ব্লু ব্যান্ড কলের প্রথম আহবানে বিকল্পধারার রাজনীতির উদ্ভাস চোখে পড়ে। তরুণ রাজনীতিক মাহী বি চৌধুরী বলেছেন আমরা মন্ত্রী এমপি হতে চাইনা। কিন্তু পরিবর্তন চাই। হয় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রফেশনালি দেশ চালাও,নইলে অবসরে যাও।
শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সরকারী চাকুরীর অবসরের বয়েস পেরিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধু এবং জিয়ার আইকন সামনে রেখে ডিভাইড এন্ড রুলের বস্তাপচা ঔপনিবেশিক ফর্মূলা হাতে নিয়ে পালাকরে উপর্যুপরি বাংলাদেশ শাসন করে চলেছেন।
রাজনীতি ছিল সৎ দেশ সেবার মন্ত্র। শেরেবাংলা,সুহরোয়ার্দী, ভাসানী,বঙ্গবন্ধু,তাজউদ্দীনের সাদাকালো ছবি সম্ভবত বাংলাদেশে সৎ রাজনীতির শেষ চিহ্ন। তারপর বাংলাদেশের সরল জনপদগুলোর প্রান্তিক মানুষের ভোট কিনে নিতে এরশাদ,খালেদা জিয়া অতঃপর শেখ হাসিনা বণিকের মানদন্ডকে রাজদন্ডে পৌঁছে দিলেন।
রাজনীতি এখন পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের সাইড ব্যবসা। ফেল কড়ি মাখো তেল,সংসদ মুজরার টিকেট বিক্রি করেন খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা।
সেখানে একদল তরুণ ব্যবসায়ী সাংসদ হয়ে ছিপ ফেলে বসে থাকে। আর পঙ্গু ছাত্র-রাজনীতি থেকে আসা কয়েকজন সাংসদ খিস্তি খেউর করে। একদল লিলিপুটিয়ান মুজিব কোট পরে ইতিহাসের উপাত্ত না দিয়ে কেবল বিশেষণ দিয়ে জাতির জনকের স্তুতি করতে থাকে অদৃশ্য সাবানে হাত কচলাতে কচলাতে। অন্যদল ব্লেফুসকিডিয়ান সাফারী পরে বঙ্গবন্ধুর সুকৃতির পর্বতে ঢিল ছুঁড়তে থাকে। এই করে চোখের সামনে জাতির দুই দশক তিক্ত করে চলেছে বিএনপি এবং আওয়ামীলীগের অদক্ষ শাসন-শোষণ-ভাষণ।
আমজনতা যেন শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়ার বাজনা থামলে বসবো কোথায় খেলার ইডিয়ট দর্শক।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এ খেলার শেষ কোথায়। খুব আশা করছি যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ড দুবছরে কার্যকর হবে। কিন্তু তারপর?শেখ হাসিনা ইস্যুহীন আর খালেদা জিয়া টিস্যুহীন হয়ে পড়বেন। তখন মানুষ পরিষ্কারভাবে বুঝে যাবে আসলে রাষ্ট্র চালানোর ন্যুনতম সামর্থ্য ছাড়াই তারা শীর্ষ পর্যায়ে চাকরী করলেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুবার,বিরোধীমন্ত্রী হিসেবে দুবার সর্বোচ্চ বেতন-ভাতা নিয়েছেন এরা।
কৃষক-শ্রমিক-আমজনতা মুখে রক্ত তুলে পরিশ্রম করে অনাহারে-শীতের কামড়ে বিশীর্ণ হয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যানগুলো তৈরী করছেন। সেই পরিসংখ্যান দেখিয়ে শেখ হাসিনা অধ্যাপক ইউনুসের সঙ্গে নোবেল দৌড়ে নিমগ্ন। আর খালেদা হাসিনা প্রশাসনের ভুলত্রুটির পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাজনীতি ব্যবসার কিংবদন্তী তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে উদ্যত। দুটো পরিবারের খেয়ালখুশীর জলসাঘর আজকের বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রপরিচালনায় প্রফেশনালিজমের কোন বিকল্প নেই। মন্ত্রীরা ম্যানেজার। তাদের ব্যবস্থাপনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে জনসেবার মান,বাজারদর,বিদ্যুত,চিকিতসা,শিক্ষা,যোগাযোগব্যবস্থা,
আইনশৃংখলা পরিস্থিতি। সিঙ্গাপুরের মন্ত্রীদের ব্যবস্থাপনা ভালো। কারণ প্রত্যেক মন্ত্রী তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে এক একজন বিশেষজ্ঞ।
