মালেক তাউস বা ময়ুর ফেরেশ্তা হলো ঈশ্বরের অনুগত এক সদাশয় ফেরেস্তা যে প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে নিজেকে পতিত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে এবং বিশ্ব জগত তার থেকে প্রবাহিত হয়ে সে বিশ্বাসীদের ত্রান কর্তায় পরিনত হয়।
ময়ুর উপাসক ইয়াজিদি ধর্মাবলম্বিদের মতে প্রবল অনুতাপের পর মালিক তাউশ দীর্ঘ ৭০০০ বছর কান্নাকাটি করে। তার চোখের জলে সাত বালতি পুর্ন হয়ে যায় যা নরকের আগুন নির্বাপিত হবে।
মালেক শব্দটি আরবি অর্থ “রাজা” অথবা ফেরেশতা। আর তাউস শব্দটির অর্থ হচ্ছে ময়ুর।
ময়ুর উপাসক ইয়াজিদিরা বিশ্বাস করে যে তাদের ধর্মের প্রধান শেখ আদী ইবনে মুসাফির “মালেক তাউসের” একজন অবতার। খৃস্টিয় ও ইসলামিক পন্ডিতদের মতে মালেক তাউস হচ্ছে বাইবেল ও কোরানে বর্নিত সয়ং লুসিফার বা পতিত ফেরেশ্তা আজাজিল। ইয়াজিদিরা সাধারনত শয়তান উপাসক হিসাবে বিচেচিত হয়। কিন্তু ইয়াসজিদিরা তাকে ফেরেশতাদের সর্দার হিসাবে কল্পনা করে।
কুর্দি শব্দ ইয়াজদান থেকে ইয়াজিদি নামটা এসেছে..কুর্দিতে যার অর্থ "উপাসনার যোগ্য"
ইয়াজিদিদের বিশ্বাস মতে মালেক তাউস ঈশ্বরের অত্যন্ত অনুগত হওয়ায় আদমকে সেজদা করা থেকে বিরত থাকে আর এজন্য মালেক তাউস কে ইয়াজিদিরা গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে।
ইয়াজিদি বিশ্বাসের মতে দুইটি ধর্মীয় পুস্তকের একটি হচ্ছে “কিতাব আল জিলওয়াহ” বা বুক অফ ইল্যুমিনেশন অপরটি “মেশাফ রেশ” বা ব্ল্যাক বুক। উভয়ই সরাসরি মালিক তাউসের বানী। ইয়াজিদিদের নবী শেখ আদী ইবনে মুসাফির এর মতে মালেক তাউশ তার মধ্য দিয়ে পুনর্জন্ম হয়েছে। এরা পুনর্জন্মবাদের বিশ্বাস করে।
কুর্দি নববর্ষর উৎসবে একজন মালিক তাউশের উপাসক
ময়ুর উপাসনা জাতিগত কুর্দিদের ২৫০০ বছরের প্রাচীন সংস্কৃতি হলেও একে নতুন জীবন দান করেন দশম শতকের সুফি শেখ আদী ইবনে মুসাফির।
ইন্টারেস্টিং হলো ইয়াজিদি বিশ্বাসের উদ্ভাবক শেখ আদী ইবনে মুসাফির আল মুয়াবি মুসলিমদের উমাইয়া খলিফা মারোয়ান ইবনে হাকামের অন্যতম বংশধর। তার জন্ম লেবাননের বেকা উপত্যাকায় এবং বাগদাদ ও কুর্দিস্থানে তিনি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। তার কবর উত্তর ইরাকের মসুল এ।
ইয়াজিদি বিশ্বাস মতে খারাপ ভালো শুভ অশুভ সব মানুষের নিজের মনে অবস্থান করে এর জন্য বাইরের কারো প্ররোচনা প্রয়োজন হয় না। মানুষ কোনটা বেছে নিবে তার দায় দায়িত্ব মানুষের উপর বাইরে থেকে শয়তান বা কারো ইন্ধন প্রয়োজন নাই।
