আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেক্টর কমান্ডার, বীর উত্তম, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক কেউ বাদ নেই----রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসার শিকার মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ সন্তানরাও

শক্তের ভক্ত, নরমের জম। জেনে গ্যাছে এবার কানা আজম। সরদার আবদুর রহমান : আওয়ামী লীগের বিরোধিতা মানেই স্বাধীনতার বিরোধিতা-এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এক চরম প্রতিহিংসামূলক আচরণ করে চলেছে ক্ষমতাসীন দলটি। এই প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন এবং হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ সন্তানরাও। তাতে তিনি বীর বিক্রমই হোন আর বীর প্রতীকই হন।

এমনকি সেক্টর কমান্ডার হলেও তার রেহাই নেই। এভাবে একের পর এক আওয়ামী বিদ্বেষের কবলে নিপতিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিল, মেজর জয়নুল আবেদীন ও উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান বীর প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম প্রমুখ। আওয়ামী লীগ না করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নামে পৃথক রাজনৈতিক দল গঠন এবং বাকশাল নামক একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান। এই ‘অপরাধে' তাঁর ‘স্বাধীনতার ঘোষক' হিসেবে স্বীকৃতির দাবিটি উচ্চ আদালতে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তিনি আদৌ সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না বলেও এখন দাবি তোলা শুরু হয়েছে।

‘জেড ফোর্স'-এর জিয়াউর রহমানকে কোন কোন আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের চর বলতেও ছাড়েননি। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের ওয়েব সাইট থেকেই জানা যায়, তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা ও পার্বত্য অঞ্চল এবং নোয়াখালি জেলার সমগ্র পূর্বাঞ্চল মিলে গঠিত ১নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। এই সেক্টরের হেড কোয়ার্টার ছিল হরিণা। এখান থেকে জিয়াউর রহমানকে ১১ নং সেক্টরে বদলি করা হয়। এখানে তিনি ২৭ জুন থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

এই সেক্টরের অধীনে ছিল ময়মনসিং ও টাঙ্গাইল এবং রংপুর, গাইবান্ধা, উলিপুর, কামালপুর ও চিলমারী এলাকা। এর হেড কোয়ার্টার প্রথমে ছিল তেলঢালা, পরে তা মাহেন্দ্রগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। একই সেক্টরে ২ নবেম্বর থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার এম হামিদুল্লাহ খান। এর আগে তিনি জিয়ার অধীনে এই সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু নিজেদের ওয়েব সাইটের তথ্য অস্বীকারের চেষ্টা করছে কথিত সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।

হামিদুল্লাহ খান আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরোধিতা করেন বলে তাকেও অস্বীকারের নীতি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগের এই অঙ্গ সংগঠনটি। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে সেক্টরভিত্তিক দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিদের ২২ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জনকে নিয়ে চালানো হচ্ছে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। মেজর জিয়া ‘জেড ফোর্স'-এর অধীন গেরিলা বাহিনীরও নেতৃত্ব দেন। তাঁর অধীনে ছিল ১, ৩ ও ৮ নং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট। তাঁর অধীনে অন্য কমান্ডাররা ছিলেন, মেজর জিয়াউদ্দীন, মেজর সাফায়াত জামিল ও মেজর আমিনুল হক।

মুক্তিযুদ্ধের আরেক সেনানী মেজর এমএ জলিল ভারতীয় আধিপত্যবাদী নীতি এবং মুক্তিযুদ্ধ শেষে ভারতের লুণ্ঠনের প্রতিবাদ করায় বিরাগভাজন হন। তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে নির্বাসিত করা হয়। এমনকি মহাজোটের শরীক দল জাসদ তাদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাকেও মুছে ফেলার চেষ্টায় আছে। উল্লেখ্য, মেজর জলিল মুক্তিযুদ্ধের ৯ নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন ১৭ জুলাই থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তাঁর এলাকা ছিল বরিশাল, পটুয়াখালি, ফরিদপুর এবং খুলনার অংশবিশেষ।

একই সেক্টরে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন মেজর জয়নুল আবেদীন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরোধী বলে তাকে কারান্তরালে ধুঁকে ধঁকে জীবনপাত করতে হয়। সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল এবং মেজর জয়নুল আবেদিন স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশে ভারতের লুণ্ঠনকর্মে বাধ সাধলে তদানীন্তন সরকার ভারতের চাপে তাদের গ্রেফতার করেছিল। মেজর (অব.) জলিল মারা গেছেন আর মেজর (অব.) জয়নুল আবেদিন এখনও ঢাকা জেলের সাত নম্বর সেলে সাধারণ বন্দির জীবনযাপন করে চলেছেন বলে জানা যায়। মেজর এমএ জলিলের নিজ লেখনী থেকেই তাঁর ভারতবিরোধিতার কারণ জানা যায়।

