সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু আনলে পুড়িয়া গেল/ অমিয় সাগরে সিনান করিতে সকলি গরল ভেল।
একটু আগে দুষ্টু-মিষ্টির মা’র সঙ্গে একচোট মন–কষাকষি হয়ে গেল। আজ ওর , মানে আমার গিন্নি স্বাতীর স্কুল ছুটি ছিল। আমার যথারীতি স্কুল। স্কুল থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ভাবছি এবার কম্পিউটারে বসব।
ও চা করে এনে আমাকে দিল । TV টা on করে NEWS এর চ্যানেলে দিল। ও নিউজের চ্যানেলগুলোই দেখে । সিরিয়াল দেখার নেশা ওর নেই ।
চা টা আমার হাতে দিয়ে বলল-একটু বস না ,গল্প করি।
আমি বললাম -এই তো বসলাম। এখন একটু কম্পিউটারে বসব , দরকার আছে ।
-রাতদিন তো কম্পিউটার নিয়েই বসে আছো। আমাদেরকেও তো একটু সময় দিতে পারো। আমারও তো মাঝে মাঝে বিনোদন করতে ইচ্ছে করে ?
-তাহলে তুমি বলতে চাইছ আমি বিনোদন করে বেড়াই।
লোকের তো বন্ধু থাকে ,তাদের সঙ্গে তারা আড্ডা দেয় । আমিতো ঘর থেকেই বের হই না। আচ্ছা এবার থেকে আমিও আড্ডা দিতে বের হব।
ও বলল – বাড়িতে থেকেও যদি আমাদের সঙ্গে না থাক তবে বাড়িতে থাকা না থাকা দুইই সমান।
আমার মাথাটা গরম হয়ে গেল ।
কিছুক্ষণ আগেই দেখছিলাম ও আমার জন্য টিফিন রেডি করেছে, চা খাওয়া হলেই দেবে।
আমি বললাম -আমার খিদে নেই আমি এখন টিফিন করব না ।
বলেই দোতলায় কম্পিউটারের ঘরে চলে এলাম।
কিছুক্ষণ পরে দুষ্টু মিষ্টি দুজনেই উপরে এল। মিষ্টি বলল -বাবা , রবীন্দ্রনাথের ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসের মূল কথাটা আমাদের একটু বলবে।
আমি আর দুষ্টু দুজনেই ঘটনাটা পড়েছি। কিন্তু কোনোকিছুই পরিষ্কার হল না । বল না বাবা ।
অ্যাকে কিছুতেই ইন্টারনেট ডাউনলোড ম্যানেজারটা Open করতে পারছিনা , তার উপর ওদের দুজনের এই ফরমায়েশ।
বললাম – ঝামেলা করিস নাতো ।
যা এখান থেকে । দেখছিস তো আমি ব্যস্ত আছি। নিশ্চয় তোদের মা এখানে তোদেরকে পাঠিয়েছে। গিয়ে বল আমার খিদে নেই । আমি এখন টিফিন করব না।
মুখ থেকে কথাটা বার হবার সঙ্গে সঙ্গে একেবারে খ্যাক করে আমাকে চেপে ধরল মিষ্টি – ও রবীন্দ্রনাথ তোমার কাছে ঝামেলা ? তাহলে এত ঘটা করে প্রতিবছর বাড়িতে ২৫ শে বৈশাখ পালন করার দরকার কী ?
আমি এই মেয়েটার কাছে সবসময় জব্দ । তাই আমার বেগড়বাই দেখলে এই মোক্ষম অস্ত্রটিকেই আমার বৌ আমার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করে।
আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো যুক্তি মাথাতে এল না। অগত্যা উল্টো আক্রমণ করলাম- হ্যাঁ , রবীন্দ্রনাথকে বিশাল ভালোবাসিস মনে হচ্ছে ? বলতো রবীন্দ্রনাথের সবকটা উপন্যাসের নাম ?
দুষ্টু বলল -বাবা ,আমি বলব ?
আমি বললাম -তুই কেন বলবি ! যে বেশি রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসে সেই বলুক না ।
মিষ্টি একটু বেশি অভিমানিনী।
আমার কথার ব্যঙ্গ ও ঠিক বুঝতে পারল। বলল-রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসগুলোর নাম কি কালানুক্রমিকভাবে বলতে হবে ?
