ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপিকর্মীদের লাঠিপেটার পর মতিঝিলে হাতবোমার বিস্ফোরণে এক জন নিহত হয়েছে। আরো কয়েকটি স্থানে হাতবোমার বিস্ফোরণে আহত হয়েছে কয়েকজন।
মতিঝিল, শান্তিনগর, গাবতলী, গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার এলাকা, বাড্ডা লিংক রোড, পান্থপথ, গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চ এলাকায় আগুন দেওয়া হয়েছে পুলিশের একটি পিকআপসহ অন্তত আটটি গাড়িতে। পুলিশের গাড়িসহ প্রায় অর্ধশত গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। এসব স্থান থেকে পুলিশ দুই শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রোববার বিকালে বিএনপির উদ্যোগে রমনা পার্কের বিপরীত দিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা বিএনপিকর্মীদের সকালে সেখান থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। এর আগে সরকার সমর্থকরাও সেখানে চড়াও হয় বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ।
মতিঝিলে বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তি হলেন আরিফুজ্জামান (২৫)। তার লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে।
বিস্ফোরণটি ঘটে ঘরোয়া হোটেলের সামনে। সেখানে তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে বলে জানান স্থানীয় দোকানিরা।
মতিঝিল থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিহত ব্যক্তি নিজেই বোমা বহন করছিলেন।
“চার যুবক রোড ডিভাইডারের (সড়ক বিভাজক) কাঁটা তারের বেড়া টপকে যাওয়ার সময় একজন পড়ে যায়। তখন তার সঙ্গে থাকা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে,” বলেন তিনি।
নিহত আরিফের পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তবে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নিহত আরিফুজ্জামান বিএনপির কর্মী এবং তিনি পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন।
মতিঝিলে বিস্ফোরণে জাহাঙ্গীর আলম শুভ (২৬) নামে এক জন আহত হয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী।
স্টক এক্সচেঞ্জে যাওয়ার পথে বিস্ফোরণে তিনি আহত হন।
ঢাকা মেডিকেলে বোমার ক্ষত নিয়ে ভর্তি হয়েছেন সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সালেহ আহমেদ মজুমদার। তিনি জানান, সচিবালয়ের সামনে বিস্ফোরণে তিনি আহত হন।
মতিঝিলের ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গলি থেকে কয়েক যুবক কয়েকটি হাতবোমা ছুড়েই পালিয়ে যায়।
দুটি বোমা এসে পড়ে আরটিভি ও এটিএন বাংলার গাড়িতে।
বিস্ফোরণে আরটিভির গাড়িচালক আইয়ুব আলী আহত হয়েছেন।
পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিসের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পুলিশ সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে বিএনপি দাবি করেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের তিন শতাধিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইঞ্জিনিয়ার ইনিস্টিটিউটের কর্মসূচির ব্যাপারে কোন বিধি নিষেধ ছিলো না।
কিন্তু এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভোর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা করে তারা।
এসময় পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, লাঠি দিয়ে হামলা চালায়। তাদের এই আকস্মিক হামলা মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত ছিলো না। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে বারডেম হাসপাতালে গেটে, পরীবাগে, নটরডেম কলেজের সামনে, সায়েদাবাদ আরকে কলেজের সামনে, মতিঝিল শাপলা চত্বরে, পল্টন ইউবিএল ক্রসিং, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে, শন্তিনগর ইস্টার্ন প্লাসের সামনে, কাকরাইল মোড়ে, জিরো পয়েন্ট এলাকায়।
সকালে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় মতিঝিলে শিল্প ব্যাংক ভবনের (বিডিবিএল ভবন) সামনে, শান্তিনগরের কনকর্ড টাওয়ারের সামনে এবং ফার্মগেটের কাছে এটিএন নিউজের কার্যালয়ের সামনে। অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভায়।
এ আগুন কারা ধরিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে শান্তিনগর এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের তৎপরতার ছিলো বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার বিভিন্ন জন।
একসঙ্গে কয়েকটি স্থানে গাড়িতে আগুন ও বোমা বিস্ফোরণের কারণে সকালে বিভিন্ন সড়কে গাড়ি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
এতে অন্য সড়কগুলোতে দেখা দেয় যানজট।
বিএনপি নেতা ফখরুল এসব ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, “সরকার তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান বানচাল করতেই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। ”
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপির কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
ঢাকার মতো সিলেট ও সিরাজগঞ্জেও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সিলেটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক বাসযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।