আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিশি আর অপুর খুনটুশি ছোট্ট গল্প !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! নিশির মেজাজ ক্রমেই খারাপ হচ্ছে ! মেজাজ খারাপের প্রধান কারন হচ্ছে ওর পেটের ভিতর ইদুর দৌড়াদৌড়ি করছে সেই কখন থেকে ! সকাল থেকে কিছুই পেটে পড়ে নি । একটা মিডটার্মের পরেই প্রায় দুই ঘন্টা ধরে প্রাকটিক্যাল ক্লাস করতে হয়েছে ! কিছু মুখে নেওয়ার সুযোগ হয় নাই ! এখন বসে আসা কিছু খাবে বলে ! ঝামেলা টা সেখানেই ! নিশির ইচ্ছা ছিল ক্যাম্পাসের ক্যান্টিন থেকেই খেয়ে বের হবে ! কিন্তু অপু কারনে সেটা হয় নাই । ক্লাস থেকে বের হয়ে যখন ক্যন্টিনের দিকে যাবে তখনই অপু ওর সামনে এসে দাড়ালো ! -কোথায় যাচ্ছিস ? -খুদা লেগেছে । -আমারও লেগেছে । -তাহলে চল ! এক সাথে খাই ! -উহু ! এখানে না ।

চল তোকে শমসের মামার তেহরী খাইয়ে নিয়ে আসি ! নিশি একটু ভাবলো ! তারপর বলল -না থাক ! এখন ভাল লাগছে না ! প্রচন্ড খুদা লেগেছে । এখন আর কোথাও যেতে ভাল লাগছে না ! -আহা ! চল না ! পাঁচ মিনিটের পথ ! প্লিজ ! জারুল তলায় বসবো ! তুই বসে থাকিস ! আমি গিয়ে নিয়ে আসবো ! চল না ! প্লিজ ! নিশির যদিও ইচ্ছা ছিল না ! তবুও অপুর কথা ফেলতে পারলো না ! নিশি আবার ঘড়ি দেখলো ! ঠিক একুশ মিনিট আগে অপু ওকে এখানে বসিয়ে রেখে গেছে ! এখনও ফেরার নাম নাই ! যতই সময় যাচ্ছে নিশির মেজাজ ততই খারাপ হচ্ছে ! নিশির যখন বিরক্তির চরম সীমায় পৌছে গেছে তখন অপুর দেখা পাওয়া গেল ! -এতো সময় লাগলো ? অপু একটা হাসার চেষ্টা করলো ! নিশির তবুও মেজাজটা ঠান্ডা হল না ! -আসলে তোর সাথে আমার আসাটাই ভুল হয়েছে ! এতোক্ষনে খেয়ে-দেয়ে একটা ঘুম দিতে পারতাম হলে গিয়ে ! তা না ! -আর এতো রাগছিস কেন ? তোকে নিয়ে কি যে করবো না ! জানি না বিয়ের পরে আমার কপালে কি আছে ! -কি বললি ? বিয়ে ? -কেন ? আমাকে বিয়ে করবি না ? -মরে গেলেও না ! -আচ্ছা দেখা যাবে । -হুম । দেখা যাবে । নিশির গলার আওয়াজ একটু নমনীয় হয়ে এল ! যদিও মুখে কিছু বলল না তবুও একটু রাগ পরে এল অপুর উপর থেকে ! -কোথায় তোর তেহরী ! অপু প্যাকেট থেকে একটা তেহরী বক্স বের করে দিল ! নিশি অবাক হয়ে বলল -সেকিরে ! একটা কেন ? তোর টা কই ? -তুই খা ! তোর খিদে লেগেছে না ! আমি পরে খাচ্ছি ! -পরে খাচ্ছি মানে কি ? এখনই বের কর ! -আহা ! আমি খাবো তো ! তুই শুরু কর ! -দেখ ঢং করবি না ! আমার সাথে লাঞ্চ করবি বলে আমাকে নিয়ে এলি আর এখন বলতেছিস পরে খাবি ! অপু চুপ করে রইলো ! -কথা বলছিস না কেন ? -আসলে ? -কি আসলে ? অপু বলল -আরে এভাবে কেন কথা বলছিস ! মানে আমার কাছে টাকা ছিল না ! দোকানে কিনতে গিয়ে দেখি টাকা নাই দুইটা কেনার ! নিশি কিছুক্ষন অপু দিকে তাকিয়ে রইলো ! অপু যেন কিছু লুকাতে চাইছে ! আর অপু পকেটে টাকা নাই এটা কেমন যেন শোনালো ! অন্তত নিশি অপুকে যতদিন ধরে চেনে অপু রুম থেকে বের হওয়ার আগে আর কিছু চেক করুন না করুন নিজের মানি ব্যাগ টা ঠিকই চেক করে ! সুতরাং টাকা না নিয়ে বের হবে এটা ঠিক বিশ্বাস যোগ্য না ।