এবার আমার মনে কেমন যেন একটা দুঃখবোধ হল । নিজের প্রেস্টিজ রাখতে গিয়ে আমার ছোট্টোমেয়েটাকে একটু বেশিই আঘাত দিয়ে ফেলেছি । আমতা আমতা করে বললাম –না ঠিক আছে ; সবগুলো বলতে পারলেই হবে ; কালানুক্রমিক ভাবে দরকার নেই।
আমাকে অবাক করে দিয়ে মিষ্টি বলল – না ,কালানুক্রমিক ভাবেই আমি বলতে পারব।
মিলিয়ে দেখে নাও –
১. বৌঠাকুরানীর হাট।
২. রাজর্ষি ।
৩. চোখের বালি।
৪. নৌকাডুবি।
৫. প্রজাপতির নির্বন্ধ।
৬. গোরা।
৭. ঘরেবাইরে।
৮. চতুরঙ্গ।
৯. যোগাযোগ।
১০. শেষের কবিতা।
১১. দুইবোন।
১২.মালঞ্চ।
১৩. চার অধ্যায়।
আ-রি-ব্বা-স , এই ছোট্ট মাথায় ও এতগুলো উপন্যাসের নাম মনে রাখল কী করে ! তাও একেবারে কালানুক্রমিক ভাবে ঠিকঠাক! আমরা যখন ছোটোছিলাম তখন রবি ঠাকুরের কটা উপন্যাসের নাম জানতাম ! বিশ্বাসই হচ্ছিল না। প্রতিভাকে সবসময় স্বাগত জানাতে হয়।
বললাম- বাবা ,(আমি বাড়িতে মিষ্টিকে এই নামেই ডাকি) সত্যিই তুই রবি ঠাকুরকে আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসিস। এতগুলো উপন্যাসের নাম কী করে তুই ঠিকঠাক মনে রাখলি বলতো ! আমাকে একটু মনে রাখার উপায় বলে দেতো
মিষ্টি বলল- কী যে বলনা বাবা , আমার চেয়ে তুমি রবীন্দ্রনাথকে অনেক বেশি ভালোবাসো। তারপর দুষ্টুর দিকে তাকিয়ে বলল – বল দুষ্টু , আমি ঠিক বলছি কি না ? আমাদের বয়স ১৩ বছর , আমরা ১৩ বছর ধরে রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসি । আর বাবা আমাদের থেকে ক-ত বড় । বাবা তো অ-ত বছর ধরেই রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসে ,তবে বল কে রবীন্দ্রনাথকে কে বেশি ভালোবাসে ?
দুষ্টু হেসে বলল- ঠিকই তো।
মিষ্টি আমার দিকে তাকিয়ে বলল – বাবা তুমি রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসগুলো মনে রাখার জন্য এই ছড়াটা মুখস্ত করে নাও তাহলেই হয়ে গেল-
“ বৌ রা বালি নৌকাডুবে
পতি গোরা বাইরে ,
রঙ্গ যোগে শেষের বোন
মরল( /মলল) চারঅধ্যায়ে। ”
-প্রতিটা বর্ণ বা শব্দের দিকে একটু ভালোভাবে তাকালেই তুমি উপন্যাসগুলোর নাম পেয়ে যাবে।
আমি রীতিমতো হতবাক। বললাম -রবিঠাকুরের উপন্যাস গুলোর নামকে মনে রাখার পদ্ধতিকে তোরা তো রীতিমতো পোর্টেবল করে ফেলেছিস ! তোদের মাথা দিয়ে এগুলো বের হয় কী করে রে ?
মিষ্টি নির্লিপ্ত ভাবে উত্তর দিল – আমাদের মাথা থেকে তো বের হয়নি ।
বললাম – তবে কার মাথা থেকে বের হয়েছে ?
মিষ্টি উত্তর দিল – মা’র মাথা দিয়ে ।
-‘বলিস কী ? ’- আমি আরও হতবাক। বললাম – ‘ প্রেমে পড়ে তোর মাকে বিয়ে করেছিলাম , এখন দেখছি আবার প্রেমে পড়ে গেলাম। ‘
দুষ্টু-মিষ্টি হাসতে লাগল। মিষ্টি বলল – তাহলে মায়ের উপর তুমি এত রাগ কর কেন ?
দুষ্টু বলল – মিষ্টি, তোর বোঝার ভুল হয়েছে ; ওটা রাগ নয়রে ওটা অনুরাগ। সোজা কথায় যাকে বলে – অভিমান ; বুঝলি না ?
আমি না শোনার ভান করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললাম – আহারে তোর মা যদি আমাকে এই রকম একটা পোর্টেবল ইন্টারনেট ডাউনলোড ম্যানেজার বানিয়ে দিত কী ভালো যে হত।
দুষ্টু বলল -বাবা , এইটুকু ছোটো জিনিসের জন্য মা’র কাছে যাবার কী দরকার। ওতো আমরাই করে দিতে পারি।
-বলিস কী !
