((হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ বলেছেনঃ “আমি একবার জনাব রসুলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় একটা সাপ এলো, এবং তার এক পাশে দাঁড়িয়ে গেল। আমি সাপটিকে নবীজির পাশে জায়গা করে দিলাম। সাপটি নবীজির পবিত্র কানে চুপিচুপি কিছু বলতে লাগলো। নবীজি বললেন ঠিক আছে।
তারপর সাপটি চলে গেল। তখন আমি নবীজির কাছে ব্যাপারটি জানতে চাইলাম। নবীজি বললেন ও ছিল এক জ্বিন। ও আমাকে বলে গেল আপনি আপনার উম্মাত (মানুষ) দের বলে দিন ওরা যেন গোবর ও হাড় দিয়ে এসতেন্জা* না করে, কারন ওই দুটি জিনিসে আল্লাহ্ আমাদের আহার্য রেখেছেন”। -ইবনুল আরাবি কাজী(ধর্মগ্রন্থ)।
))
(সকল চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক,বাস্তবের সাথে যদি কোন প্রকার মিল খুঁজে পান তবে তা কাকতালিয় ভেবে চুপ মেরে যাবেন, আমাকে দুষবেন না প্লিজ)
হাজী আল্লামা সানোয়ার হোসেন তার নতুন লাগানো দাঁত চাবি দিয়ে খোঁচাচ্ছেন। দাঁতের পেছনে অবস্থানরত লোহার আংটাটা তাকে খুব বিরক্ত করছে। তবে এখন আর কথা বলার সময় সামনে দিয়ে প্রয়োজনীয় বাতাস টুকু বের হয়ে যায় না। মাখরাজ এবং তানবিনগুলো শুদ্ধ ভাবে উচ্চারণ করতে পারার মধ্যে একটা আলাদা শান্তি আছে। হাজী আল্লামা সানোয়ার হোসেনের ক্বলবে শান্তি অনুভূত হতে থাকে এবং তিনি ভাবতে থাকেন যে এই শান্তির উৎস কয়েক আসমান উপরে।
“কী হুজুর, কী ভাবতাছেন? এজাজত দিলে সভা-সমিতি শুরু করি, বেলা তো কম হল না”,
ছোট হুজুরের কথায় টনক নড়ে হাজী আল্লামা সানোয়ার হোসেনের, বলে উঠেন “কিন্তু বড় হুজুর তো এখনো আসলো না”।
হ্যায় কি কোন দিন টাইম মতো আইছে নাকি? সত্য কথা তো কইবার পারি না আবার সওন ও যায় না দেইখেন একদিন হের লাইগা বড় কোন বিপদে পরমু... কথাটুকু কোনমতে বলে চিলেমচিতে পানের পিক থু করেন ছোট হুজুর।
আহ্ কি লাগাইলেন আপনারা। হুজুর হয়তো আসলেই কোন ভ্যাজালে পরছেন। না জাইনা তারে বেহুদা দোষ দিয়েন না।
বুঝদার হয়া আপনারাও যদি ইহুদি গো মতো নিজেরা নিজেরা ফাইট শুরু করেন তাইলে আপনার হেদায়েতের মূল্য কই যায় কন দেখি। তা জোহরের ওয়াক্ত তো প্রায় হয়ে আসলো। তা খানাপিনার এন্তেজাম কতদুর ? ইসলামপুর থেকে না কাচ্চি আসার কথা? মাঝারি হুজুর জানতে চায়
হ কাচ্চি তো আইসা পরছে ছোট হুজুর উত্তরায়।
তাহলে চলেন আগে খানাপিনা সেরে আসি ততোক্ষণে বড় হুজুর আসলেও এসে পড়তে পারেন, ও ভাল কথা বোরহানি বরফে চুবায়ে রাখা হইছে তো? কতদিন বললাম অফিসে একটা ফ্রিজ কিনেন, আজকাল তো কমদামে বড় বড় চাইনিজ ফ্রিজ পাওয়া যায়, বোরহানি ঠান্ডা না হইলে কি খেয়ে আরাম আছে নাকি?
