আমি একজন সাধারন মানুষ। প্রতিদিন আমাকে মগবাজার ওয়্যারলেস থেকে বাংলামটর যেতে হয়। আমার অফিস বাংলামটর হওয়ার কারনে আমাকে ওয়্যারলেস টু বাংলামটর যেতে হয়। নিজস্ব গাড়ি না থাকার কারনে আমাকে রিক্সা ও পায়ে হেটে অফিসে পৌছাতে হয়। ওয়্যারলেস থেকে মগবাজার হেটে যেতে হয় কারন রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ।
সরকারের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পায়ে হেটে রওনা হই। মগবাজার চৌরাস্তা ক্রশ করে ওপারে গিয়ে রিক্সায় করে যেতে চাইলে, আজকাল রিক্সা পাওয়া দুরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিওবা পাওয়া যায় তার অধিকাংশই ১৫ টাকা না হলে যাবে না। অগত্যা পায়ে হেটে রওনা হতে হয়। মগবাজার থেকে বাংলামটর যাবার রাস্তাটি সরকারী।
সঙ্গত কারনে এ রাস্তায় চলাচলের নাগরিক অধিকার আমার আছে। আমার জানা মতে, রাস্তা দুই ভাগে তৈরি হয়। একটা যানবাহন চলাচলের জন্য। আর অন্য অংশ সাধারন মানুষের পায়েহাটার জন্য। এটাকে ফুটপাথ বলা হয়।
এ রাস্তার ফুটপাথ দখল কওে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। আর রাস্তা জুড়ে গাড়ি ডিসপ্লে। এমন অদ্ভুত দৃশ্য যদি দেখতে হয়, তবে মগবাজার থেকে বাংলামটরের রাস্তায় একবার আসতে হবে। এ রাস্তায় হাটার সময় দুপাশে একটু মনযোগ দিয়ে খেয়াল করতে হবে। চোখে পড়বে সারি সারি প্রাইভেট কার, মটর সাইকেল।
কোথাও কোথাও মটর সাইকেলের শো-রুম ও রয়েছে। এসব শো-রুমের মটর সাইকেলগুলো রুমের চেয়ে বাইরে ডিসপ্লে করা হয়েছে বেশি। দেখে মনে হতে পারে এটা নিশ্চয়ই মরট সাইকেল পার্কিং। সরকারী রাস্তার অধিকাংশ অংশ জুড়ে এসব মারটসাইকেল ডিসপ্লে করা আছে। সরকারী রাস্তা বন্ধ করে কে বা কারা এসব ব্যাবসা করছে এবং কেন করছে তা প্রশাসন জানেন।
অথচ প্রতিদিন দুই থেকে তিন গাড়ি পুলিশ এখানে ডিউটি করে। র্যাব আসে, প্রশাসনিক অফিসাররাও আসা-যাওয়া করেন। তবে কি বলবো সরকারী রাস্তা লিজ দেয়া হয়েছে! মাননীয় ঢাকা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মহদয়ের কাছে আর্জি, সাধারন জনগনের সুবিধার কথা চিন্তা করে অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
যানযট নিরসনে রিক্সা চলচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিভিন্ন রাস্তাগুলোতে। আমরা সরকারের এ উক্তিকে স্বাগত জানিয়েছি।
অসুস্থ রুগীকে ধরে ধরে রাস্তা পার করতে দেখেছি। তখন মনে মনে ভেবেছি, আহা শ্রদ্বেয় সুফিয়া কামালের সেই ছেলের বুঝি জন্ম হয়েছে। এরা কথায় নয় কাজে বড়ো। আইনের প্রতি কতো শ্রদ্ধাশীল, অসুস্থ রোগী পর্যন্ত রিক্সায় করে যেতে দেয় না। তার পরের চেহারা ভিন্ন।
হাত পেতে পাঁচ টাকা নিয়ে রিক্সা ছেড়ে দেয় সুস্থ মানুষদের। এসব দেখে কি মনে হয়, আসলে কি এরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধশীল? রিক্সা বন্ধ করেও কি যানজট কমেছে! রাস্তাটি এখন মটর মেকানিকের দখলে। সমস্ত রাস্তা জুড়ে নৈরাজ্য চলছে। প্রশাসনের কারো দৃষ্টিতে কি একবারও পড়ে না, বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়।
দেশের বাইরের দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারি ঢাকায় কেন যানজন লেগে আছে।
সরকার যত কিছুই করুক, দরকার হলে বাস চলাচল বন্ধ করলেও যানজট নিরসন সম্ভব নয়। বর্তমানে ঢাকা একটি বস্তিবহুল শহরে পরিনত হয়েছে। পৃথিবীর আর কোন দেশের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে বস্তি আছে কি না আমার জানা নাই। অথচ, ঢাকার প্রানকেন্দ্র বানিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে বিরাট এক বস্তি রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দলগত ভাবে বস্তি রয়েছে।
এ দেশে যতগুলো রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের প্রত্যেকের দখলে রয়েছে একাধিক বস্তি। এটা কি কোন সভ্য দেশের নমুনা হতে পারে? শুধু তাই নয়, ঢাকার গুরুত্বপূর্ন স্থানগুলোতে গড়ে উঠেছে বড় বড় গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরী। এ গার্মেন্টসগুলোর সকল শ্রমিক বস্তিতে বসবাস করে। সঙ্গত কারনে বস্তি এবং গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরী অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। রাজধানী ঢাকার আয়তন খুব বেশি নয়।
এর অধিকাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী। এখানকার শ্রমিকদের জন্য নেতাদের তত্ত্বাবধানে গড়ে তুলেছে বস্তি। সরকারী অফিস আদালতের কাছাকাছি, সরকারী কর্মচারিদের জন্য কোয়ার্টার বরাদ্দ করা হয়েছে। আর বাকি থাকে সামান্য অংশ। এর অধিকাংশ এখন ডেভলোপারের দখলে।
বাকি অংশ স্থানিয়দের নিজস্ব বাড়ি। যাদের সামর্থ আছে, তারা ফ্ল্যাটের গর্বিত মালিক হয়েছে। বাকি আমাদের মতো মধ্যম শ্রেনির মানুষেরা তথাকথিত বাড়িওয়ালাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। যারা না পারছে বস্তিতে বাস করতে। না পারছে সরকারী বরাদ্দকৃত প্লট বা কোয়ার্টারে থাকার সুবিধা।
না পারছে ফ্ল্যাট কিনতে।
অধিকাংশ সময়ে টকশো গুলোকে শোনা যায়,পরিকল্পিত নগরায়ন নিয়ে চায়ের কাপে ঝড়। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা এই প্রকল্প নিয়ে রাত দিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন। অথচ রেজাল্ট বৃথা আস্ফালন। এরা কি বিদেশে গিয়ে সেখানকার রাজধানী দেখে নিজের রাজধানীর কথা ভাবেন না! তখন কি মনে হয় না, আহা আমার রাজধানী যদি এমন হতো! যদি তাদেও সেসব রাজধানী দেখার সুযোগ না হয়ে থাকে, তবে সরকারী খরচে না হলেও নিজের খরচে একবার বাংলাদেশের বাইরের দেশের রাজধানী প্রদর্শরের জন্য তাদের যাওয়া উচিত।
কারন তাদের দেখা উচিত রাজধানীকে কিভাবে যানজটমুক্ত ও দুষন মুক্ত রাখতে হয়। শুধু শুধুু গলাবাজি না করে আর কোটি কোটি টাকা বাজেট না করে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে। পরিকল্পিত নগরায়ন বাস্তবায়নে চাই সঠিক ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।