সত্য প্রকাশে সংকোচহীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র জুবায়ের হত্যাকান্ডের ঘটনায় সবার আঙ্গুল প্রশাসনের দিকেই নিবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব যে প্রক্টরিয়াল বডি তাদের ব্যর্থতার কারনেই জুবায়েরকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের। এজন্য শুরু থেকেই সাধারন শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডির অপসারন দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডির গঠন করারা কারণেই ক্যাম্পাসের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিশীল বলে জানা গেছে।
জানা যায়, অধ্যাপক আরজু মিয়ার নেতৃত্ত্বে ৯ সদস্যের প্রক্টরিয়াল বডি কাজ করছে।
প্রক্টর সহ এদের সবার বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক অভিযোগ। প্রক্টও অধ্যাপক আরজু মিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি ও ভিসিলীগকে দিয়ে ভিন্ন মতের ছাত্রদের দমন করার অভিযোগ। এখন পর্যন্ত প্রায় দুশত শিক্ষার্থী হলের বাইওে অবস্থান করাছে। এসব ছাত্র বিভিন্ন সময় প্রক্টরের কাছে সহাবস্থানের দাবি জানালেও তিনি এতে কর্ণপাত করেননি। বিদ্যুতের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে প্রর্ক্ট ক্যাম্পাসে ভিসি লীগ নামে পরিচিত ছাত্রদের ব্যবহার করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধর করে।
গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবাষিকী উপলক্ষে শহীদ মিনারের এসব কর্মীদের সাথেই কেক কাটেন প্রক্টরসহ কয়েক শিক্ষক। সর্বশেষ জুবায়ের হত্যার বিষয়ে প্রক্টর তার দায়িত্ত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন সাধারন শিক্ষকরা। সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এ মামুনের গায়ে হাত তুলে তাকে লাঞ্ছিত করেন প্রক্টর। এতসব অভিযোগ ও শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন হলেও প্রক্টর এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
সহকারী প্রক্টরদেও মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাবাদি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত কবিরুল বাশার।
২০০৫ সালে বিএনপির সময় নিয়োগ পাওয়া এই শিক্ষক বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেয়ার সাথে সাথে সুবিধা হাতিয়ে নিতে এই পক্ষে যোগ দেন। জাতীয়তাবাদি শিক্ষকদের ঐ সময়কার বিভিন্ন বিবৃতিতে কবিরুল বাশারের নাম রয়েছে। বিএনপি থেকে পোল্টি মারার পুরস্কার হিসেবে বর্তমান উপাচার্য তাকে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব দেন। এছাড়া অবৈধভাবে বি-ক্যাটাগরির বাসায় তাকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমান উপাচার্যপন্থী একজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কবিরুল বাশার বর্তমান উপাচার্য সরে গেলে যারাই দায়িত্ব নেবেন তাদেও সাথেই ভেড়ার চেষ্টা করবেন।
তার শিক্ষক জীবনে এমন সুবিধাবাদি আর দ্বিতীয় কাউকে দেখেননি বলে তিনি জানান।
প্রক্টরিয়াল বডির ৮ জন সহকারীর প্রক্টরের মধ্যে মধ্যে ৪ জনই ছিলেন দুধর্ষ ছাত্রলীগ ক্যাডার। গণিত বিভাগের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক সাব্বির আলম মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ ক্যাডার ছিলেন এখন সহকারী প্রক্টর। সে এখনো ওই হলের ছাত্রলীগ পরিচালনা করছেন। সরকার ও রাজনীতি বিভাগের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক আসম ফিরোজ-উল-হাসান মেডিকেল প্রশ্নপত্র জালিয়াতি করতে গিয়ে র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পরও সহকারী প্রক্টর পদে বহাল আছেন।
ক্যাম্পাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও মারমুখী ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীর আবাসস্থল রফিক-জব্বার হলের ছাত্রলীগ সেই পরিচালনা করেন। বিভাগের ছাত্রদের কাছে নিজের দাপট দেখাতে বেশ পটু আরেক সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান। তার বিরদ্ধে লোকপ্রশাসন বিভাগে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ¯œাতক সম্মান শ্রেণীর চ’ড়ান্ন পরীক্ষায় ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। কিন্তু সহকারী প্রক্টর একসময়ের ছাত্রলীগ ক্যাডার হওয়ার কারনে প্রশাসন কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। আরেকজন রসায়ন বিভাগের কামাল হোসেনও ছাত্রলীগের রাজনীতি করতো।
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কিছুদিন পর বঙ্গবন্ধু হলের লন্ড্রিবয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার কওে পরবর্তীতে ক্ষমা চান। এছাড়া তার স্ত্রী একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিভাগে থেকে পাশ করা সত্তেও তাকে জাবি স্কুল এন্ড কলেজে কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একমাত্র মহিলা সহকারী প্রক্টর সেলিনা আক্তার ভিসির আপন ভাগ্নে বউ।
বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই প্রক্টরিয়াল বডির অপসারনের জন্য আন্দোলন করছে।
দূর্নীতিবাজ, ছাত্রলীগ ক্যাডার, সুবিধাবাদি ও আত্মীয় পরিজন নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডি গঠন করায় ক্যাম্পাসের এই অস্থিতিশীল পরিবেশ বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।