আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুষ্টু বিড়ালছানা

বউটুবান

বিড়ালছানাকে নিয়ে যে এমন একটা মজার গল্প হয় যাবে তা আমি ভাবতে পারিনি। আর হবেই না কেনো? ছানাটি যদি হাড়ে-মাংসে দুষ্টু হয়, তখন? দুষ্টু ছানার পদে পদে ঘটনা, পদে পদে গল্প। তার কাণ্ড দেখলে শুধু হাসিই পায় না; বিরাট চিন্তায় পড়ে যেতে হয় এই ভেবে যে, এই পুচিছ বিড়ালছানাটা এত দুষ্টুমি করে কীভাবে? কত বুদ্ধি তার! আসলে দুষ্টুমি করতে বুদ্ধি লাগে। আর যদি দুষ্টুমির সাথে একটু বুদ্ধি মিশাল দেওয়া যায় তাহলে তো আর কথাই নেই। এ-ছানাটি বুদ্ধির জোরে কী না করেছে, সেটাই হলো কথা! এই একটু আগে সে কী করেছে শুনবে? কাউকে বোলো না, শরমের কথা।

চার বছরের মুনিরা গেল টয়লেট করতে। কী দরকার ছিল বিড়ালছানার ওইখানে যাওয়ার। আর গেলেই যদি বসে থাক চুপ করে। সে কী আর বসে থাকতে পারে? একটা কিছু তো করতে হবে। সে লেইমেরে গিয়ে চিকন জিহ্বাটা বের করে মুনিরার পেছনে চাটান দিয়ে দিল ভোঁ দৌড়।

জিহ্বার হালকা ছোঁয়ায় মুনিরা ভয়ে লাফিয়ে কান্না শুরু করে দিল। সে রাগে পায়ের স্যান্ডেল হাতে নিয়ে বিড়ালছানাটিকে মারার জন্য তেড়ে গেল। গিয়ে দেখে বিড়ালছানাটি বারান্দায় শরীরটা ধনুকের মতো বাঁকা করে এমন ভাবে হাই তুলছে যে, এইমাত্র সে ঘুম থেকে উঠেছে, এর কিছুই জানে না সে। বাড়িতে আছে একটা তাগড়া কুকুর। যেমন সাহসী তেমনি শক্তিশালী।

সারারাত সজাগ থেকে বাড়ি পাহারা দেয় কুকুরটা। তার ভয়ে সহজে বাড়ি ঢোকা যায় না। অচেনা লোক দেখলেই সে ঘেউ ঘেউ আর ছুটোছুটি করে বাড়ি মাথায় তুলবে। সারারাত বাড়ি পাহারা দিয়ে কুকুরটি দিনের বেলা যখন ঘুমুতে যায়, তখন এই ফাজিল বিড়ালছানাটা তাকে ভীষণ জ্বালায়। বিড়ালছানাটির যন্ত্রণায় কুকুরটি শান্তিতে ঘুমুতে পারে না।

তার কানে, পেটে ও লেজে শুড়শুড়ি দেবে। হঠাৎ করে ঘুমন্ত কুকুরটার উপর লাফিয়ে পড়েই ফোঁস করে উধাও হয়ে যাবে। তখন কুকুরটা রেগে আগুন হয়ে যায়। একদিন হলো কি, বিড়ালছানাটি লাফ দিয়ে গায়ে পড়তেই প্রচন্ড ক্ষেপে গেল কুকুরটা। তাকে ধরার জন্যে কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে দৌড়ল।

ধরে ফেলবে এমন সময় বিড়ালছানাটি লোম-শরীর ফুলিয়ে ফুটবলের মতো গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গেল আর এমনভাবে ফুসফাস করতে লাগল যে কুকুরটা তার কাছে যেতে সাহস করল না; ভয়ে লেজগুটিয়ে চলে এলো। বিড়ালছানাটি দুষ্টু বলে এর ভক্ত সংখ্যা বেশি। পাড়ার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা প্রায়ই ছানাটির দুষ্টুমি দেখতে চলে আসে মুনিরাদের বাড়ি। ওরা ছানাটিকে কোলে তুলে আদর করতে চায় কিন্তু ভয়ও করে। কোন সময় কী করে বসে তার ঠিক নেই।

সন্ধ্যার পর মুনিরা বই-খাতা-কলম নিয়ে পড়তে বসল। ব্যস তার সাথে সাথে বিড়ালছানাটিও বসে পড়ল। মুনিয়া বইয়ের পাতা উল্টায়, সে-ও উল্টায়। মুনিরা কাগজে রোল করতে যেই না স্কেল ধরে কাঠপেন্সিলে টান দিল ছানাটিও তখন নখ খিচিয়ে বইতে দিল টান। পরপর ফরপর করে ছিঁড়ে গেল বইয়ের পাতা।

মুনিরা বিড়ালছানাটির কাণ্ড দেখে রাগের চোটে স্কেল দিয়ে তাকে দিল এক বাড়ি। ছানাটিও থাপমেরে স্কেলটা কামড়ে ধরে রীতিমত কুস্তি শুরু করে দিল। মুনিরা কিছুতেই ছাড়াতে না পেরে সে পাগলের মত মাকে ডাকতে লাগল। মা এসে দেখেন, মুনিরা আর বিড়ালছানা মারামারি করছে। কেউ হারছে না, কেউ ভাগছে না।

মুনিরার মা ছানাটিকে কয়েকটা থাপড় মেরে দূরে সরিয়ে দিতে চাইল কিন্তু ছানাটি স্কেল ছেড়ে মায়ের আঁচলে খামচি দিয়ে ধরে ঝুলে পড়ল। তাকে টেনে আলগা করা যাচ্ছে না। একদম ঝুলে লাটিমের মতো ঘুরছে সে। পরে কষে একটা বাড়ি দিতেই ছানাটি ফোঁস করে এক লাফে চলে গেল খাটের নিচে। মুনিরা হাতের স্কেলটা নাড়িয়ে ছানাটিকে বলল, পড়ার সময় যদি তুমি আমার কাছে আস তবে তোমার পিঠে এই স্কেলটা ভাঙব।

বেদম পেটানো হবে তোমাকে। এসব শুনে মুনিরার মা ‘হুঃ’ করে চলে গেল। বিড়ালছানার কোন খবর নেই। মুনিরা মন দিয়ে একটা ছড়া পড়ছে। এমন সময় মিঁ-ঞাঁ-ও বলে ছানাটি এসে উপস্থিত।

তার লেজটা খাড়া করে মুনিরার শরীর ঘেষে একেবারে তার কোলে উঠে বসল। মুনিরা ছানাটিকে মারবে কি, তার করুন চেহারা দেখে সে অস্থিরভাবে আদর করতে লাগল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।