এক জন পুরুষ যতই সাহসী ও শক্তিশালী হোক না কেন তার জন্য একটি নারীই যথেষ্ট্য।
ইউরোপে অভিবাসী ঃ সমস্যা ও বাস্তবতা
সম্প্রতি বিবিসির এক সমীক্ষায় বলা হয়, ইউরোপের সকল দেশেরই জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। জনসংখ্যা স্থিতি রাখতে যেখানে প্রতি মহিলার নূন্যতম গড়ে ২.১ জন সন্তান জন্মদান দরকার, সেখানে ইউরোপে গড়ে তা ১.৫ জন। এক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ড ১.৯৯ নিয়ে তালিকার শীর্ষে আর ১.২৯ নিয়ে গ্রীস সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা কমপক্ষে স্থিতি রাখার জন্যে প্রচেষ্টার অন্ত নেই।
কিন্ত বাস্তব কোন পদক্ষেপই খুব একটা কার্যকরী হচ্ছেনা বলে রাজনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বেশ চিন্তিত। মেয়েদের কাজের সময় সহজকরন,মাতৃকালীন ছুটি বৃদ্ধি,সন্তানধারনে উতসাহ দানের জন্য লোভনীয় আর্থিক সুবিধাসহ বহুবিদ প্রচারনা চালানো হচ্ছে।
ইউরোপের ধনিক দেশগুলোর কর্মক্ষম জনশক্তিও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। বাড়ছে বয়স্ক ও পেনশন ভুগীদের সংখ্যা ।
পশ্চিম ইউরোপে ক্রমবর্ধমান মানবসম্পদ সমস্যা সমাধানের জন্য নব্বই এর দশকে দৃষ্টি দেওয়া হয় পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক ব্লকের দিকে।
খুলে দেওয়া হয় দরজা। ছাত্রদের আকৃষ্ট করার জন্য চালু করা হয় নানান সুযোগ সুবিধা। কিন্ত কয়েক বছরের মধ্যেই ইউরোপের ধনী দেশ গুলোতে পূর্ব থেকে আসা নতুন অভিবাসীদের দ্বারা ব্যাপক সংঘবদ্ধ অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে। পশ্চিম ইউরোপ বাধ্য হয় পূর্বমূখী শ্রমিক চাহিদা পরিবর্তন করে চীন,ভারত, মুসলিমবিশ্ব সহ অন্যান্য দেশের দিকে তাকাতে। মুসলিমবিশ্ব থেকে জনশক্তি না নিয়ে এটা প্রায় অসম্ভব বলেই বিজ্ঞজনের ধারনা।
কিন্ত মুসলিম দেশ গুলো থেকে অভিবাসী নেবার ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমানে বেশ সতর্ক। সম্প্রতি এসব দেশ আইটি বিষয়ে দক্ষ জনশক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরনে গ্রীন কার্ডসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে। সুযোগ প্রাপ্তদের সিংহ ভাগই মুসলিম দেশসমূহ থেকে আগত হওযায় কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এই প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে।
অনেকে বলছেন,যুক্তরাষ্টের মতো সারাবিশ্ব থেকে দক্ষ অদক্ষ জনশক্তি নিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কিন্ত কাজটি এত সহজ নয়।
ইউরোপের প্রায় সবদেশেই ভাষাভিত্তিক জাতিয়তাবোধ প্রবল। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি অভিবাসীরা এখানে বাঞ্চনীয় নন। ইতিমধ্যে যেসব অভিবাসী এবং বিভিন্ন পর্যায়ের বিদেশি ইউরোপে অবস্থান করছেন,তাদের নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে কিছু বাস্তবভিত্তিক সমস্যা। বিদেশীদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যাই বেশি। আর এদের নিয়েই সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিদ সমস্যা।
