আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিপাইমুখ বাধ !ইন্ডিয়ান প্রতিশ্রুতি

একতরফাভাবে টিপাইমুখ প্রকল্প নির্মিত হলে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে ভারত যে আশ্বাস দিচ্ছে, তা শুধু আইনগতভাবে অগ্রহণযোগ্যই নয়, এটি বিভিন্ন কারণে অবিশ্বাস্যও। প্রথমত, ওয়ার্ল্ড কমিশন অন ড্যামের ২০০০ সালে প্রকাশিত ড্যাম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক সুবিশাল গবেষণা রিপোর্টে বড় ড্যাম লাভের চেয়ে ক্ষতি অনেক বেশি করে, পরিষ্কারভাবে এ কথা বলা হয়েছে। শুধু পরিবেশগত দিক দেখলে এসব ক্ষতির মধ্যে রয়েছে বন ও বন্য প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গতকরণ, প্রাণীবৈচিত্র্য বিনষ্টকরণ ও পানির মান (কোয়ালিটি) বিনষ্টকরণ। কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়, এসব ক্ষতি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অমেরামতযোগ্য এবং এ কারণে কিছু দেশ, বিশেষ করে আমেরিকা, এরই মধ্যে নির্মিত বড় ড্যামগুলো ভেঙে ফেলছে। সামাজিক প্রভাবসংক্রান্ত অংশে কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বড় ড্যামের কারণে বিশেষ করে উজান অঞ্চলের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা এবং স্বাস্থ্যের মারাত্মক এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়।

দ্বিতীয়ত, ভারতের এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে স্বয়ং মনিপুর ও মিজোরামের মানুষ সোচ্চার হয়েছিল এর মারাত্মক পরিবেশগত প্রভাবের কথা বিবেচনা করে। মনিপুরের রাজধানী ইমফলে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ২০টি অরাজনৈতিক সংগঠনের ডাকে হরতাল পালিত হয়েছে, আদালতে মামলা করা হয়েছে এবং এখনো নিয়মিত প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আরও উজানের একটি দেশ হিসেবে এ প্রকল্পের ক্ষয়ক্ষতি বাংলাদেশেই বেশি অনুভূত হওয়ার কথা। তৃতীয়ত এবং সবচেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা। ফারাক্কা ব্যারাজ হলে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না—এই দাবি ভারত ১৯৫১ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত আমাদের অব্যাহতভাবে শুনিয়ে এসেছে।

১৯৭৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভারত ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশের কিছু সুবিধা হবে—এই দাবিও করেছে। ফারাক্কা ব্যারাজের অপূরণীয় ক্ষতির তিক্ত অভিজ্ঞতার পর টিপাইমুখ ড্যাম ক্ষতিকর হবে না, ভারতের এই দাবি অন্ধের মতো মেনে নেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখ ড্যম নির্মাণসহ তিস্তা, গঙ্গা, দুধকুমারী, খোয়াই, মনু, মুহুরী, ধরলাসহ বিভিন্ন যৌথ নদীর ওপর ভারত একতরফাভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। তবে টিপাইমুখের আয়তন ও ব্যাপ্তি হবে এর মধ্যে সবচেয়ে বিশাল। ভূকম্পন এলাকায় অবস্থিত বলে এটি কখনো ভেঙে পড়লে তলিয়ে যেতে পারে সুরমা ও কুশিয়ারার দুই কূলের বিশাল অঞ্চল।

টিপাইমুখ ড্যামের সঙ্গে সঙ্গে ফুলের তল ব্যারাজ নির্মিত হলে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি ফারাক্কাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফুলের তল ব্যারাজ নির্মাণের কথা ভারতের আদি প্রস্তাবে রয়েছে। এটি যে এখন তার প্রকল্পের অংশ নয়, সে সংক্রান্ত কোনো দলিল-দস্তাবেজ বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই। আমাদের একটি বড় উদ্বেগ এটিও। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.