আর বাংলাদেশে কালোটাকা দিয়ে মন্ত্রীর পদ কিনে ব্যবসায়ীরা গণতন্ত্রের পিঠে সওয়ার হয়ে দুর্নীতির লাইসেন্স নিয়ে নেয়। দক্ষতাতো দূরের কথা মন্ত্রীদের দুর্নীতির কামড়ে বাংলাদেশ ধুঁকছে।
গত চল্লিশ বছরে আমরা জাতিগত সততার পরিচয় দিতে পারিনি। দুর্নীতির প্লেগে সমাজ ক্রমশ বিলীয়মান। সাফল্যের সূচক বাড়ী-গাড়ী-বিলাসিতায় আত্মাহুতি দিয়ে বাঙ্গালী আত্মপরিচয় আজ সংশয়াপন্ন।
আপনি কি বিএনপি? নাকি আওয়ামী লীগ?এই দলীয় পরিচয় সম্পদ,পেশী ও স্ট্যাটাস অর্জনের কামসূত্র। এর বাইরের আমজনতা হচ্ছে শাসিত,বিড়ম্বিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার লিমন কিংবা কাদের অথবা মীরের সরাইয়ের দুর্ঘটনায় নিহত শিশু,কেবলার চরে নিহত তরুণ,সিলেটে বাসের আগুণে পোড়া বৃদ্ধ,কিংবা বুয়েটের মেধাবী নির্দলীয় ছাত্র যে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের নির্যাতনে শিকার,অথবা বিএনপির সাম্প্রদায়িকতার আগুণে পোড়া হিন্দুপরিবার অথবা জঙ্গী বাংলাভাইদের নির্যাতনের শিকার বাগমারার অসহায় গ্রামবাসী। একি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ নাকি বিষাদসিন্ধু।
ব্লু ব্যান্ড কল লিলিপুটিয়ান আর ব্লেফুসকিডিয়ানদের ক্ষমতার বর্বর সংঘর্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে অহিংস ঐক্যের ডাক দিয়েছে।
মাহী বলেছেন নীল রঙ আকাশ কিংবা সমুদ্রের উদারতার প্রতীক।
এই মাহী বিএনপির এমপি থাকাকালে তার এলাকায় বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনার জন্য তোরণ বানিয়েছিলেন। এই সুরাজনীতির চর্চা না হলে দলীয় সংকীর্ণতার অচলায়নে বসে আর কত রক্তের সাংগ্রাই খেলতে চান খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা?
চল্লিশ বছর ধরে অতীত নিয়ে কচলাকচলি করে বাংলাদেশ সামনে এগোতে পারেনি। পেছনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে গিয়ে বারবার ম্যানহোলে পড়েছে রাষ্ট্রের উন্নয়ন। ষোলকোটি মানুষের জন্য সুশাসন বা সুসরকার উপহার দিতে গেলে প্রথমে সুরাজনীতির প্রচলন করতে হবে। আওয়ামী লীগ,বিএনপি,জামাত,জাতীয় পার্টির কাদা ও কুতসা ছোড়াছুড়ির কলতলা রাজনীতি দিয়ে এ ফিউচারিস্টিক গ্লোবাল ভিলেজে টিকে থাকা খুব বেশীদিন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঋজু,আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক ও আগামীমনস্ক তরুণ সমাজ দুই দলীয় টেণ্ডার রাজনীতির কাদাকুস্তিটি আর দেখতে চায়না। তারেকের হাওয়া বাঁশ,আবুল হোসেনের সাঁকো বাঁশ, বাংলাদেশ দুর্নীতির এই বাঁশ সংস্কৃতিতে ক্ষত-বিক্ষত। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সৎ মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতির হাঁটুপানির জলদস্যুর অত্যাচারে অতিষ্ট। এরা যেন সেই বৃটিশ-পাকিস্তানের বর্গীর মতো। জনসম্পদ লুন্ঠন করে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে বাংলাদেশের লালসবুজ বুক।
আশার কথা, বাংলাদেশের তরুণপ্রজন্ম রাজনীতি সচেতন। তরুণরা রাজনীতিকে ঘৃণা না করে দুর্নীতির কুষ্ঠে আক্রান্ত রাজনীতিবিদদের ঘৃণা করবে। বাঙ্গালীর রাজনৈতিক মানসপটে বঙ্গবন্ধু বা তাজউদ্দীনের সেই সৎ রাজনীতির সাদাকালো ছবিটি স্থায়ী আসন করে নেবে এরকম একটি আশা বুকে নিয়েই বাংলাদেশপ্রেমীরা সংঘবদ্ধ হয়েছে। নানামতের ও পথের প্রবীণ সৎ মানুষেরা টেলিভীষণের টকশোর প্যাচাল শুনে যখন সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত তখন বাংলাদেশ বাঁচাতে পারে বাংলাদেশপন্থী জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ তরুণ। যে সব তরুণের হাতে রাজনৈতিক বা ধর্মব্যবসার রক্তের দাগ নেই,যারা সৎ পিতার অন্নে লালিত হয়েছে,যারা রাজনৈতিক ক্যাডারদের চোখরাঙ্গানী দেখে ঘরে ফিরে রবীন্দ্রসংগীত শোনেন বা মৃত্যুপরবর্তী ভাবনায় জনারণ্যে একা থাকেন, দেশের মাটির ঋণ শোধের সুযোগ খোঁজেন,ব্লু ব্যান্ড কল তাদের দেশ ভাবনাগত সমানুভূতির প্লাটফর্ম।
