সকাল ৭টা থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় সার্জারি বহির্বিভাগের ৫ নম্বর কক্ষের সামনে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের উত্তর কালশি এলাকার নয়ন। সোয়া ২ ঘণ্টা ভোগান্তির পর কক্ষে আসেন ডাক্তার সেলিম মুর্শেদ শুভ। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন নয়ন ও তার বাবা।
কেবল ৫ নম্বর কক্ষই নয়, সকাল ৯টা পর্যন্ত সার্জারি বহির্বিভাগের ৫টি কক্ষের একটিতেও ডাক্তার ছিলেন না। এরমধ্যে ২টি কক্ষের ডাক্তার ছুটিতে।
ডাক্তারশূন্যতার কারণে ১ থেকে ২ ঘণ্টা দুর্ভোগের কবলে পড়েন প্রায় অর্ধশত রোগী ও দর্শনার্থী। এভাবে দেরিতে আসার অভিযোগ এখানকার প্রায় সব ডাক্তারের বিরুদ্ধেই। অথচ নিয়ম হচ্ছে বহির্বিভাগে সকাল ৮টায় আসা এবং দুপুর আড়াইটায় হাসপাতাল ত্যাগ করা।
সকাল দশটায় তিনতলার মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে আরেকচিত্র। রশিদ নিয়ে বাগবিতণ্ডা হচ্ছিল রোগীর আত্মীয় ও একটি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে।
জানা গেল, ২ নম্বর বেডের মেডিসিনের রোগী তপুর টোটাল প্রোটিন ও এলবুমিন রক্ত টেস্টের জন্য ৫০০ টাকা দর হাঁকান লাইফ সেভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বাস্থ্যকর্মী আব্দুল্লাহ। আর তখনই তপুর ভাই রশিদ না পেলে টাকা দেবে না বলে বেঁকে বসেন। এসময় এ প্রতিবেদক আব্দুল্লাহ-র ছবি তুলতে চাইলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে সে।
জানা গেছে, হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে এ দুটি টেস্টই হচ্ছে। একেকটি টেস্টের মূল্য একশ টাকা।
গরিব হলে সুযোগ রয়েছে বিনামূল্যে পরীক্ষার।
শুধু লাইফ সেভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আব্দুল্লাহ-ই নয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীর দেহ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। পরীক্ষার পর রিপোর্ট পৌঁছে দিচ্ছেন হাসপাতালে। বিনিময়ে সরকারি খরচের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ টাকা আদায় করছেন। অভিযোগ রয়েছে কমিশনলোভী কিছু ডাক্তার, কর্মচারী ও নার্স প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বাস্থ্যকর্মীদের এধরনের সুযোগ দিচ্ছেন।
এব্যাপারে মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবিরের পরামর্শ হচ্ছে, প্রতিটি ইউনিট প্রধানকে ঘোষণা দিতে হবে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট গ্রহণ করা হবে না। এটা করা হলেই এ অবৈধ বাণিজ্য কমবে বলে মনে করেন তিনি। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবাসিক চিকিৎসক থাকা কালে তিনি মেডিসিন বহির্বিভাগে এধরনের নিয়ম করে সফল হয়েছিলেন বলে জানান।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে তীব্র সিটসঙ্কট। ১৭শ বেডের এ হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে অন্তত ২২শ।
ফলে কনকনে শীতে মেঝেতেও শুয়ে আছে রোগীরা। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে রোগী ও দর্শনার্থীদের আলাদা বাথরুম না থাকায় হাসপাতালের আশপাশেই মূত্রত্যাগ করছেন তারা।
এতসব সমস্যার মধ্যেও এ হাসপাতালের একটি ভালো উদ্যোগ হচ্ছে বিনামূল্যে প্রায় ৯০ ভাগ ওষুধ বিতরণ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদুল হক মল্লিক জানান, হাসপাতালের ভেতরে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তিনি বেশ কয়েকবার ওয়ার্ডে অভিযান চালিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিগগিরই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশে ৬০০ বেডের আরেকটি সম্প্রসারিত ভবন চালু হলে সিটসঙ্কট অনেকটা কমবে।
দুপুর ২টায় এ প্রতিবেদক হাসপাতাল থেকে চলে আসার সময় বহির্বিভাগে উঁকি মেরে দেখেন দুএকটি কক্ষ ছাড়া সবকক্ষ ডাক্তারশূন্য। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।