স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ''সীমান্তে যা কিছু ঘটছে তা নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত নয়। সব কাজ ফেলে রেখে শুধু এদিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলেও সরকার মনে করে না। '' (প্রথম আলো, ২১-০১-২০১২)
সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, 'শুধু এই দিকে', তারমানে, এই দিকে সরকারের দৃষ্টি আছে, কিন্তু সরকারের নানা কিছু করতে হয়, পদ্মা সেতুর জন্য ফান্ড যোগাড় করতে হয়, ভেঙ্গে পড়তে বসা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দেখভাল করতে হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হয়, আইএসআই-এর ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হয়; এর মধ্যে দু'-চারজন বিজিবি সদস্যকে যদি বিএসএফ ধরেই নিয়ে যায় অথবা একটু শুটিং প্র্যাকটিস করে বাংলাদেশীদের ওপর বা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে একটু আধটু মারধর করে, তা নিয়ে এত উতলা হবার কি আছে? ইন্ডিয়া তো এমন আচরণ বরাবরই করে আসছে, নতুন তো নয়। সাংবাদিকরা কেন যে বোঝে না! সরকার কতো ব্যস্ত!
মুশকিল হোল এই যে, সাধারণ মানুষ মনে করে, ইন্ডিয়ার এই ঔদ্ধত্ত্যের পিছনে সরকারের নতজানু নীতি দায়ী। তিতাস নদী প্রায় হত্যা করে সরকার ইন্ডিয়াকে ট্রানশিপমেন্ট দিতে পারে অথচ সীমান্তের মানুষদের জীবন বাঁচাতে পারে না!
বিচিত্র এই দেশ, সত্যিই!
এই আগ্রাসন বাংলাদেশের মানুষদের ইন্ডিয়া বিরোধী করে তুলবে এটা কিন্তু নপুংসক সরকারের কর্তাব্যক্তিরা জানেন।
তাই বাংলাদেশের রাজনীতির ভাঁড় জেনারেল এরশাদকে ইন্ডিয়া বিরোধী অবস্থান নিতে বলেছে সরকার! তাঁর এইসব লংমার্চ নাকি ইন্ডিয়া এবং সরকার অনুমোদিত! দেখুন প্রথম আলো Click This Link
রাজনীতিতে কত কিছুই হয়!
রাজনীতিতে যাই হোক, ফেসবুকে কী হচ্ছে?
সেখানে কিছু ক্রুদ্ধ বাংলাদেশী ইন্ডিয়ান পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে!
ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বয়সে তরুণ আবার বাংলাদেশী। কাজেই এটা হুজুগ নাকি তারা আরব বিপ্লবের মতো কিছু করে বসবে, সেটা সময় না আসলে বলা মুশকিল। তবে আপাতত আমরা একটা লিস্ট করি। কী কী ইন্ডিয়ান পণ্য আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বর্জন করবো এটা তার লিস্ট। শুরু করছি নাম্বার ফাইভ থেকে।
০৫. ইন্ডিয়ান গরুর মাংস
গরুর মাংস 'রেড মিট'। যত কম খাবেন তত ভালো। গরুর মাংস বর্জন করুন, হার্ট সুস্থ রাখুন। একান্তই যদি খেতে হয়, দেশি গরু পেলে পুষে বড় করে কোরবানির ঈদে জবাই করে খান। বাজারে গিয়ে এই দূর্মুল্যের যুগে যে গরুর মাংস আপনি কিনে এনে ভূনা করে খেয়ে ঢেঁকুর তুলে ইন্ডিয়ান পণ্য বর্জন বিষয়ক সংলাপে অংশ নেন, মনে রাখবেন তা খোদ ইন্ডিয়ান গরু! কাজেই গরুর মাংস বর্জন করুন, জীবনের ঝুঁকি কমান, কারন আপনার বেঁচে থাকা আমরা যারা ইন্ডিয়ান আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলি, তাদের জন্য খুবই দরকার।
০৪. ইন্ডিয়ান শাড়ি
হ্যাঁ, সস্তায় পাওয়া যায়, তাই আপনি আপনার মা-বোনকে কিনে দেন, বা নিজে পরেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই সস্তার শাড়ি আমাদের জামদানি-টাঙ্গাইল-সিল্ক শিল্পের কী ক্ষতিটা করেছে? ইন্ডিয়া থেকে আমাদের চাল-ডাল-চিনি-পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। খাদ্য বস্ত্র এগুলো মৌলিক অধিকার, কিন্তু ক্রম অনুযায়ী বস্ত্র পরে আসে। কাজেই আপাতত আমাদের নারী জাতি অন্তত ইন্ডিয়ান শাড়ি বর্জন করুক। শাড়ি ছাড়াও তো আধুনিক বাঙালি নারীর পরার অনেক কিছু আছে।
০৩. ফেন্সিডিল
সবাই খায় না, তবে যারা খায় তাদের ছেড়ে দেয়া উচিত। এই নীল বোতলের নেশা জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে এমন উদাহরণ খালি চোখে দেখলেও আপনার আশেপাশে পাবেনই! ফেন্সিডিল একটা কফ সিরাপ যার মুল উপাদান হোল কোডেইন ফসফেট। এটা একটা পরিপূর্ণ ইন্ডিয়ান উদ্ভাবন। বাংলাদেশে অনেক আগেই 'ডাইল' নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিন্তু ইন্ডিয়াতে এখনও আইনসিদ্ধ। সীমান্ত এলাকাগুলোতে কিছু কারখানা আছে, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে।
আপনার শহরেই কিছু বিশেষ জায়গাতে ইশারা করলেই এটা পাবেন। তবে আমি একান্তভাবে চাই, কেউ যেন 'ইশারা' না করেন!
