আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএসএফ ও বাস্তবতা

শান্তির জন্য সংগ্রামী ঘটনা ৯ ডিসেম্বরের কিন্তু গত ১৮ জানুয়ারী বুধবার বিকেলে ভারতীয় টেলিভিশন এনডিটিভি তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর ক্যাম্পের কাহারপাড়া সীমান্ত চৌকিতে চোরাইপথে ভারত থেকে গরু পাচারকারী হাবিবুর রহমান নামক একজন বাংলাদেশীকে নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ প্রচারের পর আমাদের মিডিয়া, ফেসবুক, ব্লগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বাস্তবতাঃ ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন তথা দ্বিজাতি তত্বের বিষবাষ্পে বিভাজিত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের(সাবেক পূর্ব পাকিস্তান)জন্য সীমান্ত সমস্যা একটি অত্যন্ত জটিল ও কঠিন এক সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। ভূ-সম্পত্তি বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের হিন্দু মুসলমানদের এক বড় অংশ কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট ধর্মীয় দাঙ্গার পর থেকেই হিন্দুস্থান খ্যাত ভারতে হিন্দুদের গমন এবং মুসলমানের আবাসভুমি হিসেবে বিভক্ত পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানেই মুসলমানদের আসার হিড়িক পড়ে এবং জন্মভুমি পরিত্যাগ করে। ভিসা পাসপোর্ট ব্যাবস্থা না থাকায় এবং বর্ডার নির্ধারণ না হওয়ায় যাওয়া আসাও ছিল অত্যান্ত সহজ। বিষয় সম্পত্তিহীন মোহাজের বা রিফিউজীদের জন্য ব্রিটিশদের করা নিয়মানুযায়ী গমিত দেশের সরকার বিশেষ সহযোগিতা দিতে থাকে।

ভারত সরকারও যেমন তাদের দেশে যাওয়া রিফিউজীদের যথাসম্ভব পূর্নবাসনের চেষ্টা করে তেমনি পূর্ব পাকিস্তানে আগত ভারতের বিহার রাজ্যের মোহাজেরদের সরকার রেলের চাকুরীতে ঢালাও নিয়োগ দেয়। কিন্তু এদের অনেকেরই কিছু কিছু বিষয় সম্পত্তি এবং আত্বীয় স্বজ্বন উভয় দেশেই থেকে যায় । সে কারনেই দেশ ছেড়ে এলেও মাঝে মধ্যেই লোকজনের বৈধ অবৈধ পথে বর্ডার পরাপার চলতেই থাকে। একসময় উভয় দেশের মধ্যে নিত্যপ্রয়েজনীয় দ্রব্য মূল্যের হ্রাসবৃদ্ধির কারনে বর্ডার ব্যবসা গড়ে ওঠে । উভয় দেশের সরকারই একসময় এটা বন্ধ করার জন্য আন্তরিক হলেও পূরাপুরি নিয়ন্ত্রনে ব্যার্থ হয় ।

১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই ভারতের তৈরী জিনিষপত্রের উপর নির্ভরতা বাড়তে থাকে । বৈধ ও অবৈধ দুভাবেই ভারতীয় পন্য আমাদের বাজারে সহজলভ্য হয়। আমাদের সাথে ভারতের ৫২ হাজার বর্গমাইলের সীমান্ত এলাকার প্রায় সবখানেই ধীরে ধীরে চোরাচালান নির্ভর পরিবারের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেতে পেতে বর্তমানে একটি বেসরকারী সংস্থার জরিপ অনুযায়ী এই সংখ্যা প্র্রায় ২০ লক্ষ । চোরাচালান এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আশির দশক থেকে ভারত বাংলাদেশের প্রতিবাদ সত্বেও তার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মানের সিদ্ধান্তে অটল থেকে বর্তমানে এই কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। বলা হয় আমরা হিন্দু তথা সংখ্যালঘুদের আপন করতে পারিনি অথবা তাঁরা বাংলাদেশকে আপন করে নিতে পারেনি।

’৭১ সালে পাকি হায়েনার দল সমগ্র বাংলাদেশ বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান বিরোধের জের ধরে হিন্দুদের উপর বর্বর অত্যাচার চালানোর দরুন পাওয়া ভয় এখনো আমরা কাটাতে পারিনি। উপরন্তু স্বামরিক শাসন তথা মাঝে মাঝে জঙ্গী মৌলবাদের উত্থানের দরুন সেই ভীতি আরো প্রকট হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রত্যাশিত সফলতা অর্জন করতে না পারায় এবং সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি অবহেলিত থাকারকারনেই এখানকার সংখ্যলঘূ এবং মজুর শ্রেনীর মানুষদের একাংশ ভারতে গিয়ে থেকে যেতে উতসাহিত হয়। স্বীমান্ত এলাকায় উভয় দেশেই দারিদ্রতার কষাঘাতে জনজীবন অনেকখানি বিপন্ন। এই সুযোগটি গ্রহন করেই সীমান্তের দুই পারের কিছু মুনাফাখোর ব্যবসায়ী অবৈধ পণ্য চোরাচালানের জন্য এই অসহায় গরীব মানুষগুলিকে ব্যাবহার করে।

সেখানে পুরুষের পাশাপাশি জীবনের ঝুকি নিয়ে নারী ও শিশুরাও অন্নক্ষুধা মিটানোর জন্য পয়সা উপার্জনের আশায় অবৈধপথে সীমান্ত পারাপার করে থাকে। বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে অসংখ্য নারীকে এই সীমান্ত দিয়েই পাচার করে কলকাতা, মুম্বাই, করাচি, লাহোর কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের পতিতালয়গুলিতে হতভাগ্যা এই নিষ্পাপ নারীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। এসব সংক্রান্ত অনেক রিপোর্ট বিভিন্ন সময় দুদেশের মিডিয়াতেই প্রকাশিত হয়েছে বিধায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, উভয় দেশের সীমান্তরক্ষিবাহিনীরও ব্যাপারটা অজানা নয়। এক্ষেত্রে স্বীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সদস্যরাও হয়ত অর্থকড়ির সমঝোতায়, দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। ঘুষের হিসাব নিকাষে বনিবনা না হলেই তাঁরা হয় আইনি প্রক্রিয়ায় যায় অথবা হাবিবুরের মতো অমানবিক নির্যাতন করে।

এমনকি অবৈধ পারাপারকারিদের উপর গুলি ছোড়ার ঘটনাও ঘটিয়ে থাকে। এসব কিছু পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করতে বাংলাদেশ ও ভারত কারোরই গাফিলতি দৃশ্যমান নয়। পরিশেষঃ বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান বন্ধ করতে শিশু ফেলানীর হত্যাকান্ড কিংবা হাবিবুর রহমানের উপর বিএসএফ এর নির্যাতন ভারতের রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্দেশিত কোন গোপন কৌশল কিনা সেটি বিশ্লেষণের দাবী রাখে। যেকোন বিচারেই রাষ্ট্রীয় সংস্থা কর্তৃক সংগঠিত এধরনের নৃশংসতা বা সীমান্ত সন্ত্রাস অগ্রহনযোগ্য । আধুনিক বিশ্বে পরস্পর প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক ছাড়া কোন রাষ্ট্রই উন্নয়ন বা শান্তির আশা করতে পারে না, এই বিষয়টি ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশকেই উপলব্ধি করতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকারেরও অবিলম্বে পদ্ধতিগতভাবে এর শক্ত প্রতিবাদ প্রতিবাদ করা উচিত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.