আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্রপতিকে ১৮-দলীয় জোট যা বলল...

সরকার ক্ষমতায় থেকে একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দল এই নির্বাচনে যাবে না। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৮-দলীয় জোটের নেতারা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একথা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা সংকট নিরসনে আলোচনার উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছেন।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী জোটের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।



সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাতের পূর্বনির্ধারিত সময় ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছু সময় আগেই বঙ্গভবন এলাকায় গিয়ে পৌঁছান। এসময় খালেদা জিয়াকে বঙ্গভবনের বাইরে ২০-২৫ মিনিটের মত সময় গাড়িতে বসে কাটাতে দেখা যায়।
১৮ দলের পক্ষ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি বক্তব্য রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেন। পরে গণমাধ্যমেও ওই বক্তব্যটি দেওয়া হয়।



বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাষ্ট্রপতিকে বলেন, ‘সরকার তাঁদের জোটের সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করেছে। বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে সংলাপের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তাই আমরা রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে আজ আপনার কাছে এসেছি। ’

এর আগে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া জোটের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে বঙ্গভবনে যান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ১৮-দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে নজির আহমদ, অলি আহমদ, আবদুল লতিফ নেজামী, আন্দালিব রহমান, শফিউল আলম প্রধান, শওকত হোসেন, মো. ইব্রাহিম প্রমুখ।

 

১৮-দলীয় জোটের পুরো বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হল—

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

 

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন

১৮ দলীয় জোটের

বক্তব্য

 

মহামান্য রাষ্ট্রপতি,

জাতীয় জীবনের এই সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

জনগণের ভোটে নির্বাচিত তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র চেয়ারপার্সন, ১৮ দলীয় জোটের প্রধান, স্বৈরাচার-বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপসহীন নেত্রী, বর্তমান জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা, নন্দিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আজ আমরা আপনার সমীপে কিছু বক্তব্য পেশ করার জন্য এসেছি।

আপনার অজানা নয় যে, দেশ আজ এক গভীর সংকটে। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও সকল দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব হবে কিনা এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে কিনা— সেটাই আজ এক জ্বলন্ত প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পদত্যাগী মন্ত্রীদের দিয়ে দায়িত্ব পালন, মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠান এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই প্রজাতন্ত্রের সংবিধান গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে।

এরপর নির্বাচনকালীন সরকারের নামে মহাজোটের সদস্যদের নিয়েই মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করে সংকটকে আরো তীব্রতর করা হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি,

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ধারায় আপনি কোনো আগন্তুক নন। একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ, অভিজ্ঞ পার্লামেটারিয়ান, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকার হিসাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সমকালীন রাজনীতিতে আপনি কার্যকর ভূমিকা রেখে এসেছেন। ফলে এর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে আপনি নিজেই সম্যক অবহিত রয়েছেন।

জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৫-৯৬ সালের আন্দোলনে আপনি নিজেও সক্রিয়ভাবে শামিল ছিলেন।

আপনি জানেন যে, ১৭৩ দিন হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ, গণকার্ফু জারি, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি, বাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে আরোহীদের পুড়িয়ে হত্যা, পুলিশ খুন, বন্দর অচল সহ বিভিন্নমুখী কর্মসূচি ও ঘটনা-দুর্ঘটনায় সেই আন্দোলন কতটা ভয়ংকর সহিংস হয়ে উঠেছিল।

সংলাপ কিংবা আলোচনার কোনো আহ্বানে তদানীন্তন বিরোধী দল যে সাড়া দেয়নি, তা-ও আপনি জানেন। জাতীয়-আন্তর্জাতিক কোনো ফয়সালা, মধ্যস্থতার উদ্যোগ বা সমঝোতার প্রস্তাবেও যে তারা রাজি হয়নি, তা-ও আপনার অজানা নয়।

আপনি একথাও জানেন যে, প্রজাতন্ত্রের সংবিধানে জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সন্নিবেশিত থাকার পরেও সেই সরকারের প্রধান কে হবেন এবং নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আপত্তি তুলে বর্তমান মহাজোট ২০০৭ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। তারপর তাদের সহিংস আন্দোলন ও লগি-বৈঠার পৈশাচিক তাণ্ডবে অনেক মানুষকে শোচনীয়ভাবে জীবন দিতে হয়েছিল।

অতীতের এইসব তিক্ত ও নৃশংস অভিজ্ঞতার আলোকে সকলের কাছেই এটা বোধগম্য ও সুস্পষ্ট যে, প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া জাতীয় সংসদের একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা যে-কোনো নির্বাচনের উদ্যোগ কেবল সামাজিক শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই ব্যাহত করে না বরং গণতন্ত্রের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত করে তোলে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি,

আপনি একথা খুব ভালোভাবেই অবহিত রয়েছেন যে, বর্তমান সরকার একতরফাভাবে শাসনতন্ত্র সংশোধন করে জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তুলে দিয়ে চরম অবিমৃষ্যকারিতার পরিচয় দিয়েছে। এর মাধ্যমেই বর্তমান সংকটের সূচনা হয়েছে।

আপনি জানেন যে, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রহিত করার কোনো প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল না।

কাজেই এ ব্যাপারে তারা জনগণের কোনো ম্যান্ডেটও পায়নি। সংবিধান সংশোধনকল্পে গঠিত কমিটি যখন মতামত গ্রহণ করে তখন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংবিধান-বিশেষজ্ঞগণ সকলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। সকল রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও অভিন্ন মতামত প্রদান করা হয়েছিল। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগও এই মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেছিল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বহাল রাখা প্রয়োজন। ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসাবে হাইকোর্ট নিয়োজিত সংবিধান-বিশেষজ্ঞ প্রবীণ আইনজীবীগণ সকলেই জাতীয় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে মত প্রদান করেন।

