউ একজন তাকে মাটিতে ফেলে দেয়ার পর টেনে কাপড় খুলে ব্লাউজ আর অন্তর্বাস কেটে তার শরীর উন্মোচন করা হয়। আক্রমণের পরপরই তাকে ঘিরে ভীড় বাড়তে থাকে।
শতাধিক ব্যক্তির ভীড়ে অসহায় বোধ করছিলেন তিনি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত অবধি এই অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। মানবাধিকার নিয়ে লড়াইরত এই সংগঠনের দাবি অচিরেই যেন আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে এমন অপরাধ দমন করা হয়।
"কপি পেষ্ট মারলাম" ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।