কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন। খলিল সিরিজ একটা আজাইরা এবং ফাজিল সিরিজ। সিরিয়াসলি না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হল।
আর অন্য গুলার সাথে পরিচিত না থাকলে এই পর্বটা হয়ত বোঝাই যাবেনা। অন্তত খলিল সিরিজ-১ এবং খলিল সিরিজ-১৬ জানা লাগবে।
খলিলের মোবাইলে মেসেজ এসেছে। Khalil I miss u man. মেসেজ কে পাঠিয়েছে কোথা হতে এসেছে কোন হদিস নাই। তবে এই ছোট মেসেজ গল্পে কিছু গুরুত্ববহন করে।
তাই আপাতত ফ্ল্যাশব্যাক।
ইদানিং খলিলের মুখে ড জলিলের কথা বেশ শোনা যাচ্ছে। তা ড জলিলকে গল্পে আনার জন্য বিশেষ ভুমিকা দরকার। ইনি পদার্থবিজ্ঞানের অপটিক্স নামক শাখার উপর গবেষনা করেন। তার পাঠানো ইমেইল দেখা নিয়ে খলিলের সন্ধান পাওয়া গেল।
আমাকে দেখলে খলিল গালি ছাড়া কথা বলেনা। আরামে ঘুমাইতেছিলাম খলিল এসে জোর করে ধরে নিয়ে গেছে। কি জানি ইমেইল দেখতে হবে। তা আমার বাসায় দেখলেও নাকি হবেনা। গেলাম, দেখলাম, ভাবলাম, কিন্তু বুঝলাম না।
- কাহিনি কিরে খইল্লা?
- কাহিনি কি আমি বুঝতাছিনা। জলিল সাহেব ইমেল পাঠাইছেন। আমি বইলা দিছি নট ইন্টারেস্টেড।
- ইমেইলটা আবার ভাল মত পড়লাম। জলিল সাহেব কিছু একটা নিয়ে গবেষনা করতে চান।
ইমেইলের সাবজেক্ট লেখা মিথিলা কেস!!
খলিল বলতে লাগল।
- দেখ জলিল শালায় কোন জায়গা থেইকা ইমেইল দিছে। তাও আবার অশ্লীল কথা কয়। কয় ব্যান-কক!! হালায় ঐখানে কিছু করতে পারতাছেনা দেইখা এখন ঢাকায় আসতে চায়।
কি বলব ঠিক বুঝতে পারলাম না।
খলিল তো খলিল ই। খলিলের মত গাধার পক্ষেই এমন বোঝা সম্ভব।
- আরে গাধা ঐটা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। ঐখানে কক ব্যান হওয়ার কোনো ব্যাপার নাই। ইনি অন্য ব্যাপারে ইমেইল করেছেন।
ইনি অপটিক্যাল ফিজিক্সের অনেক বড় বিজ্ঞানী। খলিল সিরিজ-১ পড়ে জানতে পারছিলেন তোর ঐ ১ সপ্তাহের কথা। সেই ব্যাপারে রিসার্চ করতে এখন তার তোকে দরকার।
- কস কিরে মমিন? সেইটার জন্য তো ধুমকেতু লাগবে।
- আরে উনি সেই জন্যই তো আসছেন।
মেয়েদের গা থেকে কি এমন রশ্মি বের হয়ে তোর চোখে লাগত যে সব মেয়েরা তোর জন্য পাগল হওয়া শুরু করেছিল? জলিল সেই জন্যই আসছেন। যাই হোক তুই সামলা তোর জলিল। আমি গেলাম।
খলিল-১৭ তে আমার ভুমিকা শেষ। বাকিটা খলিল আর জলিল দিয়ে শুরু হোক।
খলিল মাঝরাতে ঘুমাচ্ছিল। কে জানি তখন বলল, ভোর হোল দোর খোল ঐ শালা উঠরে। খলিল ঘুম থেকে উঠে দেখে কবি ঠাকুর বসে আছেন খাটের উপর। মধ্য বয়সী কবি ঠাকুর বসে আছেন। খলিল গুরুদেব গুরুদেব বলে বিষ্মিত হওয়া শুরু করল।
কবি গুরু ম্যাগনিফ্লাইং গ্লাস দিয়ে খলিলকে দেখতে লাগল। খলিল বলল,
-গুরুদেব আপনি নিজের কবিতা ছেড়ে অন্যের কবিতা ইউজ করে আমাকে ঘুম থেকে তুললেন যে? এটা আপনার জন্য মানানসই নয়।
- আমি গুরুদেব হইতে যাব কেন? আমি হইলাম জলিল। ডক্টর জলিল। অবটেইন্ড পিএইচডি ইন অপটিক্স।
দশটা দেশের বিজ্ঞানীরা আমাকে খুঁজতেছে। কিন্তু আমাকে ধরা মুশকিলই না, অসম্ভব!!
