ধর্ম বলতে রীতি নীতি,নিয়ম কানুন,শৃংখলা ইত্যাদি। তেমনি ধর্মনিরপেক্ষতা হলো প্রতিথযশা যে ধর্মগুলি আছে তা বাদদিয়ে আরেকটি নতুন ধর্মের উদ্ভব। ইংরেজী (Secularism) এর বাংলা অনুবাদ হল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। খুব কৌশল করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য বাংলায় (Secularism) এর অর্থ ধর্মনিরপেক্ষতা করা হযেছে। বিশ্বের প্রধান প্রধান ডিকশোনারীতে ধর্মনিরপেতার অর্থ করা হয়েছে ধর্মহীনতা বা নাস্তিকতা।
যেমন: ক) বিশ্বখ্যাত Random house dictionary of English Language এ Secularism এর তিনটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে।
No.1- No regarded as religious or spiritually sacred যা র্ধমীয় বা আধ্যাত্মকিভাবে পবত্রি বলে বিচেতি নয়।
No.2- No pertaining to or connected with a religion. যা কোনো ধর্মের সাথে সম্পর্কিত নয়।
No.3- No belonging to a religious order. যা কোনো র্ধম বিশ্বাসের অর্ন্তগত নয়।
খ) Webster অভিধানে ' Secular' শব্দটরি র্অথ: র্ধম বা র্ধম-বিশ্বাস র্বজন বা এই বিষয়ে উদাসীন থাকা।
গ)Short Oxford Dictionary -তে ' Secular ' শব্দটরি সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে : এমন একটি তত্ত্ব যার মূলনীতি হলো, নৈকিতার উদ্দেশ্যে হওয়া উচিত ইহজগতে মানুষের ভালো থাকা, এতে পরলোক বা ঈশ্বরে বিশ্বাসের কোনো স্থান নইে। এই শব্দটরি সাথে র্ধমহীনতা, ইহজগৎবাদ, রাষ্ট্র-র্ধম-পৃথকীকরণ, দৈবশক্তির পরর্বিতে মানবিক ক্ষমতায় বিশ্বাস, বি-ধর্মীয়করন ও যু্ক্তিবাদী বিশ্বাস ইত্যাদি ধারণার একটা ঘণিষ্ঠ সর্ম্পক আছে।
উল্লিখিত তিনটি ডিকশনারীর বক্তব্য অনুযায়ী র্ধমনরিপক্ষেতা মানে র্ধমহীনতা। আরবীতে সেকুলারিজমের শব্দার্থ হলো,লা দিনিয়াহ অর্থাৎ ধর্মহীন। সেকুলারিজম যা সেকুলার শব্দের সাথে ইজম যোগ করে বানানো,সেই শব্দের অর্থ পার্থিব,সাংসারিক,ঐহ্যিক,লৌকিক,অযাজকীয়,বৈষয়িক,অনাধ্যাতিক।
আর সেকুলারিজম হলো সাংসারিকতা,লৌকিকতা ও জাগতিকতা। (দেখুন এটি দেব এর ইংরেজী বাংলা অভিধান/পৃ.১১৭০-৭১)এজন্য সেকুলারাইজ হলো সাংসারিক করা অপবিত্র করা। আর সেকুলারিস্ট হলো সেই ব্যাক্তি-যে সাংসারিক বা বৈষয়িক। ইংরেজীতে-One who rejects forms of (any) religions faith and accepts only facts and influences derived from the present life,(A.T.Dev.P.1171) প্রকৃতপক্ষে কেউ ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না। যেমন:
নিজেকে র্ধমনিরপেক্ষ বলে দাবি করার র্অথ নিজের সাথে নিজেই প্রতারণা করার শামিল।
প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হলো আমাদের সমাজে চলমান ধর্মগুলির বিপরীতে আরেকটি ধর্ম।
ক ) একজন হিন্দু র্ধমাবলম্বী যখন পরনে ধুতী, গলায় রুদ্রাক্ষরে মালা, গায়ে নামাবলী ও পৈতা জড়িয়ে, মাথায় টিকি,সিথিতে সিঁদুর ও হাতে শাঁখা পরেন, বারো মাসে তেরো পূজা এবং তেত্রিশ কোটি দেবতায় বিশ্বাস করে প্রত্যহ মন্দিরে গিয়ে দেবতার পদপ্রান্তে অর্ঘ-নৈবদ্য নিবেদন করেন, তখন কি তার পক্ষে র্ধমনিরপেক্ষ থাকা সম্ভব? তিনিতো ধর্মের পক্ষেই চলে গেলেন।
