আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাক্তার , রোগী এবং মিডিয়া-১

ঝামেলা ভাল লাগে না বাংলাদেশ এর রগীরা ডাক্তারদের উপর খুব অসন্তুষ্ট , ডাক্তারা সরকার ও রোগীর উপর অসন্তুষ্ট । বাংলাদেশ এর মিডিয়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে খুব রুষ্ট । ডাক্তার রা মানুষ না , কসাই...........তারা শুধু টাকা বোঝে । তাদের মধ্যে সেবার মানসিকতা নাই । কেন এমন হল? কেন ডাক্তার রা গ্রামে থাকতে চান না? কেন তারা এত নিচে নেমে গেল? তারা তো আমাদের দেশের মানুষ ।

আমদের ই ভাই, বোন, মামা, চাচা, বন্ধু ? আমি কিছুদিন হল এম,বি,বি,এস পাশ করেছি । এই ব্যাপার টা নিয়ে ছাত্র অবস্থা থেকেই আমরা অনেক তর্ক বিতর্ক করেছি , কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। বাংলাদেশ এর মিডিয়ায় মাঝে মাঝে বিভিন্ন হাসপাতাল এর খবর আসে... সবসময়ই খারাপ খবর । ডাক্তার এর অবহেলায় রোগীর মৃত্যু । কেন এমন হয়? একটা সরকারি হাসপাতাল কিভাবে চলে? এখানে কয়েক স্তরে ডাক্তার থাকে ।

সবার উপরে থাকে প্রফেসর ,রেজিস্টার, সহকারী রেজিস্টার , ইন্টারনী ডাক্তারা থাকে সবার নিচে । এদের সাথেই রোগীর লোকের ঝামেলা হয় বেশি , কারণ তারাই রোগী দেখে প্রথমে । বিভিন্ন কারনে ইন্টারনী ডাক্তারা মাঝে মাঝে কর্মবিরতি পালন করে । কিন্তু কেন এমন হয়? আমাদের সরকারি হসপিটাল গুলো কেন রগীদের খুশি করতে পারছে না? আমার মেডিকেল কলেজ হসপিটাল এর কথাই বলি । সেখানে ৩২ টা ওয়ার্ড , প্রায় ১৫০ জন ইন্টারনী ।

প্রতি ওয়ার্ড এ ৩০ জন করে রোগী থাকার কথা । কিন্তু Admission ওয়ার্ড গুলতে প্রায়ই এর ২/৩ গুন রোগী ভর্তি হয় । একজন ইন্টারনীর সেদিন ১৬ ঘন্টা ডিউটি করা লাগে । রোগী সবসময় আসতেই থাকে । এরমধ্যে আসে কিছু VIP রোগী যাদের চিকিৎসা এর আগে চাই বিছানা ।

একজন রোগীর সাথে আসে ৪-৭ জন সহকারী , যারা একজন একজন করে গিয়ে ডাক্তারকে জিঙ্গাসা করবে তার রোগীর অবস্থা কেমন? অনেক রোগীর লোক আমার রোগী আগে দেখেন, আমার রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে না করে ডক্তার এর মাথা খারাপ করে ফেলে । তাই এসব ক্ষেত্রে রোগী না , তার সাথের লোকের চিকিৎসা করতেই আমাদের বেশি সময় দিতে হয়। যেখানে একটি ওয়ার্ড এ রোগী থাকার কথা ৩০ জন, ইন্টেরনী ২ জন , সিনিয়র ১ জন , সেবিকা ২ জন , ওয়ার্ড বয় ১ জন সেখানে জনবল একই রেখে যদি বলা হয় রোগী হবে ৫০-৭০ জন , রোগীর লোক থাকবে অফুরন্ত তাহলে চিকিৎসা কিভাবে হবে? অনেক লোকাল লোকজন থাকে যারা হসপিটাল কে তার নিজস্ব সম্পত্তি মনে করে । ঝগড়া , মারামারি কর্মবিরতি সাধারনত এদের জন্যই করতে হয় । আপনার কর্মস্থলে যদি কেউ আপনাকে অপমান করে, গায়ে হাত তোলে তাহলে আপনার কেমন লাগবে? আপনার ইচ্ছা হবে সেখানে কাজ করার? এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলেই সবসময় ডক্তার এর দোষ ।

বাংলাদেশ এর মিডিয়া এক্ষেত্রে কখনও ডক্তার কে সাপোর্ট করে না , আমি করতেও বলি না । শুধু তাদের বলবো , আপনাদের উচিত সত্য খুজে বের করা । চিকিৎসা ব্যাপার টা একটু আলাদা । এজন্য চিকিৎসকদের ভুল ধরাও কঠিন । সাংবাদিক এজন্য শুধু ধালাও ভাবে ডাক্তার দের বিপক্ষে লিখে , কিন্তু যেখানে সত্যি সত্যি ডাক্তারা ভুল করে রোগীর ক্ষতি করে তখন আর তারা জানতে পারে না ।

প্রথম আলতে বেশ কিছুদিন আগে উপস্মপাদকিয় তে একজন ঢাকা থেকে গিয়ে একদিন হসপিটাল ঘুরে লিখে ফেললেন বিরাট একটা লেখা । সবচেয়ে খারাপ লেগেছিল যে উনি অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ড নিয়ে যা বলেছিলেন ‘এখানে নাকি রোগীরা ব্যাথায় কাতরায় আর সিস্টারা হাসি মুখে গল্প করে , ডাক্তারা বসে থাকে । ” অথচ আমরা ইন্টারী করার সময় এই ওয়ার্ড টা কে ভয় পেতাম সবচেয়ে বেশি । কারণ এই ওয়ার্ড এ প্রতিদিন প্রায় ১৬ ঘন্টা করে ডিউটি করা লাগতো । আর যে পরিমাণ রোগী থাকে তাতে সিস্টারদেরও যে কিরকম কস্ট করতে হয় তা আমি জানি ।

হসপিটালে ইন্টারনী করার সময় মনে হয়েছে যে চিকিৎসা ছাড়াও যদি প্রতিটা রগীকে ২ মিনিট আলাদা করে counseling করা যেত তাহলে হয়তো ঝামেলা গুলা হত না । কিন্তু বিশ্বাস করুন Admission এর দিন তা সম্ভভ হয় না । ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.