আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পল্লীকবি

সুখীমানুষ বি. এ. ক্লাশের পাঠ্য বইয়ে একটি কবিতা ছাপা হয়েছে। যিনি কবিতাটি লিখেছেন তিনি নিজেই তখন বি. এ. ক্লাশের ছাত্র। চিন্তা করে দেখুন, শিক্ষক ক্লাশে পড়াচ্ছেন - কবিতার ওমক শব্দ দিয়ে কবি বুঝাতে চেয়েছে...। আর এই কবিতার যিনি কবি তিনি স্বয়ং ছাত্র হয়ে শুনছেন কবি কি বুঝাতে চেয়েছেন। অবিশ্বাস্য হলেও উদাহরণটা সত্য।

বি. এ. ক্লাশের সেই ছাত্রের কবিতাটির নাম ”কবর”। আর কবির নাম, জসীমউদ্দীন মোল্লা। আমাদের পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। কবি যখন এই কবিতা লিখেন তখন তার বয়স মাত্র বাইশ। কবর কবিতায় দাদা তার একমাত্র বংশধর নাতির কাছে তুলে ধরেছেন কিভাবে তার পরিবারের কে কে মারা গেল।

এই এক কবিতা পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলেন তখনকার শিক্ষিত সমাজ। আর সেই শিক্ষিত সমাজে ছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীনেশচন্দ্র সেনের মত গগনস্পর্সী মহামানবেরা। দীনেশচন্দ্র সেন কবর কবিতা পড়ে জসীমউদ্দীনকে বলেছিলেন, তোমার কবিতা পড়ে আমি কেঁদেছি। আর্থিকভাবে অসচ্ছল এই নবীন কবিকে তখন দীনেশচন্দ্র সেন ৭০ টাকা মাসিক বৃত্তিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পল্লীগান সংগ্রাহক হিসাবে নিয়োগ দেন। ”কল্লোল” সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাসের কাছে কবি জসীমউদ্দীন সম্পর্কে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৌতুহল প্রকাশ করেন।

কবি তখন ঠাকুরবাড়ী যান দেখা করতে। খুব আড্ডা হয় কবি আর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে। অবনীন্দ্রনাথের দেখানো একটা নক্সীকাঁথা দেখেই কবির মাথায় নক্সীকাঁথার মাঠ লেখার চিন্তা আসে। ১৯০৩ সালের ১লা জানুয়ারী কবি জন্মগ্রহন করেন তার নানার বাড়ীতে ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে। বাবার বাড়ী একই জেলার গোবিন্দপুর।

বাবার নাম আনসারউদ্দীন মোল্লা। তিনি পেশায় স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মায়ের নাম আমিনা খাতুন। তবে কবির মায়ের ডাকনামটি ছিল বেশ আদুরে, রাঙাছুট। কবি ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাশ করেন ১৯২১ সালে।

আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. এবং এম. এ. পাশ করেন যথাক্রমে ১৯২৯ ও ১৯৩১ সালে। ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। রবীন্দ্রনাথের ভক্ত হয়েও ঐ সময়ে নিজস্ব একটা ধারা তৈরী করেছিলেন কবি। গ্রামের মানুষের কথা এত সুন্দর করে এর আগে কেউ বলেনি। এই দুইটি লাইন পড়লেই বুঝা যায় কবি গ্রামের মানুষকে কিভাগে দেখতেন - ”আমাদের ব্যথা কেতাবেতে লেখা, পড়িলেই বোঝা যায় / যে লেখে বেদনা বে-বুঝ বাঁশীতে কেমনে দেখাব তায়?”।

সারা জীবন কবি বে-বুঝ বাঁশীতে যারা ব্যথা ঢেলে দেয় তাদের কথা লিখেছেন। কবি এক জীবনে কয়েক হাজার পল্লীগান সংগ্রহ করেছেন। গ্রাম বাংলার সমস্ত সুধার বিন্দু সংগ্রহ করে করে তিনি গড়েছেন রসের এক অনবদ্য ধারা। বাংলা সাহিত্যে কবি জসীমউদ্দীনকে কারো সাথে তুলনা করা চলেনা। কারন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ সবাই ছিলেন প্রধানত শিক্ষিত মানুষের কবি।

আর জসীমউদ্দীন হলেন মাটির মানুষের কবি। এমন কবির কথা বলতে গেলে বলতে হয় জসীমউদ্দীনই একমাত্র কবি। তার তুলনা তিনি স্বয়ং নিজে। গরীব আসমানীকে দেখে লিখেছিলেন - আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও/ রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। সেই আসমানী মারা গেলেন কিছুদিন আগে।

কবির কবিতার সেই আসমানী মৃত্যুর সময়ও এমন গরীবই ছিলেন। আজ ১৩ই মার্চ কবি দেহ ত্যাগ করেন। কবি লিখেছিলেন ”আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর”। কবি, তোমাকেতো আমরা আপন করেছি, তাহলে আমাদেরকে আরো কতটা আপন করতে তুমি কাঁদিয়া বেড়াচ্ছো! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.