খ) একজন মুসলমি পুরুষ যখন মাথায় টুপি মুখে দাড়ি এবং লম্বা জামা পরেন, নামায-রোযা, হজ্জ ও উমরাহ পালন করেন, মুসলিম নারী যখন শালীন পোশাক তথা হিজাব পরনে, আল্লাহ-রাসূল, কুরআন-হাদীস, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নামে বিশ্বাস করেন, তিনিও তো র্ধমরে পক্ষেই অবস্থান নিলেন।
গ) একজন শিখ যখন গুরু নানকের অনুসারী হয়ে দাড়ি না কেটে মাথায় পাগড়ী পরেন এবং হাতে বালা ও কৃপাণ ধারণ করেন, গুরুদুয়ারায় গিয়ে র্ধমীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন তখন তো তিনিও ধর্মের পক্ষেই থাকলেন।
ঘ) একজন বৌদ্ধ যখন গৌতম বুদ্ধের ”অহিংসা পরম ধর্ম” ও ”জীব হত্যা মহাপাপ” নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে গেরুয়া বসন পরিধান করে আত্মার মহানির্বাণ লাভের জন্যে কৃচ্ছ্র-সাধন করেন, বোধিবৃক্ষকে পবিত্র জ্ঞান করে প্যাগোডায় যান তিনিও তো ধর্মের পক্ষেই অবলম্বন করলেন।
ঙ) একজন খৃস্টান যখন যীশুখৃস্টকে তাদের ত্রাণকর্তা প্রভু বলে বিশ্বাস করেন, গলায় ক্রুশ ঝুলান, ত্রিত্ববাদ ও বাইবেলে বিশ্বাস করেন, মুখে যীশুর নাম উচ্চারণ করে প্রতি রোববার গীর্জায় র্প্রাথনা করেন, আমরেকিার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যখন বাইবেল র্স্পশ করে প্রসেডিন্টেরে শপথ নেন এবং তাদের প্রতিটি ডলারে যখন ছাপার অক্ষরে লেখা থাকে 'IN GOD WE TRUST' তখন তারাও তো আর ধর্মনিরপেক্ষ থাকলেন না, ধর্মের পক্ষেই এলেন।
এটাই যখন প্রকৃত বাস্তবতা, তখন কতিপয় নাস্তিক ছাড়া আর ধর্মনিরপেক্ষ রইলো কারা? প্রকৃত বিষয় হচ্ছে ধর্মে বিশ্বসী কোনো মানুষই ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না।
বৃটিশ দার্শনিক George Jacob Holyoake ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত English Secularism গ্রন্থে তিনটি নীতিকে সেকুলারিজমের মূল ভিত্তি বলে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষায় It’s essential principles are three (1) The Improvement of this life by material means (2)The science is the available providence of man (3)That it is good to do well. Whether there is other good or not, the good of the present life is good, and it is good to seek that good.
হলিওকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সেকুলারিজমের অস্তিত্ব পাশ্চাত্যের কোথাও আছে কি না তাও বিবেচনার বিষয়। তা ছাড়া এভাবে জীবন-যাপনরে মাধ্যমে মানব সমাজ একদল র্স্বাথপর পশুর র্পযায়ে নেমে যেতে বাধ্য যা কোনো বিবেকবান সমাজ সর্মথন করতে পারেনা।
বিলাতের লেবার বা টোরি পার্টি নীতিগতভাবে সেকুলার হলেও হলিওক বা ব্র্যাডলাফের সেকুলারিজম সেখানে আছে কি নেই তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ রয়েছে।
