সত্য ন্যায়ের সাথে আগামীর পথে বাংলাদশে বর্তমানে কোন ধরনের সরকার ব্যবস্থা চালু আছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে নিচের অংশ টুকু পরূন এবং আপনার মতামত দিন.....................
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের চরম স্বৈরাচারী আচরণের শিকার হয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রাচীন নগরী ঢাকা। জনমত উপেক্ষা করে সরকার সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী পন্থায় ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দ্বিখণ্ডিত করেছে। সর্বস্তরের নগরবাসী, ঢাকার আদি বাসিন্দা, নির্বাচিত প্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের বাইরের সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ—এক কথায় সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের দাবি ছিল ঢাকাকে দুই ভাগ করবেন না। তারা ঢাকাকে বিভক্ত করার প্রতিবাদে সেমিনার, গোলটেবিল, মানববন্ধন, সমাবেশ এবং মিছিল করেছে। টেলিভিশনের টকশোতে বিশিষ্ট নাগরিকরা ঢাকা দ্বিখণ্ডিত না করার পক্ষে জোরালো যুক্তি দেখিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।
কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। কারও কথায় ভ্রূক্ষেপ না করে ঢাকা ভাগের একক সিদ্ধান্তে অনড়-অটল থেকে শেষ পর্যন্ত সরকার ডিসিসি ভাগ করে ছেড়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কারও মতামত নেয়ারও প্রয়োজন বোধ হয়নি। মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সংবাদ সম্মেলন করে শেষ দাবি জানিয়েছিলেন, ‘আমার একটিই আকুতি, ঢাকাকে ভাঙবেন না। মেয়র নির্বাচন দিন, আমি প্রার্থী হবো না।
’ কাউন্সিলররা সংবাদ সম্মেলন ও সমাবেশ করে ঢাকাকে না ভাঙার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ঢাকা ভাগ নিয়ে রাজধানী ঢাকার এমপিদেরও মতামত নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি সরকার। ঢাকাবাসী এ বিভক্তি চায় কি না সে জন্য গণভোট নেয়া হয়নি। ঢাকা সিটি করপোরেশনকে যারা কর দেন, সেই নগরবাসীকে ঢাকায় দুটি সিটি করপোরেশন করার দাবিও তুলতে দেখা যায়নি। বিদ্যমান করপোরেশনের পক্ষ থেকেও দুই ডিসিসির কোনো দাবি তোলা হয়নি।
কোনো বিশেষ বিশেষজ্ঞ কমিটি বা কমিশনও ডিসিসি অর্থাত্ ঢাকা ভাগের ব্যাপারে কোনো সুপারিশ বা পরামর্শ দেয়নি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও ঢাকা বিভক্তির কোনো অঙ্গীকার ছিল না। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক হীনস্বার্থে সরকার ঢাকা দুই ভাগ করেছে।
ডিসিসি দুই ভাগ করার বিলটি সংসদে যে পন্থায় পাস করা হয়েছে, তাও ছিল সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী পন্থায়। গত ২৯ নভেম্বর মঙ্গলবার সংসদে মাত্র চার মিনিটে ক্ষমতাসীন সরকার ডিসিসি ভাগের বিলটি পাস করিয়ে নেয়।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বহুল বিতর্কিত স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) সংশোধনী বিল-২০১১ উত্থাপন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে তিনি বিলটি উত্থাপন করেন। এ সময় সংসদের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। বিলটির ওপর কোনো জনমত যাচাই বা সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়নি। কোনো এমপি এ বিল নিয়ে বক্তব্যেরও সুযোগ পাননি।
শুধু বিল উত্থাপন করে এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেন, নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর জন্যেই ঢাকায় দু’টি সিটি করপোরেশন করা হয়েছে। এরপর তিনি বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে মাত্র ৪ মিনিটের মধ্যেই ক্ষমতাসীনরা কণ্ঠভোটে এটা পাস করে দেন।
