------ পল্লীকবি রওশন ইজদানী স্মরন উৎসব ২০১৩
তারিখ: ৮ জুলাই ২০১৩
সময়: সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা
স্হান: পল্লীকবি রওশন ইজদানী স্মৃতি একাডেমী প্রাঙ্গন, বিদ্যাবল্লব, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা
আয়োজনে: রওশন ইজদানী স্মৃতি একাডেমী ও জেলা পরিষদ
আয়োজনে যা থাকছে:
পল্লীকবি রওশন ইজদানীর কর্ম ও সাহিত্য জীবনের উপর আলোচনা,
প্রকাশানার মোড়ক উন্মোচন
পুথি পাঠ
রওশন ইজদানীর পল্লীগান
ও
মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
রওশন ইজদানী।
একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, লোক সাহিত্যের গবেষক ও সংগ্রাহক।
চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের অন্যতম কবি রওশন ইজদানী। বর্তমানে আমাদের সাহিত্য পরিমন্ডলে রওশন ইজদানী এখন প্রায় বিস্মৃত একটি নাম। অথচ তিনি কেবল বহুমাত্রিক কবিই ছিলেননা, তিনি জসীম উদ্দীনের অনুসরনে সে সময়ে পূর্ব বাংলার লোক সংস্কৃতি অবলম্বনে নতুন শিল্প-সৃষ্ঠির স্বপ্নও দেখেছিলেন।
বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই কবি সাহিত্যের সকল শাখায়ই বিচরনণ করেছেন। রওশন ইজদানী সৃজনে ও মননে এদেশের লোক-সাহিত্যের সম্পদ সম্পর্কে যে প্রীতি ও মমতার পরিচয় দিয়েছেন তা অবিস্মরনীয়। ১৯৬৭ সালের ২০ জুন তিনি এই মহান কবি মৃত্যুবরণ করেন। বিস্মৃত প্রায় এই কবির স্মরন উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কবির আপন গা বিদ্যাবল্লবে আগামী ৮ জুলাই ২০১৩।
প্রখ্যাত কবি ও প্রাবন্ধিক, লোকসাহিত্যের গবেষক ও সংগ্রাহক রওশন ইজদানী ১৯১৭ ইং সাল, বাংলা ১৩২৪ সালের ১৫ ফাল্গুন ময়মনসিংহ জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বিদ্যাবল্লভ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।
তাঁর পিতার নাম শেখ আলী কবির। পিতা শেখ আলী কবিরের পেশা ছিলো কবিরাজি চিকিৎসা। ১০ বছর বয়সে পিতার মৃত্যু হলে স্থানীয় ওল্ড স্কিম মাদ্রাসায় রওশন ইজদানীর বিদ্যাশিক্ষার হাতে খড়ি। পরে আশুজিয়া হাইস্কুলে ভর্তি হন রওশন ইজদানী। এ স্কুলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যায়ন করেন তিনি।
১৮ বছর বয়সে মাতৃ বিয়োগ হওয়ার কারণে তাঁর পড়া লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে। মাতৃবিয়োগের পর উদাসীন হয়ে বাউলদের প্রতি ঝুঁকে পড়েন ইজদানী এবং বাউল গান গেয়ে সময় কাটান। এর কিছুকাল পর জুবায়দা আখতার খাতুনকে বিবাহ করে সংসার ধর্মে প্রত্যবর্তন করেন।
প্রথম জীবনে ১৩৪৬ সালে গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন ইজদানী। এর কিছুকাল পরে ঋণ সালিসি বোর্ডের কেরানির চাকুরিতে যোগদান করেন।
১৯৪৮ সালে 'দৈনিক আজাদের' রিডিং সেকশনে যোগ দেন তিনি। এর পর ১৯৫৮ সালে ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশনের প্রুফ রিডার, গ্রেড-১ পদে যোগ দান করেন। ভগ্ন স্বাস্থ্যের জন্য ১৯৫৯ সালে প্রুফ রিডারের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সাহিত্য সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।
রওশন ইজদানী মূলতঃ পল্লী কবি হিসেবে খ্যাত। লোকসাহিত্য নিয়ে তিনি অনেক লেখালেখি করেছিলেন।