তার উপর ওর কাছে যদি টাকা না থাকতো তাহলে অপু কোন দিনই নিশিকে তেহরী খাওয়ানোর জন্য এখানে নিয়ে আসতো না ! -অপু ! -হুম ! -আমার দিকে তাকা ! -বল ! -সত্যি করে বল ! কি হয়েছে ! অপু একটু ইত্স্তত করলো ! কিছু একটা বলবে কিন্তু বলতে পারছে না ! -বল বলতেছি ! -আসলে ! আমি তেহরী নিয়েই আসছিলাম ! আসার সময় রাস্তার পাশে একটা মাঝ বয়সী লোক আমাকে ডাক দিলো ! -তারপর ! -লোকটার সাথে আর একটা বুড়ি মত মহিলা ছিল ! মনে হয় লোকটার মা ! তারপর লোকটা স্ত্রীও ছিল ! সাথে দুটো বাচ্চা ! -তো ? -লোকটা বলল ওরা নাকি সাকলে ঢাকায় এসেছে । গাবতলী থেকে বাসে উঠেছিল ! তারপর ওদের পকেট নাকি মার হয়ে গেছে ! এখন আর কারো কাছে কোন টাকা নাই ! সকাল থেকে ওরা না খেয়ে আছে ! -ও বুঝেছি । আর আপনি ওমনি সব টাকা ওদের কে দিয়ে দিয়েছেন ? -সব দেই নি তো ! মানে আর কি ? নিশি খুব বিরক্ত হল ! -তোর কি বুদ্ধি শুদ্ধি হবে না কোন দিন ? -না দেখ । সত্যি মনে হচ্ছিল ওরা বিপদে পরেছে । -হয়েছে ।

বুঝলাম ! আমি বুঝতেছি না তোকে নিয়ে আমি কি করবো ! দেখা যাবে তুই চাকরীর বেতন নিয়ে আসছিস ! কেউ তোর কাছে হাত পাতলো ! তখন পুরো টাকাটা তুই দিয়ে দিবি ! অপু একটু হাসার চেষ্টা করলো ! -দাঁত বের করবি না খবরদার ! তখন আমি কি করবো ! পুরো মাস আমি চালাবো কিভাবে ? -চালাবি ! তুই চাকরী করবি না ? -তাই না ? আমি চাকরী-বাকরী করতে পারবো না ! আমাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব তোর ! আহা ! বিয়েও করবে আবার বউকে দিয়ে চাকরীও করাবে ! -আচ্ছা ঠিক আছে । এখন আর রাগ করিস না ! আমি এবার থেকে সাবধান থাকবো ! কোন চিন্তা করিস না । এখন একটু খেয়ে নে ! তোর না খিদে লেগেছে ! নিশি কিছু বলতে গিয়েও আর বলল না ! প্যাকেট খুলল ! ওর আসলেই বেশ খিদে লেগেছে ! অপু মোবাইল বের করে কি যেন টেপাটেপি শুরু করলো ! -নে ! -আরে তুই খা ! -ঢং করতে হবে না ! -আরে বাবা ! আমার ওটো খিদে লাগে নি তো ! তুই খা ! -বলেছি না ঢং করতে হবে না ! নে ! অপু নিশির হাতে নলাটা মুখে নিল ! একটু চিবুতে চিবুতে বলল -বিয়ের পরেও এভাবে খাইয়ে দিবিতো ? -আগে বিয়ে করে নে, তারপর ! -চল ! এখনই তোকে বিয়ে করবো ! -হয়েছে ! নে ! এভাবেই দুজনের খুনটুশি গল্প এগিয়ে চলতে থাকে ! হয় তো সামনে এমন দিন আসেবে তখন নিশি প্রতিদিন এই ভাবেই অপু নিজের খাওয়া থেকে খাইয়ে দিবে ! অথবা অপুকে সামনের দিন গুলোতে একা একাই খেতে হবে ! কে জানে ভাগ্যে কি লেখা আছে ! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।