সময় পোড়া বাতিঘর। ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা। মুসাফিরের ব্লগ। রাজা মশায় মহা যন্ত্রণায় অস্থির হলেন। তার যণ্ত্রণার কথা গোপনে রাজরাণীকে বলেছেন।
কিন্তু কেহ ইহা বিশ্বাস করতে চায়না। না এ হতে পারেনা। রাজা মশাইয়ের নিতম্বে ফোড়া ওঠতেই পারেনা।
রাজরাণী আসলেন। স্বচক্ষে দেখলেন।
কিন্তু উপায় কি? ফোড়া কাটতে হলেতো,রাজা মশাইয়ের নিতম্ব উম্মোচিত হবে, এতো বড়ই কলঙক। এটাতো রাজ কলঙক।
অবশেষে প্রধান কবিরাজকে ডাকা হলো। কবিরাজ সব প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। কিন্তু রাজার বস্ত্র উম্মোচনের মতো এতোবড় স্পর্ধাতো কবিরাজের নেই।
এদিকে রাজা ফোড়ার ব্যথায় নিদারুন কষ্ট পাচ্ছেন।
উজির নাজিরদের মধ্যে বৈঠক বসলো কি করা যায়। কি করা যায়। এতো চিন্তা, এতো চিন্তা। রাজ কার্য ঠিকমতো চলছেনা।
সব কিছু তালগোল পাকিয়ে আছে।
ওদিকে রাজার বিরোধী প্রজারা মহা উল্লোসিত। এবার রাজার বস্ত্র উম্মোচিত হবে।
তারা ছড়িয়ে দিতে লাগলো-
"যে রাজার নিতম্বে ফোড়া উপ্ত,সে রাজা বড়ই অভিশপ্ত। "
কিন্তু রাজার হিতৈষি প্রজারা বললেন- না সব মিথ্যা,বানোয়াট,বিভ্রান্তি।
রাজার ফোড়া ওঠতেই পারেনা। এটা নিছক বিরোধি প্রজাদের ষড়যন্ত্র।
রাজার দেবতুল্য শরীরে কলঙক লেপনের জগন্য ইচ্ছা।
অবশেষে প্রধান উজির বুদ্ধি বের করলেন। কবিরাজের চোখ সাত স্তর বিশিষ্ট ভারি কালো পর্দা দিয়ে ঢেকে দেয়া হবে।
যেন কোনো মনুষ্য চোখ রাজার নিতম্ব দর্শন করতে না পারে। প্রধান উজিরের বুদ্ধি দেখে মন্ত্রণা পরিষদের বাকি সদস্যরা হর্ষধ্বনি দিয়ে ওঠলেন।
কবিরাজ ভয়ে কেঁপে ওঠলেন। এও কি সম্ভব। চোখ বন্ধ করে ফোড়া কাটার বিদ্যাতো তার চৌদ্দ পুরুষে কেউ শিখেনি।
কিন্তু বলাতো যাবেনা। বললে-নির্ঘাত গর্দান কাটা যাবে। রাজ কবিরাজ মহা চিন্তিত।
রাজ কবিরাজ সময় চাইলেন। বললেন-
অন্ধ চক্ষু ফোড়া কাটন্ত,আগ্গা নত মস্তক,
এ কলা শিখিতে পঠিতব্য নতুন পুস্তক।
পুস্তক পাঠের সময় দেয়া হলো। কবিরাজ-সুযোগ বুঝে রাজ্য ছেড়ে পলায়ন করলেন।
নতুন কবিরাজ আসলেন। ফোড়া কাটা চিকিৎসক হিসাবে যিনি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। তবে রাজার নিতম্ব বলে কথা।
তারপর অন্ধ চোখে ফোড়ার গোড়া কর্তন করতে হবে। কবিরাজ কিন্চিত চিন্তিত। মহাবুদ্ধিমান প্রধান উজির বুঝতে পারলেন। বৈঠক বসলো আবার নতুনভাবে।
প্রধান উজির সমস্যার খুব সহজে সমাধান করে দিলেন।
অন্যান্য সভাসদরা প্রধান উজিরের বুদ্ধির তারিফ করতে লাগলো। রাজ্যব্যাপি সৈন্য সামন্ত পাঠানো হলো - মুহুর্তেই ধরে আনা হলো নিতম্বে যাদের ফোড়া ওঠেছে এমন প্রজাদের ।
রাজার নিতম্বে কাচি চালানোর আগে কবিরাজ গরীব প্রজাদের নিতম্বে চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে কাচি চালিয়ে হাত রপ্ত করবেন। শুরু হলো নিতম্বে কাচি চালানো। কবিরাজ যতই পারদর্শি হোন না কেন ফোড়া কাটায়, কিন্তু অন্ধ চোখে এযে রীতিমত বেসম্ভব কাজ।
