তিন বছরে সরকারের কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক হতাশার কথা জানালেন ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন।
শনিবার চট্টগ্রামে এক আলোচনা সভায় সরকারের পাশাপাশি মহাজোট নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি।
মেনন বলেন, “সাধারণ মানুষ বলছে দেশ ঠিক পথে চলছে না। তিন বছরের মাথায় যখন উৎসব করার কথা, তখন জনগণের কাছ থেকে অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। এতে ক্ষোভে, রাগে, দুঃখে, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়।
”
“আমরা অনেক কিছুই পারলাম না, অনেক কিছুই করলাম না। সিন্ডিকেট ভাঙলাম না। দুর্নীতির ও লুটপাটের অর্থনীতির বন্যায় আমরা ভেসে চলে গেলাম,” বলেন তিনি।
সরকার নিয়ে দেশবাসী হতাশ দাবি করে মহাজোট নেতা বলেন, “দেশ ঠিক পথে চলছে না। এটা শুধু কোনো পত্রিকার জরিপ নয়।
বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে যেখানে মানুষ জড়ো হয়, সেখানেই এ ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ হচ্ছে। ”
মহাজোটের বাঁধন আলগা হওয়ার জন্য বড় দল আওয়ামী লীগকে দায়ী করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, “মহাজোটের ঐক্য এখন ডিপ ফ্রিজে আছে। মাঝে মাঝে তা তুলে মানুষের কাছে দেখানো হয়। কিন্তু মহাজোটে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখা যায় না। ”
রাতে নগরীর মুসলিম হলে ‘গণ ঐক্য কমিটি’ আয়োজিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সরকার ও জোট নিয়ে হতাশার প্রকাশ ঘটান মেনন।
‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ৭২’র সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, শ্রমিক-কৃষকের ন্যায্য দাবি পূরণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা’র দাবিতে গণ্য ঐক্য কমিটি, চট্টগ্রাম এ সমাবেশ আয়োজন করে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাড়তি ব্যয়, গুপ্তহত্যা, যুদ্ধাপরাধের বিচার, সংবিধান সংশোধন, টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণসহ নানা বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন মেনন। বিরোধী দলও বাদ যায়নি তার সমালোচনা থেকে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বিদ্যুতের বিষয়ে বলেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অন্ধকার দূর করতে গিয়ে জনগণের কাঁধে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে দায় চাপল, তার দায়িত্ব কে নেবে? অর্থমন্ত্রী বলছেন, আগামী তিন বছর বিদ্যুতের দাম বাড়বে। আর গত এক বছরে জ্বালানির দাম বাড়ল চার বার।
”
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিষয়ে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে মেনন বলেন, “আদালত রায় দিয়েছে সংবিধানের গণবিরোধী সংশোধনী বাদ দিতে। কিন্তু আফসোস, জিয়াউর রহমানের বিসমিল্লাহ এবং যে রাষ্ট্রধর্মের বিরুদ্ধে আমরা সবাই আন্দোলন করেছি, তা সংবিধানে রেখে দেওয়া হলো।
“জনগণ অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের যে দায়িত্ব দিয়েছিল, তা গ্রহণ করতে পারলাম না। সবচেয়ে বড় সত্য গণমানুষের ঐক্যের ভিত্তিতে যে বিজয় হয়েছিল, তা কীভাবে আমরা বিসর্জন দিলাম তা খুঁজে দেখতে হবে। ”
পার্বত্য শন্তিচুক্তি বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতার জন্যও সরকারের সমালোচনা করেন মেনন।
টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ হলে দেশের হাওর অঞ্চল বিরান হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, “বিএনপি জোট দেশে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তার রিহার্সেল ইতোমধ্যে দেখেছি। ”
১৮ ডিসেম্বরের বোমাবাজি ও গাড়ি পোড়ানোর দিকে ইঙ্গিত করেই তার এই বক্তব্য।
বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের সমালোচনা করে মেনন বলেন, “বিএনপি যা করছে তা জনগণের মুক্তির জন্য নয়, সা¤প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য।
”
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাও (সন্তু লারমা) ৪০ বছরে ‘গণতান্ত্রিক ও অস¤প্রদায়িক’ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “দেশে নির্বাচনকে ঘিরেই রাজনীতি আলোড়িত হয়। জয়ের পর ক্ষমতায় গিয়ে সবার মুখোশ উন্মোচিত হয়। ”
গণ ঐক্য কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ারুল কবির চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য্যও বক্তব্য রাখেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।