- আরে এ কি জ্বালা! এখন আবার ডনের মত কথা বলেন কেন? আপনি এখানে কেন? কি চান?
- কিছু চাই না। ধুমকেতু কেস সল্ভ করতে চাই।
- হুদাই এখনো খলিল সিরিজ-১ নিয়া পইড়া থাইকা লাভ আছে? এরপরে ১৬ টা খলিল হইছে। অবশ্য আসলে ১৫ টা হবে কারন খলিল-৪ বলে কিছু নাই।
- উহু মূল রহস্য ১ এর মধ্যেই বিদ্যমান। সেটা সল্ভ না হলে ভাগ্যের শিকে ছিড়বেনা। যেই ১ সপ্তাহ তোমার দিকে তাকালেই মেয়েরা প্রেমে পড়ত সেই ১ সপ্তাহ ফিরিয়ে আনতে হবে। সেটা কিভাবে সম্ভব?
- দূর তা আমি কি জানি? আপনার কি দরকার?
- আমি অপটিক্স নিয়ে গবেষনা করি। মেয়েদের গা থেকে কি রশ্মি তোমার চোখে পৌছাইত সেটা জানা দরকার।
তার তরংগ দৈর্ঘ্য নিয়ে গবেষনা।
মাঝরাতে জলিল আর খলিল ছাদে গেল। ধুমকেতু না আসলে খলিলের গার্লফ্রেন্ড উইশ পূরন হওয়ার সুযোগ নেই। ধুমকেতু অবশ্য এল। খলিল উইশ করা শুরু করল, ধুমকেতু তখন আকাশবানী দিল,
- লাভ নাই, আমি সেই ধুমকেতু না।
- তুই তাইলে কে?
- আমি হালির ধুমকেতু।
- হ্যালীর ধুমকেতু?
- আরে বাল হ্যালী না। হালি। শেষ যেইবার আইছিলাম। ইভা রহমান ছাদে বইয়া গান গাইতেছিল।
আমার হইছিল মেজাজ খারাপ। আমি “মর হালি”, বইলা চইলা গেছিলাম। সেই থেকে আমি হালির ধুমকেত। বিজ্ঞানী হ্যালী আমারে দূরবীনে দেখছে আর নাম দিছে হ্যালী, তয় আসলে হালির ধুমকেতু।
ধুমকেতু চলে গেল।
খলিল কিছু বলার আগেই জলিল বলল , আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা। খলিল বলল, উফ। সহজ কথা কন পারলে একটু।
জলিল আর কিছু না বলে টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশ দেখতে লাগল। গার্লফ্রেন্ড উইশ পূরন করার ধুমকেতুটা খোঁজা দরকার।
সকাল হওয়ার পর খলিল তার মোবাইল সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে গেল। সেই কাঙ্খিত মেসেজ, খলিল আই মিস ইউ, কোথেকে এসেছে জানার জন্য। ভয়াবহ অবস্থা। মেসেজ এসেছে সুন্দরবন থেকে। জলিলও আবার কম্পাস দিয়ে কি জানি হিসেব করল।
ধুমকেতুটাও নাকি সুন্দরবনের আকাশেই পাওয়া যাবে।
সুন্দরবন প্রবেশেই ব্যাঘাত ঘটল। গাছ থেকে ডাল পড়ল খলিলের গায়ে খলিল মনে করল সেটা সাপ। বাবাগো মাগো করে কোথেকে সে একটা লতা খুঁজে আনল। সেই লতা দিয়ে ডালকে দিল বাড়ি।
লতা তখন কথা বইলা উঠল, গাধা কোথাকার, মানুষ লাঠি দিয়া সাপ মারে আর বলে, সাপও মরল লাঠিও না ভাঙ্গল, আর তুই সাপ দিয়া লাঠি মারতাছস? দিছস আমার কোমড় ভাইঙ্গা!! খলিলের পক্ষেই এমন সম্ভব। যেটাকে সে হাতে নিছে লতা ভেবে সেটাই আসলে সাপ। কিন্তু ডালটা আসল কোথেকে? কিছু দূরে কার্বলিক এসিডের শিষি হাতে করে নিয়ে জলিল আসল, আর শান্ত গলায় উপরের দিকে নির্দেশ করে বলল, আজি ঝরো ঝরো মুখরো বান্দরো দিনে, আজি ঝরো ঝরো মুখরো বান্দরো দিনে। গাছের উপর অনেক গুলা বান্দর আর তারা ডাল মেরেছিল খলিলের গায়ে। ঐদিকে খলিল যেই সাপকে গাছের লতা ভেবেছিল জলিলকে বলল, এক্সকিউজ মি স্যার।