০২. হিন্দি সিরিয়াল
খুব কঠিন কাজ। আমাদের নারীদের বিনোদন তো ঐ একটাই! এই ডেইলি সোপগুলো আমাদের স্বপ্নগুলো বাস্তব করে দেখায়। শিফনের শাড়ি পরে জড়োয়া গহনা জড়িয়ে হিন্দি সিরিয়ালগুলোর শাশুড়িরা তাদের সুন্দরী, সুশীলা, শিক্ষিতা কিন্তু আশ্চর্য রকম নম্র পুত্রবধূদের সাথে গল্প করেন। এমন পুত্রবধূ তো সবাই পেতে চায়, চায় অমন ফার্নিচার কিনতে, কিন্তু সিরিয়ালগুলোর স্বামীদের মতো ব্যাঙ্ক ব্যালান্স তো নেই সবার, তারা কী করবেন সিরিয়াল দেখা ছাড়া?
বটে, কিন্তু আজকাল দেখছি মায়েরা সিরিয়াল দেখেন, আর তাদের ছেলে মেয়েরা টকাটক হিন্দিতে 'বাতচিত' করে।
ভয় হয়, ইন্ডিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতেও না ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিন্দিতে স্লোগান দেয়!
কঠিন কাজ হোলেও ছাড়তে হবে। নিজের সন্তানের সামনে যেমন অনেক পিতা ধূমপান করেন না, মায়েদের হিন্দি সিরিয়াল দেখা ছাড়তে হবে।
০১. পশ্চিমবঙ্গের বাংলা টিভি
জাকির নায়েকের 'পিস টিভি'র একটা বাংলা ভার্শন আছে। কিন্তু তার কার্যক্রম চলে কোলকাতা থেকে। উনি জানেন, বাংলাদেশে তাঁর দর্শক আছে, পশ্চিমবঙ্গের থেকে মুসলমানদের সংখ্যা এদিকে বেশি।
উনি এটাও জানেন, কোলকাতার চ্যানেল বাংলাদেশে ঢুকতে কোন বাধা নেই, কিন্তু বাংলাদেশী চ্যানেল ইন্ডিয়ান হিন্দি বা তামিলভাষী দূরে থাকুক পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি দর্শকের কাছেও পৌঁছয় না। অতএব, একজন ব্যবসায়ী যা করবেন তিনি তাই করেছেন। নতুন একটা দেশে (পড়ুন বাংলাদেশে) লাইসেন্স, অফিস ভাড়া ইত্যকার ঝামেলায় না গিয়ে কোলকাতাতেই অফিস ফেঁদে ফেলেছেন! দর্শক এইদিকে, বিনিয়োগ ঐদিকে! শুধু 'পিস টিভি' কেন, 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক' থেকে 'ডিসকভারি', সবার কেন্দ্র কোলকাতা। অন্তত বাংলা ভাষার ব্যাটন আমাদের হাতে থাকবে না? বাংলা তো আমাদের জাতীয় ভাষা, ইন্ডিয়ার কোন অবহেলিত প্রাদেশিক ভাষা তো নয়।
'জি বাংলা' আর 'স্টার জলসা'র সিরিয়াল এখন বাংলাদেশে হিন্দি সিরিয়ালগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করছে।
'মীরাক্কেল'-এ বাংলাদেশী প্রতিযোগীদের সাফল্য আমাদের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মীর যখন এপার বাংলা ওপার বাংলার মিলন বলে বলে ক্লান্ত, আমরা হাততালি দেবার ফাঁকে কখনো কি ভেবেছি, এমনটা হবার কথা আদৌ ছিল কি? আমাদের টিভিতে বিনিয়োগ কম, বিজ্ঞাপনের বিনিয়োগ যা আছে তাও চলে যাচ্ছে 'ওপার বাংলা'য়। এই অনুষ্ঠানগুলো যে বাচ্চা দেখছে, সে শিখছে এক বিচিত্র হিন্দি ঘেঁষা বাংলা। আর 'ওপার বাংলা'র টিভিতে যেসব বাংলাদেশী কাজ করছেন, তারা কী পাচ্ছেন? 'বাংলা' ব্যান্ডের আনুশেহ আনাদিল বাংলাদেশের একজন বেশ পরিচিত মুখ। তিনি 'সুবর্ণলতা' নামে এক সিরিয়ালের শীর্ষসঙ্গীত গেয়েছেন।
যারা 'জি বাংলা'য় প্রচারিত 'সুবর্ণলতা' দেখেন তারা খেয়াল করবেন অনুগ্রহ করে যে, আনুশেহ-এর নামের বানান তারা কী দেখায়।
আমরা আমাদের কাছা দিয়েছি খুলে, ইন্ডিয়ার একটা প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গও আমাদের ধর্ষন করবে, এটা তো স্বাভাবিক! কাছা বাধার দায়িত্ব যে সরকারের তারা সীমান্তের নিরীহ মানুষ বাঁচাতে পারে না, তারা করবে চ্যানেল বন্ধ? অতি কল্পনা নয়?
অতএব, যারা ইন্ডিয়ান পণ্য বর্জন করতে চান, তারা আগে ইন্ডিয়ান টিভি বর্জন করুন। কারন পণ্যের চাহিদা তৈরি করে টিভি-ই।
রাজশাহী ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।