১৩ টি দেশে ইসলাম সরকারি ভাবে স্বীকৃত ধর্ম নয়, যদিও ইউরোপের ৩৭ টি দেশের মধ্যে অন্তত ১৬ টিতে মুসলমানরা দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। অনেক দেশে তারা সংখ্যালঘু হিসেবেও স্বীকৃত নয়। এ কারনে সংখ্যালঘু হিসেবে যেসব সুযোগ সুবিধা পাবার কথা তা থেকেও তারা বঞ্চিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা শীর্ষক ২০০৩ সালের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়, ইউরোপে ২৩ মিলিয়ন মুসলমানের বাস,যা কিনা মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ। অবশ্য এসব দেশের সরকারি হিসেবে বা পত্রপত্রিকায় এ হিসেব ১৩-১৮ মিলিয়নের মতো দেখানো হয়।
তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিয়ে এ সংখ্যা ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশে দাঁড়ায়।
গত তিন দশকে মুসলমানদের সংখ্যা দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে আর জন্মহারও ক্রমবর্ধমান। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগূলো থেকে প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ লোক রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হয়ে আসে ইউরোপে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার ভাষ্যমতে,এই সংখ্যার অধিকাংশ আসে আলজেরিয়া,মরক্ক,তুরস্ক ও সাবেক যুগোস্লাভিয়া থেকে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকান (মেনা) দেশগুলোর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে ইউরোপের শ্রমিক চাহিদার অনেকটাই মেটাচ্ছে ঐসব দেশ থেকে চলে আসা অভিবাসীরা।
ধারনা করা হচ্ছে একদিকে আফ্রিকার ঐসব দেশের জনসংখ্যা,যা কিনা আগামি তিন দশকে দ্বিগুন হয়ে যাবে,অপরদিকে ইউরোপের ক্রমহ্রাসমান জনশক্তির জন্য দক্ষিন থেকে উত্তরে জনশক্তি ধাবমান হবে।
বর্তমানে ইউরোপে মুসলমানদের ৫০ শতাংশের জন্মই এসব দেশে। তারচেয়ে গুরুত্বপুর্ন হচ্ছে,ইউরোপে মুসলমানদের জন্মহার অন্যদের তুলনায় প্রায় তিনগুন। ফলে তরুন মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অমুসলিম দের থেকে বেশি। ফ্রান্সে ৫ মিলিয়ন মুসলমানদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বয়স ২০ এর নিচে,য়েখানে মোট জনশক্তির ২১ শতাংশের বয়স ২০ এর নিচে।
একইভাবে জার্মানীর ৪ মিলিয়ন মুসলমানদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে,অথচ মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশের বযস ১৮ বছরের নিচে। যুক্তরাজ্যের ১.৬ মিলিয়ন মুসলমানদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বয়স ১৫ এর নিচে আর মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। উল্লেখ্য যে, মুসলমানদের এই ব্যাপক বৃদ্ধির অন্যতম কারন ইউরোপীয় জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান
ইউরোপীয় মুসলমানদের একটি ব্যাপক প্রবনতা হল একসাথে পাশাপাশি বসবাস করা। উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে লণ্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকা,বার্লিনের ক্রাইসবার্গ এলাকা,ফ্রান্সের বড় শহরগুলোর উপশহর গুলো উল্লেখযোগ্য।
বৃটেনের দুই পঞ্চমাংশ মুসলমান বাস করে বৃহত্তর লন্ডন এলাকাতে।
ফ্রান্সের এক তৃতীয়াংশ মুসলমানদের বসবাস প্যারিসে,আর জার্মানীর এক তৃতীয়াংশ মুসলমান পুঞ্জিভুত হয়ে আছে রাউড় শিল্পাঞ্চলে।