আমার কিছু প্রশ্ন ধর্মনিরপেক্ষ দাবিদারদের প্রতি,তারাতো প্রচলিত কোন ধর্মকেই তাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন না,তাহলে তারা বিয়েতে কোন রীতি অনুসরন করবেন?লিভ টু-গেদার নাকি যে যার ধর্ম পালন করবে। অথবা জীবণের সমাধির সমাধান কি?তারাতো শশ্মান,কবর,জানাজা কিছুই বিশ্বাস করবেনা। তাহলে তারা কি তাদের লাশ গবেষনার জন্য মেডিকেলে রেখে দিবে গবেষনার জন্য,নাকি মেডিসিন দিয়ে রেখে দিবে?আর এইভাবে যদি লাশ রেখে দেয়া হয় তাহলে চিন্তা করা যায় যে পৃথিবীর অবস্থা কি ভয়ানক হবে,পরিবেশের অবস্থাই বা কেমন হবে?যে বিধান পার্থিব সমস্যার সমাধান করতে পারেনা,জীবনের সমাধীর সমাধান দিতে পারেনা তাহলে এটাতো একটা নিকৃষ্ট মতবাদ ছাড়া কিছুই বলা যায়না। এছাড়া মৃত ব্যাক্তির সম্পত্তি ইনসাফ ভিত্তিক বন্টন কেমন হবে?তার কোন বিধানও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা দিতে পারেনা।
তাহলে বলা যায় এটা একটি পঙ্গু,নৈতিকতা-বিবর্জিত,বাস্তবতাহীন মতবাদ। তাই একজন মনিষী বলেছেন,”মানুষ ধর্মকে মেনেও এতো অনৈতিক কাজ করছে,ধর্ম না থাকলেতো মানুষ পশুতে পরিণত হতো”। বাইবেলে আছে-“Religion Exalts a Nation” ধার্মিকতা জাতিকে উন্নত করে। এলবার্ট আইস্টাইন বলেছিলেন-“Science without religion is lame, Religion without science is blind” অর্থাত বিজ্ঞান বিহীন ধর্ম খোড়া,আর ধর্ম বিহীন বিজ্ঞান অন্ধ। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা নৈতিকতার কথা খুব জোর দিয়ে বলে,কিন্তু এই নৈতিকতার ভিত্তি কি তার সঠিক উত্তর হয়তো তারা বলবে বিবেক।
বিবেকতো সবসময় কাজ করেনা,একজনের বিবেকে যেটা ভাল আরেকজনের বিবেকে সেটা খারাপ। এটা আপেক্ষিক বিষয়। যেমন বিয়ের পূর্বে নারী-পুরুষের সম্মতিক্রমে সহবাস অনেকের নিকট বৈধ,আবার সকল ধর্মে সেটাকে অবৈধ বলেছেন। তাহলে বিবেক যে সবসময় সঠিক রায় দিবে তার নিশ্চয়তা নেই। তাই আমরা ধর্মকেই নৈতিকতার স্ট্যান্ডার্ড বা ভিত্তি বলতে পারি।
মহা গ্রন্থ আল-কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন-ইন্না দ্দিনা ইনদাল্লাহি ইসলাম,(নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবণব্যবস্থা হলো ইসলাম। আরেকটি উদাহরণের মাধ্যমে জিনিসটি আরো পরিস্কার হবে। যেমন ফুটবল খেলায় রেফরী ও ক্রিকেট খেলায় আম্পায়ার থাকে,তারা কিন্তু নিরপেক্ষ হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ দল নিরপেক্ষ,অর্থাৎ তারা ব্যাক্তিগত ভাবে কোন দলের সমর্থন করলেও খেলার মাঠে তিনি বিচারক হিসেবে কোন দলের পক্ষে অবস্থান নিবেন না। তার অর্থ দাড়ায় দলহীন।
তেমনি নিরপেক্ষ শব্দটির আগে যদি ধর্ম যোগ করা হয় তাহলে ধর্মহীন। সত্যিকথা বলতে Secularism অর্থ ধর্মনিরপেক্ষ অর্থ নয় এটিকে গ্রহণযো্গ্য করে তোলার জন্য কৌশল করে ধর্মনিরপেক্ষ করা হয়েছে । এক কথায় বলতে গেলে ধর্মনিরপেক্ষ বলতে বর্তমানে বিশ্বে চলমান যে ধর্মগুলি আছে সেগুলিকে বাদ দিয়ে আরেকটি নীতি বা কৌশলই হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা আসলে কোন সাহিত্যের ভাষা নয়,কোন রিলিজিয়াস টার্ম নয় এটি একটি পলিটিকেল ভাষা। তাই বলা যায় সেকুলারিজম যতই ধর্মনিরপেক্খতার বুলি আওড়াক না কেন?”প্রকৃতপক্ষে তারাও তাদের প্রণীত নতুন এক ধর্মের অনুসরণ করছে,তাদের ও ধর্ম আছে।
যা পৃথিবীতে চলমান ধর্মগুলোর সম্পূর্ন বিরধী”।
লেখক
মুহাম্মদ নুরুল আবছার(টিপু)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।