আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাধীনতা তুমি---

একটা আটপৌরে ঘরোয়া সাদামাঠা প্রেমের কবিতা লিখতে চাই আজ ক্যোন যেনো কবিতা্গুলো পড়তে ইচ্ছে হল-- আমার খুব পছন্দের কবিতা --- মনে হলো আপনাদের সঙ্গেও শেয়ার করি -- তাই এ কাট কপি পেস্ট পোস্ট---- কেউ বিরক্ত হলে দুখিত স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান। স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা- স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা স্বাধীনতা তুমি পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল। স্বাধীনতা তুমি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি। স্বাধীনতা তুমি রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার। স্বাধীনতা তুমি মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।

স্বাধীনতা তুমি অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক। স্বাধীনতা তুমি বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ। স্বাধীনতা তুমি চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ। স্বাধীনতা তুমি কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা। স্বাধীনতা তুমি শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।

স্বাধীনতা তুমি উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন। স্বাধীনতা তুমি বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ। স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার। স্বাধীনতা তুমি গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল, হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম। স্বাধীনতা তুমি খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা, খুকীর অমন তুলতুলে গালে রৌদ্রের খেলা।

স্বাধীনতা তুমি বাগানের ঘর, কোকিলের গান, বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা, যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা। ------------- কি সহজ সরল ভাষায় আপামর বাংলার স্বাধীনতার বর্ণনা তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা-শামসুর রাহমান তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ? আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ? তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো, সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর। তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো দানবের মত চিত্কার করতে করতে তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র। তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।

তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভূর বাস্তুভিটার ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর। তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতামাতার লাশের উপর। তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ? আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ? স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুড়ো উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল। স্বাধীনতা, তোমার জন্যে মোল্লাবাড়ির এক বিধবা দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটি ধ’রে দগ্ধ ঘরের। স্বাধীনতা, তোমার জন্যে হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে বসে আছে পথের ধারে।

তোমার জন্যে, সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক, কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা, মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি, গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝড়ে রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস এখন পোকার দখলে আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়ানো সেই তেজী তরুণ যার পদভারে একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে – সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জলন্ত ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে, মতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক এই বাংলায় তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা। ----- স্বাধীনতার জন্য কি আকুলতা--- বন্দী শিবির থেকে – শামসুর রাহমান ঈর্ষাতুর নই, তবু আমি তোমাদের আজ বড় ঈর্ষা করি। তোমরা সুন্দর জামা পরো, পার্কের বেঞ্চিতে বসে আলাপ জমাও, কখনো সেজন্যে নয়। ভালো খাও দাও, ফুর্তি করো সবান্ধব সেজন্যেও নয়।

বন্ধুরা তোমরা যারা কবি, স্বাধীন দেশের কবি, তাদের সৌভাগ্যে আমি বড়ো ঈর্ষান্বিত আজ। যখন যা খুশি মনের মতো শব্দ কী সহজে করো ব্যবহার তোমরা সবাই। যখন যে শব্দ চাও, এসে গেলে সাজাও পয়ারে, কখনো অমিত্রাক্ষরে, ক্ষিপ্র মাত্রাবৃত্তে কখনো-বা। সেসব কবিতাবলী, যেন রাজহাঁস দৃপ্ত ভঙ্গিমায় মানুষের অত্যন্ত নিকটে যায়, কুড়ায় আদর। অথচ এদেশে আমি আজ দমবদ্ধ এ বন্দী-শিবিরে মাথা খুঁড়ে মরলেও পারি না করতে উচ্চারণ মনের মতন শব্দ কোনো।

