কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন।
টিভি চ্যানেল গুলার এখনকার খবর হচ্ছে বিশ্বকাপ এর জন্য পতাকা এত বেশি টানানো হচ্ছে যে প্রয়োজনীয় বাঁশ পাওয়া যাচ্ছেনা।
তসলিমা এক বাসায় কাজ করে।
সেই বাসার আপার ঘর গুছানোর সময় সে দেখল আপার মোবাইলটা আপার খাটের উপর। তসলিমা চিন্তা করল বাসায় আর কে কে আছে। তারপর সে বুঝল মোবাইলটা চুরি করার এখন উপযুক্ত সময় নয়। কারন চুরি করলে দোষ-টা তার ঘাড়েই পরবে। তসলিমা নিজেকে সৎ প্রমান করার কোনো সুযোগটাই ছাড়ে না।
সে মোবাইল-টা নিয়ে বাসার বেগম সাহেবার কাছে গেল। বাসার বেগম সাহেবার নাম তসলিমা বেগম। কাজের মেয়ে আর বেগম সাহেবার একি নাম। এ নিয়েও মহা যন্ত্রনা হয়। মেয়ের মোবাইল দখলে পাওয়ার সুযোগ তসলিমা বেগম ছাড়লেন-না।
মোবাইলের ম্যাসেজ, কল-লিস্ট গুতানো শুরু করলেন। একতা ম্যাসেজ পড়ে তার আক্কেল গুরুম না, আক্কেল ধুম ধাম হয়ে গেল। মোবাইলের প্রথম ম্যাসেজটাতে লেখা টিনা ডার্লিং তোমার সাথে আর্জ়েন্ট কথা আছে।
বিশ্বকাপ এর সময় খলিলের সাথে আমার চরম লাগালাগি (অশ্লীল কিছু নারে ভাই) অবস্থা থাকে। খলিল আর্জেন্টিনা আমি ব্রাজিল।
খলিল আমাকে যা তা বলে গালি দিতে থাকে। আমার ফেসবুক এর ওয়াল এ এসে ফাক (বাংলা তে লিখলে খারাপ দেখায়না) ব্রাজিল লিখে যায়। আমিও কিছু বলতে বাকি রাখিনা। ঠিক এই অবস্থায় খলিল যখন “তসলিমা কুটির” নামক বাড়ির সামনে দিয়ে আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা বলে চিল্লাইতে চিল্লাইতে গেল তখন তসলিমা বেগম এর চিন্তায় প্রেশার নরমাল হয়ে গেল। কারন তসলিমা বেগম এর প্রেশার এমনিতে অনেক লো থাকে তো।
তসলিমা বেগম রাতে তার স্বামী মোতালেব সাহেব কে সব খুলে বললেন। সব ঠিকঠাক মত বললে তো সব ঠিক-ই ছিল কিন্তু তসলিমা বেগম যে প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি চিন্তা করতে অভ্যস্থ। তিনি মোতালেব সাহেব কে বললেন তার মেয়ে টিনা আর খলিল একজন আরেকজনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে আর তারা বাসা পালানোর আর্জেন্ট প্ল্যান করছে। শুনে মোতালেব সাহেবের প্রেশার ও নরমাল হয়ে গেল। মোতালেব সাহেবের প্রেশার এমনিতে সব সময় হাই থাকে।
এই ঘটনাটা যে কি এ্যাফেক্ট করল কে জানে!! হাই থেকে নরমাল হয়ে গেল। পরেরদিন যখন খলিল আর্জ়েন্টিনা এর পতাকা কিনতে গেল তখন খলিল এর মোবাইলে তসলিমা বেগম ফোন দিল। তাদের বাসায় যেতে বলল। খলিল তখন পতাকা কিনে তার উপর আর্জেনটিনা আমার জানের জান লিখে বাসায় ফিরল। বাসায় ফিরে আমাকে ফোন দিয়ে বলল, আজকে সে নাকি আমার বাসায় আসত কিন্তু যেহেতু আমার বাসায় ব্রাজিলের পতাকা তাই সে আসেনায়।
