জলবায়ু পরিবর্তনকে যারা অত্যাসন্ন বিপদ বলে প্রচার করেন, তারা এ পরিবর্তনের দৃশ্যমান ও সহজ উদাহরণ টানতে গিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিকে সামনে আনেন। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বলা হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর অনেক দেশই তলিয়ে যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাসের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকেই দায়ী করা হয়।
বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গলে যাচ্ছে অ্যান্টার্কটিকার বরফ।
এতে মালদ্বীপের মতো নিচু দেশগুলো এক সময় তলিয়ে যাবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রায় একই রকম আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়। এ নিয়ে দেশে দেশে উদ্বেগও নিতান্ত কম নয়। তবে এর বিপক্ষেও যুক্তি কম নয়। বিপক্ষের বিশেষজ্ঞদের দাবি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেওয়া এ সতর্কবার্তাটিই ভুল।
এটিকে তারা কৃত্রিম উদ্বেগ সৃষ্টি বলেও মন্তব্য করছেন। তাদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সব সময়ই ওঠানামা করে। এটি নতুন কিছু নয়। চলতি বছর জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে তার দ্বীপরাষ্ট্রটি সাগরে তলিয়ে যেতে পারে। সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) প্রধান রাজেন্দ পাচুরি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলো তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে ২০০১ সালে আইপিসিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১০০ সালের দিকে এসে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বিশ্বব্যাপী গড়ে ১০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাবে। এটি ঘটবে সাগরের পানির তাপমাত্রার প্রসারণের ফলে; বরফ গলনের কারণে নয়। এতে বলা হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে ঘন ঘন বন্যা দেখা দেবে, তলিয়ে যাবে অনেক নিচু অঞ্চল, লবণাক্ত পানির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে স্বাদু পানির সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে। ২০০৭ সালে আইপিসিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আগামী শতকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬ ফুট বেড়ে যাবে। এটি পরে ভুল প্রমাণিত হয়।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রচলিত ধারণার সঙ্গে একমত নন স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওফিজিক্স অ্যান্ড জিওডায়নামিক্স বিভাগের সাবেক প্রধান নিলস আক্সেল-মরনার। তার মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট এ আশঙ্কা প্রকৃতপক্ষে একটি ভুল সংকেত। এক নিবন্ধে তিনি বলেন, ১৭ ও ১৮ শতকের সমুদ্রচক্র থেকে বলা যায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের বর্তমান উচ্চতা বৃদ্ধি বৈশ্বিক উষ্ণতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত আইপিসিসির দৃষ্টিভঙ্গি অযৌক্তিক বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অনেক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।
যেমন পৃথিবী কতটা জোরালোভাবে ঘুরছে তার ওপরও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। ১৮৫০ এবং ১৯৪০ সালের মধ্যে এ উচ্চতা ১০ থেকে ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ তথ্য দেখিয়ে তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা হ্রাস-বৃদ্ধি বৈশ্বিক উষ্ণতার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি গত বিশ হাজার বছর ধরেই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার, কোনো অস্বাভাবিক বা ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। ওই সময়কালে প্রতি শতকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা গড়ে ৬০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।