এটা যারা যার নিজ্বস্ব সিদ্ধান্ত। শয়তান বলে কারো অস্তিত্ব নেই। ময়ুর উপাসক ইয়াজিদিদের অনেকে ইসলামি সুফিদের একটা সেক্ট হিসেবে বিবেচনা করে ..।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ইয়াজিদিরা দিনে পাঁচবার প্রার্থনা করে সুর্যদয়ের আগে,সুর্যদয়ের পরে,দুপুরে,বিকালে এবং সুর্যাস্তের পরে। তারা প্রধান উৎসব হিসাবে বসন্তের শুরুতে মালিক তাউশের সৃস্টি ও পৃথিবীতে আসার দিন এপ্রিলের প্রথম বুধবার নব বর্ষ পালন করে।
কুর্দি নববর্ষের দিন মসুলে খেখ আদীর মাজারে
শেখ আদী ইবনে মুসাফিরের নিজের ভাষ্য মতে “আদম যখন বেহেশতের বাগানে থাক্তো তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলামঙ্কনকি যখন নম্রুদ ইব্রাহিমকে আগুনে নিক্ষেপ করে তখনো...ঈশ্বর আমাকে বলেন তুমি দুনিয়ার প্রভু ও শাসক। পরমকরুনাময় ইশ্বর আমাকে ৭ পৃথিবী আর স্বর্গে সিংহাসন দান করেছেন। “
বলাই বাহুল্য যে ইয়াজিদি বিশ্বাস মতে মালিক তাউশ শেখ আদী ইবনে মুসাফিরে মধ্যে দিয়ে পুনর্জন্ম গ্রহন করেছেন। ইয়াজিদিদের মতে অশুভ বা শয়তান বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই .
মালিক তাউসের উপাসকদের মতে ঈশ্বর সর্ব প্রথম মালেক তাউসকে নিজের নুর থেকে তৈরী করেন ও কোন সৃস্টিকে সেজদা না করতে নির্দেশ দেন। এর পড় আরো ছয় ফেরেশতাকে তৈরী করা হয়।
এদের তত্বাবধানে বিশ্বজগতকে দিয়ে দেন এদের মধ্যে মালেক তাউস বা ময়ুর ফেরেশ্তা প্রধান। এরপড় স্রস্টা নিজের নিঃশ্বাস থেকে আদমকে তৈরী করে প্রধান ফেরেশতাদের আদমের সামনে সেজাদা করার নির্দেশ মালেক তাউস ব্যাতিত সবাই আদমকে সেজদা করে। আদমকে সেজদা করার না করার কারন জিজ্ঞাস করলে মালিক তাউস উত্তর দেয় সেতো ঈশ্বরের নুরের থেকে তৈরী...আর ঈশ্বরের নুর অন্যকে কিভাবে সেজদা করে?...তার জবাবে ঈশ্বর খুব খুশি হন এবং তাকে ফেরেশ্তাদের সর্দার নির্বাচিত করে নিজের সৃস্টি কর্মের প্রধান সহযোগি হিসাবে মনোনিত করে পৃথিবীতে তার চেহারা হিসাবে পাঠিয়ে দেন। ইয়াজিদিরা বিশ্বাস করে তাদের সকল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা তাউস মালেকের সেই রাজকীয় উদ্ধত স্বভাবের প্রতি। তারা একে “জানিস্তা চিওয়ানিয়া” বা “মহামহিমান্নিত জ্ঞান” হিসাবে বিবেচিত করে।
শেখা আদী ইবনে মুসাফিরের মাঝার ইয়াজিদিদের প্রধান তীর্থস্থান
ইয়াজিদিরা জাতিগত ভাবে কুর্দি বংশভুত। এরা উত্তর ইরাকের মসুল,তুরস্ক,আর্র্মেনিয়া,সিরিয়া জর্জিয়ায় মুলত এদের বসবাস। এছাড়া জার্মানী ও সুইডেনে কিছু ইয়াজিদি বাস করে। । ইরাকে এদের সংখ্যা ৬ থেকে সারে ৭ লক্ষ।
এর বাইরে প্রায় হাজার বিশেক ইয়াজিদি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।