আপনার হাতের পানীয়টা খেয়ে দেখতে পারি? জলিল বলল, অবশ্যই, এটা আপনার জন্যই। সাপ বলল, স্যার আমার নাম নাগরাজ। আপনি বিদেশী দেখে অনেক কিছুই জানেন না। বাংলাদেশে যা পাওয়া যায় সবই নকল। এরোসল দিয়া মশা মারতে যায় সেইটাতে আসলে মশাদের নেশা হয়।
আর বাংলাদেশের কার্বলিক এসিড মানে সাপদের জন্য ওয়াইন। জলিল ভ্রু কুঁচকালো!! আপনারা তাহলে কাকে ভয় পান? স্যার আমাদের যম একজনই আছেন। তিনি সর্পরাজ ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বিশেষ জ্ঞানী। আগুন নিভাতে মাঝে মাঝে নিজ শরীরে কামড় দেন।
ইউটিউবে পাওয়া যায় সেই ভিডিও। আমার আপন খালাতো ভাই ফ্রান্সিস এনাকোন্ডা ভুল বশত তাকে একবার কামড় দিয়েছিল। ফলাফল সুখকর হয়নি। ৫ দিন তীব্র বেদনার সহ্য করার পর ফ্রান্সিসের মৃত্যু হয়। এটা বলেই নাগরাজ কান্না শুরু করে দিল।
খলিল আর জলিল নাগরাজকে ছেড়ে বনের দিকে ঢোকা শুরু করল। খলিলের ধারনা হয় মিথিলা (খলিল সিরিজ-১) অথবা ভূত কন্যা চম্পাবতী (খলিল সিরিজ-১৬) এই মেসেজ পাঠিয়েছে। মেসেজ, মিস ইউ খলিল।
ভেতরের দিকে ঢুকেই বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া গেল। কিন্তু বিজ্ঞানী জলিলের ধারনা এই পায়ের ছাপ বাঘের না।
বাঘের পায়ের ছাপ এত বড় হবেনা। তখন খলিল আর জলিলের সামনে দিয়ে একটি ডাইনোসর চলে গেল। এই বৃহত জিনিস সুন্দরবনে কি করতেছে কে জানে!! তখন পিছন দিয়ে একটি বাঘ আসল। বাঘ এসেই বল, এই তোরা কে? সুন্দরবনকে ভোট দিছিলি? খলিল বলল, ২০ টা দিছিলাম। বাঘ জলিললে বলল, তুই কে? আমি বিজ্ঞানী জলিল।
ধুমকেতুর সন্ধানে আমাদের আগমন। বাঘ হুঙ্কার দিল, আই কে কোথায় আছিস এইটাকে ধর। এইটারে দিয়া পানি টানাটানি করামু। খলিল আর জলিল দেখল প্রায় ৫-৬ টা বাঘ এসেছে। খলিল বলল, টাইগার স্যার।
আমি কি দোষ করলাম? বাঘদের অধিনায়ক বলল, তুই কি দোষ করলি মানে। দোষ তোদের পুরা জাতির। ক্রিকেট টিমের লোগো বানাইছিস আমাদের। ফাজিল কোথাকার। আজকে বাংলাদেশ-ভারত বোর্ডারে আমরাই খেলব।
ভারতের টিম মাঠে এসেছে। আমাদের পানি টানার লোক আর আম্পায়ার পাওয়া যাইতেছেনা। খলিল বলল, আরে আমি তো ভূত কন্যার জন্য আসছি। চম্পাবতী। ঐসব ছাড়।
চল ক্রিকেট দেখ। আজকে বাংলাদেশের বাঘেরা ভারতকে হারাবে। আর তুই আম্পায়ার। আর হা ভয় পাওয়ার কারন নাই। ক্রিকেট উপলক্ষ্যে আগামী ৭ দিন কোন বাঘ কাউকে শিকার করবেনা।
আম্পায়ারিং করে পালায় যা।
বাংলাদেশ বনাম ভারতের সুন্দরবনের বাঘদের ক্রিকেট ম্যাচ হছে। আম্পায়ারিং করার জন্য খলিলকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের দুই বাঘ আলোচনা করছে। একজন বলেছে, আর তো পারা যাচ্ছেনা।
মানুষ সমাজে হিন্দি চ্যানেল পরকীয়া ঢুকাইছে। এখন বাঘ সমাজেও আইসা পরছে। কালকে আমার ওয়াইফের মোবাইলের সেন্ট ম্যাসেজ দেখলাম লেখা, Khalil I miss u man!! ঐটা কোন বাঘকে পাঠাইছে খালি জাইনা নেই।
খলিলের পিলে চমকে গেল। মেসেজ ভুতকন্যা চম্পাবতী বা মিথিলা পাঠায়নায়!! সুন্দরবনের কোন বাঘিনী পাঠাইছে।
খলিল, তুমি পালাও। Khalil I miss u man
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।