আহ্হা এইমাত্র পানটা মুখে দিলাম, তবে কথাটা খারাপ কন নাই। চলেন খায়া নেই।
ছোট পুলাপানটির মুখ কেমন শুকাইয়া গেছে, চলেন দেরি করলে আবার কাচ্চির ময়েসচার নষ্ট হয়া যাইবো, কথাটুক বলে চিলেমচিতে আবার থু করেন ছোট হুজুর।
তার কথা শুনে হিজবুত তাহরির দুই সুরা সদস্য একটু বিব্রত বোধ করেন।
কিছুক্ষণ মধ্যে মিটিংএ আসা বারো জন সদস্য কাচ্চির প্যাকেট গুলোর উপর ঝাপিয়ে পড়েন। পোক্ত দাঁতের পেষণে খাসির নরম হাড় চূর্ণবিচূর্ণ হতে থাকে। হাড়ের সবটুকু নির্জাস শুষে নিয়ে পরিতৃপ্ত ভাবে তারা জামাতে জোহরের নামাজ আদায় করে পুনরায় মিটিং এ বসেন।
তা বড় হুজুর যেহেতু অনুপস্থিত তাই আমাকেই শুরু করতে হচ্ছে। তো প্রথমেই আল্লামা সৈয়দ মুক্তাদির হক খান আমদের এই ঘোরতর সংকট নিয়ে বয়ান দেয়ার জন্য আমন্ত্রন জানাচ্ছি।
আল্লামা সৈয়দ মুক্তাদির হক পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্র নামে শুরু করলেন,
“ উপস্থিত এলেম ও কাবেলগণ, সকলকে আসসালামুওলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্”। এইটুক বলে তিনি সালামের উত্তর পাবার জন্য কয়েক সেকেন্ড থামলেনএবং পুনরায় শুরু করলেন
“আমরা এ কোন হিন্দুয়ানি সমাজে বাস করছি বলেন, যে সমাজে মেয়েরা আইয়ামে যাহ্লিয়াত এর নারীগণের ন্যায় বুক খোলা কাপড় পরে রাস্তায় বেপরদা ঘুরে বেড়ায় আর পুরুষরা তা প্রশ্রয় দেয়। আল্লাহতালা পবিত্র কুরানে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেনে “নিশ্চয়ই জারা মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার ঘটানোর কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি, আল্লাহ্ জানেন,তোমরা জান না”*
সকলে সমস্বরে নাউজুবিল্লা বলার পর হুজুর আবার শুরু করেন
“কি আর বলব বলেন, দেশে এই দেশের পথভ্রষ্ট মানুষ গুলা এখন আবার নতুন মুরতাদি শুরু করছে।
দেশের জনগন মাটির নিচে কোটি কোটি ঘন ফুট গ্যাস মাটি চাপা দিয়া রাইখা কাফের আর হিন্দুদের সাথে একজোট হয়ে গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস বানায়। সুধু তাই না হাড়ের গুঁড়া দিয়া আবার বলে সার বানায়। বাপের জন্মেও শুনি নাই...। আরে আমাদের বাপ দাদারা যখন চাষবাস করছে তখন কি গরুর পায়খানা দিয়া গ্যাস বানানো লাগছে? জমিতে হাড্ডির গুঁড়া ছিটানো লাগছে? সব হইল ইসলামের বিরুদ্ধে গভির ষড়যন্ত্র।
আল্লাহতালা পবিত্র কুরানে বলেছেন “ আমি জ্বিন এবং মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের লক্ষ্যে”
তার মানে আমরা মানুষরা যেমন আল্লাহ্র বান্দা জ্বীনরাও তেমনি আল্লহ্র বান্দা।
বলেন ঠিক কিনা”
সকলে একসাথে সম্মতি প্রকাশ করলে তিনি আবার শুরু করেন
“আর আল্লাহ্র বান্দার উপর জুলুম করলে আল্লাহর আরস কাইপা ওঠে। ওই জাতি ধ্বংস হয়া যায়। আরে ফেরাউন টিকতে পারে নাই আর এ তো সামাইন্ন হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকার। দেশ টারে উলটা রাজার দেশ বানায়া রাখছে সেই তুলনায় জ্বীন রা তো আমদের বন্ধু। ওরা আর যাই কন না কেন আমাগো ক্ষতি তো করে না।
আর আমাগো দেশের কিছু কাফের নাসারা জ্বিন তথা আল্লাহর সাথে দুশমনি শুরু করছে... নাউজুবিল্লাহ্। “
“এখানে আমরা যারা বুঝদার মানুষ আছি তাদের সকলের কর্তব্য আল্লহ্র বান্দা জ্বীনদের বিরুদ্ধে যে গভির ষড়যন্ত্রটি সংগঠিত হচ্ছে তা কঠোর ভাবে দমন করা। প্রয়োজনে এইসব কাফের মুনাফেক দের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দেয়া। আমার যা বলার তা বললাম এ বার হাজী আল্লামা সানোয়ার হোসেন হুজুর একটা ফয়সালায় আসেন।
হাজী আল্লামা সানোয়ার হোসেন উঠে দাঁড়ান, প্রথমেই তিনি হিজবুত তাহরির সুরা সদস্য মুফতি ফজলুল করিম এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন “ যা বলার তা তো সব বলা হয়ে গেল, আমরা তো এখন ময়দানে নেমে খুব বেশি কাজ করার ক্ষমতা রাখি না, তাই কাজ গুলা তোমাদেরই করতে হবে, আমরা সাথে আছি, বায়োগ্যাস কারখানা আর সার কারখানা গুলা খুইজা বাইর কর আর আল্লহর রাস্তায় নিজের নিয়জিত কর,আমরাতো সাথেই আছি, আর আল্লাহ্তালা তো বলেছেন “ তোমরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে আল্লহ্র রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিছিন্ন হয় না” *... আর বিশেষ কিছু বলার নাই।
তবে বড় হুজুর থাকলে তার পালিত জ্বীন কাবাবিল কে মিটিং এ ডাকা যেত..এখন বাকিটা আল্লাহ্ ভরসা। ।
******এর পরের ঘটনা আমার জানা নাই। ।
টীকাঃ
*এসতেন্জাঃ পানির অনুপস্থিতেতে মুত্রত্যাগের পর যৌনাঙ্গ পরিস্কার করার বিশেষ পদ্ধতি,
* সুরা আন নুর, ২৪;১৯
* সুরা আলে ইমরান
(আল্লামা জালালূদ্দীন সুয়ূতি প্রণীত(৯১১ হিজরি) জ্বিন নিয়ে লেখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য ঐতিহাসিক পুস্তক “লাক্বতুল মারজ্বানি ফি আহ্কামিল জ্বিন” থেকে প্রারম্ভিক কোটেশনটুকু নেয়া হয়েছে।
আপনার বিস্বস্ততার ঘাটতি থাকলে আমার কিছুই যায় আসে না। এই অমূল্য পুস্তকখানা পড়তে চাইলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে তার আগে সময়ের মূল্য রচনাটি অবশ্যপাঠ্য)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।