সংবিধান সংশোধন কমিটির তরফ থেকে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখা হবে। এ সম্পর্কে হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া সংক্ষিপ্ত রায়েও রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছিল। এত কিছু সত্ত্বেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রহিত করে দেশকে এক চরম অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেয়া হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি,

আপনি নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে, বর্তমানে মহাজোট ক্ষমতায় থেকে, জাতীয় সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে আয়োজন করছে তা অনিবার্যভাবেই হবে এক অসম প্রতিযোগিতা এবং এতে প্রতিদ্বন্দ্বী সকল পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি হবে না। নির্বাচন কমিশন এবং সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনকে যেভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে তাতে কেউ-ই বিশ্বাস করে না যে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের সামান্যতম কোনো সুযোগ রয়েছে।

সে কারণে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি এবং সংলাপের মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটি ঐক্যমত ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে আসছি। আপনি নিজেও জানেন, আমাদের সেই দাবি ও আহ্বান বারবার কীভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।

 মহামান্য রাষ্ট্রপতি,

আপনি জানেন, মহাজোটের বাইরের সকল রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী-পেশার মানুষসহ দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে। সংলাপের মাধ্যমে এ ব্যাপারে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করে সকল দলের অংশগ্রহণে উত্সবমুখর পরিবেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন তাদের প্রত্যাশা। জনগণের এই আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর অধীনে একটি মন্ত্রিসভায় বিরোধী দল থেকে কিছু সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার একটি প্রস্তাব দেন।

তিনি তাঁর সে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য বিরোধী দলের নেতাকে হরতালের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে একটি নির্দিষ্ট তারিখে গণভবনে যাবার শর্তযুক্ত আমন্ত্রণ জানান। বিরোধীদলীয় নেতা তাঁর সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং হরতালের পর যে-কোনো দিন আমন্ত্রণ জানালে তাতে তিনি যোগদানের ব্যাপারে সম্মতি দেন। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেন যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে একটি সমঝোতার পৌঁছার জন্য তিনি আলোচনায় সম্মত আছেন। তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে এ ব্যাপারে আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

 মহামান্য রাষ্ট্রপতি,

আপনি অবগত রয়েছেন যে, এরপর ব্যবসায়ী নেতারা দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনা শুরুর প্রস্তাব করলে তাতে বিরোধী দলীয় নেতা সম্মতি দিলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাতে সাড়া দেননি।

তিনি অনমনীয় মনোভাব নিয়ে ক্ষমতায় থেকে একতরফা নির্বাচনের পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন।

আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই যে, বিরোধী দল এ নির্বাচনে অংশ নেবে না এবং বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে যে কোনো প্রহসনের নির্বাচনের উদ্যোগ মেনে নেবে না।

আপনি নিশ্চয়ই অবহিত রয়েছেন যে, সরকার দেশে প্রায় জরুরি অবস্থার মতো এক অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার নিঃষ্ঠুরভাবে দমন করা হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বাভাবিক ভাবে কাজ-কর্ম পরিচালনা করতে দেয়া হচ্ছে না।

বিরোধী দলের সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন কার্যালয় প্রায় নিয়মিত অবরোধ করে রাখা হচ্ছে। বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনে সরকারি দল পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় বেআইনি অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমে সন্ত্রাস ও নাশকতা চালাচ্ছে। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমনের নামে পুলিশ গুলি চালিয়ে মাত্র একমাস সময়ের মধ্যে বিরোধী দলের আড়াই শরও বেশি নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। এত রক্তপাত ও নৃশংসতা কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে কল্পনাও করা যায় না।

এই পরিস্থিতিতেও আমরা দেশে গণতন্ত্র, শান্তি-স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে এখনো সংলাপের মাধ্যমে একটি সমঝোতার পৌঁছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে। সরকার তাদের জোটের সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন এবং বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে সংলাপের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

আমরা তাই, রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসাবে আজ আপনার কাছে এসেছি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনার কাছে আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনি সরকারকে বলুন, তারা যেন অবিলম্বে সংঘাত, হানাহানি ও হিংস্রতার পথ পরিহার করে সংলাপের একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে। তারা যেন অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একটি সমঝোতার পথে অগ্রসর হয়।

প্রজাতন্ত্রের সংবিধান থেকে উত্সারিত আপনার ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমরা সচেতন রয়েছি। কিন্তু কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি আসে যখন রাজনীতিকদের হাতে প্রণীত এবং সংকীর্ণ স্বার্থে রদবদলকৃত সংবিধানের ধারা-উপধারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ থাকে না। তখন তা সংকট নিরসনের পথ-নির্দেশনা দিতে সক্ষম হয় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণের প্রত্যাশাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সংবিধানকে পুনর্বিন্যস্ত করতে হয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিকেও তখন ইতিহাস-নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে হয়।

আমরা মনে করি আজ জাতীয় জীবনে তেমনই একটি সময় এসেছে। দেশ-জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জনগণের ঐক্যের প্রতীক হিসাবে আপনি নিজে উদ্যোগী হয়ে তেমনই একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবেন, দেশবাসীর সেটাই প্রত্যাশা। আমরাও সেই আশাই করি।

আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

 

১৮ দলীয় জোটের পক্ষে,

 

(মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর)

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব,

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.