আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাতাসে বসন্তের ঘ্রান, মাতাল মওসুম - সরিষার তেল মেখে ঘুমিয়ে পড়ুন।

সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত...............। জাগবার দিন আজ, দুর্দিন চুপি চুপি আসছে;/যাদের চোখেতে আজো স্বপ্নের ছায়া ছবি ভাসছে -/তাদেরই যে দুর্দিন পরিণামে আরো বেশী জানবে,/মৃত্যুর সঙ্গীন তাদেরই বুকেতে শেল হানবে। আগেই সাফ সাফ জানিয়ে রাখি। চির কিশোর কবি সুকান্তের উপরের পংক্তিগুলোর কোন ভিন্ন মানে ধরার দরকার নেই। আজকের এই ‘মহতী’ দিনে আমরা সরিষার ব্যবহার সংক্রান্ত আলোচনা করব।

মূলতঃ সরিষার ব্যবহার বহুবিধ। এটি একটি ‘তেল প্রদায়ক’ দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। এর পাতা সর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয় আর এর দানা মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এ দানা পানির সাথে মিশিয়ে ভিনেগারসহ বিভিন্ন তরল তৈরি করা হয়। এ দানা পিষেই সরিষার তেল তৈরি করা হয়, যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।

ভূত তাড়াতে সর্ষের ব্যবহার অনেক প্রাচীন। তবে কীনা, সর্ষের মাঝেই ভূতের বাড়ি-ঘর হলে- কী করণীয় তা জ্ঞানী-গুণীরা বাতলে দেন নি। অন্যদিকে, জীবনে চিন্তা-ভাবনা কম থাকলে এই তেল মেখে ঘুমাবার পরামর্শও বেশ জনপ্রিয়। আজ সে পরামর্শই দেব। কেননা, এখন কেউই আর ‘বোকা’ নয়- সবাই ‘সচেতন’।

কেউই আর ‘কম’ বোঝেন না- বরং দুই-এক চামচ বেশিই বোঝেন! বিশ্বায়নের এই যুগে ‘ঘর-মন-জানালা’ বন্ধ করে বসে থাকার সুযোগ নেই। এদেশের দন্ড-মুন্ডের কর্তারা আরো কয়েক কাঠি সরেস। আইন-শৃংখলা, শেয়ারবাজার, সীমান্তহত্যার মত ‘ছোটখাট’ বিষয়ে মাথা ঘামানোর সময় তাঁদের নেই। বড় বড় হাতি-ঘোড়া শিকারে তাঁরা এখন সিদ্ধহস্ত। তাইতো আমাদের চিন্তাও নেই।

আমরা বোকা বাক্সের সামনে বসে ‘কুড়মুড়ে’ Lays এ কামড় দিয়ে শ্বাশুড়ী-বৌয়ের অন্তহীন ‘কূটকাঁচালী’ উপভোগ করব- দুধের শিশুর ঠোঁটে বিজাতীয় ভাষা শুনে ‘গর্বে গর্বে গর্ভবতী’ হয়ে যাবো! ‘শীলার জওয়ানি’ চেটে পুটে খেতে লক্ষ রূপী ব্যয় করব। ‘মমতাময়ী’ দিদি মমতার বিজয়ে বগল বাজাবো। তিস্তা-টিপাইয়ের বাঁধ না হওয়ায় প্রবল ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করব। তখন যদি ভুল করে কেউ বলে ওঠে, “সংগ্রাম শুরু করো মুক্তির,/দিন নেই তর্ক ও যুক্তির। /আজকে শপথ করো সকলে/ বাঁচাব আমার দেশ, যাবে না তা শত্রুর দখলে;/তাই আজ ফেলে দিয়ে তুলি আর লেখনী,/একতাবদ্ধ হও এখনি”, সাথে সাথে তাতে নানাবিধ ‘কানেকশন’ আবিষ্কার করব।

‘তাচ্ছিল্যে’ নাক সিঁটকাবো। ‘প্রতারিতবোধ’ করব। এক বছর আগে বাংলাদেশ নামের দুঃখিনী দেশটার সার্বভৌমত্বকে আঁকড়ে ধরে কাঁটাতারে লটকে থাকা অভাগিনী ফেলানীর অসহ্য তৃষ্ণায় কাতরে কাতরে মরা যাওয়া দেখে যদি কারো ‘অসহ্য দেশপ্রেম চেগিয়ে’ উঠতে চায়, তবে তার পিঠে ছুরি বসিয়ে দিয়ে বলব, “এদেশে তোমার অধিকার নেই, এখানে তুমি প্রতিবাদ জানাবার যোগ্যতা অর্জন কর নি। প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-সংগ্রাম সব আমার পৈতৃক সম্পত্তি!” আর আজ বিবস্ত্র হাবিবের মত নগ্ন আর রক্তাক্ত লুৎফরের মত নখদন্তহীন নপুংশক আমার দেশতাকে দেখে, যারা আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়, তাদেরও ছেঁটে ফেলতে হবে। নিদারুন এই শীতের ঘোরে ঘুম ভাঙাতে আসে! কোন সে বেয়াদব- বরাহ শাবক?! বন্ধুগণ! এখন আবহাওয়া দারুন, মোটা কম্বলের নীচে রাজ্যের ওম, বাতাসে বসন্তের ঘ্রান, মাতাল মওসুম!! ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ’ নিয়ে কোনকালে কে বলেছিলেন, “এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।

” বাকোয়াজ সব! এখন, এই নয়া জামানায় এ সব বলে ফায়দা আছে? বন্ধুর সাথে আবার লড়ালড়ি কিসের, একটু-আধটু মান-অভিমান হতেই পারে! আসুন! আমরা সবাই নাকে ‘সরিষার ত্যাল’ মেখে ঘুমিয়ে পড়ি!!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।