-তার আগে বল তোমার তো ইন্টারনেট ডাউনলোড ম্যানেজার রয়েছে ; তবে কী জন্য এটার পোর্টেবল তোমার দরকার ?
-আর বলিস না । windows 7 এ আমি ESET Antivirus install করেছিলাম। তারপর থেকে আর নেট কানেক্টই হচ্ছে না ।
আমার তো ডুয়ালবুট করা আছে তাই আমি ভাবলাম XP থেকে ইন্টারনেট ডাউনলোড ম্যানেজার দিয়ে ডাউনলোড করি। এখন এখানে xp তে তো দেখছি IDM এর Trial period শেষ । আগের ডাউনলোড করা প্যাচ সহ IDM যে কোথায় রেখেছি খুঁজে পাচ্ছিনা । আবার ডাউনলোড যে করে নেব তাও পারছি না , যেটা দিয়ে ডাউনলোড করব সেটাই তো বিগড়ে বসে আছে।
দুষ্টু বলল – তোমার windows 7 এ IDM ঠিকঠাক কাজ করছিল তো ?
বললাম – হ্যাঁ।
-তাহলে কোনো চিন্তা নেই । তোমাকে শুধু একটা ছোট্টো Tricks খাঁটাতে হবে । – দুষ্টু জানালো।
-কী Tricks ? – জানতে চাইলাম।
- Windows 7 তোমার কম্পিউটারের যে ড্রাইভে লোড করা আছে সেখানকার Program Files থেকে IDM যে ফোল্ডারটা খুঁজে বের কর।
নীচের মতো
ওটা পুরো ফোল্ডার সহ Copy কর এবং পেনড্রাইভে পেস্ট করে দাও ।
-তারপর ?
-তার তো আর পর নেই । এবার শুধু ব্যবহার করার পালা । তুমি এটাকে এখন Xp তে কোনো ড্রাইভে পেস্ট করে নিতে পার । আবার পেনড্রাইভ থেকেও ব্যবহার করতে পার।
যদি পেনড্রাইভের জায়গা কম থাকে তবে যে ড্রাইভে বেশি জায়গা আছে সেই ড্রাইভ নিচের মতো করে সিলেক্ট করে দাও। হয়ে গেল।
(নীল সিলেক্ট করা অংশ গুলো দেখ)
১।
২।
৩।
৪। নীল রঙে সিলেক্ট করা IDMan এ ক্লিক করলেই IDM চালু হবে-
কলম্বাসের মতোই আবিষ্কার করে ফেলেছি IDM ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে।
তবে ওখানে Portable IDM ডাউনলোডের লিঙ্ক দেওয়া আছে , কিন্তু কী ভাবে তৈরী করা যেতে পারে তা বলা নেই।
মিষ্টি এতক্ষণ চুপ করে দুষ্টুর কথা শুনছিল। এবার দুষ্টুর কথা শেষ হলে বলল-বাবা , তুমি এটা নেট আঙ্কলদের বলে দিও কী ভাবে করতে হয় ।
আর পারলে তোমার প্যাচ করা IDM এর ও একটা Mediafire Link ও দিয়ে দিও। কারণ অনেক সময় IDM ঠিকমতো প্যাচ হতে চায় না ,তুমি যেহেতু এটা ব্যবহার করছ তাই তুমি জানো এটা প্যাচ করা লাগবে কি লাগবে না ।
বললাম- ঠিক আছে । তোরা যখন বলছিস অবশ্যই দেব।
মনের মধ্যে যে অভিমানটা দুষ্টু-মিষ্টির মায়ের উপরে হয়ে ছিল এখন আর তার বিন্দুমাত্র মনের মধ্যে খুঁজে পেলাম না।
ওদের দুজন কে বললাম – যা তো , তোর মাকে গিয়ে বল আমার খুব খিদে পেয়েছে ,আর থাকতে পারছি না . . . . . .
***************************************************************************************************************************************আমার এই লেখটি সবুজের অভিযান নামে এখানেও প্রকাশিত
http://www.tunerpage.com/archives/55897
***************************************************************
পুনশ্চ
আমার মেয়েদের কথা মতো
Portable IDM
Click This Link Ma.Do.In By Sobujer Abhijan.rar
*****************************************************************
যদি দুষ্টু মিষ্টির আরও দুষ্টুমি দেখতে চান তবে এখানে দেখুন
http://www.somewhereinblog.net/blog/sobujsobuj
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।