মোহাম্দ আবুল হোসেন: খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন কাতারের নাগরিকত্ব গ্রহণ করার খবরে ভারতের শিল্পী সমাজে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। কূটনীতিক, শিল্পীরা এ নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশে নিয়োজিত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার বীনা সিক্রি, বেশকিছু খ্যাতনামা শিল্পী, দরগাহের খাদেম। তাদের কেউ মনে করেন, ভারত ত্যাগ করা উচিত হয়নি ফিদা হুসেনের। অন্যরা বলছেন, তিনি তার অতীতকে পিছনে ফেলে যেতে চান।
মৃত্যুর আগে বসবাস করতে চান একটি নতুন ঠিকানায়- এজন্যই এমনটি করেছেন তিনি। সমপ্রতি মকবুল ফিদা হুসেন ঘোষণা দেন তিনি কাতারের নাগরিকত্ব গ্রহণ করছেন। তার কয়েকদিন পরেই রোববার তিনি কাতারে নিয়োজিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপা ওয়াদওয়া’র কাছে তার ভারতীয় পাসপোর্ট তুলে দেন। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তিনি আর ভারতীয় হিসেবে পরিচয় দিতে চান না। এর জবাবে ফিদা হুসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ডিজাইনার-ফটোগ্রাফার, সমাজকর্মী রাম রহমান বলেছেন, মকবুল ফিদা হুসেন যখন ঘোষণা দেন তিনি কাতারের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব গ্রহণ করছেন তখনই তিনি একটি রাজনৈতিক বিবৃতি দিয়েছেন।
পাসপোর্ট হস্তান্তর শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা। তিনি ঠিক কাজ করেছেন। কারণ তার প্রতি আমাদের সমাজব্যবস্থা ঠিক কাজ করেনি। আদালতের কাছে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সোমবার রাতে তিনি বুদ্ধিজীবি ভিবন সুন্দরম, অর্পণা কাউর, এম. কে রাইনা, শুভা মাডগাল এবং কে. বিক্রাম সিং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদাম্বরমের কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন।
এতে তারা বলেছেন, ফিদা হুসেন কাতারের নাগরিকত্ব গ্রহণ করছেন এ খবরে শিল্পী সমাজে মারাত্মক মনোবেদনার কারণ হয়েছে। ওই চিঠিতে তারা এ ঘটনাকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ওই চিঠিতে তারা জানতে চান, ফিদা হুসেন যদি ফিরে আসতে চান তাহলে রাষ্ট্র তাকে কি রকম নিরাপত্তা দেবে। ওদিকে বাংলাদেশে নিয়োজিত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার, জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটির ফোর্ড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বীণা সিক্রি বলেছেন, হুসেন কোন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করবেন এটা তার নিজের পছন্দের বিষয়। তিনি বলেন, অনেক ভারতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
এটা বিশ্বায়নের একটি অংশ। বীণা সিক্রি আরও বলেন, ফিদা হুসেন তার অতীতকে ভুলে যেতে চান। সেজন্য আমি মনে করি, রাজনীতিতে ধর্মকে টেনে আনা অনুচিত। তবে ফিদা হুসেন ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন এর মানে এই নয় যে, তিনি দেশে ফিরতে পারবেন না। নয়া দিল্লিতে অবস্থিত সুফি সাধক নিজামুদ্দি আউলিয়ার দরগাহের খাদেম ও ফিদা হুসেনের ভক্ত ফারুক নিজামি মনে করেন ফিদা হুসেনের হিন্দুস্তান ত্যাগ করা উচিত হবে না।
ভারতীয় নাগরিকত্ব তার ত্যাগ করাও উচিত নয়। কারণ তিনি ভারতে জন্মেছেন। ভারতে বড় হয়েছেন এবং ভারতই তাকে বিখ্যাত করেছে। নয়া দিল্লি ভিত্তিক আর্ট মল-এর পরিচালক সৈয়দ নরেন ভিক্ষু রাম জৈনের বক্তব্য- বৃটিশরা দার্জিলিংয়ের চা উৎপাদন অঞ্চলকে তাদের দখলে নিয়ে নিয়েছিল। আর আজ ভারতের গর্ব ফিদা হুসেনকে চেনা হবে কাতারের গর্ব হিসেবে।
আর আমরা অনুশোচনা করব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।