গত ২৯ নভেম্বর সংসদে স্বৈরাচারী কায়দায় মাত্র ৪ মিনিটে ঢাকা দ্বিখণ্ডিত করার বিলটি পাসের যে নজির সৃষ্টি হয়েছে, সেটা ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারির কথাই মনে করিয়ে দেয়। তখনও আওয়ামী লীগ সরকারই ক্ষমতায় ছিল। শেখ মুজিব সরকার তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সেদিন চতুর্থ সংশোধনী বিলটিও মাত্র ১১ মিনিটে পাস করে গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশাল শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল।
সেদিন অবশ্য দু’জন এমপি মুজিব সরকারের ওই আচরণের প্রতিবাদ করে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তারা ছিলেন বঙ্গবীর জেনারেল (অব.) আতাউল গনি ওসমানী এবং ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। এবার অবশ্য তাও হয়নি। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের সত্ সাহস দেখাতে কোনো এমপি এগিয়ে আসেননি। সেদিনের চেয়ে কম সময়েই বিলটি পাস হয়েছে।
একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার চতুর্থ সংশোধনী বিলটি পাস হয়েছিল ১১ মিনিটে আর ঢাকা দুই ভাগের বিলটি পাস হয়েছে মাত্র ৪ মিনিটে। এ বিল পাসের মাধ্যমে বিভক্ত হয়ে গেল ঢাকা সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ নামে দু’টি সিটি করপোরেশন যাত্রা শুরু করল। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ঢাকা বিভক্তির বিলে সই করেছেন। এটি এখন আইন আকারে গেজেট হয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
এখন ৯০ দিনের মধ্যে এ দুটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। তার আগে আজ-কালের মধ্যেই সরকার দু’ জন প্রশাসক বসিয়ে দেবেন সেখানে।
ঢাকা দ্বিখণ্ডিত করার সিদ্ধান্তটি যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্ত, সেটা তার কথাতেই মানুষ বুঝতে পেরেছে। সংসদ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি এ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে শেখ হাসিনার চরম স্বৈরাচারী মানসিকতা এবং অহঙ্কারই ফুটে উঠেছে। সংসদের ১১তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি বলেন, ঢাকাকে দু’ ভাগ করেছি, যথেষ্ট টাকা থাকলে চারভাগ করতাম।
এর আগে ২৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের মেয়র আইভীর শপথ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মানুষকে সেবা দিতেই ডিসিসি ভাগ হচ্ছে। যেসব বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক ঢাকা ভাগের সমালোচনা করেছেন তাদেরও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা নির্বাচন করলে ভোট পাবে না, দল করলে সমর্থন পাবে না, কিন্তু ক্ষমতায় বসার খায়েস আছে, তারাই ঢাকা বিভক্তির সমালোচনা করছে।
স্বৈরাচারী কায়দায় ঢাকা বিভক্তির বিরুদ্ধে দেশে জোরালো প্রতিবাদ উঠেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এরই মধ্যে কাল রোববার রাজধানী ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় এলে একীভূত ডিসিসি হবে।
মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, অখণ্ড ঢাকার জন্য আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে ঢাকাকে বিভক্ত করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিসিসি নির্বাচনে বর্তমান মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে পরাজিত করার মতো যোগ্য প্রার্থী আওয়ামী লীগে না থাকায় তারা ঢাকা ভাগ করে ফেলেছে। বিদ্যমান আইনে প্রশাসক নিয়োগের কোনো সুযোগ না থাকায় তারা ঢাকাকে বিভক্ত করে এমন একটা ব্যবস্থা করেছে, যাতে খোকাকে অপসারণ করা যায়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, ঢাকার দু’ ভাগ চিন্তাটি উদ্ভট।
