আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবারও প্রফেসর মিরাজের টাইম মেশিন বা পাগলের বায়স্কোপ

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! প্রফেসর মিরাজ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলেন। স্ক্রিনে তার অনেক দিনের প্রতীক্ষিত হিজিবিজি দেখা যাচ্ছে। তার মানে তার মেশিন রেডি হয়ে গেছে। সেই মেশিন আবার যেন তেন মেশিন নয়। এটা হচ্ছে টাইম মেশিন।

এটা দিয়ে অতীত ভবিষ্যৎ দুটোই চোখের সামনে দেখা যাবে। আনন্দে তিন লাফ দিতে ইচ্ছা করল মিরাজের। কিন্তু বয়স বেড়েছে, ভুঁড়িও বেড়েছে সমানুপাতিক হারে। এখন কি তার বাচ্চাদের মত লম্ফঝম্প মানায়? লাফ দেবার ইচ্ছাটা আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললেন তিনি। কিন্তু তবুও নিজের উত্তেজনাকে চাপা দিয়ে রাখতে পারলেন না মিরাজ।

দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে নিরলস সাধনার পর আজ তার টাইম মেশিন আলোর মুখ দেখেছে। এই মেশিনের জন্য তিনি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফার ছেড়ে দিয়েছেন, তার বউ সতের বছরের এক যুবকের হাত ধরে ভেগে গেছে। কিন্তু তবুও উদ্যম হারান নি তিনি, জানতেন একদিন তার পরিশ্রমের ফল মিলবেই। আজ তাই মিরাজের জীবনের সবচেয়ে বেশি সুখের দিন। কিন্তু মেশিন যে তৈরি হয়েছে এটা তো শুধু তিনিই জানেন, আর যতক্ষণ না অন্য কেউ পরীক্ষা করে দেখছে ততক্ষণ তো তিনি শিওর হতে পারেন না যে মেশিন আসলেই কাজ করবে কি না।

সুতরাং, অন্য কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে তার অনেক সাধের টাইম মেশিনটাকে। কিন্তু কাকে দিয়ে পরীক্ষা করা যায়? মিরাজের মাথায় প্রথমেই এল তার নাতনির বান্ধবী ছন্দার কথা। ছন্দা আজ তাদের বাসায় আছে। ছন্দা মেয়েটা এমনিতে খুব ভালো, কিন্তু সে মিরাজকে দেখলেই দাদু দাদু করে চিল্লাপাল্লা করে। ব্যাপারটা মিরাজের একদমই পছন্দ নয়।

তার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় না তার বয়স যতই সত্তরের ঘরে হোক, তিনি আসলেই বুড়িয়ে গেছেন। বাসার টেলিফোনে ফোন করে ছন্দাকে ডাকলেন তিনি। ছন্দা, একটু ল্যাবরেটরিতে এস তো। হ্যাঁ, একা আসবে। ছন্দা পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এল।

কি দাদু? মিরাজের ভিতরটা বিষাক্ত হয়ে গেল। দাদু? তাকে দেখে দাদু মনে হয়? তবু তিনি বললেন, শোন, আমি তো মেশিনটা বানিয়ে ফেলেছি। কি মেশিন? টাইম মেশিন। কি?!?! ছন্দা দীর্ঘক্ষণ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর হঠাৎ হাসতে শুরু করল সে।

টাইম মেশিন? হা হা হা। হা হা হা। হা হা হা। টাইম...হা হা হা। মেশিন...হা হা হা।

মিরাজ তার দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। ছন্দার হাসি থামলে তিনি বললেন, হ্যাঁ, টাইম মেশিন। আর আমি চাই, তুমি এটাকে পরীক্ষা করে দেখ। আমি? ছন্দা হাসতে হাসতে বলে। হ্যাঁ।