তিনি ‘অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা' নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘‘... এখানে একটা বিষয় সকলেরই পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন এবং তা হচ্ছে স্বাধীনতার সেই উষালগ্নে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের সম্পদ রক্ষা করার যে আগ্রহ এবং বাসনা আমরা প্রদর্শন করেছি তা ছিল আমাদের জাতীয় সম্পদ রক্ষা করারই স্বার্থে কেবল, ভারত বিরোধী হয়ে উঠার জন্য নয়। জাতীয় সম্পদ রক্ষার চেষ্টা কেবল নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমেরই লক্ষ্য, কারো বিরুদ্ধে শত্রুতা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র মোটেও নয়। বন্ধু ভারত এখানে হিসেবে ভুল করেছে আর তাই দেশপ্রেমের পুরস্কার হিসেবে আমাকে যশোর থেকে ‘এমবুশ' করে অর্থাৎ গোপনে ওঁৎ পেতে থেকে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী সশস্ত্র উদ্যোগে গ্রেফতার করে। আমারই সাধের স্বাধীন বাংলায় আমিই হলাম প্রথম রাজবন্দী। ২১শে ডিসেম্বর বেলা ১০টা সাড়ে দশটায় আক্রমণকারী বাহিনীর হাতে বন্দী হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আসল রূপের প্রথম দৃশ্য দেখলাম আমি।

ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর মদদে বাংলাদেশ স্বাধীন করার অর্থ এবং তাৎপর্য বুঝে উঠতে আমার তখন আর এক মিনিটও বিলম্ব হয়নি। ’’ মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমকেও ছেড়ে দেয়নি আওয়ামী লীগ। তিনি আওয়ামী লীগ করেননি, বরং তাদের নানাবিধ গণবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করেছেন বলে তিনি তাদের রোষানলে পতিত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা কৃষি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শওকত মোমেন শাহজাহান তীব্র কণ্ঠে দাবি করেন, ‘কাদের সিদ্দিকী একজন যুদ্ধাপরাধী। তাই তাঁর বিচার হওয়া উচিত।

' সম্প্রতি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার নলুয়া এয়ারফোর্স বাজারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ফাঁসির দাবিতে আয়োজিত এক জনসভায় শওকত মোমেন এ দাবি করেন। যুদ্ধাপরাধীর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের এমপি শওকত মোমেন বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় লুণ্ঠন, ডাকাতি, ধর্ষণ ও মানুষ খুন করেছে তারাই যুদ্ধাপরাধী। যেহেতু কাদের সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইল সোনালী ব্যাংক থেকে ১৯ লাখ টাকা লুট করেছেন, ব্যাংকে রাখা ২০ কেজি স্বর্ণ ডাকাতি করেছেন, করটিয়া ও দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি লুট করেছেন এবং যুদ্ধের সময় নিরপরাধ লোকজনকে হত্যা করেছেন, এ জন্য তিনিও একজন যুদ্ধাপরাধী। তাই তাঁর বিচার হওয়া উচিত। ' যাদবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

মুক্তিযুদ্ধে বীর উত্তম খেতাব পাওয়া কাদের সিদ্দিকীকে ‘যুদ্ধাপরাধী' উল্লেখ করে বক্তব্য দেয়ায় বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এর আগে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ চেয়ারম্যান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘আজ অনেকেই বড় বড় কথা বলছেন এবং মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করার সময় তাদের পাওয়া যায়নি। সরকার একজনকে আইনের হাফ মন্ত্রী বানিয়ে রেখেছে। এই আইন প্রতিমন্ত্রী আইনের ‘অ' জানেন কিনা সন্দেহ।

তার আত্মীয়স্বজন সবাই রাজাকার ছিল। এখন তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের একজন মন্ত্রী। দলে থাকলে মুক্তিযোদ্ধা না থাকলে রাজাকার। ' আরেক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম আওয়ামী লীগের আক্রমণের কবলে পতিত হন সম্প্রতি। কারণ তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেছিলেন।

গত ২৪ নবেম্বর চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের এক নেতার দায়ের করা একটি মানহানির মামলায় চট্টগ্রামের আদালতে হাজিরা দিতে গেলে কর্ণেল অলি আহমদের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তিনি আদালত চত্বরে গেলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আদালত চত্বরে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও এলডিপি কর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ, ভাংচুর এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের কর্মী ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে অলি আহমদ জেলা আইনজীবী সমিতির অফিসে আশ্রয় নেন।

এখানেই শেষ নয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি থেকে এলডিপি সভাপতি অলি আহমদের অপসারণ দাবি করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। কর্নেল অলি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানেই বেঈমান। তারা কথা দিয়ে কথা রাখে না। আগামী নির্বাচনে জনগণ এর জবাব দেবে। ' সাতকানিয়া উপজেলার কেউচিয়া ইউনিয়ন এলডিপির এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

কর্নেল অলি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর কথা বলে জনগণের ভোট নিয়ে প্রতারণা করেছে। এখন দেশের মানুষকে উপোস রেখে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা সম্পদের পাহাড় গড়েছে। আগামী নির্বাচনে জনগণ এর জবাব দেবে। জীবনে আর কখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ' তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকারের মন্ত্রীরা পান-সুপারি চোরদের মতো হয়ে গেছে।

যেখানে পারছে লুটপাটে মেতে উঠেছে। ' এ সময় তিনি নরসিংদীর পৌর মেয়র হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে তাদের দলীয় লোকও রেহাই পাচ্ছে না। তারা নিজ দলের পৌর মেয়রকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষকে অশান্তিতে রেখে তারাও শান্তিতে থাকতে পারবে না। অচিরেই এই সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠবে।

' ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.