যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
এতগুলো আর্মী অফিসারকে মেরে ফেললো, কেন যেন আমার তেমন কষ্ট লাগছে না। সম্ভবত খুব নিকটের কেউ মারা পড়ে নি, যেমন আমার বাল্যবন্ধু স্বপন মারা যেতে পারতো, বাবু মরতে পারতো - ওরা দুজনেই বিডিআর এ কাজ করে গেছে। মারা যেতে পারতো একটু সিনিয়র ফ্রেন্ড সালেহ, এলাহী (এই পোস্টটা লেখার সময় পর্যন্ত জানতাম এলাহী ভাই নিরাপদ আছেন, কিন্তু পোস্টা দেবার ঠিক বিশ মিনিট পরে একটা পোস্ট এলো এলাহী ভাইয়ের ৬দিন যাবত নিঁখোজ সংবাদ, এই পোস্টা আমার জন্য এখন অর্থহীন হয়ে গেছে। এখন আমার শোক হচ্ছে, ভীষণ ভীষণ শোক হচ্ছে, এলাহী ভাই ক্যান্টনমেন্টের ওসি না কি যেন বলে, ছিলেন, সিএমএইচ এর সামনে বাসা ছিল যখন, অনেক দিন এমবিএর গ্রুপ এসাইনমেন্ট করেছি একসাথে)। বছর তিনেক আগে তারাও ছিল।
বিডিআর এর সৈনিক হিসাবে আছে আমার পরিচিত দুটো ছেলে। একজন তো হেভী কাবাডি খেলে, চ্যাম্পিয়ন পদকও পেয়েছে। কিন্তু তারা কেউ মারা পড়ে নি।
তবে আমার যে কষ্ট তেমন লাগছে না এটা নিয়ে আমি কিঞ্চিত বিরক্ত। কষ্ট লাগার কথা।
লাগা উচিত। আর্মী অফিসারদের করুন কাহিনী সম্বলিত কিছু পোস্ট, পত্রিকা-টিভিতে ইন্টারভিউ দেখেপড়েও আমার অত বেশী মন বিষন্ন হচ্ছে না, যতটা হবার কথা ছিল। রাষ্ট্রীয় শোক নিয়েও আমি রাষ্ট্রের মতই মাতম করতে পারছি না। দিব্যি চলছে আমার সবকিছু।
বিডিআরদের বিদ্রোহ বা ধ্বংষযজ্ঞও আমাকে উৎফুল্ল করে নাই।
এর পেছনে কি কারণ, ষড়যন্ত্র জানতে তেমন আগ্রহ নেই। হয়তো কারণটা এমন হতে পারে যে এসব বিষয়ে আসল কারণ কখনও জানা সম্ভব নয়, অথবা সরকারী তদন্তে যা বলা হয় বাস্তবতা হয়তো থাকে ভিন্ন কিছু।
কিন্তু বিডিআর-আর্মী সংঘর্ষ নিয়ে আমি আরো উদাসীন হয়ে পড়ছি। এমন একটা ঘটনা চোখের সামনে দেখতে হলো এটা মানতে পারছি না। যারা মরেছে বা যারা মারা পড়বে তাদের কেউ আমার আত্মীয় বা বন্ধু বা প্রিয়জন থাকলে আমি হয়তো মুষড়ে পড়তাম।
অথবা বিডিআর যদি বিএসএফ মারতো হয়তো একটু আনন্দিত হতাম, গর্বিত হতাম অথবা ইন্ডিয়া বা আফ্রিকার কোন দেশের হাতে যদি মারা পড়তো আমাদের আর্মীর সৈনিক, অফিসার শোকাতুর হতাম। হয়তো মৃতদের জাতীয় বীর হিসাবে স্যালুট করতাম সাথে সাথেই।
কিন্তু বিডিআর মেরেছে আর্মীকে, আমাদের গর্বিত আর্মী মরেছে বিডিআরএর হাতে। কেমন যেন একটা অসহনীয় নির্লিপ্ততা ছেয়ে বসেছে আমাকে। ঘেন্না ধরে গেছে স্বজাতির প্রতি।
আর্মী এত নিরীহভাবে মারা পড়লো কেমনে? এত শক্তিহীন কি আমাদের আর্মী? বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আর বিডিআর? গর্ব করার মুখটা রাখলো না। এতদিন সীমান্তে ঝামেলা হইলে বিডিআর এর প্রশংসা করতে শুনতাম মানুষকে বুক ফুলিয়ে - কিন্তু এখন!
নাহ! এসব বিষয় নিয়ে আমি কিছুই বলতে পারি না। কারো জন্য শোক করতে পারছি না। ঘেন্না ধরে গেছে নিজের প্রতি, দেশের প্রতি, ওয়াক থু! এই দেশে আমি বাচি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।