সমস্যা আছে? ছন্দা রাজি হয়। যদিও সে এখনও মিরাজর কোন কথাই বিশ্বাস করে নি। সে জানে, মিরাজর মাথায় একটু ছিট আছে। আমাকে কি করতে হবে? মিরাজ একটা বড় যন্ত্র দেখিয়ে বলে, এর মধ্যে তোমার চোখ রাখতে হবে। তাহলে কি হবে? তাহলে তুমি অতীত বা ভবিষ্যতের দৃশ্য দেখতে পাবে।

মানে...এবার একটু আগ্রহী দেখায় ছন্দাকে...আমি নিজে সেখানে যেতে পারব না? আপাতত সেটা আমি এখনও রেডি করিনি...তুমি শুধু দেখতে পাবে অতীত বা ভবিষ্যতে কি হচ্ছে...কিন্তু নিজে সেখানে যেতে পারবে না। ছন্দা মনে হল কিছুটা বিশ্বাস করেছে। সে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে, কোথায় চোখ রাখব? মিরাজ তাকে যন্ত্রের ভিতরে ঢুকিয়ে একটা চেয়ারের উপর বসিয়ে দিলেন। তারপর একটা কাঁচের জানালার মত একটা জিনিস দেখিয়ে বললেন, এখানে চোখ রাখ। ছন্দা চোখ রাখল।

কালো। এখন কি? মিরাজ বললেন, তুমি কি ভবিষ্যত দেখতে চাও নাকি অতীত? ছন্দা বলল, অতীত। সময় এবং অবস্থান বল। ছন্দা একটু ভেবে বলল, এই...আটশ মিলিয়ন বছর আগে। অবস্থান? এখানেই।

মিরাজ যন্ত্রের বোতাম টেপাটেপি করতে লাগলেন। হঠাৎ যন্ত্রটা যেন জীবন্ত হয়ে ঘড় ঘড় শব্দ করতে লাগল। ছন্দা একমনে কালো জানালাটার দিকে তাকিয়ে রইল। এখানে কি সত্যিই কিছু দেখা যাবে? ************ ছন্দা চোখ খুলল। সে কোথায়? চারপাশে সাদা, শুধুই সাদা।

ছন্দার মনে হল যেন সে ভেসে বেড়াচ্ছে। সে নিজের শরীরের দিকে তাকাল। কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। চারপাশে শুধুই সাদা আর সাদা। ছন্দার মনে হল সে বাতাসে অবস্থান করছে।

আর তার নিচে বিস্তৃত সাদা অংশটি হচ্ছে ভূপৃষ্ঠ। ছন্দা ভেসে ভেসে ভূপৃষ্ঠের আরও কাছাকাছি যেতে লাগল। একসময় সে সাদা জিনিসটা চিনতে পারল। সাদা জিনিসটা আসলে বরফ, এবং সে এই অদ্ভুত টাইম মেশিনের মাধ্যমে এমন একটা সময়ে চলে এসেছে, যখন পৃথিবীর এ অংশটি বরফে মোড়া ছিল। আইস এজ!! পাগলা দাদু মিরাজের অদ্ভুত টাইম মেশিন তাকে আইস এজের ছবি দেখাচ্ছে! ছন্দা ভেসে ভেসে মাটিতে অবতরণ করল।

কিন্তু নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের পা দেখতে পেল না সে। আশ্চর্য হয়ে নিজের শরীরের দিকে তাকাল সে। কিন্তু তার শরীরের জায়গায়ও কিছু নেই। হঠাৎ কোথা থেকে বিশাল এক জন্তু তার পথের সামনে এসে দাঁড়াল। ভয়ে ছন্দার নিঃশ্বাস বন্ধ হবার মত একটা অনুভূতি হল।

জন্তুটা হঠাৎ চিৎকার দিয়ে তার দিকেই ছুটে আসতে থাকল। অতীত ভ্রমণকারী ছন্দা চিৎকার দিয়ে উঠল। কিন্তু নিজের চিৎকার সে শুনতে পেল না। হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করল সে। কিন্তু তার হাতের জায়গায় কিছুই দেখতে পেল না বেচারি ছন্দা।

