আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের নিজস্ব খেলাধূলা (পর্ব ০২)

এবার হবেই! লোরকের পাশে এবার আপনিও >> ০১৮৩৬৫৫৫৬৪০ কৈশোর যাদের গ্রামে কেটেছে তাদের যদি আমি প্রশ্ন করি যে ‘গোল্লাছুট কি?’ তাহলে তা চিনবে না বা মনে করতে পারবে না এমন মানুষ বের করা খুব কঠিন। বর্তমান সময়ে হয়তো ক্রিকেট অথবা ফুটবলের জয়জয়কার। তবুও কৈশোরের গোল্লাছুট খেলাটির আনন্দ যারা উপভোগ করতে পেরেছেন তারা যে আজও সেই আনন্দ মনে রেখেছে এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত যে কতগুলো খেলা রয়েছে তার মধ্যে গোল্লাছুট অন্যতম। গ্রামের কিশোর-কিশোরীর স্কুলের টিফিনের ফাঁকে অথবা বিকেলের সময়টাতে খেলার জন্য একটি জনপ্রিয় খেলা এই গোল্লাছুট।

মূলত গোল্লাছুট খেলাটি খেলতে হয় দুইটি দলে বিভক্ত হয়ে। প্রত্যক দলের একজন দলনেতা নির্বাচিত হয়ে থাকে। তারপর দু’জন দু’জন করে জোড়া বেধে তাদের ছদ্মনাম নিয়ে দলনেতার কাছে আসে। তারপর তারা বলে- ডাক ডাক বে---লী তারপর দলনেতা বলে- আমরা সবাই খেলি তারপর তারা বলে- কে নেবে ‘আম’ কে নেবে ‘জাম’? এরপর দলনেতা যার নাম ধরে ডাকে সেই ছদ্মনামধারী তার দলে চলে যায়। গোল্লাছুট খেলায় খেলোয়ারের কোন নির্দিষ্টতা নেই।

তবে অবশ্যই তা দুই দলে সমান হতে হবে। খেলার নিয়মঃ যেহেতু খেলাটির নাম গোল্লাছুট। তাই বোঝাই যাচ্ছে যে এই খেলায় প্রয়োজন একটি গোল্লার। তাই প্রথমে একটি ‘গোল্লা’ তৈরী করা হয়। মাটিতে একটি গোল দাগ দিয়ে গোল্লা বানানো হয়।

মাঠের যে প্রান্তে গোল্লা তৈরী হয় তার ঠিক অপরদিকে প্রায় ৬০/৭০ গজ দূরে তৈরী হয় ‘সীমানা’। গোল্লা থেকে সীমানার দিকে ছুটে যাওয়ার জন্যই এই খেলার নাম দেয়া হয়েছে ‘গোল্লাছুট’। যে দল প্রথমে খেলার জন্য ঠিক হয় সেই দলের দলনেতা গোল্লার ভেতর দাঁড়িয়ে থাকে। আর দলনেতার হাত ধরে একের পর এক হাত মিলিয়ে সবাই শেকল আকারে গোল্লার বাইরে থাকে। তবে হাত ছাড়া যাবে না।

অন্যদিকে অপরপক্ষের খেলোয়ার সীমানার চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। সুযোগ বুঝে শেকল থেকে প্রথমজন যখন সুযোগ বুঝে দৌড় দেয় সীমানার উদ্দেশ্য তখন অপরপক্ষের সবাই তাকে ছুঁতে চেষ্টা করে। শিকলে থাকা অবস্থায় যদি প্রতিপক্ষের কোন খেলোয়াড়কে ছোঁয়া যায় তবে সে মরা বলে গণ্য হবে এবং সে আর খেলতে পারবে না। সুযোগ বুঝে শেকল ভেঙ্গে সীমানার দিকে দৌড় দেয়ার চেষ্টা করা হয়। যদি প্রতিপক্ষের কেউ তাকে ছুঁয়ে ফেলে তবে সেও মরা বলে গণ্য হবে এবং আর খেলতে পারবে না।

আর যদি সে সীমানা অতিক্রম করতে পারে তাহলে সে পেকে যায় (সীমানা অতিক্রমকারীকে পেকে যাওয়া বলে)। এরপর পেকে যাওয়া খেলোয়াড় গোল্লা থেকে জোড়া লাফ দিয়ে সীমানার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ফলে খেলা অনেক সহজ হয়ে যায়। যে গোল্লা পাহারা দেয় সে যদি সীমানা অতিক্রম করতে পারে তাহলে খেলায় চুড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হয়। যদি কোন কারণে গোল্লা পাহারাদার মারা যায় (প্রতিপক্ষের কারো দ্বারা স্পর্শিত হলে) তাহলে সেখানেই খেলা শেষ এবং প্রতিপক্ষ খেলার সুযোগ পায়।

এরজন্য গোল্লা পাহারাদারকে সবসময় চোখে চোখে রাখা হয় যাতে সে সীমানা অতিক্রম করতে না পারে। এরজন্য সহখেলোয়াড়েরা সীমানা অতিক্রম করে পেকে গিয়ে জোড়া লাফের মাধ্যমে গোল্লাকে সীমানার কাছে নিয়ে আসে যাতে গোল্লা পাহারাদার সহজেই সীমানা অতিক্রম করে চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত করতে পারে। একসময়ের বাংলার কিশোর-কিশোরীর কাছে জনপ্রিয় খেলা ছিল এই গোল্লাছুট । দিন দিন এর জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে। পর্যাপ্ত মাঠের অভাব,পৃষ্ঠপোষকতার অভাব,স্যাটেলাইটের প্রভাব ইত্যাদি নানা কারনে আজকের কিশোর-কিশোরী আর সেই সীমানার দিকে ছুটে চলার আনন্দ উপভোগ করে না।

আর তাই দিন দিন আমাদের লোকসমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নিজস্ব খেলা। ছোটবেলায় গ্রামে বেড়াতে গেলে যেখানে বিকেলের সময় গোল্লাছুট খেলার অনন্দ উপভোগ করা যেত সেখানে আজ স্থান পেয়েছে ক্রিকেট অথবা ফুটবল,যা কিনা অন্য লোকসমাজের অন্তর্ভুক্ত। আমরা ক্রিকেট অনেক ভালো খেলতে পারি কিন্তু একবার কি ভেবেছেন যে আমরা নিজেদের খেলা আজ ভুলতে বসেছি। আসুন,আবারো নতুন প্রজন্মের কাছে আজ তুলে ধরি আমাদের নিজস্ব খেলা। পরিচয় করিয়ে দেই ছুটে চলার আনন্দের সাথে।

লেখকঃ রেহমান রাহাত ক্রীড়া সম্পাদক লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি (লোরক) সোসাইটি ই-মেইলঃ  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.