আমার চারপাশে মুঠো মুঠো শুন্যতা...অন্ধের মত হাতড়ে বেড়াই পথ...বৃত্তের পরিসীমা এসে কেন্দ্রে মিলে গেল নির্দ্বিধায়...সমাধিতে একটা চতুর্ভুজ এপিটাফ...দুর্বোধ্য হায়ারোগ্লিফিক্স এ কিছু 'ডেথ কোট'...চোখের সামনে ক্রস-ওয়ার্ড পাজল...জানা সমাধান একটাই...মৃত্যু !! জোছনা রাত। অদ্ভুত একটা আবেদন থাকে জোছনা রাতের। কিছু জোছনা বিলাসি মানুষ এমন রাতে হাটতে বের হয়। শাদ এমনই একজন। অবশ্য জোছনা রাত বলেই নয়, মাঝে মাঝেই হাইওয়েতে একা একা হাঁটে।
মাঝ রাতে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটা একটা নেশার মত শাদের কাছে। গাড়ি থাকে না তা না, তবে মাঝখানে হাটতে অসুবিধে হয় না।
আজকেও তার ব্যাতিক্রম ঘটছে না। রাস্তার দু’পাশ দিয়েই মাঝে মাঝে গাড়ি ছুঁটে যাচ্ছে।
পূর্ন চাঁদ আকাশে, কিন্তু প্রচুর মেঘ।
চাঁদটা বেশীরভাগ সময়ই ঢাকা থাকছে।
রাস্তায় হাঁটছে শাদ। চাঁদটা এখনো মেঘে ঢাকা। অন্ধকার আর আলো একই সাথে মিশে অদ্ভুত একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আকাশের মেঘগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ বিভ্রান্ত।
চাঁদকে ঢেকে দেয়ার ষড়যন্ত্রে মগ্ন বিভ্রান্ত মেঘদল। কিন্তু মেঘে ঢাকা চাঁদ হতে কেমন যেন একটা হালকা আভায় আকাশটা আলোকিত হয়ে আছে। আকাশটাও কি বিভ্রান্ত ??
ও নিজে যে বেশ বিভ্রান্ত সেটা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না।
মনের মধ্যে কেমন যেন একটা পাথর আটকে আছে ওর। আজ সন্ধ্যা থেকেই এই অনুভূতিটা ভর করে আছে মনে।
কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে।
হঠাৎ তমার কথা মনে পড়ল। কথা বললে ভালো লাগতে পারে এই ভেবে মোবাইল বের করে তমাকে কল দিল ও। ওপাশে একবার রিং পড়ার সাথে সাথেই কল রিসিভ করলো, যেন কলের অপেক্ষাতেই ছিল।
এত রাতেও জেগে আছে !!! অবাক লাগল খুব।
”হ্যালো !!” -তমার সব সময়ের হাসিখুশি মিষ্টি কণ্ঠ।
“হ্যালো, শর্মি আছে ?”
“শর্মি মানে ?? তার মানে কি তুমি শর্মিকে কল দিচ্ছিলে ??” -কিছুটা অভিমান আর রাগ মেশানো স্বর,
“শর্মি নেই ?”
“তুমি ভালো করেই জানো এটা শর্মির নাম্বার না। এটা___”
“টুনটুনির নাম্বার। “
“এগুলোর মানে কি বলবা ?? শর্মিকে খুজছিলে, আমি লাইন কাটছি, এতই যখন শখ তখন শর্মির সাথেই কথা বলো। ”
“উহু, লাগবে না।
”
“কেন ??”
“কোন মানে নাই। ”
“তাহলে ?? শর্মিকে এত রাতে কেন ??”-কণ্ঠে চাপা একটা রাগ।
“হাঃহাঃহাঃ। তোমাকে রাগানোর জন্য। “
“হাসবে না !! আমি রাগলে বুঝি তোমার ভালো লাগে ??”
”উহু, মোটেই না।
রাগলে তোমাকে পাকা টমেটোর মত ভয়ংকর লাগে। ”
কাঁচ ভাঙ্গার মত রিনিঝিনি মিষ্টি হাসি ভেসে আসে, “পাকা টমেটো বুঝি ভয়ংকর। “
“হুম, ভয়ঙ্করই তো, বিশেষ করে স্টেজে হেড়ে গলায় গান গাওয়ার সময়। “
“অদ্ভুত, তুমি তো আমাকে দেখই নি শাদ, কিভাবে জানো যে রাগলে আমাকে ভয়ংকর লাগে ??”