মনের মতন সব কবিতা লেখার অধিকার ওরা করেছে হরণ। প্রকাশ্য রাস্তায় যদি তারস্বরে চাঁদ, ফুল, পাখি এমনকি নারী ইত্যাকার শব্দাবলী করি উচ্চারণ, কেউ করবে না বারণ কখনো। কিন্তু কিছু শব্দকে করেছে বেআইনী ওরা ভয়ানক বিস্ফোরক ভেবে। স্বাধীনতা নামক শব্দটি ভরাট গলায় দীপ্ত উচ্চারণ করে বারবার তৃপ্তি পেতে চাই। শহরের আনাচে কানাচে প্রতিটি রাস্তায় অলিতে-গলিতে, রঙিন সাইনবোর্ড, প্রত্যেক বাড়িতে স্বাধীনতা নামক শব্দটি আমি লিখে দিতে চাই বিশাল অক্ষরে।

স্বাধীনতা শব্দ এত প্রিয় যে আমার কখনো জানিনি আগে। উঁচিয়ে বন্দুক, স্বাধীনতা, বাংলাদেশ- এই মতো শব্দ থেকে ওরা আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে সর্বদা। অথচ জানেনা ওরা কেউ গাছের পাতায়, ফুটপাতে পাখির পালকে কিংবা নারীর দু’চোখে পথের ধুলায় বস্তির দুরন্ত ছেলেটার হাতের মুঠোয় সর্বদাই দেখি জ্বলে স্বাধীনতা নামক শব্দটি। ----- এটার সম্বন্ধে কিছু বলার যোগ্যতা আমার নেই জেলগেটে দেখা – আল মাহমুদ সেলের তালা খোলা মাত্রই এক টুকরো রোদ এসে পড়লো ঘরের মধ্যে আজ তুমি আসবে । সারা ঘরে আনন্দের শিহরণ খেলছে ।

যদিও উত্তরের বাতাস হাড়েঁ কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে বইছে , তবু আমি ঠান্ডা পানিতে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। পাহারাদার সেন্ট্রিকে ডেকে বললাম, আজ তুমি আসবে । সেন্ট্রি হাসতে হাসতে আমার সিগ্রেটে আগুন ধরিয়ে দিল । বলল , বারান্দায় হেটেঁ ভুক বাড়িয়ে নিন দেখবেন , বাড়ী থেকে মজাদার খাবার আসবে । দেখো , সবাই প্রথমে খাবারের কথা ভাবে ।

আমি জানি বাইরে এখন আকাল চলছে । ক্ষুধার্ত মানুষ হন্যে হয়ে শহরের দিকে ছুটে আসছে । সংবাদপত্রগুলোও না বলে পারছে না যে এ অকল্পনীয় । রাস্তায় রাস্তায় অনাহারী শিশুদের মৃতদেহের ছবি দেখে আমি কতদিন আমার কারাকক্ষের লোহার জালি চেপে ধরেছি । হায় স্বাধীনতা , অভুক্তদের রাজত্ব কায়েম করতেই কি আমরা সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলাম ।

আর আমাকে ওরা রেখেছে বন্দুক আর বিচারালয়ের মাঝামাঝি যেখানে মানুষের আত্মা শুকিয়ে যায় । যাতে আমি আমরা উৎস খুঁজে না পাই । কিন্তু তুমি তো জানো কবিদের উৎস কি ? আমি পাষাণ কারার চৌহদ্দিতে আমার ফোয়ারাকে ফিরিয়ে আনি । শত দুর্দৈবের মধ্যেও আমরা যেমন আমাদের উৎসকে জাগিয়ে রাখতাম । চড়ুই পাখির চিৎকারে বন্দীদের ঘুম ভাঙছে ।

আমি বারান্দা ছেড়ে বাগানে নামলাম। এক চিলতে বাগান ভেজা পাতার পানিতে আমার চটি আর পাজামা ভিজিয়ে চন্দ্রমল্লিকার ঝোপ থেকে একগোছা শাদা আর হলুদ ফুল তুললাম । বাতাসে মাথা নাড়িয়ে লাল ডালিয়া গাছ আমাকে ডাকলো । তারপর গেলাম গোলাপের কাছে । জেলখানার গোলাপ , তবু কি সুন্দর গন্ধ ! আমার সহবন্দীরা কেউ ফুল ছিড়েঁ না , ছিঁড়তেও দেয় না কিন্তু আমি তোমার জন্য তোড়া বাঁধলাম ।