এমন-কি সে নাকি আমাকে নাস্তানাবুদ করার জন্য আমি আমার দেওয়ালে ব্রাজিল লিখসিলাম সে “জিল” শব্দটা মুছে দিয়ে আসছে। তারপর আরো উত্যক্ত বাক্যালাপ শেষ হওয়ার পর খলিল গেল তসলিমা কুটির গেল। তসলিমা কুটির যাওয়ার আগে খলিল যখন তার পতাকাটা বাইরে রেখে গোসল করতে গেল তখন আমি তার পতাকা নষ্ট করার জন্য আর্জেন কথাটা উঠায় দিয়ে আসছিলাম। “ন” আর “ট” যে যুক্তাক্ষর হয় গাধাটা দেখি এইটাও জানেনা!! খলিল ঠিক করসে সে যেখানেই যাবে আর্জেন্টিনা এর পতাকাটা নিয়েই যাবে। তসলিমা কুটির এ সে যখন যায় তখন পতাকাটা নিয়েই গেল।
আর পতাকায় লেখাই আছে “টিনা আমার জানের জান” তা দেখে তসলিমা কুটির এর কারো কোনো সন্দেহ থাকলোনা। মোতালেব সাহেব আর খলিল মুখোমুখি বসা। তারপর তসলিমা বেগম আসল, খলিল কে বললেন, বাবা টিনা কে তুমি কতদিন ধরে চিন? খলিল বলল, যেইদিন ফাহাদ এর সাথে তার ছবি ইন্টারনেট এ ছাড়া হইসিল সেইদিন থেকেই চিনি। তসলিমা বেগম কিছুই বুঝলেন-না, তার প্রেশার আবার নরমাল হয়ে গেসে, কিসের ছবি!! ফাহাদ কে? মোতালেব সাহেবের প্রেশার বরাবরের মতই হাই, আরে না বাবা ঐ টিনা আমার মেয়ে না। তুমি ইস্ট ওয়েস্ট এর টিনা এর কথা বলছ তো।
না না সে না। তসলিমা বেগম এর প্রেশার এখন পুরাই নরমাল, মোতালেব সাহেব কে বললেন,তু তু তুমি জান কিভাবে? তুমি কি দেখেছ নাকি!! মোতালেব সাহেব ঢোক গিললেন, ইয়ে আমরা কাজের কথায় আসি। বাবা তুমি তো আমাদের পাড়ায় অনেক দিন ধরে আছ। তা টিনা কে কেমন ভাবে চিন? খলিল বলল, মেসি আর ম্যারাডোনা ছাড়া এই পৃথিবীতে ফুটবল কেউ পারেনা। টিনাও পাড়েনা।
আমি গেলাম। আমার পতাকাটা টানাইতে হবে!! সবাই আবার খেয়াল করল পতাকায় লেখা “টিনা আমার জানের জান”। তসলিমা বেগম এর প্রেশার আরো নরমাল। তিনি মনে করলেন মেসি কোনো মেয়ের নাম। খলিল একি সাথে টিনা এবং মেসি দুইজন এর সাথে প্রেম করে।
খলিল বাসা থেকে বের হয়ে পতাকা টানানোর জন্য বাঁশ আনতে গেল। আনতে মানে খুঁজতে গেল। অনেক্ষন ধরে খুঁজেও বাশ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যারাডোনাকেই ফোন দিল। ম্যারাডোনা খলিল এর ফোন পেয়ে একটু বিরক্ত হইল, খলিল আমি আর ডুঙ্গা রিলাক্স করার জন্য একসাথে হ্যান্ডবল খেলতেসিলাম। পা দিয়ে একটা গোল দিসি দেইখা ডুঙ্গা খেইপা গেসে।
ওরে যতই বলি ঐটা আমার পা না ইশ্বর এর পা ও ততই বলে খেলমু না। এইসব পোলাপাইনের মত আঁচরন করলে কি খেলা যায় কও? তুমি বাঁশ পাইতেসনা চিন্তা কইরোনা, মিলিতো রে তো ঠিক করসি নামামু না ওড়ে দিয়া তোমারে একটা বাঁশ পাঠায় দিতেসি।
ম্যারাডনা মিলিতো রে দিয়ে কখন বাঁশ পাঠায় সেটার কি কোনো ঠিক আসে!! তাই খলিল বাঁশ খুঁজতে আরো বিভিন্ন জাইগাতে গেল। কোথাও কিছু না পেয়ে আমার বাসার ব্রাজিল এর পতাকাটা খুলে আমার বাঁশ টা নিয়ে গেল। আমি তখন ঘরের মধ্যে থেকে দৌড়ায় যে যাব সেই সুযোগ টাও দেয় নায়।
