চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
ঈভান আগুয়েলি (১৮৬৯-১৯১৭) একজন সুইডেনে জন্মগ্রহানকারী সুফি, লেখক এবং পেইন্টার। মুসলিম নাম শেইখ আব্দ আল হাদি আকহিলি। তিনি ছিলেন প্রথমদিককার ইউরোপিয়ান সুফিদের একজন।
তার চিত্রকর্মগুলো ছিল পোস্ট ইম্প্রেশনিজমের অভিনব কাঠামোর ক্ষুদ্র সংষ্করন যেখানে তিনি ব্লেন্ড অব কালারের ব্যবহারে গভীরতা এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভবগুলোকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। তার নিজস্ব ধরনটি সুইডিশ কন্টেম্প্ররারী আর্টের প্রতিষ্ঠাতার মর্যাদা দিয়েছিল তাকে।
ঈভান আগুয়েলি সুইডেনের ছোট শহর সালাতে জন্মগ্রহন করেন। ১৮৯০ সালে তিনি প্যারিস গমন করেন যেখানে তিনি প্রতিকীধর্মী চিত্রশিল্পী এমিলি বারনার্ডের কাছে দীক্ষা নেন, যিনি কিনা ভ্যানগগ এবং পল গাগুইনের ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন।
স্টকহোমের র্য়াল লাইব্রেরিতে রাখা রেকর্ড অনুযায়ী ১৮৯২সালের ১১ মার্চে তিনি প্রথম সুইডিশ ট্রান্সলেশনের কোরান ধার করেন। ইসলামের ব্যপারে পড়াশুনা শুরু হয় এইভাবে।
১৮৯৯ সালের তার পুরো পরিবার ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তর ঘটায়।
আরব ব্যতীত অন্যান জাতিতে ইসলামের প্রভাব কি জানতে চাওয়ার জন্য তিনি কিছুদিন শ্রীলংকার কলম্বোতে কিছুদিন অবস্থান করেন।
১৯০২ সালে তিনি কায়রোতে যান আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী ও ইসলামী দর্শন অধ্যায়নের জন্য। তার দারিদ্র জীবনযাপন, আরবীয় বেশভুষা আর বিশুদ্ধ আরবী ভাষা তাকে অনকে বন্ধু গড়তে সাহায্য করে। আগুয়েলি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করলে মিসরে ব্রিটিশ কনসাল জেনারেল লর্ড ক্রমার তাকে ১৯১৬ স্পেনে বহিষ্কার করেন। নিজদেশ সুইডেনে ফেরার মত টাকাপয়সা তার কাছে ছিল না।
আগুয়েলি সুইডেনে তার বন্ধুদের কাছে টাকা চেয়ে বেশ কয়টি চিঠি লিখেন। তার দীর্ঘকালীন দারিদ্র এবং ইসলামের তার ধর্মান্তর তাকে বন্ধুদের কাছে থেকে দুরে সরিয়ে নেয়। কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
শেষে তার বন্ধু প্রিন্স এউগেন বেরনাডোত্তে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সুইডিশ কনস্যুলেটে টাকা পাঠান। ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে ১৯১৭ সালের অক্টোবরের এক সকালে বার্সেলোনার বাইরের একটা গ্রামের রেল ক্রসিংএ ট্রেনে চাপা পড়ে মারা যান।
তার মৃত্যুর পর প্রিন্স তার নিজের তত্বাবধানে ফরেন মিনিস্ট্রিকে আদেশ দেন