আজ আর সময় কাটতে চায়না । দাড়ি কাটলাম । বই নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম । ওদিকে দেয়ালের ওপাশে শহর জেগে উঠছে । গাড়ীর ভেঁপু রিক্সার ঘন্টাধ্বনি কানে আসছে ।

চকের হোটেলগুলোতে নিশ্চয়ই এখন মাংসের কড়াই ফুটছে । আর মজাদার ঝোল ঢেলে দেওয়া হচ্ছে গরীব খদ্দেরদের পাতে পাতে । না বাইরে এখন আকাল । মানুষ কি খেতে পায় ? দিনমজুরদের পাত কি এখন আর নেহারির ঝোলে ভরে ওঠে ? অথচ একটা অতিকায় দেয়াল কত ব্যবধানই না আনতে পারে । আ , পাখিরা কত স্বাধীন ।

কেমন অবলীলায় দেয়াল পেরিয়ে যাচ্ছে জীবনে এই প্রথম আমি চড়ুই পাখির সৌভাগ্যে কাতর হলাম । আমাদের শহর নিশ্চয়ই এখন ভিখিরিতে ভরে গেছে । সারাদিন ভিক্ষুকের স্রোত সামাল দিতে হয় । আমি কতবার তোমাকে বলেছি , দেখো মুষ্টি ভিক্ষায় দারিদ্র্য দূর হয় না । এর অন্য ব্যবস্হা দরকার , দরকার সামাজিক ন্যায়ের ।

দুঃখের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে । আ , যদি আমার কথা বুঝতে । প্রিয়তমা আমার , তোমার পবিত্র নাম নিয়ে আজ সূর্য উদিত হয়েছে । আর উষ্ণ অধীর রশ্মির ফলা গারদের শিকের ওপর পিছলে যাচ্ছে । দেয়ালের ওপাশ থেকে ঘুমভাঙ্গা মানুষের কোলাহল ।

যারা অধিক রাতে ঘুমোয় আর জাগে সকলের আগে । যারা ঠেলে । চালায় । হানে । ঘোরায় ।

ওড়ায় । পেড়ায় । আর হাত মুঠো করে এগিয়ে যায় । সভ্যতার তলদেশে যাদের ঘামের অমোঘ নদী । কোনদিন শুকোয় না ।

শোনো , তাদের কলরব । বন্দীরা জেগে উঠছে । পাশের সেলে কাশির শব্দ আমি ঘরে ঘরে তোমার না ঘোষণা করলাম বললাম , আজ বারোটায় আমার ‘দেখা’ । খুশীতে সকলেই বিছানায় উঠে বসলো । সকলেরই আশা তুমি কোন না কোন সংবাদ নিয়ে আসবে ।

যেন তুমি সংবাদপত্র ! যেন তুমি আজ সকালের কাড়জের প্রধান শিরোনামশিরা ! সূর্য যখন অদৃশ্য রশ্মিমালায় আমাকে দোলাতে দোলাতে মাঝ আকাশে টেনে আনলো ঠিক তখুনি তুমি এলে । জেলগেটে পৌছেঁ দেখলাম , তুমি টিফিন কেরিয়ার সামনে নিয়ে চুপচাপ বসে আছো । হাসলে , ম্লান , সচ্ছল । কোনো কুশল প্রশ্ন হলো না । সাক্ষাৎকারের চেয়ারে বসা মাত্রই তুমি খাবার দিতে শুরু করলে ।

মাছের কিমার একটা বল গড়িয়ে দিয়ে জানালে , আবরা ধরপাকড় শুরু হয়েছে । আমি মাথা নাড়লাম । মাগুর মাছের ঝোল ছড়িয়ে দিতে দিতে কানের কাছে মুখ আনলে , অমুক বিপ্লবী আর নেই আমি মাথা নামালাম । বললে , ভেবোনা , আমরা সইতে পারবো । আল্লাহ , আমাদের শক্তি দিন ।

তারপর আমরা পরস্পরকে দেখতে লাগলাম । যতক্ষণ না পাহারাদারদের বুটের শব্দ এসে আমাদের মাঝখানে থামলো । ---এটাও খুভ ভাল লাগার কবিতা কষ্ট করে পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.