i am a simple man.
অধিকাংশ কর্মজীবী নারীর যাতায়াতে একমাত্র যান বাস। এক্ষেত্রে প্রতিদিনই তাঁদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। নারীদের জন্য আলাদা বাস চালু এবং বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে এই দুর্ভোগের সমাধান দেখছেন কেউ কেউ। লিখেছেন রাহাতুল রাফি
সোমা আক্তারের অফিস মোহাম্মদপুর। বাংলামোটর থেকে লোকাল বাসে যাতায়াত করেন তিনি।
সময়মতো অফিসে পেঁৗছানোর জন্য একটু আগেই বেরিয়ে পড়েন বাসা থেকে। বাংলামোটর মোড়ে বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বাসে উঠতে পারেন তিনি। বাস আসে একটু পর পরই। সব বাসেই উপচে পড়া ভিড়। ভিড়ের মধ্যে হুড়মুড় ও ঠেলাঠেলি করে কয়েকজন উঠেও পড়েন।
তিনি ওভাবে উঠতে পারেন না বলে প্রায়ই দেরি হয়ে যায় তাঁর। প্রতিদিন বাসে অফিসে যাতায়াত করেন মালিবাগের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, 'আর দশটা পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাসে চড়তে হয়। আসন না পেলে বাসের ভেতরে কৌশলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বাসে ওঠা ও নামার সময় শরীর বাঁচিয়ে চলতে হয়।
প্রতিদিন এভাবে বাসে অফিসে যাতায়াত এক বিভীষিকা। '
পশ্চিম রামপুরার নিলুফা আক্তার বলেন, 'লোকাল বাসের হাতল ধরারও জো নেই। আর কাউন্টার বাসে থাকে লম্বা লাইন। উপচে পড়া ভিড় তো আছেই। ' মোহাম্মদপুরের ফাতেমা জান্নাত বলেন, "লোকাল বাসের অনেক হেলপার তো অনেক সময় বাসে উঠতেই দেয় না।
মুখের ওপর শুনিয়ে দেয়, 'বাসে মহিলা উঠাই না। মহিলা উঠলেও ঝামেলা, নামতেও ঝামেলা। ' এবার বোঝেন আমাদের অবস্থা। নিজেদের তখন মানুষ ভাবতেও কষ্ট হয়। "
ভুক্তভোগী সোমা, মনোয়ারা বা নিলুফার মতো অসংখ্য কর্মজীবী নারীর প্রতিদিন অফিসে যাওয়া-আসার চিত্র এমনই।
সরকারি-বেসরকারি অফিসে বিভিন্ন ছোট-বড় পদে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। দায়িত্ব পালনে রাখছেন মেধার স্বাক্ষর। সবার বাসা তো আর অফিসের কাছাকাছি নয়। যাঁদের বাসা দূরে, তাঁদের অনেকেরই অফিসে আসা-যাওয়ার বাহন হলো বাস। হোক সেটা লোকাল বা কাউন্টার বাস।
বাস মালিক, শ্রমিকদের কথা
হেলপাররা নারীদের অনেক সময় বাসে উঠতে দেয় না_এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন 'চিড়িয়াখানা এঙ্প্রেস লিমিটেড' পরিবহনের চালক মো. লিচু মিয়া ও হেলপার মন্তু মিয়া। তাঁরা বলেন, 'বাসে সিট খালি না থাকলেও মহিলাদের বাসে উঠালে অন্য পুরুষ যাত্রীরা আমাদের ধমক দেন। আর মহিলা যাত্রী তো অনেক কম। তাঁদের জন্য আলাদা কয়েকটি সিট তো আছে। ' গুলিস্তান থেকে আবদুল্লাহপুর চলাচলকারী ৩ নম্বর লোকাল বাসের শাহিন মিয়া নামে একজন হেলপার বলেন, 'পুরুষ মানুষগো সাথে মহিলাদের লোকাল বাসে ওঠা বিরাট ঝামেলার ব্যাপার।
এত যাত্রীর ভিড়ে মহিলারা তো বাসে উঠতেই পারে না। ' গুলিস্তান এয়ারপোর্ট মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন জানান, প্রতিদিন যে মা-বোনরা যাতায়াত করেন, তাঁরা অনেক সময় দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন সত্যি। বাসেও অনেক ভিড় থাকে। অনেক সময় বসার সিট পান না। কোনো কোনো সময় দেখা যায়, বাসে কোনো মহিলা যাত্রীই থাকে না।
মহিলা যাত্রী তো কম। তিনি আরো জানান, বিআরটিসি একবার নারীদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু যাত্রীর অভাবে সেই বাসচলাচল পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিআরটিসি সফল হলে পরে তারাও নারীদের জন্য আলাদা বাসের কথা ভাবতেন বলে জানান।
আলাদা বাসই কী সমাধান?