এতে অনেক সমস্যা দেখা দেবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ বলেন, এতে সরকারের প্রশাসনিক খরচ বেড়ে যাবে। ড. শওকত আলী বলেন, জনগণের চাহিদার নিরিখে ডিসিসি বিভক্তির চিন্তা হয়নি, এটি হয়েছে সম্পূর্ণ ওপরের সিদ্ধান্তে। এর খেসারত একদিন দিতে হবে। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ঢাকাকে বিভক্ত না করার জন্য বলেছেন।
কিন্তু সরকার মানুষের অনুরোধ শোনেনি। সব দাবি উপেক্ষা করে স্বৈরাচারী পন্থায় ঢাকা ভাগ করেছে। পৃথিবীর ১০টি প্রাচীন শহরের একটি এই ঢাকাকে জবাই করার মাশুল দিতে হবে। ড. কামাল হোসেন বলেন, ঢাকাকে দুই ভাগ করার মাধ্যমে ঢাকার ঐতিহ্যকে ভাগ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ঢাকাবাসী আন্দোলন গড়ে তুলবে।
প্রয়োজনে দেশের ১৬ কোটি মানুষ আন্দোলনে নেমে প্রতিবাদ করবে।
রাজধানী ঢাকা চারশ’ বছরের প্রাচীন নগরী। একসময় এই নগরী ছিল পৃথিবীর সেরা নগরীগুলোর একটি। এক লাখ সৈন্যসামন্ত ও লোকলস্কর নিয়ে মোগল সুবেদার ইসলাম খাঁ ঢাকায় আসেন ১৬১০ সালে (মতান্তরে ১৬০৮ সালে)। তার সঙ্গে হাতি-ঘোড়া, কামান-বন্দুক সবই আসে।
মোগলরা আসার আগে ফরাশগঞ্জ, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, নারিন্দা, মৈশুণ্ডি, তাঁতীবাজার, কুমারটুলী, পাটুয়াটুলী, শাঁখারীবাজার এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল ঢাকা। মোগল ঢাকা গড়ে ওঠে ধোলাইখালের বাইরে। বর্তমানে ঢাকা উত্তরে গাজীপুরের কাছাকাছি বিস্তৃত হয়েছে। পূর্ব-পশ্চিমেও বাড়ছে। লোকসংখ্যা দেড় কোটির কাছাকাছি।
ঢাকা প্রত্যক্ষ করেছে রাজরাজড়াদের নানা উত্থান-পতন। এই ঢাকায় আছে নানা ইতিহাস, কাহিনী-কিংবদন্তী। সেই ঐতিহ্যবাহী ঢাকার মিউনিসিপ্যালিটিরও আছে একটি গৌরবজনক ইতিহাস। মিউনিসিপ্যালিটিও দেড়শ’ বছরের পুরনো। ঢাকার সার্বিক উন্নয়ন এবং পৌর প্রশাসনের অগ্রগতির ব্যাপারে ১৮৬৪ সালের ৩নং অ্যাক্ট বা আইনটি মাইলফলক।
এই আইনের আওতায় ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সে আইন অনুযায়ী ১৮৬৪ সালের ১ আগস্ট ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি যাত্রা শুরু করে। ১৮৮৫ সালের ২০ এপ্রিল আনন্দ চন্দ্র রায় ঢাকা পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান হন। সেই পৌরসভাই ধীরে ধীরে ঢাকা সিটি করপোরেশনে রূপ লাভ করে। এটাকেই ধ্বংসের অপচেষ্টা চলছে।
ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা নগর সরকার বা মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন করে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে আরও জোরদার এবং জনগণের সেবার মান বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন। সবকিছুই এখন উপেক্ষিত। এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, ঢাকা ৪০ ভাগ হওয়া দরকার ছিল আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা চার ভাগ। এসব কথার মধ্যে যে একধরনের অহমিকা এবং গায়ের জোর ও স্বৈর মানসিকতা কাজ করছে—তা-ই ফুটে উঠেছে। সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, পৃথিবীর অন্যান্য শহরেও নাকি একাধিক সিটি করপোরেশন আছে।
কিন্তু তিনি একটিরও উদাহরণ তুলে ধরেননি। এসব কথা কি জনমুুখী সরকারের কথা? সর্বত্র মানুষের মধ্যে প্রশ্ন—শেখ হাসিনা, সৈয়দ আশরাফরা এমন করছেন কেন? জনগণকে শেখ হাসিনার এমন নিষ্ঠুর অবজ্ঞা কেন? এ দেশ কি তার দেশ নয়?
এতসব পড়ার পর আমার মনে হয়েছে বাংলাদশে বর্তমানে যে বা যারা স্বাশন করছে তাদের হয়তবা মাথার নয়তবা অন্য কোথাও সমস্যা আছে। এখন আপনার মত কি? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।