ব্লু ব্যান্ড কলের গ্রুপ মেম্বরের সংখ্যা এরিমাঝে ২৭ হাজার পেরিয়েছে। ব্লু ব্যান্ড কলের দুরন্ত সহিসেরা ফেসবুকের ওয়ালে দেশ ও রাজনীতি নিয়ে কথা বলছে। সভ্যতার ভিত্তিই হচ্ছে সংলাপ। এই নিরন্তর সংলাপে চিন্তার সিনথেসিস এবং এন্টিথিসিস আশা জাগানিয়া। ব্লু ব্যান্ড কলের ভার্চুয়াল বিতর্কটি খুব জরুরী আমাদের বিকল্পভাবনাকে ঐক্যবদ্ধ করতে।
বাঙ্গালী রেনেসাঁর দ্যুতি দেখতে চাই ব্লু ব্যান্ড কলের ভার্চুয়াল পার্লামেন্টে। সংশয়-গুজব-পরচর্চা-পরনিন্দা-কুসংস্কার এগুলো আমরা আর দেখতে চাইনা এই ভার্চুয়াল পার্লামেন্টে। কারণ লুইকানের ইটপাথরের অচল পার্লামেন্টের কাদা ব্লুব্যান্ডকল ভার্চুয়াল পার্লামেন্টে দেখতে চাইনা। দেখতে চাই দেশ গড়ার প্রত্যয় ও বিকল্প পরিকল্পনা।
মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও দুইলাখ নির্যাতিতা বীরাঙ্গনার কাছে বঙ্গবন্ধুর অঙ্গীকার সোনার বাংলা গড়ার কাজটি এবার একবিংশের তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের।
একবিংশের তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে জলরাক্ষস ভারতের মানবাধিকার বিরোধী জলযুদ্ধের বিরুদ্ধে। ক্ষমতার ফেনসিডিলে আসক্ত দলীয় তরুণেরা জানেনা বাংলাদেশ ভেতরে বাইরে কতটা বিপর্যস্ত। পাকিস্তান এবং ভারতের গোয়েন্দারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সক্রিয়। একদিকে জঙ্গীবাদ অন্যদিকে জল আগ্রাসন। মাঝখানে ক্ষমতা দখলের দুই দলীয় রেসলিং।
এ এক বিশৃংখল পরিস্থিতি। এই মুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নবায়ন খুব জরুরী। সেই নবায়ন একমাত্র সম্ভব বাংলাদেশ পন্থী, উদা্র, গণতন্ত্রমনা তারুণ্যের সুরাজনীতিতে অভিষেকের মাধ্যমে।
ব্লু ব্যান্ড কল সেই আমজনতামঞ্চ যেখানে সাফল্যের সংজ্ঞা সততা,মেধা আর যোগ্যতার মাপকাঠিতে নির্ধারিত। সমাজ-রাজনৈতিক আন্দোলনে ব্লু ব্যান্ড কল দুর্নীতির বিষে আক্রান্ত সমাজের নীলকন্ঠ চিতকার।
এ হচ্ছে আত্মকেন্দ্রিকতার বিপরীতে সামাজিক সুবিচারের জন্য চিতকার। এহচ্ছে দলীয় সহিংসতার বিপরীতে আমজনতার অহিংস চেতনার দেয়াল,এহচ্ছে কতিপয়তন্ত্রের বিরুদ্ধে আমজনতাতন্ত্রের চূড়ান্ত লড়াই।
মধ্যবিত্ত জাগছে। টিপাইমুখের প্লাবন ঘরের জানালা দিয়ে ঢুকবার আগেই,আকন্ঠ লুণ্ঠনের ভ্যাম্পায়ার রাজনীতির কেউটে সাপ ঘরের জানালা বেয়ে ভেতরে ঢোকার আগেই মধ্যবিত্তকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বিত্তহীন সমাজকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতির বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটাতে ২০১২ তারুণ্য এবার শান্তিপূর্ণভাবে পথে নামবে।
চলুন এই শীতে একজন বিত্তহীন বন্ধুকে গরম কাপড় উপহার দিয়ে সামাজিক সুবিচারের গণমিছিলটি তৈরী করি। একটি অসাম্প্রদায়িক সৎ মানুষের গণমিছিল এইমুহূর্তে জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। জয় বাংলা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।