তাই কারো নিতম্ব কাটা গেলো, কারো ফোড়ার অর্ধেক গেলো আর অর্ধেক রইলো। আবার কারো ফোড়া ফুলের মতোই প্রস্ফুঠিত হয়ে রইলো।
কিন্তু কবিরাজ সফল হতে পারলেননা। প্রধান উজির বললেন-
"একেবার না পারিলে শতবারে হবে পোক্ত
প্রজার ফোড়া কেটে সিদ্ধ হোক কবিরাজের হস্ত। "
শুধু লক্ষ্য একটাই "রাজনিতম্ব না করিবে দর্শন, করিবে ফোড়ার গোড়া কর্তন।
" কবিরাজকে পারতেই হবে।
এখন শুরু হলো আরেক সমস্যা। নিতম্বে ফোড়া ওঠেছে এমন রোগী দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেলো। প্রধান উজির সমস্যার সমাধান করে দিলেন। সভাসদরা প্রধান উজিরের বুদ্ধিমত্তায় আবার হর্ষধ্বনি দিয়ে ওঠলো।
গরীব প্রজাদের ধরে আনা হলো। বৃক্ষরাজি,লতা,শিকড়,কান্ড,রস্য,ভেষজ কবিরাজ উনবিংশ উদ্ভিদরাজির রস নিয়ে জোলাপ তৈরি করলেন। এ জোলাপ যাকেই খাওয়ানো হবে তার পশ্চাতদেশেই মুহুরতেই সুতীক্ষ্ন তীরের অগ্রভাগের মতো ফোড়া উদিত হবে। প্রজাদের নিতম্বাকাশে ফোড়ার উদয়ন কবিরাজ মশাইয়ের শ্রেষ্ঠ আবিস্কার আর প্রধান উজিরের মহান চিন্তার ফসল।
রাজমহোদয়ের পশ্চাতদেশ দেখা হলোনা বটে, তবে প্রজাদের চিত্র-বিচিত্র নিতম্ব থেকে বস্ত্রভেদ করে ফোড়ার উদয়ন দেখে মন্ত্রনা পরিষদ দারুন পুলকিত হলেন।
সারাদিন ব্যাপি ৫৪২টি ফোড়া কাটার পর কবিরাজ সফল হলেন। এবার চোখে কাপড় বেধেই কবিরাজ অনায়াসেই ফোড়ার গোড়া কর্তন করতে পারবেন বলে ঘোষনা দিয়ে কবিরাজ রাতের জন্য বিশ্রামে গেলেন। পরদিন সকালে রাজা মশাইয়ের ফোড়া কাটা হবে।
পরদিন সকালে রাজ বিশ্রামাগারে মখমলের গালিচার পালঙকের ওপরে রাজা মশাই উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন। রাজ কবিরাজ ধীরপায়ে প্রবেশ করে জাহাপনাকে কুর্নিশ করলেন।
আসল কার্য সাধন করে কবিরাজ মশাই রাজইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ফোড়াকর্তনবিদ হিসাবে নাম লিখাবেন-।
এক নজর রাজার পশ্চাতদেশ দেখে নিলেন। রাজার খাস গোলাম-কবিরাজের চোখে সাত পর্দার কালো কাপড় বেঁধে দিলো । এবার কবিরাজ কাচি বের করে হাতে নিলেন। ভয়ে আর উৎকন্ঠায় কাপঁছে শরীর।
আর মুহুর্তেই ভুলে গেলো কবিরাজ-
রাজার কোন নিতম্বে জেগেছে ফোড়া, বাম নাকি ডান
জয় রাজ নিতম্ব, জয় রাজ ফোড়া,জয় রাজা মহীয়ান।
প্রজাদের কেউই জানলোনা রাজার ফোড়া কর্তন করতে গিয়ে রাজার কি কাটা গেলো-শুধুই জানলো ফোড়া নিজেই আপন মহিমায় প্রস্ফুটিত হয়ে সুবাস ছড়িয়েছে আর রাজ কবিরাজের পরদিন প্রত্যুষে গর্দান কাটা পড়েছে।
গল্পটির সারকথাঃ রাজনিতম্বে ফোড়া ওঠলে দুখি প্রজারা যে শান্তিতে থাকবেন সে নিশ্চয়তা নেই-বুদ্ধিমান মন্ত্রণাপরিষদের চমৎকৃত বুদ্ধিতে আপনার পশ্চাতদেশও কাটা যেতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।