পুরা শহরেই মনে হয় বাঁশ এর আকাল পরসে। খলিল বাঁশ নিয়া দৌড় দিসে আমিও ওর পিছে পিছে দৌড় দিলাম ঠিক তসলিমা কুটির এর সামনে এসে দুইজন বাঁশ এর দুই মাথা ধইরা টানাটানি করতে লাগলাম। খলিল বলতে লাগল, আর্জেন্টিনা ঝুলামু, বাঁশ দে, বাঁশ দে......... আবারো তসলিমা বেগম এর প্রেশার নরমাল হওয়ার মত অবস্থা, ঠিক তখনি টিনা তসলিমা কুটির থেকে বের হয়ে আসল। এই যে এগুলা কি করতেসেন আপনারা আশ্চর্য!! টিনাকে দেখে আমি খলিল দুইজন ই পুলকিত হলাম। শুনুন এই বাঁশটা আমার লাগবে।
আমি বললাম এই বাঁশ শুধু কাকার, খলিল বলে এই বাঁশ সুধু মেসির। টিনা বলে এই বাঁশ কার সেটা বুঝাচ্ছি। আসেন দুইজনি আমার সাথে। টিনা বাঁশটা আমাদের দুইজন কে বহন করে নিয়ে জেতে বলল। একটা কীন্ডারগার্টেন স্কুল এ আমরা ধুকলাম।
টিনা বলল, বাচ্চারা দেশের পতাকা লাগানোর জন্য বাঁশ পাচ্ছেনা আর আপানার আর্জেন্টিনা ব্রাজিল নিয়ে আছেন!! লজ্জা করেনা! যান বাংলাদেশ এর পতাকা লাগান। আমরা মাথা নিচু করে বাংলাদেশ এর পতাকা লাগালাম। তারপর পতাকা উঠানোর পর থেকেই সেটা পতপত করে উড়তে লাগল। বড় ভাল লাগল। ছোট বাচ্চারা গান গাইতে শুরু করল, এমন দেশটি কোথাউ খুঁজে পাবে নাকো তুমি.........
টিনা এর সাথে যার আর্জেন্ট ব্যাপার নিয়ে কথা হচ্ছিল সেটা আসলে স্কুল এ পতাকা ঝুলানো নিয়েই।
বাঁশ যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সারা দেশ এ বাঁশ এর এখন বড়ই আকাল এখন। টিনা বাচ্চাদের এই স্কুল এর টিচার।
এইবার খলিলের বাসার ছাদে রাতে আমিও ছিলাম। অন্য সিরিজ গুলার মতই এবারো খলিলের টিনা কে বেশ ভাল লাগল।
তবে এইবার একদম গল্পের শেষে। ছাদে অনেক মশা কামরাচ্ছিল আমাকে। খলিল কে বললাম চল নিচে যাই। খলিল বলে আরে দূর মশা আমাকে কামরায় না। আমি বললাম, ক্যান!! তোকে কামড়াবে না ক্যান।
তারপর খেয়াল হল সেটাই স্বাভাবিক। কারন মেয়ে মশা গুলাই তো কামড়ায়। আর মশার মেয়ে জাত ও খলিলের ধারে কাছে আসতে চায় না। মজা তো। কি আর বলব, খলিল তো খলিল ই ।
আগের গুলার লিঙ্ক
খলিল ও তার গার্লফ্রেন্ড উইশ (খলিল সিরিজ- ১)
খলিল ও তার ম্যাজিক আপেল (খলিল সিরিজ-২)
খলিল ও তার লিমা দেব (খলিল সিরিজ-৩)
খলিল গেল ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল ও কলেজ (খলিল সিরিজ-৫)
খলিলের হইতে হইতেও হইলনা (খলিল সিরিজ-৬)
খলিল ও লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার (খলিল সিরিজ -৭)
খলিল আইডেন্টিটি (খলিল সিরিজ -৮)
খলিল সুপ্রিমাসি (খলিল সিরিজ -৯)
খলিল আল্টিমেটাম (খলিল সিরিজ-১০)
খলিল সিরিজ এর আগে ভাল লেগে থাকলে ফেসবুকে খলিল সিরিজের ফ্যান পেজ এ একটা লাইক দিয়েন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।