আগুয়েলির সকল চিত্রকর্ম প্যারিস, কায়রো এবং বার্সেলোনা থেকে এনে সংরক্ষনের জন্য। পরে সুইডিশ ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ফাইন আর্টের নিরাপদ স্থানে সব চিত্রকর্মগুলো স্থানান্তর করা হয়।
কৈশোরে আগুয়েলি ১৮০০ শতাব্দীর সুইডিশ মিস্টিক এমানুয়েরল সুইডেনবর্গের শিক্ষার সাথে পরিচিতি লাভ করেন। সুইডেনবর্গের মেটাফিজিক্যাল শিক্ষা এবং খ্রীষ্ট ধর্মের ঐশ্বরিক ধ্যানধারনার ব্যাপারে তার ইউনিটারিয়ান এপ্রোচ আগুয়েলিয়ের উপর একটা প্রভাব ফেলেছিল যা পরবর্তীতে তাকে ইসলমা ধর্ম গ্রহনে অনুপ্রেরনা যুগায়।
সুফিজম আর সুইডেনবর্গিয়ান মেটাফিজিক্সের সামন্জস্যের আবিস্কারটি প্রথমে যদিও তিনি করেছিলেন তার অনেক পরে আরো সবিস্তারের হেনরি করবিন তার সুইডেনবর্গ আর এসোটেরিক ইসলাম নামক বইটিতে(১৯৯৫) তার বর্ননা দেন।
পশুপ্রেমি আগুয়েলি একবার ক্ষেপে গিয়ে গুলি করে এক ম্যাটাডোরকে আহত করেন। এই কারনে ফ্রেন্চ কবি এবং পশু অধিকার কর্মী মেরি হউটের সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। নারী অধিকারের ব্যাপারেও তিনি সরব ছিলেন। তাই একটি চিঠিতে তিনি মেরি হউটকে লিখেছিলেন সুফিজম নারীবাদের সমর্থক, কেননা সুফিবাদে মহিলা সুফিদেরও সন্ধান পাওয়া যায়। তার আরো একটি চিঠিতে তিনি সুইডিশ লেখক স্ট্রিংবার্গকে ইডিয়ট বলে আখ্যাদেন কেননা স্ট্রিংবার্গ দাবী করেছিলেন মেয়েরা ছেলেদের চাইতে হীন হয়ে থাকে।
পিকাসোর কিউবিজমের ব্যাপারে তিনি লিখেছিলেন একবার উদ্যোগও নিয়েছিলেন পিকাসোর সাথে সাক্ষাতের।
সুইডেন তার সবচাইতে বিখ্যাত একজন কন্টেম্প্ররারী পেইন্টারকে সম্মানদান পুর্বক তার চিত্রকর্মগুলোকে জাতীয় সম্পদ বলে ঘোষনা দেয়। তার চিত্রকর্মগুলো সুইডিশ ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ফাইন আর্ট, মিউজিয়াম অফ মর্ডার্ন আর্ট এবং এগুয়েলি মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে।
সুইডেনে তার সুখ্যাতির নমুনা মেলে যখন ১৯৬৯ সালে তার জন্মশতবার্ষিকীতে তার ছয়টি চিত্রকর্ম সুইডিশ পোষ্টাল সার্ভিসের স্টাম্প হিসাবে মুদ্রিত হয়।
১৯৮১ সালে তার মরদেহ বার্সেলোনা থেকে তার শহর সালাতে এনে ইসলামী রীতি অনুযায়ী সমাহিত করা হয়।
সালাতে গড়ে তোলা হয় আগুয়েলি মিউজিয়াম। এছাড়াও সালাতে আছে আগুয়েলি মনুমেন্ট, আগুয়েলি স্ট্রীট, বিশাল একটি আগুয়েলি পার্ক যেগুলি তার সৃতিতে উতসর্গিত।
২০০৬ সালে সুইডেনের রাজা গুস্তাবের তত্বাবধানে আগুয়েলি এক্সিবিশনের আয়োজন করা হয় যথারীতি মুসলিম ঐতিহ্য আর সুফিজমের উপর বিভিন্ন লেকচারের সন্নিবেশ ঘটিয়ে।
সুফিগন তাকে লাইট অব দ্যা নর্থ নামে আখ্যায়িত করেন যিনি ছিলেন পশ্চিম ইউরোপের প্রথম অফিসিয়ালী স্বীকৃত সুফি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।