তার গবেষনা গ্রন্থ 'মোমেনশাহীর লোক সাহিত্য ও পূর্ব পাকিস্তানের লোক সাহিত্য'। মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি সৈয়দ সুলতান ‘নবীবংশ’ এবং ‘রসুল বিজয়’ নামে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনভিত্তিক দু’টি সেরা কাব্য রচনা করেছেন। বিংশ শতাব্দীর কবি রওশন ইজদানী রসুল (সা.)-এর উপর একটি পুরো কাব্য ‘খাতামুন নবীঈন’ রচনা করেন। ফররুখ আহমদ ‘সিরাজুম মুনীরা’ নামে ৩০২ পংক্তির একটি দীর্ঘ কবিতা লেখেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থঃ চিনু বিবি-১৯৫১ মোতামুন নাবীয়িন (১৯৬০), বজ্রবানী (১৯৪৭), রঙ্গিলা বন্ধু (১৯৫১), ইউসুফ জুলেখা প্রভৃতি।
তার প্রকাশিত গ্রন্থঃ ভাঙ্গাবীনা (১৯৪৪), বজ্রবানী (১৯৪৭), নীল দরিয়া (১৯৪৬), রাহগীর (১৯৪৯) খ্যাতমুন নাবীঈন, ইসলাম জাহানের দুই সেতারা, খোলাফা-ই-রাশেদীন (১৯৭৯), 'মোমেনশাহীর লোক সাহিত্য' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কবি রওশন ইজদানীর প্রকাশিত গ্রন্থ ২৬টি এবং অপ্রকাশিত গ্রন্থ ১৮টি। পাঠ্য পুস্তক প্রকাশনার সংখ্যা ৬টি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ হলো নীল দরিয়া, মরুর কাফেলা, হৃদয় বীণা, ভাঙ্গা বীণা, বজ্রবাণী, ইউসুফ জুলায়খা, পূর্ব পাকিস্তানের লোক সাহিত্য, মোমেনশাহীর প্রাচীন পল্লী ও সমাজ জীবন ইত্যাদি।
রওশন ইজদানী ‘খাতামুন নবী ঈন’ লিখে ১৯৬০ খ্রীস্টাব্দে সাহিত্য কর্মের জন্য "আদমজী পুরস্কার" লাভ করেছিলেন।
নেত্রকোণার খাঁটি আঞ্চলিক ভাষায় রচিত এই কাব্যগ্রন্থের জন্যই তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বিস্মৃত প্রায় এই কবি ১৯৬৭ সালের ২০ জুন ময়মনসিংহে মৃত্যুবরণ করেন।
এখানে কবি রওশন ইজদানী'র দুটি ভাটিয়ালি গান তুলে ধরছি পাঠকদের জন্য। এই গান গুলো কবি রওশন ইজদানী'র বড় ছেলে জুলফিকার ইজদানীর সৌজন্যে প্রাপ্ত। এ বছরের এপ্রিল মাসে কবির বাসভবনে জুলফিকার ইজদানীর সাথে নানান আড্ডার মূহুর্তে এই গান গুলো নোট করেছিলাম।
(এক)
পরান কান্দে- কান্দেরে নাইওয়ের লাগিয়া
-কবি রওশন ইজদানী
পরান কান্দে- কান্দেরে নাইওয়ের লাগিয়া-
পরের ঘরে একদিন আমার যায় বারো বছর,
আমি দারুন যমের ঘর করিলাম-দিলনা নাইওর।
বারো বছর গায় লাগেনা-বাপের বাড়ির বাও,
হাওয়া-বাতাস ঠান্ডা জলে শীতল হয়না গাও।
পরান কান্দে- কান্দেরে নাইওয়ের লাগিয়া-
আইলো গাঙে গেলো জোয়ার-গাঙে শুকায় পানি,
মোর অভাগীর এক নাইওরে গেলো জিন্দেগানী।
হইয়ে পঙ্খি উইড়্যা যাইতাম- হাওয়া ধরতাম পর,
জন্মের নাইওর কইর্যা যাইতাম এ্যাই নিলউখ্যার চর।
(দুই)
আজ এ সময়ে কে বাঁশি বাজায় সখী গো
-কবি রওশন ইজদানী
আজ এ সময়ে কে বাঁশি বাজায় সখী গো-
দারুন বাঁশির রব শোনা যায়-
সখী গো-
বন্ধের বাঁশি মন উদাসি পরান লইয়া যায়,
(তবু) কেনেবা এই বিষের বাঁশি (বন্ধে) নিরলে বাজায়।
প্রান সখী গো।
সখী গো-
বাঁশি বড় দারুন বাঁশি সকল সময় বাজে,
দারুন বাঁশির রব শুনিলে মন বসেনা কাজে।
পরান পঙ্খি যায় উড়িয়া পিংড়া থাকে ঠাঁয়।
সখী গো-
যে শুনে এই দারুন বাঁশি তার অন্তর হয় কালা
দিবানিশি নয়ন জলে বহে নদীনালা।
সে সুখের ঘরে দুখের অনল নিজ হাতে জ্বালায়-
প্রান সখী গো।
হাসান ইকবাল
৫ জুলাই ২০১৩, ঢাকা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।