বৃটিশদের ডিভাইড এন্ড রুল পলিসির নির্মম শিকার মুসলমানদের মধ্যকার শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে হাজার হাজার মুসলমানের রক্ত ঝরেছে, তাদের সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। সমাধান হয়েছে ইসলামের শত্রুদের সমস্যার। মুসলমানের (শিয়া হোক সুন্নি হোক) প্রতিটি ফোটা ঝরা রক্তে হেসে উঠেছে বৃটিশ ও মার্কিন শাসকগোষ্ঠি।
সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে ইরাকে নির্বাচনও হয়নি, জনসংখ্যার বিন্যাসও তাই ধরা পড়েনি খালি চোখে।
সাদ্দাম উৎখাত পরবর্তী আমলে নির্বাচনে দেখা গেল, দেশটির শতকরা ৬০ শতাংশ মানুষ শিয়া মুসলমান, বাকিরা সুন্নি। কুর্দিস্তানের অধিবাসীদের কুর্দি বলা হয়। তাদের মধ্যে শিয়া এবং সুন্নি উভয় মাযহাবের জনগোষ্ঠি রয়েছেন। অর্থাৎ জাতিগতভাবে তারা কুর্দি, কিন্তু ধর্মীয় দিক দিয়ে তারা বেশিরভাগ মুসলমান এবং তাদের মধ্যে শিয়া ও সুন্নি উভয় মাযহাবের লোক রয়েছে। .... স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির নির্বাচিত শিয়া প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি দেশটির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত ইরাকে অন্য দল ও মত থাকবে এবং তাদের অধিকার সংরক্ষিত থাকবে এটিই স্বাভাবিক।
কিন্তু তেল সমৃদ্ধ ইরাককে ঘিরে মার্কিন ষড়যন্ত্র তো এত তড়িঘড়ি শেষ হওয়ার নয়। ইরাক থেকে চাপে পড়ে সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আবার যাতে সেনা ঢোকানো যায়, সে চেষ্টায় বিন্দুমাত্র কমতি রাখবে না মার্কিনীরা। এ কারণে সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের বোমা হামলা হয়েছে বাগদাদে।
নিহত হয়েছে ৬০ জনেরও বেশি মানুষ। এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে শিয়া সরকারের সঙ্গে কথিত সুন্নি 'আল ইরাকিয়া লিস্ট' দলের বিরোধ তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে।
পশ্চিমা মিডিয়ার এই প্রচারণার পালে হাওয়া তুলে দিয়েছে সৌদি সমর্থিত ইসলামি দল জামাআতে ইসলামির পত্রিকা সংগ্রাম ও নয়াদিগন্ত। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে- আল ইরাকিয়া লিস্ট দলের প্রধান আয়াদ আলাভি একজন শিয়া মুসলমান। তার দল সুন্নি নাকি শিয়া- সেটি পশ্চিমাদের কাছে মুখ্য নয়।
তাদের কাছে মুখ্য হলো- আলাভি একজন সেক্যুলার নেতা। ক্ষমতায় পাকাপোক্তভাবে বসতে পারলে সে কামাল আতাতুর্কের মতো ইরাক থেকে ইসলামকে নির্মূল করা হবে তার প্রধান কাজ। পশ্চিমারা তার দলকে সমর্থন দিচ্ছে শুধুমাত্র সে কারণে। কিন্তু মুখে বলছে সুন্নি দল আল ইরাকিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক আল হাশেমি......ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু জামাতে ইসলামি সেই পালে হাওয়া দিচ্ছে কোন্ কারণে তা বোধগম্য নয়।
অবশ্য একটি হিসেবে সমীকরণটি মেলানো যায়। জামাতের অর্থের উৎস হচ্ছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের রাজা-বাদশারা আমেরিকার পা-চাটা গোলাম। আমেরিকার পা হাত বুলিয়ে ক্ষমতায় টিকে রয়েছেন তারা। দেশে হাজার হাজার মার্কিন সেনা পুষছেন।
কাজেই কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন করার জন্য জামাতিরা সৌদি চাপে ইরাকে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বের গন্ধ পাচ্ছেন। আর সৌদি রাজা বাদশাদের মধ্যে ইসলামের 'ই' না থাকা সত্ত্বেও তারা ইরাকের শিয়া মুসলমান অধ্যূষিত সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে কোমর বেধে নেমেছেন। কাজেই নুরি আল মালিকি সরকার যতদিন ক্ষমতায় রয়েছে, ততদিন ইরাককে ঘিরে সৌদি-মার্কিন ষড়যন্ত্রও থামবে না, আর দেশটির জনগণের ভাগ্য যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থেকে যাবে।
পাশ্চাত্যবিদ্বেষী শিয়া নেতা নুরি আল মালিকি (ইরাকের প্রধানমন্ত্রী)
পাশ্চাত্যপন্থী শিয়া সেক্যুলার নেতা আয়াদ আলাভি (কথিত সুন্নি দল আল ইরাকিয়া লিস্টের প্রধান) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।