নগরীর শক্ত মাটির বুক চিরে একে একে গরে উঠছে গগণচুম্বি অট্টালিকা। যেন সীমাহীন আকাশকে ছোঁযার এক নিস্ফল প্রতিযোগিতা। সবুজ শ্যামল বাংলা মায়ের লাজুক মুখের লাল আভা ঢাকা পরেছে এর কাল ছায়ায়। এখন সেখানে বিষাদের এক কাল ছোঁয়া। যেন পাংশুটে মুখ করে বসে থাকা এক কাল দাঁড়কাক।
কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আসে নতুন সকাল। সূর্যলোকের অপেক্ষায় একটি একটি প্রহর পেরিয়ে এক সময় সন্ধ্যার আঁধারে মিলিয়ে যায়, পরদিনের নতুন সূর্যের আশায়। যে সূর্য কখন আসবে তার সঠিক সময় জানা নেই। তবুও আশা, একদিন আসবে। তার পবিত্র উজ্জ্বল আলোয় রাঙ্গীয়ে দেবে ভুবন, দুর হয়ে যাবে সকল আঁধার, সকল কুয়াশা।
আবার সবাই দেখতে পাবে শ্যামল মায়ের মুখের সেই রক্তিম আভা। উজ্জ্বল আলোক রশ্মির সাথে মিলেমিশে সে আভার তিক্ষ্নতায় খানখান হয়ে যাবে সব মিছে অহংকার।
এই আমার দেশ। আমার অনুভুতির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে তৈরী করেছে আমার সত্ত্বা । তাই এ দেশকে নিয়ে সপ্ন দেখার আধিকার আমি পেয়েছি মায়ে গর্ব থেকে ভুমিষ্ট হবার পরের থেকেই।
হ্রদয় রক্তক্ষরনের বন্যায় আমার স্বপ্ন অসহায় হয়ে যায়, যখন দেখি একদল শক্তিশালী হায়না, শেয়াল, শকুনের দল একে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। নির্মম অপবিত্র হাতে খুলে ফেলে একে একে এর লজ্জার আবরণ। যেন রাস্তার এক পাগলী ধর্ষীত হছ্ছে কিছু নর-পিচাষের কাছে। কলুষিত সমাজের সাথে মানিয়ে নেয়া নির্বোধ চোখ, পাথুরে দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে দেখে। শৃংখলিত আমার পা।
দুর্বল আমার হাত। শেয়াল, হায়না, শকূনের শক্তি আর ক্ষমতার ভয়ে দাঁতের কপাটে নিঃশব্দে বন্দি আমার ভাষা। শুধু মনের গহিনে এক গুমোট কান্না। একান্ত চুপিসারে..., কেউ যেন শুনতে না পায় ! আমার বাংলা মায়ের লজ্জিত, অপমানিত নত মাথার দৃষ্টি লুটিয়ে থাকে তার পায়ের কাছে। সেই পায়েরও নিচে, এক কোণায়.. সেখানেও আমি জায়গা খুজে পাই না আমার লজ্জ্বিত মুখ্খানা লুকানোর।
কিন্ত আমার তো এভাবে লজ্জ্বিত আর অসহায় হবার কথা ছিল না। পুরো মানব জাতীর ইতিহাসকে স্তম্ভিত করে, শুধুমাত্র মায়ের ভাষায় কথা বালার জন্য যারা বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রাঙ্গিয়েছে, তারা তো আমারই পূর্বপুরুষ। আমার শরীরের সকল শিরা উপশিরা ধ্বমণী কাঁপিয়ে প্রবাহিত সেই একই রক্ত। সেই একি ভাষা আমি জন্মাধিকার সূত্রে পেয়েছি কথা বলার জন্য। এ ভাষার অদম্য শক্তিতো দাঁতের কপাটে বন্দি হয়ে থাকবার জন্য নয় !
আমারই সকল মা-বোন ধর্ষিত হয়ে গর্বিত হয়েছিল, স্বাধীণ একটি জাতি জন্ম দিতে পেরে।
এ গর্রের অংশিদার কি আমি নই ?
আমার পূর্বপুরুষেরাইতো খালি পেটে, খালি হাতে ছুটে গিয়ে আমাদের জন্য ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীণতা। তাদের গর্বিত হাসিতে উদ্ভাসিত মুখমন্ডলের নিচেই ছিল শত্রুর বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, ঝাঁঝড়া হয়ে যাওয়া রক্তাক্ত বুক। তারা যখন মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করে লুটিয়ে পড়ত বাংলার সবুজ জমিনের উপর, তখনও তাদের চোখে স্পষ্ট হয়ে থাকত এক নিষ্পাপ স্বপ্ন । একটে স্বাধীণ সোনার বাংলার স্বপ্ন। আমার উত্তরাধীকার সূত্রে পাওয়া সেই গর্বিত আর বিদ্রোহী সত্ত্বাকে কেন আজ এত বিবর্ন মনে হয় ? আজও তো নজরুলের কবিতায় আমার আত্না শিহরিত হয় ! আমার শরীরের প্রতিটি লোম সাড়া দেয় সেই শিহরণে।
বিদ্রোহী নজরুলকে তো আমরাই বানিয়েছি আমাদের জাতীয় কবি !
সেই আমাদের মাঝে কি একজনও নেই, যে হবে আমাদের মাহাথির, নোপোলিয়ান অথবা কামাল আতাতুর্ক ?
আমি বিশ্বাস করি না !!
কুয়াশার গুমোট ভেঙ্গে নতুন সূর্য অবশ্যই আসবে। আজ অথবা কাল তাকে আসতেই হবে। আমাদের তারুণ্যে আবার প্রবাহিত হবে বায়ান্ন, একাত্তরের চেতনা। আমরা আর দেখতে চাই না, শুধু স্বজনপ্রীতির কারনে বন্ধ্যা হয়ে যাক উছ্ছল যৌবনা তিস্তা। শুধু নাম ভিত্তিক রাজনীতিতে খরচ হয়ে যাক অভাবের সংসারের কোটি কোটি টাকা।
শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কাবণে ভাগ হয়ে যাক আমাদের গর্বের ঐতিহাসিক রাজধানী। দেখতে চাই না কোন আবুল বসে থাক আমাদের নেতার আসনে।
তারুণ্যের কাঁধে ভর করে আবার জেগে উঠুক দেশ। চোখের জলে নয়, তারুণ্যের শিহরণে মাটি চৌচীর করে আবার জেগে উঠুক পদ্মা তিস্তা । ভেঙ্গে যাক সকল অপবিত্র বাঁধ, মুছে যাক বাংলা মায়ের ললাট থেকে সব আপবাদ।
বাংলা মায়ের গর্বের হাসিতে ঈর্ষাণ্বিত হোক বিশ্ব।
একাত্তরের ষোলই ডিসেম্বরের মত আমার বাংলা হয়ে যাক নিঃস্পাপ।
এ আমার স্বপ্ন। এ স্বপ্নই পথ দেখাবে আমাকে অথবা অন্য কাউকে। যেমন পথ দখিয়েছিল একদল অসামাজিক গুহামানবকে, যারা আজ চেষ্টা করছে মহাবিশ্বকে জয় করবার।
এ স্বপ্নের পথ ধরেই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাবে এক নিঃস্পাপ শিশু। আমাদের জন্য এক নতুন সূর্য আনতে....। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।