নিত্যসঙ্গী এই দুর্ভোগ থেকে নারীরা মুক্তি চান।
অনেকেই বলছেন, নারীদের জন্য আলাদা বাস চালু করলেই এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন নারীরা। মালিবাগের তাসলিমা বেগম বলেন, 'নারীদের জন্য ঢাকার সব রুটে যদি কয়েকটি আলাদা বাসের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে অন্তত অফিসে যাওয়ার আগে এই হুড়োহুড়ি থেকে রক্ষা পেতাম। অফিস শেষে শান্তিতে বাসায় ফিরতাম। ' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী লায়লা নূর তানজু বলেন, 'নারীদের প্রতিদিনের দুর্ভোগ লাঘবে আলাদা বাস চালুই সমাধান। ' তবে অনেকেই বাসে নারীদের জন্য আসনসংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেছেন।
বাসের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাবও করেছেন কেউ কেউ। 'কয়েকটি কাউন্টার বাসে প্রতিবন্ধী ও নারীদের জন্য ৯টি সিটের কথা বলা আছে। বাসের ৪০-৫০টি সিটের মধ্যে মাত্র ৯টি সিট কিছু্ই নয়। তাই বাসে নারীদের জন্য সিটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। ' বলেন শাহবাগের শিল্পী সাহা।
বাংলাদেশ টেঙ্টাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী লামিয়া জানান, 'আলাদা বাস নয়, বরং বাস এবং সিটের সংখ্যা বাড়ালে নারীদের দুর্ভোগ কমবে। '
বিআরটিসির মুখোমুখি
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের (বিআরটিসি) ঢাকার বিভিন্ন রুটে কয়েক দিন আগে নারীদের জন্য আলাদা বাস চালু করেছিল। বিআরটিসির মিরপুর টু আজিমপুর রুটের দুটি মহিলা বাসের ইজারাদার ছিলেন মো. সুজন। তিনি জানান, মিরপুর টু আজিমপুর রুটে সকাল ও বিকালে নারীদের জন্য দুটি বাস চালু করা হয়েছিল। কিন্তু বাসে পর্যাপ্ত যাত্রী ছিল না।
ফলে লোকসানের কারণে মহিলা বাস বন্ধ করে দেয়। তিনি জানান, 'প্রচারণা ভালো হলে হয়তো বাস বন্ধ করতে হতো না। ' বিআরটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মেজর কাজী শফিক উদ্দিন জানান, 'মিরপুর টু আজিমপুর রুটে যাত্রী কম থাকায় ওই রুটে বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে খিলগাঁও-তালতলা-মতিঝিল-গুলিস্তান রুটে সকালে ও বিকালে নারীদের জন্য তিনটি বাস চলছে। অন্যান্য রুটেও যদি নারীদের বাসের চাহিদা থাকে, তাহলে আরো বাস
চালু করা হবে।
'
সম্ভাব্য সমাধান
'নারীদের জন্য পাবলিক বাস অপ্রতুল' উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ মো. শাইখ ইমতিয়াজ কতগুলো বিষয় নিশ্চিত করার কথা বলে কিছু বিকল্প ব্যবস্থার কথাও বলেছেন।
* নারীদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নারী বাসের হেলপার বা কন্ডাক্টর নারী হতে হবে।
* কর্মজীবী নারীরা নিজেরাই বিকল্প ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। একই এলাকায় বাসা বা অফিস করেন_এমন নারীরা মাসকাবারি বন্দোবস্তে মাইক্রোবাস, টেম্পো বা সিএনজি ভাড়া করে মাসান্তে ভাড়া ভাগ করে দিতে পারেন।
এতে কষ্ট কম হবে, খরচও খানিকটা বাঁচবে।
* প্রতিটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নারীদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা করতে পারে।
* যেসব প্রতিষ্ঠানে নারীরা কাজ করছেন সেসব প্রতিষ্ঠান অফিসে যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা করতে পারে।
* যে পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলো আসছে, যেমন_ মেট্রোরেল, সেগুলোতে নারীদের জন্য আলাদা সিটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
* পাবলিক বাসে নারীদের জন্য সংরক্ষিত সিটগুলোতে যেন নারীরা বসতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
* পাবলিক বাসের দুটি গেটের একটি শুধু নারীদের ব্যবহারের জন্য রাখা যেতে পারে।
(সূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ Click This Link) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।