নতুন শতকে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দেশের জাতীয় জাদুঘর। মাত্র ৩৭৯টি নিদর্শন নিয়ে ১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘ঢাকা জাদুঘর’ নামে, এখন তার নিদর্শনের পরিমাণ ৮৬ হাজার ২১২টি। বিশাল এ সংগ্রহের ভান্ডার নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অন্যতম জাদুঘর হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে এটি।
শতবর্ষের পরিক্রমায় জাদুঘরের সংগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ভূমিকা ও কর্মপরিধি বিস্তৃত হয়েছে। সেসব তুলে ধরেই শতবর্ষ পূর্তি উদ্যাপনের আয়োজন চলছে।
এ উপলক্ষে গত বছরের ৯ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল দুই বছরব্যাপী কর্মসূচি। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উদ্বোধন করেন শতবর্ষ পূর্তির মূল অনুষ্ঠান। আগস্টে পবিত্র রমজান থাকবে। তাই মূল অনুষ্ঠান এক মাস এগিয়ে আনা হয়েছে।
দুপুরে রাষ্ট্রপতি মাসব্যাপী এ মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে বলেন, জাতীয় জাদুঘর দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাদুঘরের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে।
শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে জাদুঘরে একটি নতুন ‘শুভেচ্ছা স্মারক বিপণি’ খোলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এ বিপণি ও মাসব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া তিনি এ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন এবং এ উপলক্ষে প্রকাশিত ১০০ টাকার স্মারক মুদ্রা ও ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন জাদুঘর প্রযত্ন পর্ষদের সভাপতি এম আজিজুর রহমান। অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান সংস্কৃতিসচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। স্বাগত বক্তৃতা দেন মহাপরিচালক প্রকাশ চন্দ্র দাস।
ঢাকা জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছিল ১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট। বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল তৎকালীন সচিবালয়ের (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ) একটি কক্ষে ঢাকা জাদুঘর উদ্বোধন করেছিলেন।
সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘর খুলে দেওয়া হয়েছিল ১৯১৪ সালের ২৫ আগস্ট। তখন নিদর্শন ছিল ৩৭৯টি। পরের বছর জাদুঘরটি নিমতলীতে ঢাকার নায়েব নজিমের বারোদুয়ারী ঘরে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৩ সালে ঢাকা জাদুঘরকে আত্তীকরণের মধ্য দিয়ে জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে ইতিহাস ও ধ্রুপদি শিল্পকলা, জাতিতত্ত্ব ও অলংকরণ শিল্পকলা, সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা এবং প্রাকৃতিক ইতিহাস—এ চারটি বিভাগে জাদুঘরের সংগ্রহ ও প্রদর্শনীর কাজ চলছে।
ভবনের তিনটি তলায় ৪৪টি গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে এ চার বিভাগের পাঁচ হাজারের বেশি নিদর্শন। এ ছাড়া তৃতীয় তলায় ৩৭ থেকে ৪০ নম্বর পর্যন্ত গ্যালারিতে দুটি বিষয়ভিত্তিক প্রদর্শনীতে ১৭৫৭ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত বাঙালির আন্দোলন, সংগ্রাম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির বিস্তারিত বিবরণ, ছবি ও নিদর্শন নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ প্রদর্শনীর সঙ্গে রয়েছে আকর্ষণীয় ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’।
মহাপরিচালক প্রথম আলোকে জানান, জাতীয় জাদুঘরের আধুনিকায়নে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সব নিদর্শনের বিস্তারিত বিবরণ ও ছবি ডিজিটাল মাধ্যমে নিবন্ধিত করা হয়েছে।
নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরালো করা হয়েছে। গ্যালারিগুলোতে বসানো হয়েছে ১৪০টি সিসি ক্যামেরা। মাল্টিমিডিয়া টাচস্ক্রিন বসানো হয়েছে চারটি। সেখান থেকে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় জাতির ইতিহাস-সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। তৈরি করা হয়েছে চারটি প্রামাণ্যচিত্র।
এগুলো নির্দিষ্ট গ্যালারিতে বিরতিহীনভাবে ৫২ ইঞ্চি মনিটরে প্রদর্শিত হচ্ছে। তিনি জানান, এখন প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজারের বেশি দর্শক জাদুঘর পরিদর্শন করে থাকেন।
শতবর্ষ পূর্তির মূল অনুষ্ঠানমালায় দুই দিনের একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারও শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। আজ শেষ দিনেও দুটি অধিবেশন থাকবে। তবে চার বিভাগের সংগ্রহের নিদর্শন নিয়ে নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনকক্ষে যে বিশেষ প্রদর্শনীটি শুরু হয়েছে, এক ফাঁকে সময় করে তা দেখে আসতে পারেন আগ্রহী ব্যক্তিরা।
প্রদর্শনীর ২২৩টি নিদর্শনের মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যেগুলো গ্যালারিগুলোতে নিয়মিত প্রদর্শিত হয় না। এটি চলবে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা, আর রমজান মাসে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। জাদুঘরের ভান্ডারের সঞ্চিত এসব নিদর্শন মনে করিয়ে দেবে আমাদের বহু গৌরবগাথা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।