এক সেকেন্ড কেটে গেল। দুই সেকেন্ড। পাঁচ সেকেন্ড। দশ সেকেন্ড। কিছুই হল না।

ভয়ে ভয়ে চোখ খুলল ছন্দা। দেখল, জন্তুটা চলে যাচ্ছে। ছন্দা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে জন্তুটার বড় বড় পায়ের ছাপ। তার মানে তার শরীরের(!) ভিতর দিয়েই জন্তুটা চলে গেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ছন্দা।

তার কাছে মনে হতে লাগল, নাহ, মিরাজ দাদু পাগল না, তার টাইম মেশিনটাও কোন পাগলের বায়স্কোপ নয়...তা আসলেই কাজ করে! এবং ভালভাবেই কাজ করে। ********** যন্ত্রটার বিভিন্ন অংশ সংযোগকারী কিছু বের হয়ে থাকা তার সরিয়ে যন্ত্রটা থেকে বাইরে বেরিয়ে এল ছন্দা। অসাধারণ! দাদু... মিরাজের মুখ কালো হয়ে গেল। ব্যাপারটা লক্ষ্য করল ছন্দা। সরি...অসাধারণ, প্রফেসর মিরাজ, অসাধারণ।

আপনার যন্ত্র আসলেই অসাধারণ। মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে মুচকি হাসি হাসলেন মিরাজ। বললেন, কি কি দেখেছ? ছন্দা যা যা দেখেছে পুরোটা সবিস্তারে বলল। মিরাজ বললেন, তুমি কি যা দেখেছ তা বিশ্বাস কর? ছন্দা বলল, অবশ্যই করি। হিসাব মোতাবেক আটশ মিলিয়ন বছর আগেই আইস এজ আসার কথা ছিল...এবং সেখানে সারা পৃথিবী বরফে মোড়া ছিল...ম্যামথ এর মত বড় বড় জন্তু ছিল... মিরাজ বললেন, তার মানে আমার যন্ত্র একদম ওকে? হ্যাঁ, ওকে।

তুমি শিওর? ছন্দা ইতস্তত করে বলল, তবুও আরেকটু পরীক্ষা করতে দেবেন? কেমন পরীক্ষা? আপনি আমাকে ঠিক দশ মিনিট আগের অতীতটা দেখাতে পারবেন? অবস্থান যদি এই ল্যাবরেটরিটাই হয়? মানে...সেক্ষেত্রে আমি বুঝতে পারতাম যন্ত্রটা আসলেই ঠিক কি না... মিরাজ মুচকি হেসে বললেন, কেন পারব না? ছন্দা আবার যন্ত্রের মধ্যে ঢুকে কালো জানালাটার দিকে তাকাল। মিরাজ কাজ শুরু করে দিলেন। *********** ছন্দা বেরিয়ে এল যন্ত্র থেকে। বিউটিফুল, শিশুর মত হাততালি দিয়ে উঠল সে। কি হল? একদম পারফেক্ট, উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে বলল ছন্দা, আমি দেখলাম আমি আপনার সাথে কথা বলছি...কথাও একদম মিলে গেছে...আপনার যন্ত্র আসলেই অসাধারণ।

তারমানে তোমার আর সন্দেহ নেই যে আমার যন্ত্র ভুল করতে পারে? না। সত্যি? হ্যাঁ। মিরাজ গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। মেয়েটাকে একটা কথা বলা বোধহয় ঠিক হবে না। প্রথমবার মেয়েটি যখন আটশ মিলিয়ন বছর আগের দৃশ্য দেখতে চেয়েছিল...তখন তিনি “আটশ মিলিয়ন বছর অতীত” লিখতে গিয়ে মনের ভুলে “এক হাজার বছর ভবিষ্যৎ” লিখে ফেলেছিলেন।

(সমাপ্ত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.