ইউরোপে মুসলমানদের মর্যাদার ধরনেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এখানে তারা আর নিছক অস্থায়ী অতিথি শ্রমিক হিসেবে নয,বরং সংশ্লিষ্ট দেশসমুহের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই পরিগনিত হচ্ছেন। ব্যবসা বানিজ্যসহ অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে তাদের পদচারনা বাড়ছে।
অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্বেও তাদের ইউরোপীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার অনুপাত ক্রমবর্ধমান।
ফ্রান্স ও বৃটেনের এক পঞ্চমাংশ মুসলিম এসব দেশের মূল নাগরিক। জার্মানীতে এ সংখ্যা ১৫-২০ শতাংশ। ইতালীর ১ মিলিয়ন মুসলমানদের মধ্যে ১০ শতাংশ ইতালীয় নাগরিক। ১ মিলিয়ন মুসলমান বসবাস কারি দেশ স্পেনের অবস্থাও একই। স্ক্যানডিনেভিয়ান (ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে) দেশগুলোতে পাচ বছর অবস্থান করলে স্বাভাবিক ভাবেই নাগরিকত্ব লাভ করা যায়।
আর এই নিয়মে নিকট ভবিষ্যতে মুসলমানদের নাগরিকত্বের এই হার ১৫-২০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পাবে বলেই ধারনা।
ইউরোপে তরুন প্রজন্মের মুসলমানদের মধ্যে কিছু ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যনীয়। তারা পূর্বপুরুষদের মত অতি সহজেই ইউরোপীয় ধর্মহীন সমাজে নিজেদের বিলীন করে দিচ্ছেনা। সমীক্ষায় দেখা যায়,নতুন প্রজন্ম আন্তরিকতার সাথে সাধ্যমত সংশ্লিষ্ট দেশের আইন কানুন,নিয়ম-নীতি মেনে চলছে। একই সাথে তারা তাদের সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় পরিচয় ও স্বকীয়তা বজায় রাখছে।
সম্প্রতি ফ্রান্সে হিজাব নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কিত বিষযটি এর প্রমান। লক্ষ্যনীয় দিক হচ্ছে,সামাজিক বৈষম্য তাদের চাকরী,শিক্ষা,বাসস্থান, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পিছিয়ে দিচ্ছে। তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার অমুসলিমদের চেয়ে দ্বিগুন, ইমিগ্রান্ট মুসলমানদের মাঝে এ হার আরো বেশি। শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতিও অনেক কম। মহিলারা কর্মক্ষেত্রে নেই বললেই চলে।
এখন পর্যন্ত ইউরোপের দেশসমূহে মুসলমানদের রাজনীতিতে অংশগ্রহন সীমিত। তবে দিনদিন তা বাড়ছে। ফ্রান্সে যেখানে ৯২ শতাংশ নাগরিকই রেজিষ্টার ভোটার,সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ৩৭ শতাংশ। তেমনি ২০০৪ সালে এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় বৃটেনের মাত্র এক তৃতীয়াংশ মুসলমান ভোট দিতে আগ্রহী। অবশ্য ভোট বা রাজনীতিতে অংশগ্রহনে অনীহা দেখালেও তারা স্ব স্ব দেশের সংবিধান,আইন কানুন ও রীতিনীতি মেনে চলছে।
মূলত তারা অরাজনৈতিক বিষয় যেমন পরিবার,নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস,পরবর্তী প্রজন্মের স্বকীয়তা ইত্যাদি নিয়েই বেশি মাথা ঘামাতে পছন্দ করেন। রাজনীতিতে অনীহা দেখালেও তাদের সংখ্যাতত্ত্ব ভোটের রাজনীতিতে বড়ো ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিচ্ছে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে তা রাজনীতিতে সীদ্ধান্তকারী বিষয় হয়েও দাঁড়াচ্ছে। ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক এর ইরাক যুদ্ধের বিরোধীতা মূলত মুসলিম ভোট বাগিয়ে নেবার একটা কৌশল মাত্র। ঠিক তেমনি তুর্কী মুসলমানদের ভোটের কথা চিন্তা করে সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর শোয়েডার মার্কিন বিরোধী বক্তব্যে ছিলেন সোচ্চার।
