আমাদের দেশে গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক হিসাবে যেসব স্থান বিখ্যাত তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হল মহাস্থানগড়।
বগুড়া সদর থেকে কয়েক মাইল পশ্চিমে বগুড়া-রংপুর ও বগুড়া-জয়পুরহাট সড়কের অর্ধমাইল দূরে মহাস্থানগড় অবস্থিত। অদূরেই করতোয়া নদী। এর আয়তন প্রায় ১ বর্গমাইল। উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৫,০০০ ফুট।
পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৪,৫০০ ফুট। এর চারপাশ উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। পাশের ভূমি থেকে দেয়াল ১৫ থেকে ৩৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু। এটি ছিল একটি দুর্গ নগরী। দেয়ালের ভেতরে সারা এলাকা জুড়ে প্রাচীনকালে অসংখ্য দালান-কোঠা বিশেষ করে বৌদ্ধ ও হিন্দু যুগের বিভিন্ন মন্দির ও মঠে পূর্ণ ছিল।
তবে এর ভেতরে যেসব দর্শনীয় স্থান প্রত্নতাত্ত্বিকরা খনন করে আবিষ্কার করেছে তা হলো-মনির কোনের বুরুজ, বৈরাগী ভিটা, পরশুরামের বাড়ি, জীয়ত কুণ্ড, মামকালীর কুণ্ড, খোদ্যর পাথর ভিটা, সুলতান বল্খীর মাজার ইত্যাদি।
মহাস্থানগড়ের বয়স প্রায় আড়াই হাজার বছর বলে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা অনুমান করেন। এটি খননের ফলে এখানে একটি প্রাচীন শিলালিপি পাওয়া গেছে যার বয়স যীশু খ্রিস্টের জন্মের ৩০০/৪০০ বছর আগের বলে ধারণা করা হয়। ব্রাহ্মী অক্ষরে খোদিত এ শিলালিপি রাজা আশোকের আমলের। জানা মতে, এখানে ২৫ ফুট নিচে প্রথম দালান-কোঠা নির্মাণ শুরু হয় এবং পর পর ১৭ বার বাড়িঘর বা দালান-কোঠা নির্মাণ করা হয়।
এখানে প্রচুর প্রাচীন মুদ্রা পাওয়া গেছে যাদেরকে বলা হয় ছাপাযুক্ত ও ছাপা ঢাকা মুদ্রা। ঐতিহাসিকরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, এ সব মুদ্রা খ্রীস্ট জন্মের ২০০ থেকে ৪০০ বছর আগে ব্যবহূত হত। এছাড়া এখানে এন. বি. পি নামক এক মূল্যবান প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে এবং এর সাথে পাওয়া গেছে একপ্রকার মূল্যবান পাথরের গুটিকা। এছাড়াও এখানে একটি মাটির হাঁড়িতে সুলতান সামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ্ (১৩৪২-৫৭) থেকে শুরু করে সুলতান শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ্ (১৪৭৬-৮১) পর্যন্ত বিভিন্ন সুলতানের ১৮টি মুদ্রা পাওয়া গেছে। এরপর প্রকৃতির কোন কারণে এই স্থান পরিত্যক্ত হয়।
ধুলোবালি জমে জমে উঁচু ঢিবিতে পরিণত হয়। এভাবে একসময় গুরুত্বপূর্ণ দুর্গনগরী মহাস্থানগড় পঞ্চদশ শতকের পর লোকচক্ষুর অন্তরালে হারিয়ে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।