গাজীপুর এক প্রাচীন জনপদ। ভাওয়াল পরগনার অন্তর্গত এই জনপদের ইতিহাস দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ। আধুনিক নগরসভ্যতার আগ্রাসনের আগে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল মোহনীয়। উনিশ শতকের ভাওয়ালের বিখ্যাত কবি গোবিন্দচন্দ্র দাস লিখেছেন:
ভাওয়াল আমার অস্থিমজ্জা
ভাওয়াল আমার প্রাণ!
তাহার শ্যামল বন, মরকত-নিকেতন,
চরে কত পশুপাখী নিশি দিনমান,
মহিষ ভল্লুক বাঘ, প্রজ্জ্বলিত হিংসারাগ
কঙ্করে নখর শৃঙ্গ ক্ষুরে দেয় শাণ।
তার সে পিকের ডাকে, জোস্না জমিয়া থাকে,
যামিনী মূরছা যায় শ্যামা ধরে তান!
খঞ্জন খঞ্জনী নাচে, বনদেবতার কাছে,
পাপিয়া দোয়েল করে মধুমাখা গান।
১১০ বছর আগে গোবিন্দ দাস কল্পনাও করেননি তাঁর ছায়াঢাকা গ্রামটিতে গড়ে উঠবে এক জনবহুল নগর। সেই নগরে হবে এমন এক নির্বাচন, যার তাৎপর্য বহুমাত্রিক। সেই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সুসংহত হবে। শিক্ষা না নিলে বাংলাদেশের নষ্ট গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আরও বহুকাল অব্যাহত থাকবে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে একটি স্থানীয় সরকারের নির্বাচন মনে করার কোনোই কারণ নেই।
অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু প্রার্থীদের মধ্যে হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে সরকারি জোটের সঙ্গে বিরোধী জোটের। আরও পরিষ্কার করে বললে—প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেত্রীর। এবং সে জন্য প্রার্থীরা মোটেই দায়ী নন। দায়ী জাতীয় নেতারা।
তাঁরা নির্বাচনটিকে স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে টেনে না নিলে এই নির্বাচন নিয়ে কারও কিছু বলার থাকত না। এই নির্বাচনের তাৎপর্য প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নেই।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। সেখানে এক পক্ষ জিতবে আরেক পক্ষ হারবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর মধ্যে অতিচালাকি করতে গিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা জেনারেল এরশাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিষ্কার হয়ে গেল।
এখন তাঁর এই নির্বাচনোত্তর চাল দেখার জন্য দেশবাসী কৌতূহলের সঙ্গে অপেক্ষা করছে।
বাংলাদেশের জনগণ যে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে চায়, তাদের পছন্দের দল ও প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে চায়, তা গাজীপুরসহ পাঁচটি সিটি নির্বাচনে প্রমাণিত হলো। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকেও আমরা ধন্যবাদ জানাই। বিরোধী দলের নেতারা নির্বাচনের দিন সেনা মোতায়েনের যে দাবি জানান, তারও কোনো যৌক্তিকতা নেই।
আমরা নতুন মেয়রকে অভিনন্দন জানাই।
তবে একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, একটি নতুন গঠিত সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়রের দায়িত্ব বিরাট। সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতি যদি তাঁকে সেই দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়, তা হবে ভোটারদের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের শামিল। অভিজ্ঞ যে প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন তাঁর কাছেও আমাদের আবেদন, নতুন মেয়রকে তিনি সহযোগিতা দেবেন। নির্বাচিত ও পরাজিত উভয়কেই দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে নগরের উন্নয়নের স্বার্থে।
গাজীপুরের নির্বাচনে জনগণ কী বোঝাতে চাইছে তা উপলব্ধির ক্ষমতা আমাদের নেতাদের নিশ্চয়ই রয়েছে।
সেই ক্ষমতার তাঁরা সদ্ব্যবহার করবেন, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। তাহলেই আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।