“কথা বলতে বলতে তোমার একটা ছবি একেছি, সেই ছবিটা রাগলে পাকা টমেটোর মত ভয়ংকর। আর হাসলে হুতোম প্যাঁচার মত সুন্দর।
“
“কি ? হুতোম প্যাঁচার মত সুন্দর ??"
"হুম। । হুতোম প্যাঁচার মত... রাতের বেলা আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর পাখি প্যাঁচা। প্যাঁচার ডাক শুনেছ কখনো ?? আমার খুব সুন্দর লাগে। "
"মানে কি ?? আমার কণ্ঠ প্যাঁচার ডাকের মত ??"
"ইনটেলিজেন্ট গার্ল , ধরে ফেলেছ ।
"
"ইনটেলিজেন্ট ?? তোমাকে এখন যদি সামনে পেতাম না , মাথা ফাটিয়ে দিতাম। ইডিয়েট কোথাকার। “
"তুমি কিন্তু রেগে যাচ্ছো। "
"আমি রাগী নি। " -কণ্ঠের রাগ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।
"রেগেছো। তোমার গলা শুনেই বুঝতে পারছি। রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। "
"বললাম তো রাগি নি !"
জবাব দিলো না শাদ। চুপ করে আছে।
"কি ব্যাপার, চুপ করে আছো কেনো ??"
তীব্র গতিতে একটা গাড়ি পাশ কাটিয়ে গেলো। হর্ন দিলো একবার।
আবার তমার গলা ভেসে এলো, কণ্ঠের রাগ উধাও। কিছুটা উদ্বিগ্ন,
“এই কোথায় তুমি, রাস্তায় নাকি ?”
“হুম, মাঝরাস্তায়, সাদা দাগের উপর...”
“আচ্ছা তুমি কি পাগল ??”
“জন্ম থেকেই। “
“এভাবে রাস্তায় হাঁটার কোন মানে হয় ??”
“হুম, মানে হয়।
এভাবে হাটতে আমার ভালো লাগে। “
“এখন রাত কটা বাজে খেয়াল আছে ??”
“আমার কাছে সময়টা গৌণ। কয়টা বাজে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। “
“জানি বাবা জানি, চিনি তো তোমাকে, কিন্তু রাস্তার মাঝখানে কেনো ? আচ্ছা বাদ দিলাম, এখন তুমি ঘরে যাও, ঘরে গিয়ে ঘুমাও, প্লিজ শাদ। “
“হুম, যাবো, একটু পর...”
ঠিক ঐ মুহুর্তে সামনের বাঁক ঘুরে বেরিয়ে আসে একটা বিশালাকৃতির ট্রাক।
স্বাভাবিকের চেয়ে গতি একটু বেশি বলেই মনে হলো শাদের কাছে। তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে একচোখা সাইক্লপস। একটা হেডলাইট ভাঙ্গা ।
হেডলাইটটা যেন সম্মোহিত করে ফেলল ওকে। সম্মোহিতের মতই তাকিয়ে আছে।
বিকট শব্দে হর্ন দিলো ট্রাকটা। মাঝরাস্তায় ওকে দেখতে পেয়েছে।
“কি ব্যাপার ?? কই তুমি ?? হর্ন শুনলাম মনে হয়। “
“একটা ট্রাক, পাশ কাটিয়ে যাবে বোধহয়। “
“ট্রাক ?? তুমি এখনো রাস্তার মাঝখানে নাকি ??”
জবাব দিলো না শাদ।
এখনও সম্মোহিতের মত তাকিয়ে আছে।
দুরত্ব কমে গেছে অনেক। আরও কমছে। সতর্ক করছে ওকে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়।
আরও দুই বার ট্রাকের বিকট হর্ণের শব্দ...
“শাদ, এই শাদ, কথা বলছো না যে, কই তু............??”
প্রশ্নবোধকটা বাতাসেই ভেসে থাকে।
এর বেশী আর শোনা হয় না। রাতের নির্জনতা ভেদ করে ভেসে আসে সংঘর্ষের জান্তব শব্দ। মোবাইলটা ছিটকে পড়ে দূরের একটা ঝোপে। ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে যন্ত্রটা। ও প্রান্তে বোকার মত নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে তমা।
হঠাৎ করেই মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে চাঁদ। পুর্ণ চাঁদ। চাঁদের আলোয় ভেসে যেতে থাকে একটা রক্তাক্ত ছায়া। রুপালি আলোয় লাল রক্তগুলোকে কেমন যেন কালো দেখাচ্ছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।