টাঙ্গাইলের রসুলপুরে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী তিনদিন ব্যাপি ‘জামাইমেলা’। নামে জামায় মেলা হলেও এ মেলায় জামাই বিক্রি হয় বলে অনেকে হয়তো ভুল করতে পারে। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে জামাই মেলা নাম হলো কেন?
এর ঊত্তর রসুলপুর এলাকার আবাল বৃদ্ধ বনিতারাও বলতে পারেন না। তাদের উত্তর তারা ছোটবেলা থেকেই এই মেলা দেখে আসছেন। ঠিক কবে থেকে এই মেলা চলে এসেছে তা তারা তারা জানেন না।
তবে তাদের বাবাÑদাদার মুখেও তারা এই মেলার কথা শুনেছেন।
৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আবুল কাসেম বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই এই মেলায় আসি।
এখন আমার মেয়ের জামাই, নাতিÑনাতনির জামাইরাও আসে।
প্রতি বছর ১১ বৈশাখ (পঞ্জিকার হিসেব অনুযায়ী) রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা। শুধু রসুলপুর নয় পার্শ্ববর্তী প্রায় ১৫ টি গ্রামের মানুষের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে এটি।
শিশু-নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষ আসে মেলায়। তিনদিন ব্যাপী এই মেলার প্রথম দিনকে বলা হয় জামাই মেলা, আর দিত্বীয় দিন হয় বৌ মেলা। এ সময় রসুলপুর ও তার আসে পাশের সকল এলাকার বিবাহিত মেয়েরা তাদের বরকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। নতুন জামাইদেরও এ থেকে রেহাই নেই। শাশুড়ী জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন।
জামাই সে টাকা নিয়ে যান মেলায়। সেখানে আরো টাকা যোগ করে বড় আকারের একটি কলসি ভর্তি করে কিনে আনেন চিড়া, মুড়ি, আকরি, রসগোল্লা, জিলাপিসহ নানান জিনিস। আর সেই মিষ্টি আসেপাশের বাড়িতে বিলি করা হয়। গৃহবধূরা তাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জিনিসপত্রও এখান থেকে কিনে ।
ঐতিহ্যবাহী এই মেলার দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা পন্য নিয়ে আসে।
তাছারা স্থানীয় লোকজনও বিভিন্ন স্টল দিয়ে থাকে । হাজার হাজার লোকজনের সমাগম হয় এই মেলায়।
কথা হয় ওই এলাকার জামাই রাজুর সাথে। তিনি বলেন, এগার বছর আগে এই এলাকার জামাই হয়েছি। আর সাত বছর ধরে প্রতিবছর রংপুর থেকে এই মেলায় চলে আসি।
সিদ্দিক নামে উপর এক ব্যাক্তিও বললেন তার মনের কথা। তিনি বলেন, জামাই মেলায় সময় শশুর বাড়িতে না আসলে সবাই রাগ হয়। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও চলে আসি।
ময়মনসিংহ থেকে আসা আসবাবপত্র ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, প্রতি বছর ময়মনসিংহ থেকে ব্যবসা করতে এ মেলায় আসি। এখানে ব্যবসা ভালো হয়।
এলাকার লোকজন তাদের মেয়ের জামাই, আত্বীয়Ñস্বজনকে আসবাবপত্র উপহার দেয়।
রসুলপুরের বাসিন্দা কথা সাহিত্যিক রাশেদ রহমান জানালেন বৈশাখী মেলাকে জামাই মেলায় রূপান্তরের কথা। তিনি বলেন, এ এলাকার লোকজন জামাই মেলা উপলে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিমন্ত্রণ করে। বিশেষ করে মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে এদিন আসতেই হবে। এই জামাই মেলাকে ঘিরে রসুলপুর ও তার আশেপাশের ৩০Ñ৩৫ টি গ্রামের মানুষের মাঝে এক বৃহৎ উৎসবের সৃষ্টি হয়।
কবে থেকে জামাই মেলা চলে আসছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ এলাকার কেউ এন সঠিক উত্তর দিতে পারে না। তবে শতবর্ষীয়ান অনেকেই বলেছেন তাদের বাবাÑদাদার মুখেও তারা এ মেলার কথা শুনেছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।