শুধু জার্মানী বা ফ্রান্সেই নয়,যুক্ত্ররাজ্যেও এই মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
ইউরোপে মুসলমানদের এই ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা হিসেবেই গন্য করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (EU) তূরস্কের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে গড়িমসি এর অন্যতম উদাহরন। যদিও বলা হয ইউ মুলত অর্থনৈতিক ব্লক। কিন্ত খৃষ্টীয়তা এর একটি অঘোষিত নীতি।
এমনকি তা ইউ এর সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করার চাপ আছে প্রবল। আগেই বলা হয়েছে তূরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভূক্ত হলে ইউরোপীয় মুসলমানদের হার প্রায় ১৫% দাঁড়ায় । আর এটাই নাকি তূরস্কের ইউতে অন্তর্ভূক্তির অন্যতম সমস্যা । এ ব্যাপারে ইউ সাবেক কর্মকর্তা ফিজার ক্যামেরুনের ভাষায়, “মুসলমানরা বর্তমানে ইউ এর পররাষ্ট্র নীতিতে কোন প্রভাব না রাখলেও ভবিষ্যতে রাখবে”।
ইসলাম ইউরোপকে শুধু প্রভাবিত করবে,নাকি ইসলামও ইউরোপীয় রূপ ধারন করবে তা ইউরোপীয় পন্ডিতদের মাঝে একটি বহুল আলোচিত বিষয়।
বলা হচ্ছে ইসলামে যা আছে তার অধিকাংশই আরব সংস্কৃতি,সুতরাং যা আরব থেকে এসেছে তা বাদ দিয়ে ইউরোপের মুসলমানরা মূল ইসলামের সাথে ইউরোপীয় আবেশ ঢুকিয়ে একটা নতুন মুসলিম সংস্কৃতির জন্ম দিতে পারে যাকে বলা হচ্ছে ‘ইউরো ইসলাম’।
মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ইউরোপে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কি প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক কল্পনা জল্পনা। পশ্চিম ইউরোপের চরম ডানপন্থী দলগুলো মুসলিম জূজূর ভয় দেখিয়ে নতুন ভাবে শক্তি অর্জন করছে। এক্ষেত্রে বেলজিয়ামের ফ্লেমিস ব্লক,বৃটেনের ন্যাশনাল পার্টি,ডেনমার্কের পিপলস পার্টি,ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট,ইতালীর নর্দান লীগ এবং সুইজারল্যান্ডের পিপলস পার্টি উল্লেখযোগ্য। এমনকি এসব দেশের মূল রাজনৈতিক দলগুলো চরম ডানপন্থীদের প্রভাবে মুসলিম বিদ্বেষী হয়ে উঠছে।
ফ্রান্সে সম্প্রতি হিজাব নিষিদ্ধকরন, নেদারল্যান্ডস থেকে ২৬ হাজার অভিবাসীদের বহিস্কার তারই প্রমান।
মুসলিম যুবকদের মাঝে ইউরোপীয়দের তুলনায় বেকারত্বের হার বেশী। তবে ইদানীং কালে শ্রমিকশ্রেণী মুসলমানদের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে তা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা অন্যান্য সম্মানজনক পেশায় প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। অনেকে জার্মানী,ফ্রান্স ও বৃটেনে মুসলমানদের উচ্চশিক্ষার হার কম দেখে এ বিষয়ে সরাসরি ইসলাম বা মুসলমানিত্বকেই দায়ী করেন। প্রকৃত বিষয়টি হল,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্যাপক হারে যেসব মুসলমান এসেছিলেন,তারা মুলত ছিলেন শ্রমিক শ্রেণীর।
ফলত বংশানুক্রমিক ধারার কারনেই তাদের পরবর্তি দুই এক প্রজন্ম উচ্চশিক্ষার প্রতি ততটা আগ্রহী ছিলনা। দিন দিন অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।
আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে পূর্বের কমিউনিষ্ট দেশগুলোর অন্তর্ভূক্তি মুসলমানদের জন্য কিছু টা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এসব কমিউনিষ্ট দেশগুলোতে মুসলমানদের সংখ্যাও কম,স্থানীয় জনগন পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর চেয়ে কম সহনশীল, মুসলিম কালচারের সাথে কম পরিচিত। সব মিলিয়ে বৃহত ইউরোপে মুসলমানদের জন্য কিছু সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
ইউরোপীয় অভিবাসী বিশেষ করে মুসলমান ও সরকারি কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচিত বিষয় ইন্টিগ্রেশন বা মূল সমাজে একিভূতকরন। ইন্টিগ্রেশন নিয়ে সরকার আর অভিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নিজস্ব ব্যাখ্যা। সরকারি ভাষ্য,দীর্ঘদিন ইউরোপীয় দেশে থাকতে হলে এখানকার ভাষা ও সংস্কৃতি জানতে হবে। মূল জনগোষ্ঠীর সাথে মিশতে হবে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন,এর মাধ্যমে বিদেশি দের মধ্যে নিজেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার প্রবনতা হ্রাস পাবে আর মূল স্রোতে মিশে গেলে উগ্রবাদী প্রবনতাও ধীরে ধীরে দূরীভুত হবে।
অপরদিকে মুসলমানদের এক অংশ বলছেন, ইন্টিগ্রেশন মানে যদি হয় জোর করে নতুন প্রজন্ম কে ধর্মহীন হতে বাধ্য করা,তাহলে আমাদের আপত্তি আছে। তারা বলছেন,আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের নিয়ম কানুন মেনে চলতে চাই,সাথে সাথে চাই যে আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতি ধারন করে রাখুক। তবে মূলধারার ইসলামী চিন্তাবিদগন মনে করেন, মুসলমানদের অবশ্যই সমাজের মূলধারার সাথে মিলে মিশে থাকা উচিত। এর মাধ্যমে তারা ইউরোপীয় সমাজের কাছাকাছি আসতে পারবে,পরস্পরের সম্পর্কে বিদ্যমান অনেক ভূল ধারনার অপনোদন হবে। মুসলমানদের অনেকগুলো ভাল সামাজিক বৈশিষ্ট্য যেমন,দৃড় পারিবারিক বন্ধন,বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কর্তব্যবোধ, নিয়ন্ত্রিত যৌনাচার ইত্যাদি থেকে ইউরোপীয় সমাজ শিক্ষা নিতে পারে।
অপরদিকে ইউরোপীয় সমাজ থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে মুসলমানদের। ইউরোপীয় প্রায় সব দেশগুলোতেই বহুদলীয় গনতন্ত্রের চর্চা আছে। যেখানে অধিকাংশ মুসলিম দেশেই চলছে রাজতন্ত্র,স্বৈরতন্ত্র,জুলুমতন্ত্রসহ সকল প্রকার একনায়ক তন্ত্র। জনগন অধিকার সচেতন নয়। অবাধ গনতন্ত্র,মুক্ত তথ্যপ্রবাহ,নাগরিক আন্দোলন নেই বললেই চলে।
জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক পিছিয়ে। অর্থনৈতিক ভিত্তি অনেক দুর্বল। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় সমাজ হতে পারে তাদের জন্য অনেক শিক্ষনীয়। সংস্কৃতির এই আদান প্রদান মূল সমাজের সাথে না মিশে অর্জন করা সম্ভব নয়। মুসলমানদের মধ্যে দেখা যায়,দীর্ঘদিন এসব দেশে বাস করার পরও সেদেশের ভাষা শেখার প্রতি অনাগ্রহ প্রদর্শন করে।
শুধুমাত্র নিজেরাই মিলে মিশে জোটবদ্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করে। প্রতিবেশী স্বদেশিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন কে অপ্রয়োজনীয় মনে করে। কিন্ত এটা যেমন সামাজিক ভাবে ক্ষতিকর,তেমনি ইসলামের উদার ও সার্বজনীন দৃষ্টিভংগীর সাথেও সাংঘর্ষিক। ইন্টিগ্রেশনের নামে যারা নিজেদের সংস্কৃতি জোর করে চাপিয়ে দেবার চিন্তা পোষন করেন,এটা যেমন নিন্দনীয়,তেমনি ইন্টিগ্রেশন শুনলেই যারা ইসলাম গেল আওয়াজ তোলেন তাদের সাথেও একমত হওয়া যায়না উপরোক্ত কারনেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।