নিজের বিষয়ে কিছুই বলিবার নাই
আসসালামু আলাইকুম,
মহাত্মা গান্ধীর ''অহিংস'' ভারত, নেহেরুজি-র ''সমাজতান্ত্রিক'' ভারত, ইন্দিরা গান্ধীর ''গরিবি হঠাও'' ভারতে দুনিয়াখ্যাত চিত্রশিল্পি মকবুল ফিদা হোসেনের ঠাই মিলিলো না।
৯৫বছর বয়সী এই চিত্রশিল্পী দীর্ঘ ৮ বছর স্বেচ্ছানির্বাসনের পর অবশেষে কাতারের নাগরিত্ব গ্রহণ করিলেন। মহান ভারতে দ্বৈত-নাগরিকত্বের বিধান নাই বলিয়া তাহাকে ভারতীয় পাসপোর্ট দোহায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে জমা দিতে হইলো।
৯৫বছর বয়সী এই চিত্রশিল্পীর অপরাধ কোথায়? প্রথম অপরাধ তিনি মুসলমান। তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই।
দ্বিতীয় অপরাধ আন্তর্জাতিকভাবে তিনি প্রতিনিয়ত প্রশংসা পাইতেন। এইটাও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সহ্য হইতে ছিলো না।
তৃতীয় অপরাধ :
তিনি হিন্দু (সনাতন ধর্ম) ধর্মের দেব-দেবীগণের নগ্ন-চিত্র অংকন করিয়া পুরা ধর্মটাকেই নাকি নগ্ন করিয়া দিয়াছেন। সেই ধর্মের অবমাননা করিয়াছেন।
আমরা এইখানে প্রশ্ন করিতেছি না যে দেবী কালীমাতা কি পোশাক পরিধান করিয়া ভক্তের সম্মুখে আসিয়া থাকেন? দেবতা শিব কি পোষাকে তাহার ষাড়ের নিকট দাড়াইয়া থাকেন?
এই অপরাধের কারণে ফিদা হোসেনের শিল্পকর্মগুলি (সব নয়) অগ্নি-সংযোগ করিয়া পুড়াইয়া দেয়া হইলো।
তাহার বিরুদ্ধে ধর্ম-অবমাননার মামলা করা হয়। এইটা খুউব ভালো বিষয়। গণতান্ত্রিক আর ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে এইটাই স্বাভাবিক ঘটনা বলিয়া মনে করিয়াছিলাম। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যখন মকবুল ফিদা হোসেনকে '''নির্দোষ বলিয়া "" রায় দিলেন আসল ঝামেলা তখন হইতেই নতুন করিয়া আরম্ভ হইলো। কীরকম সেই ঝামেলা?
আর্যশক্তির অহংকারে বলিয়ান হইয়া এইবার ''বিজেপি'', '''আর এস এস,''' ''শিবসেনা'' আর হনুমানদের ''বজরং দল'' এইবার ফিদা হোসেনকে কোতল বা হত্যা করিবার জন্য হুমকি দিতে থাকে, আর সেই হুমকি বাস্তবায়নের জন্য তাহাদের কর্মী সমর্থকরা অগ্রসর হইতে থাকিলো।
তাহা না হইলে কবে আর রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার সুরাহা হইবে !!!
জীবনের ভয় কাহার না রহিয়াছে? এই অবস্থায় নিরুপায় ফিদা হোসেন দেশত্যাগ করিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার তাহাকে আশ্রয় দিয়াছে। তাহাকে নাগরিত্বও প্রদান করিয়াছে। তাহাকে এইভাবে সমর্থন আর আশ্রয় দিবার জন্য মকবুল ফিদা হোসেন কাতার সরকার আর সেই দেশের জনগণের নিকট কৃতজ্ঞতাও জানাইয়াছেন।
তবে এতো কিছুর পরেও ফিদা হোসেনের দেশপ্রেম অটুট রহিয়াছে।
তিনি বলিয়াছেন যে ভারত তাহার মাতৃভূমি। পাসপোর্ট সমর্পণ করিয়াছেন বলিয়াই নিজের দেশের সহিত তাহার সকল আত্মিক সম্পর্ক চুকিয়া যায় নাই।
ধন্য মকবুল ফিদা হোসেন!! তবে তিনি এইটাও বলিতে দ্বিধা করেন নাই যে তাহাকে হত্যা করিবার জন্য যখন ধর্মীয় ফ্যাসিবাদীরা উন্মত্ত হইয়াছিলো সেই সময় মহান ভারতের প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক মহলগুলি তাহাকে তেমন-একটা সমর্থন জানায় নাই। জানাইবার কথাও নয়। কারণ ভারতের প্রগতিশীলতা ভারতের সহনশীলতার ধরনটাই এই প্রকারের।
উহার ধর্মনিরপেক্ষতাও তাহা হইতে আলাদা কিছু নয়।
ধর্মনিরপেক্ষ উদার ভারত একদিকে তিব্বতের স্বাধীনতাকামীদের আশ্রয় দিয়া থাকে অন্যদিকে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের গুলি করিয়া নির্যাতন করিয়া হত্যা করিতে দ্বিধা করে না।
উহারা ভিয়েতনামের বামপন্থী নেতা হো চি মিনকে সম্বর্ধনা জানায় আর নিজের দেশের নকশাল নেতা চারু মজুমদারকে জেলে নিয়া হত্যা করে।
উহারা বাংলাদেশের দাউদ হায়দারের মতন মেধাহীন কবিকে আশ্রয় দেয় , তসলিমা নাসরিনের মতো বিবেচনাহীন লেখিকাকে নিজের দেশে প্রশ্রয় দেয় আর মকবুল ফিদা হোসেনকে দেশত্যাগ করিতে হয়। শাহরুখ খানকে পাকিস্তানে চলিয়া যাইবার জন্য হুমকি প্রদান করিয়া থাকে।
''বাঙালনামা'' আর ''রোমন্থন..'' এই কিতাব দুইটিকে অসাধারণ বলিলেও কম বলা হয়। এই কিতাব দুইটির লেখক ভারতের খ্যাতনামা ঐতিহাসিক তপন রায়চৌধুরী। তপন রায়চৌধুরী তাহার সাক্ষাৎকারে সংখ্যালঘু মুসলমানগণের বিষয়ে যাহা বলিয়াছেন আমরা সেই সাক্ষাৎকার হইতে খানিকটা অংশ তুলিয়া দিতেছি। যেইখানে ধর্মনিরপেক্ষ আর উদার ভারতের একটা চালচিত্র ব্লগারগণ বুঝিতে পারিবেন :
'' ভারতবর্ষে মুসলামানদের সংখ্যা শতকরা তের কিংবা চৌদ্দ। আমাদের চাকুরি
-ব্যবসা-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের সংখ্যা শতকরা এক বা তারও কম।
এর কারণ হিসেব সবাই বলে, ওরা (মুসলমান) লেখাপড়া করতে চায় না, ওরা মক্তবে যায়। কেন মক্তবে য্য়? মক্তবে গিয়েও এই চেহারা, শতকরা একরও কম। মক্তবে যায় এজন্যে যে, নিজেদের মধ্যে কোনো রুজির ব্যবস্থা হবে। অন্য জায়গায় গেলে তো হচ্ছে না। চাকরি পায় না তারা।
""
এই হইতেছে মহান ভারতের সংখ্যালঘুর অবস্থা।
মকবুল ফিদা হোসেন,
আপনি যেখানেই থাকুন, ছহি-ছালামতে থাকিবেন।
পরম করুণাময় আমাদের তাওফিক প্রদান করুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।